২
বর্গসঙ্গীত
নিয়ন্ত্রিত হতে হতে
খসে পড়ছে
ওই তালু
ওই বুথ ফেরৎ সমীক্ষায় ফুটে ওঠার আয়োজন...
খ সিপিয়েম ‘করে’না। গ সিপিয়েম ‘করে’। খ তৃণমূল করেনা। কিন্তু যেহেতু খ সিপিয়েমও করেনা আর গ সিপিয়েম করে, সুতরাং খ অবশ্যই তৃণমূল করে। অন্তত গ-এর লজিকে। এছাড়া আর কীই বা! তার ওপর খ মাঝে মাঝে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠদের সামনে, তাদের মধ্যে, ইভেনচুয়ালি, গ-ও পড়ে থাকে, সিপিয়েমের সমালোচনা করেছে বা করে থাকে। সুতরাং, এইভাবে, অকাট্য হয়ে ওঠে তার তৃণমূলীয়ানার প্রমাণপত্র... তাই না? কেউ যখন বলতে থাকে বলতেই থাকে “পরিবর্তন এলে ৭ দিনের ভেতর সিপিয়েমের ২০০০০ কর্মী সমর্থক খুন হবে, হবেই” বা “তৃণমূল ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবাংলা শ্মশান হয়ে যাবে... অর্থনৈতিক শ্মশান বা ভার্চ্যুয়াল শ্মশান না... সত্যি সত্যি শ্মশান... গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ঘরে ঘরে চিতা জ্বলবে...” অল্প ক্লান্ত লাগে খ-এর। চেনা-পরিচিত প্রায় প্রতিটা লোক হয় এই নাহয় ওই – এই ছকে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। সে দ্যাখে। আর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে নির্বাচনের দিনক্ষণ। সে তার নিজের মতো করে লজিক খাড়া করার চেষ্টা করেছে নানাভাবে... তাতে লাভ হয়নি কোনো। এই তো হবে। দিনের পর দিন রাজনৈতিক চেতনার নামে পাবলিকের ভেতর রাজনৈতিক বিষ ইঞ্জেক্ট করে গ্যাছে কিছু লোক। পাবলিক ডগমগ হয়ে উঠেছে। খ আর গ, তো, আফটার অল, ক-বর্গেরই সদস্য। পাশাপাশিই তো চিরকাল। এইভাবে। তো, খ-য়ের বাড়ির সামনের বিরাট পুকুর (নাকি রেলের ছিলো!) সিপিয়েম জোরজার করে বুজিয়ে দেয়। তার পিতামহের হাতে লাগানো ৪০-৪৫ বছরের পুরনো তিনটে গাছ ছিলো ওই পুকুরপাড়ে। একটা অর্জুন গাছ ছিলো তার মধ্যে। আর দুটো রেইনট্রি। দীর্ঘ দীর্ঘ হয়ে ওঠা সেই তিনটে গাছ কেটে নিয়ে গ্যালো কারা এসে। প্লট করে জমি বিক্রি হোলো। আলোবাতাস? হাহ্ প্রকৃতি হাহ্ পরিবেশ হাহ্ আইন-কানুন! এক উৎসাহী প্রতিবেশী স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল অফিসে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানতে পারেন ওখানকার কাগজপত্র এরইমধ্যে বদলে ফ্যালা হয়েছে। মিউনিসিপ্যাল অফিসের কাগজপত্র অনুযায়ী ওইখানে পুকুর ছিলোই না কোনোদিন! কী বললেন? পুকুর চুরি? না না ওসব বলবেন না প্লিজ। আপনি মশাই তৃণমূল নাকী? তারপর শুনুন না। গল্প বাকী আছে এখনও। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এলাকায় লম্বা মিছিল বার করলো সিপিয়েম। পুকুর ভরাট করা আর গাছ কাটার বিরুদ্ধে। সেই চেনা মুখগুলোই তো! নাহ্। হাসি পায়নি। এই তো জীবন কালীদা! গ বোঝাবার চেষ্টা করে তাকে। “দ্যাখ, অন্যভাবে ভাব। এ তো হতোই। আমরা না করি কখনো কংগ্রেস (কোথায় তখন তৃণমূল! ১৯৯৪ সাল) যদি পাওয়ারে আসে ওরা তো করবেই! তোরা ঠেকাতে পারবি তখন? কিন্তু দ্যাখ, এই যে শঙ্করদা, কৃষ্ণদা, বীরুদা সবাই পরে মিছিল করলো পুকুর ভরাট করা আর গাছ কাটার বিরুদ্ধে... আমাদের পার্টি বলেই তো! কংগ্রেস করবে কোনোদিন? পজিটিভলি ভাব। কংগ্রেস পাওয়ারে এলে কি যে হবে... সে কথা কল্পনাও করতে পারবিনা...।” ১৯৯৪-এও যা বলতো গ, ২০১১-তেও তাই। বৃত্ত। ঘুরেফিরে।
অল্প শীত করে তার। দ্যাখে, সমস্ত শহর জুড়ে একটা একটা করে ঝরে পড়ছে স্ত্রীয়াম আপ আর স্ত্রীয়াম ঈপ। আপ-এর প আর ঈপ–এর প দুটোই অবশ্য ইত চলে যাবে। মানে লোপ পাবে আর কী। কপিবুক। যেভাবে কপিবুক মেনে ষ্ণিক বা ষ্ণি প্রত্যয় যুক্ত হলে দর্শন দার্শনিক হয়ে যায় বা অর্জুন হয়ে যায় আর্জুনি। সেইরকম আর কী! আফসোস, ভৌগোলিক শব্দটা লেখার সময় এটা খেয়াল রাখে না লোকে। ভূগোল থেকে ভৌগোলিক। প্রথমে ভ-এ ঔ-কার লিখে ফ্যালার পরেই লোকে ভাবে ঢের হয়েছে। একখানা ঔ-কার লাগিয়ে দিয়েছি আবার কী চাই! অনায়াসে গ-এর ও-কারটা এড়িয়ে যায় লোকে। য্যামোন কথোপকথন শব্দটা লেখার সময় লোকে ও-কারটা কোথায় ফিট করাবে বুঝতে পারেনা। মাঝখানে দিলে বেশ ব্যালান্সড আর শক্তপোক্ত দ্যাখাবে, এই ভেবেই বোধহয় কেউ কেউ প-এ ও-কার দিয়ে দেয়। সে যাকগে। আজকাল বানান নিয়ে বেশী কিছু ভাবাও এমনকি বারণ। আউটডেটেড ভাববে, খিস্তি দেবে পাবলিক। কিছু জানাটানার দরকার নেইতো! যা খুশী লিখুন না মশাই। “ভাশা” বা “ষাহিত্তো” বা “শমায” কারোর কিচ্ছু বলার নেই তো! আপাতত এসব ভাববে না সে। বরং, আপাতত, সে লক্ষ্য করে, দেওয়ালগুলো কীভাবে অপর্ণা হয়ে যায় আস্তে আস্তে। আর এইখানে একটা বেঁকে যাওয়া লাতিন রবিবারের ছবি। যখন জানলা খুলতেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে রোদ ভাঙ্গার টেক্সচার। অলীক একটা ছায়াজোন ছিলো কোথাও। কোলাজের সমকোণে এসে জমা হয়েছিলো নিবিষ্ট ট্র্যাপিজবাদকের ডো-রে-মি। আ, এই সেই মাননীয় শীতকাল বুঝি! সে ভাবে। সার্কাসের দিকে চলে যাওয়া কোয়া কোয়া আপেলসরণী দীর্ঘ সোনালী রিবনের ভেতর ডুবে যাচ্ছে দ্যাখে। একটা লাল ট্রাইসাইকলের স্বপ্নে কখনো উজ্জ্বল জলপাইগুড়ি আবার কখনো বাড়ির সামনের গভীর পুকুরটায় হাওয়া দেয়। মাথার ভেতর, ক্রমে, ঢুকে যেতে থাকে একটা-দুটো আস্তনিস্ত ফ্যাকাসে ঋতু। অল্প শীত করে তার। শুনতে পায় কে য্যানো জিজ্ঞেস করছে, “তুমি ন্যাপাভস্কি বলে কারো নাম শুনেছো?”