জায়গাটায় এমন একটা নিশ চিহ্ন আছে যেন কিছু নেই
কবিতা ভাষান
কোহরে কে ফুল, কলকাতার কবি পার্থ সারথি ‘মৌসম’ এই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, এবং এটি
প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতায় ২০১০ সালে বইমেলার সময়। ঐ বছর কলকাতা বইমেলায় মঁমার্ত্রে
মঞ্চে এটির মলাট উন্মোচন করেছিলাম আমি, বারীন ঘোষাল। পার্থ বাংলাভাষী, বাংলাতেও লেখে। চল্লিশোর্দ্ধ বয়সী এই কবি
বিনির্মাণ পত্রিকার সহ সম্পাদক। তার বাংলা কবিতার বইও আছে আমার কাছে। গ্রন্থনামের
অনুবাদ আমি করেছি ফুল-কুয়াশা। খারাপ নয়, কি বলেন ? বাঙালি এই কবির
হিন্দী কবিতার বাংলা ভাষায় অনুসৃজন করব আজ ঠিক করেছি। কেন নয় ? পার্থর বাংলা
কবিতার বইটির নাম “আলখরিশ”।
পার্থ সারথি ‘মৌসম’ – এর
কবিতা ---
সন্নাটাকে শোন
জায়গাটায় এমন একটা নিশ চিহ্ন আছে যেন কিছু নেই
কিছুই ছিল না
শুধু এক কাঁটা লাগা ভয়াল সং বেদনহীন স্তব্ধতায়
তাকে সন্নাটাও বলি
এসো একসাথে তারই শুনিতায়
এখানে একটা দরজা ছিল শিশু নিয়া ফুল হাসিরাশি
ছোটখাটো দুখ-দর্দ হাহাকারি খুশি
দিন বয়ে যায় শান্ত পারের জীবনীকে ফেলে রেখে
হলুদ সূর্য দেখে মায়ের কথা মনে পড়বে
ক্লান্ত চোখ স্মিত মুখ স্নেহরেখ বলীগুলোর কথায়
জীবিকার ভার বইবার একজন পিতাও লাগবে এখানে
সাবধান - বিশ্রাম
ড্রিলের পাখিরা যেমন আকাশ
থেকে নীড়কে দ্যাখে
ছোট গানাগানে আকাশ আরো ছোট্ট হয়ে যায়
সাধারণ মানুষের ঘরের মতো ঘর এখন আর নেই
সেই যে গো স্ফুলিঙ্গের পাখনা
ক্ষণ মানুষের হাওয়াগুণের আগুন
পুড়ে যায় ধিকি ধিকি ছাই
মানুষিয়ানা চুঁয়ে পড়েছে ভিজছে ঘৃণার বিষে
মা বাবা বাচ্চা ফুল হাসি খুশি ব্যথা ওপরে যা যা বানিয়ে বলেছি
এই নির্জনে কিছুই নেই
কিচ্ছু নেই
শুধু এই সন্নাটাকে শুনি চলো
আগমন
আস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে স্থায়ীতে
বিন্দু বিন্দু বিস্ফোরিত জল
পাহাড়ি ঝোরার নিউডে প্রকাশিত
পাথরে আছড়ে ওঠা বিন্দুর বিন্দুতম হয়েছে
নবীন কেবল নতুনেরা
কলতান হয়ে যাচ্ছে গান
কোলাহল মুখর হল মাটির উর্বরে
চাদ্দিক ইকোময়
যখন অন্তিম ঢল সূর্যে
সান্ধ বিরতির সন্নে অবসন্ন ক্লেশ
বহন করা কায়ার কথা
সীমানায় মানা হয়ে আছে যে অটলবিহারি
দেখ হরিণটাকে
চঞ্চল দুর্দম অবিরল যৌবন ছন্দ
আনপ্রাণ দেখ
পর্বত কন্দর বেয়ে নেমে আসছে তুষারস্রোতের লক্ষণ
দুকুল ছাপানো জলধারামান
থেমেই যায় না
থেমে যায়
এখন নদীরা বইবে
সফেদ ফেনায় উজ্জ্বল খুশি ছড়িয়ে
তীরে
নতুন ফসলে
পূর্ণ সিংহতোয়া ছবি দেখতে দেখতে
অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো রমণ করবে ভ্রমণ করবে
আত্মরতি থেকে দূরে
দূরে
জেগে উঠবে কবরের গান
এখানের সব মোড়ে শান্ত্রী মোতায়েন
সমস্ত গান দফনিয়া হায় কবরে
স্বপ্নদের সেন্সর করার পরে
জীবন্ত লাশের এই শহরের বোবা
বাসীদের ঘুমের মধ্যে ঘুলে মিলে দেয় কে যেন নিষ্প্রাণ
চৌমাথায় হাড়ের স্তুপের হাড্ডিম সাজানো
মাথায় নড়বড়ে শকুনের ছায়া
পুরোহিত বৃদ্ধ জটায়ু কে
মানুষমারা যজ্ঞ হচ্ছে
বারেবারে সেই নামগুলো মোছা চৌরাহা
ফুলের ওপর কড়া পাহারা
বিশেষ করে সেই ফুল যারা ফুলে ছিল
শিশুদের গায়ের গন্ধ ছিল
দুধের কলরোল মায়ের আদর ঠামনির ফোকলা হাসিমাখা
সেই সব ফুল ছোঁয়া বারণ হয়েছে দেখি
শহরের ব্যর্থ মানুষদের শোনাতে এনেছি আমার প্রতীক
বুকের ওপর একটা লাঙলের ফলা এঁকে দাঁড়িয়েছি
আমার কলমের খেলা আর থামাতে পারবে না তোমরা
কবরিত গানেরা আবার মাটি থেকে শিস মেলবেই
পুরোহিত আর সামন্তে পীড়িত এই পথগুলো
হাসবে আবার
আমি বিস্মৃত সেই পাগলপারার দেশিয়াল
সক্রেটিস থেকে মুক্তিবোধ দীর্ঘকাল যেখানে চাপা পড়ে আছে
হাজার চেষ্টাতেও তোমরা থামাতে পারবে না আমার চিৎকার
আমার ছবি ছিঁড়ে ছিঁড়ে জ্বালাতে
হাঁপিয়ে উঠবে তোমার নকল সেনা
আর তখনো আমি বেঁচে থাকবো
মানুষ তবুও বেঁচে থাকবে
আবার লিখবো আমি