হারানো কবিতাগুলো : রমিতের জানালায়
এবারে রইল কবি সুব্রত চক্রবর্তীর লেখা
(কাব্যগ্রন্থ- ‘নীল অপেরা, ‘বালক জানে না ’, ‘বিবিজান ও অন্যান্য কবিতা”)
কবি
কি কেবল পরবাসী,কুড়ানি! স্পর্শ করার অক্ষমতাই কি তাকে নিয়ে আসে শব্দহীন নির্দেশহীন
অস্পর্শের এক নতুন সর্বস্বতায়? কল্পনার
জপতপেই কি কেবল জেগে থাকে তার কবিতার সাতরং ! নাকি এই ঘর এই টাটকা মাছের গন্ধ আর এই ভূতে পাওয়া
টিকে থাকাও মায়াবাস্তবের মেঘ ও উঠোন পেরিয়ে কবির মগজ খুঁড়ে চলে যায়!
স্বপ্ন-প্রেম-স্বাধীনতা-ঠান্ডা মানুষের এমনই সব চিরজায়মান ঠান্ডা অভিলাষের কাছেই
পড়ে থাকে কবির চড়াও ক্ষেত ,চাষবাসের মার্কশীট। ষাটের কবি স্বল্পায়ু সুব্রত
চক্রবর্ত্তীর কবিতার মহান কলোনীতে এমনই সব লালাযুক্ত প্রসূতিসদনের শূণ্যতা,অলৌকিক
ফসলক্ষেত্রের বাইরে এমনই সব জীবনের খুঁটিনাটি।হাত থেকে চলে যাচ্ছে যা ,ঘুমন্ত চোখের পাশে স্বপ্ন হয়ে জেগে থাকছে যা ,
তাই নিয়েই বাংলা কবিতায় সুব্রত চক্রবর্ত্তীর এক অনুল্লেখ যাত্রাপথ। মাত্র
ঊনচল্লিশে বছরের জীবনে মাত্র তিনটি বইয়ের মালিকানা নেওয়া কোনো কবিকে যে বাংলা
কবিতার বিস্মৃতি-পোকারা খেয়ে ফেলবে তাতে আর বিস্ময়ের কি? কিন্তু আশ্চর্যের যা
তা হল তাঁর কবিতার অননুকরনীয় এক
ভাষাভঙ্গী,যা অচিরেই প্রজন্মকে উৎসর্গ করে যায় বোধের এক অসামান্য উইল।–“মানুষের জন্য দুঃখ,মানুষের জন্য অভিমান/আমারও তো হয়েছিল একদিন,আজ কিছু
নেই/আজ একা,একা-একা চলে যাচ্ছি; যেমন গিয়েছে/আমাদের একা বোন,আমাদের একা বাল্যকাল”-না,কেবল নিঃসঙ্গতাকে অস্ত্র করেননি সুব্রত বরং কবিতার ভেতর পড়ে থাকা
নিরস্ত্র কবির নীল হয়ে আসা ভিটামিনের গন্ধ তুলে দিয়েছেন পরবর্তী সন্তানদের
উদ্দেশ্যে। তাঁর বই ‘বালক জানে না’ তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁরই সন্তান রুমকি -রুদ্র কে আর সে প্রসংগেই
গদ্যকার উদয়ন ঘোষের কলামে উঠে আসে- “ কবি তো সন্ন্যাসী নয়,
ঘর-গেরস্থালি করে,টাটকা মাছ কেনে প্রতিদিন আর বোবা পাখি গরবনেদী পাখির মত নিরাসক্ত
যুদ্ধ করে একলা মরে সারাদিন।লক্ষ লক্ষ পচা শব্দের এই খেলা তার সন্তানেরাও জানুক এই
ভেবে লিখে যায়-“মানুষের পাশের চেয়ারগুলি কিরকম আমি আজো তেমন জানি না”।মাটির
অনেক নিচে ঠান্ডা জলে মজুত করে রেখেছেন তিনি আত্মক্ষয়ের এমনই সব কবিতা,বিশ্রীভাবে
পাহারা দিচ্ছে সেখানে মৃত্যু আর মৃত্যুর মাঝেই হেরে যাওয়ার মাঝেই যেন নবজন্মের
মাঝে দেখে নিচ্ছেন সেই বালকবয়স;জীবনের ভাঙচুর আর ফাটলের মাঝে দাঁড়িয়েও এ যেন সেই
স্বয়ংসম্পূর্ণ এক প্রতিলোক নির্মাণ,এ যেন তৃণের আগুনে কবেকার ঠান্ডা হাত সেঁকে
নেওয়া।বাংলা কবিতার সাবেকী রোমান্টিসিজম কিংবা অস্ফুট স্বপ্নচারীতার মাঝে নিঃসঙ্গ
সঙ্গীহারা মানুষের সামান্য গল্পের ফাঁক ভরাট করতে যে কবি লিখে যান –“অদ্ভুত শূণ্যতা এসে আমাদের ভারী জব্দ করে/যেন সে শূণ্যতা নয়,যেন তার টানা ও
পোড়েনে/কবেকার অভিলাষ,পদচ্ছাপ,দন্ডিত কাপাস/স্তুপাকার হয়ে আছে…” সে বিজ্ঞাপণহীন
সৎ সংবেদনশীল কবিরা বোধহয় হারিয়ে যেতেই আসে।অথবা শীতের রাতে উঠে বসে আমাদের
নিজেদেরই হেরে যাওয়া পুড়ে যাওয়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ঘুমকাদা বালকবেলা, খুঁটে দেখে
কতটুকু নীল আছে আকাশের কতটূকু নীল ওই ঘুড়ির,প্রানী পতঙ্গ আর প্রসবসমগ্রের ওপর যে
ঘুড়ি উড়িয়ে গেছে সুব্রত চক্রবর্ত্তীর মত অস্তিত্ব বিপন্ন এক কবির সমর্থ সুতোরা
......
যেতে
চাই
বৃষ্টির
ভেতর ঐ জবাগাছ, আমি তার ক্ষমা ও সারল্যে
যেতে
চাই- এই ঘর, ভূতে-পাওয়া সারাদিন,বিছানা ও কাঠের টেবিল,
নষ্ট
মোম,আধখোলা কলমের নিস্তব্ধতা ছেড়ে
চলে
যাবো।বৃষ্টির ভেতরে ঐ জবাগাছ আমাকে ডেকেছে
সুখী
ফুলে, পাতার আনন্দে। ম্লান এই ঘর, এই যে জীবন,
থেঁতো
দিন,ভূতগ্রস্ত শব্দগুলি,চাদর ও নিঃসঙ্গ টেবিল,
ক্ষয়া
মোম, ঠান্ডা , মৃত খরখরে কাগজ ...
সব
ছেড়ে, বৃষ্টির ভেতরে ঐ জবাগাছ, আমি তার সহজ সরল
ব্যর্থতায়
চলে যেতে চাই ।
সামান্য
মানুষের গল্প
সকলে ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরে- একজন কখনো ফেরে না।
অনন্ত প্রবাস তার নদীতীরে, সমাধিভূমির ভাঙা মর্মর ছায়ায় ...
অনন্ত প্রবাস তার অবিশ্বাসে, দুঃখে-সুখে , যুদ্ধহীন জয়ে-পরাজয়ে ...
সকলে ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরে- একজন কখনো ফেরে না ।
আজন্ম-বিদেশী ঐ মানুষের পুরোনো রুমালে
কোনো করস্পর্শ নেই,স্মৃতি নেই,নেই কোনো রঙিন অক্ষর ।
মানুষ ছুটির শেষে ঘরে ফেরে নিয়ে কত মজার পুতুল,
ভ্রমণকাহিনী,ফোটো,মোহময় গন্ধে ভরা উলের মাফলার –
একজন সামান্য লোক ঘরে থাকে,একা-একা , নিজের ম ন;
অনন্ত প্রবাস তার এই ঘর –
এই ঘরে ঝর্নাশব্দ ভেসে আসে , ছায়া দেয় দীর্ঘ শাল,ওঁরাও যুবতী
গান গায় খিন্নস্বরে।এই ঘরে সে কি বন্দী! পর্যটক নয়!
হাঁস
ও বালক
উড়ে যায় হাঁস; তার চিরমায়াময়তার দিকে
নির্নিমেষ চেয়ে থেকে বালকের দুটি চোখ হয়ে যায় হাঁস !
ভাসমান পালকের নেমে আসা ,
নীলিমায় ভেসে যাওয়া তার -
বিকেলের শান্ত রোদে এইসব দেখেছে বালক ।
চঞ্চল হাঁসের দিকে চেয়ে থেকে ওর বড় অভিমান হয় …
জলের চলাৎ শব্দ বুক ভেঙে উঠে আসে;
জাহাজের ভাসন্ত কেবিনে
বালক ঘুমিয়ে থাকে-
আচ্ছন্ন পালকগুলি সারারাত স্বপ্নে স্বপ্নে ঝরে !
উড়ন্ত হাঁসের দিকে চেয়ে থেকে বালকের শোক হয়;
যা-কিছু নির্জন,
যা-কিছু অতীত,ঝাপসা,
পাহাড়তলীর ছায়া,চিত্রিত পাথর …
নিঃশব্দ জলের টানে ভেসে যায় সবকিছু;
গোধূলিবেলায় শুধু ঘন হয়
ব্রতচারী হাঁসের আকাশ ।।
প্রেম
শিবানীর প্রেম এসে ছুঁয়েছিলো শিবানীর মাকে
একদিন । শিবানীর মা কি জানে এই কথা, শিবানী কি জানে!
উজ্জ্বল শাড়ির পাড়ে লেগে আছে অভ্রকণা- শিবানীর মা
একা-একা হেঁটে যান নিচু চোখে; আর
দূরে, ধবল শামপানে
শিবানী ভ্রমণ করে। দীর্ঘ,খর ,চেরা জিভে চেটে খায়
কুয়াশার জল ...
এই তার ভালবাসা,এই তার তৃষ্ণা নিবারণ ।
শিবানীর মা কি জানে অতশত!... চিবুকের নিচে,
শিথিল খোঁপায় তার কুয়াশা নিবিড় হয়,
উজ্জ্বল শাড়ির পাড়ে ঝোলে অভ্রকণা।
শিকড়ে ছেয়েছে দেহ
বয়স বেড়েছে নাকি! লতা-গুল্ম ছেয়েছে শরীর ।
রক্তের ফেনায় পাই টের
শিকড়ের নড়াচড়া,শিকড়ের আড়াআড়ি টান ...
অতল ঘূর্ণির দিকে ছুটে যায় রক্তস্রোত,করজোড়ে যায় ।
খসে ত্বক, উড়ে যায় সাবলীল; বাতাসের নুনে
ধাতুর মূর্তিতে জং ধরে আজ। ধাতুর নিষ্পাপ
শিশুটি ভেঙেছে ঐ! ওকে ডাকো, টেনে নাও বুকে-
আহারে, তোমার দিকে নুলো হাত তুলে ধরে ও যে !
শিকড়ে ছেয়েছে দেহ-ফাটে হাড়, নুয়েছে কাঁকাল ...
বয়স হয়েছে নাকি!বহমান রক্তে পাই টের
লতা-গুল্মের করতালি,লতা-গুল্মে আড়াআড়ি টান ...
শীতল ঘূর্ণির দিকে ভেসে যায় উজ্জ্বলতা,সফলতা যায় ।।
বালিকা
-১-
বৃষ্টির ভেতরে ঐ ধবল পোষাক পরে বালিকার ছুটে যাওয়া
আমাকে এমন
নিঃসঙ্গ করেছে। ...চেয়ে দেখি তুমুল বৃষ্টিতে
স্তব্ধ বাড়ি,জবাগাছ,ঘুমন্ত কবর ...
অনন্ত বৃষ্টিতে ভেজে দিগবলয়, লাল পথ,প্রসারিত হাত;
একটি মহিষ ভেজে,সমাধিফলক ভেজে। ...আর ঐ বৃষ্টির ভেতরে
চকিত পাখির মতো- দূর থেকে আরো দূরে-
উড়ে যায় শৈশবের ধবল পোষাক ।
-২-
বালিকা তার দুঃখে আছে,বালিকা তার সুখে
মধ্যরাতে বালিকা তার নিদ্রাহারা বুকে
মুখ রেখেছে;ঘুমে তখন চোখ জড়িয়ে আসে ...
একটি-দুটি পাখি ওড়ে বুকের আশেপাশে ।
কেউ কি জানে ঐ মানুষের বুকে দারুণ খরা-
বালিকা তাই অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে ঝরে !
শিশুটি জানে না
উজ্জ্বল শিশুটি, একা, কাগজের নৌকাখানি ভাসিয়েছে জলে;
শুধু এই দৃশ্য দেখে জবুথবু কঠিন বয়স
জলের কল্লোল শব্দে ভরে যায়। সাবলীল জলের রেখায়
কেঁপে ওঠে সব কিছু-নীরবতা,সুখ-দুঃখ,দূরদূরান্তর ...
কাগজের নৌকাখানি অন্ধকারে ডুবে যায়,শিশুটি এখন
ঘুমিয়ে রয়েছে ঐ... ঘুমন্ত বুকের কাছে
মুখ এনে,সহসা শুনেছি
মাল্লার বিরহগান, দাঁড়ের সজল শব্দ-জ্বলন্ত গলুই
ভেসে যাচ্ছে রক্তস্রোত ...
রক্তের কল্লোল শব্দে জেগে আছে মধ্যরাত,শিশুটি জানে না ।।
বালক জানে না
আকাশ যে নীল নয়- পাখি জানে,ঘুড়ি কিছু জানে
দু হাতে লাটাই ধরে যে বালক
সারাবেলা মাঠে-মাঠে ঘোরে
যে জানে আকাশ নীল,তার দুটি দীর্ঘ চোখে ভেসে থাকে ম্লান-জলকণা ।
জলের ভিতরে ঐ,আমাদের বালক-বয়স ...
ঘুরন্ত লাটাই হাতে,একা-একা,সারাবেলা আকাশের দিকে
চেয়ে থাকে।আকাশ যে নীল নয়,ঘুড়ি জানে,পাখি জানে-বালক জানে না ।
তিনি
মাটির অনেক নিচে,আমার স্নানের জন্য
ঠান্ডা জল মজুত
রয়েছে-
তিনি রেখেছেন ।
তিনি সর্বশক্তিমান ,
তাঁর শান্ত চোখের
ইঙ্গিতে
ব্জ্র ও বিদ্যুৎসহ বৃষ্টি নামে রাঢের খরায় ।
মাঝরাতে ফেরিঘাটে শোনা যায় মন্দ্র কন্ঠস্বর;
চলে আয়,
চলে আয়
ওরে-
জোছনায় রূপোলী জলে গাল রেখে শুয়ে আছে
তাঁর দীর্ঘ ছায়া ।
কারুকার্যময় দুটি চোখ থেকে জল পড়ে;
কতদিন সঙ্গিহীন আছি।
চলে আয়,চলে আয় ওরে-
অনন্ত জলের নিচে, ঘর বেঁধে নিঃসঙ্গ দুজনে,
সুখে থাকা যাবে।
তিনি সর্বশক্তিমান-এতো অনুনয় তাই,
তাঁকেই মানায় ।
রাজতন্ত্র
উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিয়ে সব কিছু এখানে এলাম
সধবা নারীর পাশে-রক্তাক্ত বালুকারাশি ঝরে
উন্মুক্ত দু হাত থেকে-গিরিখাদে শাদা কুজঝটিকা
থেমে আছে... থেমে আছে পরাজয়,অবহেলা।ঔদাস্যজটিল
কোন খেলা এইখানে।লাফায় অস্থির জল পাথরে পাথরে ...
এখানে এলাম ফিরে,নষ্ট করে দিয়ে সব সাফল্য প্রয়াস;
সন্ধ্যার বাতাসে ওড়ে নাবিকের ছেঁড়া টুপি! নারী,
তোমার সীমান্ত দেখে মনে পড়ে রাজতন্ত্র । মনে পড়ে,অক্ষরসংগতি
আমাদের ছিল যেন-যেন ছিল ভূতাবেশ,সহনশীলতা ...
শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ কোন খেলা ! ভাঙে জল পাথরে পাথরে ...
আমি নই
আমার ভিতরে কেউ স্বপ্ন দেখে। আমি নই,
আমারই মতন আর
কেউ ।
আমি ওকে কোনো দিন তেমন চিনি না ...
একদিন ওকে যেন কেউ কেউ দেখেছিল নদীতীরে,একা ।
একদিন ওকে যেন কেউ কেউ দেখেছিল ভাঙা দুর্গে ,একা ।
নিশীথবেলায় ওকে কেউ কেউ দেখেছিল
কলকাতার পথ থেকে পথে
নিচুচোখে
হেঁটে যেতে ...
ওর ঐ দুটি চোখ আমি যেন ফুলের রহস্যে
ভেসে যেতে দেখেছি
একদিন ।
ভেসে যায়, ফিরে আসে ;
ভেসে যায়, ফিরে আসে –
ভেসে যায়-ফিরে ফিরে আসে
ঐ দুটি শাদা চোখ, আর তার চিরস্বপ্নে ভরে যায় সমস্ত জীবন ।
কবির মৃত্যু
অদ্ভুত শূণ্যতা এসে আমাদের ভারি জব্দ করে;
যেন সে শূন্যতা নয়, যেন তার টানা ও পোড়েনে
কবেকার অভিলাষ,পদচ্ছাপ,দন্ডিত কাপাস
স্তুপাকার হয়ে আছে। মাঝে-মাঝে গোপণ দর্পণে
জেগে ওঠে বনাঞ্চল,নদীতীর,খেয়াপারাপার ...
নিস্পৃহ কাচের স্পর্শে আমাদের খর্বুটে আঙুলে
বিপুল কামনা এসে জড়ো হয়।বিদায়কালীন
সঘন চোখের কথা মনে পড়ে।সহসা শূণ্যতা...
আগুনের অন্ধকারে চলে যান পিছুটানহীন,
তৃপ্তি ও অতৃপ্তিহীন,সঙ্গিহারা;শুধু পড়ে থাকে
উজ্জ্বল তিমির,ঢেউ,পদচিহ্ন,রক্তাক্ত মর্মর-
অদ্ভুত শূণ্যতা তাঁর আমাদের ভারি জব্দ করে,
যেন সে ভরাট কিছু, আছে যার টানা ও পোড়েন ।
বিবিজানের তাঁবেদারি
অতর্কিতে বাহান্নটা তাস
মেলে ধরলে প্রজাপতির রঙ;
নেশার ঝোঁকে ছুঁতে গেলাম যেই
জোড়াসাঁকোর ভুরুর ভাঁজে ওঁ ।
কোথায় তাস, কোথায় প্রজাপতি-
তুমিই একা হরতনের বিবি;
হো হো হাসির দমকে মহীয়সী-
ঝলসে ওঠে মম্মোহিনী নীবি।
গলায় রাখ সাপের মতো হাত,
দৃশ্যপটে ভানুমতীর খেল;
আলিঙ্গনে কোথায় টেনে নিলে
জলসাঘরে পাগল মাইফেল ।
বাহান্নটা ফুলের তোড়া যেন,
দু হাত জুড়ে বাহান্নটা তাস ;
তার আড়ালে তোমার মুখরেখা,
তার আড়ালে আমার সর্বনাশ ।
মধ্যবয়সের রাত্রি
রাত কত!চারিদিকে কম্পমান পাতার মর্মরে
গাছের গভীর দুঃখ সাড়া দেয়!...মৃত্যুহীন,জন্মান্তরহীন
একটি
ধূসর মথ বসে থাকে নিঃসঙ্গ টেবিলে ।
স্বপ্নের নিষ্পন্ন শিশু ঘুমিয়ে রয়েছে পাশে;
ওর বুকে
হাত রাখি,
টের পাই
আরতি ও রক্ত চলাচল ...
আর দূরে,আলোকিত মাঠ থেকে মৃত শিশু ডাকে,তার
দুটি
চোখে পাথরের টান ।
রাতের নির্সগ থেকে ঝরে যায় নষ্টবীজ,
ঝরে যায়
শামকূট পাখির পালক ।
স্বপ্ন থেকে,পরিত্রাণ থেকে
শৈশবের চিরবৃষ্টি,সারারাত ঝরে যায় ক্ষয়া-মোমে,
মলিন
টেবিলে ।
নিষ্পন্দ মথের কাছে আড়াআড়ি দুটি হাত;
রাত কত!
চারিদিকে পাতার মর্মরে
গাছের গভীর শান্তি সাড়া দেয়; দূরে
স্মৃতিফলকের
কাছে উদাসীন শঙ্খ বাজে,
উড়ে যায় ঠান্ডা,শাদা চাঁদ ।
****************************