চৌকাঠ
পেরিয়ে চলে আসুন । কোত্থেকে আসছেন না জানালেও চলবে।
হাড়িকাঠে মাথা আপনি গলিয়েছেন। ... অভিবাদন? না না।
ফিরে যাবেন? হয়ত না। আপনি সম্মোহিত... কিছুটা গর্বিতও... পেরিয়ে এলেন যে
বসার ঘর
আপনি দাঁড়ান। সোফা নিজেই এগিয়ে যাবে আপনাকে বসাতে। বসতেও পারেন আবার না-ও পারেন।
দেয়ালে কবি ঝুলছেন। উনিই আপনাকে চায়ের সঙ্গে স্বপ্ন মিশিয়ে দেবেন।
পান করা আপনার অভিরুচি। হয়ত আপনি তারিয়ে তারিয়ে গলা ভিজিয়েই নেবেন
রান্না ঘর
হতেই পারে, রান্নাঘরটা আপনার দেখতে বড় ইচ্ছে। স্বর্গীয় চা এল কিনা—
এমনও হতে পারে, আপনি ঢুকলেন আর লক্ষ আরশোলা মেঝেময় আপনাকে ঘিরে ধরল
চার দেয়াল আর সিলিং থেকে হাজার হাজার ছোট বড় মাঝারি ইঁদুর আপনার দিকে অপলক।
আপনি ঘাম সামলাতে পারলেন না
শোওয়ার ঘর
আপনি একবার চাইলেই শোওয়ার ঘর, এবং বলতে নেই বিছানা একদম কোল বাড়িয়ে।
শুয়ে পড়লেই ফ্যান, আদেশ ছাড়াই... মাথার কাছের জানালার পর্দা উড়ে পুরো বাতায়ন।
ঐ দেখুন হাঁটি হাঁটি পা পা আসছে তোয়ালে, ঘাম শুষে নিতে, কী ঠান্ডা হাত ওর
আপনি ভাবতেও পারবেন না। কিংবা ভাবলেও ভাবতে ভাবতেই ঘুম... । আপনার প্রয়োজন।
বাথরুম
ন্যাপ্থার গন্ধ নয় কিন্তু এটা। ঘুম ভাঙতে না-ভাঙতেই চলে এসেছেন। বোঝা-টা এখনও ভাঙেনি।
জলখরচ যেমন তেমন। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া কেস কিচ্ছু না। সাবান অক্ষত,
গবাক্ষের আলো আপনাকে ধাঁধশে ফেলে দিচ্ছে কি? চোখ বন্ধ করুন সাময়িক,
খুলন, অনুভব করুন লা-জবাব আলোর প্রতিটি কণা আপনার ক্লেদ মুছে দিচ্ছে
আর আপনি আনন্দে যতটা পারছেন উলঙ্গ হচ্ছেন। চামড়া তুলে ফেলছেন, মাংস-স্তর
খুবলে সরিয়ে নিচ্ছেন, মজ্জা ঘিলু সব উন্মুক্ত, এমনকি সব হাড়ে আলো বইয়ে নিচ্ছেন
ব্যালকনি
আলোর পর আপনার বাতাসের প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য ব্যালকনি সেজেগুজে।
ওখানকার আরামকেদারাটা এখনও সোফার মত চলতে শেখেনি। আপনাকেই সোজা
যেতে হবে তার কাছে। আপনি অর্ধশায়িত হোন। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাতাস আপনার
ভেতরের ভেতর ছুঁয়ে যাবে। এবারে আপনি সরবৎ পান করবেন। সুইট সিক্সটিনরা
এই সরবৎ বানিয়েছে স্বপ্নের সঙ্গে স্বপ্ন ঢালাঢালি করে। আপনি পান...। আপনি দ্রিম দ্রিম...।
ড্রীম...... ড্রীম............ ড্রী........................ম...
চিলেকোঠা
তাপের প্রয়োজন হলে বলবেন। আজকেই একটা চিলেকোঠা বানানো হয়েছে। আগে ছিল না...
সিঁড়ির পর সিঁড়ি ভেঙে আরও কয়েকটা সিঁড়ি। ব্যাস্, চিলেকোঠা। দাঁড়ান, সিলিং মাথা
ছুঁয়ে ফেলবে প্রায়। বসু্ন, নেমে আসবে মাথা পর্যন্ত। দেয়ালের দিকে তাকান, সচিত্র সে
আপনার বুকের দিকে কোনো দূর অতীত থেকে সরে সরে আসতেই থাকবে। চারদিক থেকে...।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার বোধ অনুভূতি শুধু উত্তপ্তই না, সেদ্ধ হতে থাকবে।
আপনি নিশ্চয়ই এবার মুক্তি পেতে চাইবেন, এবং সবকিছু ফাটিয়ে বেরিয়ে আসবেন
খোলা ছাত
রাতের মাঝখানটায় আপনি ছাতের মাঝখানে। চিৎ শুয়ে। ঘুম কী, জানেন না...
মানুষ কোথায় জানেন না, জানতে চানও না বোধহয়। তারাগুলো খসছে, আপনি গুনছেন।
এক দুই তিন চার পাঁচ...। তিন লক্ষ সাতান্ন হাজার ছশ বিয়াল্লিশ...
আপনি হালকা হয়ে উঠছেন...। কোথায় যেন মিশে যাচ্ছেন...। চলে যাচ্ছেন...। যান, ক্ষতি নেই।
কিন্তু, দেয়ালে ঝুলে থাকা কবি মূলত আপনাকে নিয়েই এক প্রতি-স্বপ্নের কবিতা করেছেন
সেটা অন্ততঃ একবার শুনে যান...... শুনে যান...... হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনি... আপনিই...।