মং ইউ পাই-এর জন্ম ১৯৮১ সালে। দক্ষিণ বার্মার বন্দর নগর মায়েইক-এ। ইউ পাই আইনের ছাত্র। দুটি কবিতার বই তাঁর এখন অবধি। ‘There is a New Map far from that little Island Town Too’ (২০০৭) এবং ‘With the Big Television Turned on’ (২০০৯)। মং ইউ পাই তাঁর রাই (wry) পোয়েমসের জন্যে অধিক সুপরিচিত। একদম টানা গদ্যের ছাঁচে এই লেখাগুলো অনেকটা রিপোর্টিং-এর মতো দেখতে। চিত্রকল্প, রূপক, কাব্যিকতা, পেলবতা এসবের কোনো জায়গাই নেই ওঁর লেখায়। এখানে মং ইউ পাই-এর দুটো কবিতা অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম।
ইয়াঙ্গন ২০১০
বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে গুঁতোগুঁতি করে যাচ্ছেন, এটা লক্ষ্যণীয়। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমঝোতায় লোকজন কাজ করছে, অপপ্রয়োগ ঠেকাতে এটা খুব জরুরি। ব্ল্যাক (ই)মেল আর হুমকি সামাজিক ঐক্যে ঘুণ ধরাচ্ছে। মেয়েদের শোভনতায় নতুনত্ব কিছু নেই। কিছু টিনএজার মদত দিচ্ছে ব্লু-ফিল্ম আর পাইরেটেড ভিডিওয়। তরুণরা খোলামেলাভাবে ঝুঁকছে হালফ্যাশান আর লক্সারী জিনিসের দিকে। যারা বিদেশে চাকরি করতে যাচ্ছে, যাবার আগে প্রস্তুত করে নিচ্ছে নিজেদের সমস্ত রকম ভাবে। ডকুমেন্ট আর সার্টিফিকেটগুলো বহু চেষ্টায় আর তিলে তিলে পাওয়া। ফালতু অফিসগুলো তৈরিই হয়েছে লোক ঠকাবার জন্য। প্লাস্টিক-বিরোধী প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না প্রকৃতভাবে। পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে শ্লীলতাহানির ঝুঁকি এড়াতে মেয়েরা স্পেশাল বাস সার্ভিস বেছে নিচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেকারত্ব বাড়ছে এবং বেতন নিম্নগামী। গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা শ্রমিকরা এর ফলে আবারও দেশান্তরী হচ্ছে। অভিনেতা আর কমেডিতে সাজানো সিনেমাগুলো, যেখানে পা-বাঁধা অবস্থায় চলতে গিয়ে লোকেরা গোবরে মুখ থুবড়ে পড়ে, মজাদার এই দৃশ্যগুলো ইয়াঙ্গন সিনেমামহলে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটা লক্ষ্যণীয়।
ইউএফও
একটা ইউএফও দেখা গেছে কাল, শহরের প্রান্তে। লোকজন এটা নিয়েই কথা বলছে এখন। কেউ কেউ মেনেও নিচ্ছে না। কিন্তু এটাই আজকে শহরের কথা। সবাই কিন্তু খুব সিরিয়াস। ওদের তুমি কিভাবে বোঝাবে, ‘এটা অসম্ভব!’ কে জানে, হতেও তো পারে এরকম। কেউ শহর ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবছে। কেউ এর মধ্যেই ব্যানার লিখে ফেলেছে, ‘এলিয়েন, তোমাকে স্বাগত!’ কেউ হাতে তুলে নিয়েছে তার ছোট্ট ক্যামেরা। সেই বিকেল থেকে, শহরের প্রান্তে, সেই জায়গাটায় ক্যাম্প ক’রে আছে কিছু লোক। যত ভিড় বাড়ছে, রাস্তার ধারের দোকানগুলোও আসছে একের পর এক। গ্যাসমুখোশ, বাইনোকুলার, খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্কস, বিয়ার, চেয়ার, ছাতা, পার্ক ক’রে রাখা গাড়িগুলো দেখার জন্য বুথ— এইসব। শহরের প্রান্ত এখন উৎসবে সাজছে। কিছু বৃদ্ধ ও মধ্যবয়স্ক, যারা চার্চে আশ্রয় পেয়েছে, শহর ছেড়ে যাবে না। ছোট্ট এই শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক ডেকেছে, সত্বর। কিছু অংশগ্রহণকারী গোষ্ঠী কার্ফু চাপিয়েছে শহরের প্রান্তে। সবাইকে অন্যত্র কোথাও সরিয়ে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন কেউ একজন। কেউ পালটা বলছেন, এলিয়েনদের সাদরে বরণ করাই তো উচিত! এক আর্মি অফিসার তাঁর বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে আদেশ দিয়েছেন। কিছু মানুষ ক্রমশ আতঙ্কিত। আরো আরো চুরি, ডাকাতি, আর সিঁদেল চোরের গল্প ফুলে ফেঁপে ছড়াচ্ছে। ক্রমশ অনেক মানুষ বেহেড মাতাল আর উন্মত্ত। রাস্তায়, সবাই, দৈত্যাকার বিরাট আকাশের দিকে তাকিয়ে, খুঁটিয়ে দেখছে। কার-অ্যাক্সিডেন্ট, অগ্নিসংযোগ, রাস্তায় মারামারি, খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। আর, কিছু লোক তাদের ঘরেই আছে। কোত্থাও যায়নি। নিজেদের কাজগুলো ক’রে যাচ্ছে। এঁদের কাছে, ‘যখন এলিয়েন আসার, আসবে।’ আর এরকম মানুষও আছে, রোজ, প্রতিদিন, যারা স্থিরভাবে নিজেদের বুটের চামড়া চিবোচ্ছে। তখনও।