আমি তেত্রিশ দিন ধরে কিছু খাইনি
মা বলেন, অন্তত তেত্রিশ বছর ধরে আমি তোর
শুকনো মুখ দেখে আসছি বাবা!
অম্নি আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল
আমার প্রতিদিনের দীর্ঘ ঘুমের
প্রায়শই কোমর ভেঙ্গে-যাওয়া নিয়ে
আজ সন্ধ্যেয় যে মহামান্য চিকিৎসক বরাবর
এপয়েন্টমেন্ট রয়েছে
তুমি তাতে পরিবর্তনের কথা ভাবছ
আর মা ভাবছেন, অন্তত দুবেলা
পেটপুরে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবারের কথা
আমি ভাবি, কেবল কি আমার বেলাতেই
এমন সব উদ্ভট কাহিনী, অজ্ঞেয় পদ্ধতি
প্রবর্তিত হবে রোজ রোজ?
শরতে ফুটবে বর্ষার ফুল আর প্রচণ্ড শীতে
তাল পাকার উষ্ণতায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিক্রি বেড়ে যাবে?
আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্তত একটি বিষয়ে মাথাব্যথা রয়েছে যে
এই সব নিত্য নতুন উদ্ভট বিকট পদ্ধতি আয়ত্ব আর
ডিগবাজি খেলাÑ এসব নিয়ে আমাদের সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থীগণের
অন্তত সাধারণ জ্ঞান অনুশীলনের বহুলচর্চা প্রবর্তিত আছে
যেমন পৃথিবীতে রাজনৈতিক নেতা-প্রণেতাগণ
আস্তিক নাস্তিক কিংবা বিদ্রোহী যা-ই হোন না কেন
ভোটযুদ্ধের প্রাক্কালে মসজিদ মন্দির গির্জা কিংবা প্যাগোডায়
হঠাৎই তাদের আনাগোনা বেড়ে যায়
জীবন-দর্শন
পিংপং বলের মতো কিছু একটা
উঠছে নামছে, আর জমে উঠছে খেলা
আমি চারপাশের দর্শক সারিতে
খর্বকায় মানুষের মতো উঁকি দিয়ে শুধু দেখছি
কেউ চিকন বাঁশের তৈরি
উঁচু উঁচু নকল ঠ্যাং বানিয়ে
কেউ চেয়ারের ওপর চেয়ার বসিয়ে
সম্পূর্ণই উপভোগ করছে এই বিম্বের ওঠানামা
আর যারা পরম বন্ধুর চেয়ে নিতান্ত আপন
একজনের পিঠে একজন উঠে
পালা করে দেখছে তো দেখছেই সারাদিন
শুনেছি যে, সেই কবে থেকেই
এইভাবে দেখতে দেখতে বিম্বগুলো গর্ভবতী হয়
সময়ান্তরে দেখা যায়
ইহ ও পরজাগতিক যার যার অবিশ্বাস্য জীবন
গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে রাত
পায়ে আমার রক্তজল জমে থির হয়ে আছে
হয়তো আর কয়েক চক্র পরেই দেখানো হবে
আমার পারলৌকিক হিসেবের খাতা
আর তা দিয়েই তৈরি হবে নতুন নতুন
পিংপং বল, কাগজের নৌকা
হাসপাতালে প্রবেশপথের মুদ্রিত টিকেট
প্রাচীন জলাধার
আমি বৃষ্টি শেষের ভোরে
লেকের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
জলের নিভৃত তলে নিজের চেহারা দেখছি
সারারাত জলের কোমর জুড়ে যে ব্যথায় কেঁপেছে বাতাস
পাঁজরের হাড়ে হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে যে
বিষাদের ভয়াল উচ্ছ্বাস
তারই পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নার্সিসাস
পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ?
এখনই জল থেকে চাঁদের আলোয় বেছে বেছে
শাপলাফুল কুড়োবার সময়
যারা প্রতিরাতে, জলে নেমে চাঁদের শরীরে-মগজে পা দিয়ে
শাপলাফুল তুলে এনে রেঁধে-কেটে খায়
তারাই তো আমাদের মগজের প্রকৃত রন্ধনশিল্পী
প্রাগৈতিহাসিক রাজরাজড়াদের ব্যবহৃত এই লেক
শান্ত প্রসিদ্ধ হয়ে শুয়ে আছে আমাদের
পূর্বপুরুষের সমাধি ঘেঁষে
আজো সেই জলে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়
রাত্রি হলে চন্দ্র তারা নক্ষত্র বর্ষিত হয়
আর নিভৃতে বাড়ে রোগ-জরা বার্ধক্যের ব্যথা
একটা কিছু হচ্ছে
তারা অন্তত জানুক, একটা কিছু হচ্ছে
এবং জানুক যে, দেয়াল দিয়ে ঘেরা বাড়িগুলো
আজকাল আর মোটেও নিরাপদ নয়
দেয়ালের বাইরে থেকে দেয়ালবন্দী দৃশ্যগুলো বিধৃত হচ্ছে
এবং তা মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে
পাখিকুলে আরণ্যক মুখরতায়
তুমি যতই দীর্ঘজীবী হও এবং
একটি বৃক্ষের ওপর আর একটি বৃক্ষের বেড়ে ওঠা দেখে
যতই বিস্মিত হও
ব্যাপারগুলো মৃত মানুষের দাঁত নখ কিংবা
মরে যাওয়া নদীদের অতৃপ্ত আত্মার
পাঁয়তারা ছাড়া অন্য কিছু নয়!
বরং একথা সত্যি যে
আমরা শাকসবজি ফলমূল খেয়ে
যতটুকু স্বাস্থ্যবান হচ্ছিÑ ব্যাপারগুলো তারও চেয়ে
অধিক স্বাস্থ্যবান বলে বিবেচিত হচ্ছে
আবার সব জননীর চতুর্দশতম সন্তান যে
রবীন্দ্রনাথ হয়ে ভুবন মাতিয়ে দেবে
এ কথা যেমন সত্য নয়, তেমনি
খোলা প্রান্তরে অসামান্য দৃশ্যশোভায় যে
কদাকার মুখশ্রী অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ফ্রেমবন্দী হবে
তারই বা সত্যতা আছে কী?
তবু একটা কিছু হচ্ছেÑ অন্তত জানুক সবাই
প্লেনের পাখা ছিঁড়ে পড়তে পড়তে আকাশচারী দৃশ্যগুলো
আরও বেশি দ্রুতগামী হয়ে উঠছে
তুমিও কোনোদিন
যদি একটি ফুলের মতো আবেদন নিয়ে তোমার কাছে যাই
জানি দ্বিতীয় দিন
তুমিও কোনো প্রশ্ন করবে না
আজকাল কার্জন হলের সীমানা প্রাচীরে অজস্র ফুলের মন, সুদর্শন দেহ
বেচাকেনা হয়
প্রতিপ্রত্যুষের প্রতিটি ফুলের লেজ ধরে তাড়া দিলে
ঘোড়ার মতো লম্ফঝম্ফ এক অর্বাচীন সুরেলা ব্যাপার
আর তার টগবগে ঘ্রাণ মৈথুনরত
রিকশার চাকায়, হতশ্রী মানুষের সারিবদ্ধ কৃত্রিম ছায়ায়
যখন অর্ঘ্যে লাগে, স্বর্গে লাগে
এবং সন্ধ্যে হলেই শুকিয়ে যাবার জ্ঞাতার্থে ব্যবহৃত হয়
পরম লাবণ্যের ভেতর বিষণœ এক মুখ বুঝে ফেলে যে
সকল কোরক তাদের বিদ্রোহী হয়ে
অনর্থই ঝরে ঝরে পড়ে যায় -
যেমন তুমিও, শুকনো মরা
যত্রতত্র ঝরে-পড়া ফুলেরÑ খবর রাখোনি কোনোদিন