ভোরের কবিতা
পাঠক একটু পরে যাঁদের কবিতা পড়বেন,তাঁরা সকলেই ১৯৮৮ এবং তারপরে জন্মগ্রহণ করেছেন! আমায় যখন অনুপম এই বিভাগটি এডিট করতে বললো,আমি তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে একেবারে তরুণ কবিদের নিয়ে যদি কোন কাজ করতে পারি,তাহলে করবো,নইলে করবো না!আমি কবিতা’র দশকওয়ারি মনিহারি দোকানে বিশ্বাস করিনা!কবিতা ধারাগত ভাবে আলাদা হয়ে যায়!সেই ধারাবদল দশক ধরে হয় না! বরং দশকের সাধারণীকরণ কবিতার ধারাবদলের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়,মুড়ি মিছরি এক করে দেয়!এখানে যাঁদের কবিতা রয়েছে তাঁরা স্থিথিস্থাপক কোন কবিতা ফর্মুলায় বিশ্বাস করেন না,অথচ কবিতা’র অনন্য পথ এবং তার কারিগরি দক্ষতায় আস্থা রাখেন,এই সাত জন কবিঃ-সাম্য ভট্টাচার্য, সুপ্রিয় কুমার রায়, অভিষেক রায়, সজল দাশ, পার্থপ্রতিম রায়, মিচি উল্কা এবং নীলাঞ্জনা গোস্বামী আমায় তাদের ভাবনামথিত লেখায় মুগ্ধ করেছে,ওদের কবিতাজীবনের সবে শুরু,আর এমন প্রারম্ভ সময়ে যান্ত্রিক কবিতার একঘেয়ে পথে না হেঁটে বেছে নিয়েছে কবিতাভিযানের আনন্দময় অভিযাত্রাটি!
তো, পাঠক এই নবীনতর কবিদের কবিতা পড়ুন,বাংলা কবিতার প্রবাহে দেখুন কত আশ্চর্য ফুটে আছে!
(কবিতা সম্পাদকঃ ৭৮তম পোস্ট)
অনুপম বলছি
এই পোস্টে ‘বাক’-এর কবিতা সম্পাদনা করার জন্য স্বপনদাকে কৃতজ্ঞতা। এর ফলেই আমরা এই সময়ের তরুণতর কবিদের কবিতা ‘বাক’-এ পেলাম। এই কবিদের পথ চলা শুরু হয়ে গেছে, উল্কার মতো কেউ কেউ তো এখন বেশ চর্চিত নাম। কিন্তু পথ চলার অনেকখানি বাকিও আছে। ‘বাক’ এই সুযোগে তাঁদের সঙ্গী হওয়ার আনন্দ পেল, শ্লাঘা পেল।
ষাটের দশকের কয়েকটি বাঁধনছেঁড়া আন্দোলনের স্মৃতি এবং আশির কবিদের দ্বারা পরিচালিত 'কবিতা ক্যাম্পাস' থেকে পথ চলতে শুরু করা নতুন কবিতার ধারণা, এবং প্রভাত চৌধুরীর 'কবিতা পাক্ষিক' থেকে অধুনান্তিক কবিতার প্রয়াস একটা কাজ করেছিল, নব্বই দশকে বাংলা কবিতায় একটা খোলা হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল, যেখানে স্বকীয়তার ডানা মেলার ব্যাপারটা সহজ হয়ে গিয়েছিল, এবং একইসঙ্গে মধ্যমেধার ফাঁকিটা খুব অনায়াসেই ধরে ফেলা যাচ্ছিল। আমি সৌভাগ্যবান যে, শূন্য দশকের সূচনায় লিখতে এসে এই দুটি স্রোতকে একইসঙ্গে নিজের নাগালে পেয়েছিলাম। আমি এদের কারো মতো করে কখনও লিখিনি। কিন্তু মুক্তির স্পিরিটটা আমাকে জাগিয়ে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল, নিজের জায়গায় নিজের মতো করে কাজ করতে পারব। দেখলাম সেটা পারছিও। এবং সেটার জন্য আমাকে শুধু কয়েকটি পত্রিকায় আটকে থাকতে হচ্ছে না। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব মান্য পত্রিকাই আমার লেখা ২০০৭-এর মধ্যে প্রকাশ করেছিল। সেটার জন্য আমাকে তাদের মতো করে লিখতে হয়নি। নিজের আনন্দের লেখাটাই লিখেছিলাম। এখনো লিখে আনন্দটা পাচ্ছি একইরকমভাবে। কিন্তু একটা সংকট নিজের মধ্যে তৈরি হতে দেখি, যখন আমার পরের কিছু ছেলেমেয়েকে দেখি তারা লেখালেখিটা শুরু করছে আবার সেই ৫০-এর দশক থেকেই। তারা খারাপ লিখছে বলব না। বরং তারা খুব 'ভাল কবিতা' লিখছে। এমনও নয় তারা লিখে আনন্দ পাচ্ছে না। বা তারা 'ফরমায়েশি' কবিতাও হয়তো লিখছে না। কিন্তু শৈলির দিক থেকে এখন কি প্রতিবিপ্লব ঘটছে প্রথম দশকের কিছু ছেলেমেয়ের হাতে ? নাকি অগোচরে এ সেই বানিজ্যপ্রয়াস, যেটার কোনো মানে হয় না, কারণ আমাদের কেন কোনো দেশেই কবিতা বিক্রি হয় না। আমাদের দেশে কবিতা লিখে আর কেউ কিন্তু সেলিব্রিটি হবেন না। অবিশ্যি, কিছু পত্রিকা এবং কবিতা উৎসব এঁদের কিছুদিন সাদরে ডাক দেবেন, কারন এঁরা তাদের জরাগ্রস্ত এবং মৃত্যু অবধি কবিতা লিখে চলার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পরিচালকদের ইগোকে তৃপ্ত করছেনঃ 'দেখেচ? এই বাচ্চাগুলোও আমাদের মতো করে লিখতে চাইছে। আমরা কি এদের চেয়ে পিছিয়ে আছি?' কেউ রাগ করবেন না। কবিতার শহরে কেউ এগিয়ে পিছিয়েও থাকেন না। আসলে আমি খুব ভিতরের বিপন্নতাটা শেয়ার করলাম। সেই খোলা হাওয়াটা কোথাও পথ হারাচ্ছে মনে হচ্ছে আজকের কারও কারও সফল লেখা পড়ে।
‘বাক’ চিরকালই তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে। শুরুই হয়েছিল শূন্য দশকের কবিদের একান্ত পত্রিকা হিসেবে। পরে দশকের সীমা চুরমার হয়ে যায়। দশকের হিসেব বাংলা কবিতাকে কিছু সুবিধার পাশাপাশি কিছু গোষ্ঠীবদ্ধতাও দিয়েছে, দিয়েছে কিছু অবাঞ্ছিত রাজনীতি।
আজ আবার মনে পড়ছে শুরুর সেই দিনগুলো। ২০০৯-এর অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাক’-এর প্রথম পোস্ট। তখন একটি ব্লগের কোনো সাহিত্যিক মান্যতা ছিল না। লোকে হাসিঠাট্টা করত। অনেকেই বলতেন, ‘ব্লগ আবার একটা পত্রিকা হয় নাকি! ও তো বিয়েশাদিজন্মদিনের আর বেড়াতে যাওয়ার ছবি ছাপার জায়গা!’ সেই দিনগুলোয় ‘বাক’ ছিল একমাত্র ব্লগজিন। আজ যাঁরা অনেক ব্লগজিনের অভিভাবক, জানি না আজ থেকে পাঁচ বছর আগের সেই দিনগুলোর কোনো অভিজ্ঞতা তাঁদের আছে কিনা। সেই দিনগুলোয় আমাদের অনেক অপমান সইতে হয়েছে। আর আজ, কবিতার ব্লগজিন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্লগজিনের আয়োজনের খবর পাই। আনন্দ হয়। আজ আমরা আর একা নই।
‘বাক’-এর ৭৮তম পোস্ট আপনাদের কোনো দিক থেকে হতাশ করবে বলে মনে হয় না। আসুন, আবার একটা অভিজ্ঞতার অংশ হোন পাঠক। আপনার মূল্যবান মতামত আমরা প্রতিটি লেখা এবং ছবির তলায় আশা করছি।
অনুপম মুখোপাধ্যায়
Manlam...hok kotha!
উত্তরমুছুন