গ্রিক ভাষার কবি
দিমিত্রিস লিয়াকস্-এর কবিতা
অনুবাদ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
গ্রিক ভাষার কবি দিমিত্রিস লিয়াকস্-এর
জন্ম ১৯৬৬-তে। আথেন্সে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা করেছেন আইন নিয়ে। ’৮৮-’৯১ অবধি ভেনিসে কাটান। এরপর লন্ডনে থাকতে
শুরু করেন ’৯১-’০৪। য়্যুনিভার্সিটি
কলেজ লন্ডন থেকে দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন। দিমিত্রিস আয়ওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের একজন ফেলো। বর্তমানে বার্লিনে থাকেন। ’৯২ সালে ‘পোয়েনা দম্নি’ (Z213 : Exit ; Nyctivoe ; The First Death) নামে ট্রিলজি লেখা শুরু করেন। এই ট্রিলজিটি লেখা
হয় পেছন থেকে সামনের দিকে। তৃতীয় অংশটি প্রথমে প্রকাশিত হয় (১৯৯৬)। তারপরে দ্বিতীয়
ও প্রথম। জার্মান, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান এবং
ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে দিমিত্রিসের কবিতা। ওঁর টেক্সটগুলি ন্যারেটিভ ফর্ম, কবিতা,
গদ্য এই সবকিছুকে একসাথে নিয়েই চলে। এবং চরিত্র ও পরিবেশের নাটকীয় উপস্থাপন এই
পুরোটাকে নিয়ে চলতে থাকে। যেন ‘এক অন্তর্গত স্বগতোক্তির
অবিন্যাস্ত স্রোত’ বইতে দেখা যায় ওঁর লেখায়। আমি এখানে ওঁর ‘Z213 : Exit’ থেকে দুটি (৬নং ও ২৩নং) কবিতা অনুবাদের
চেষ্টা করলাম।
জেড টু ওয়ান থ্রি :
এক্সিট
৬.
একটা দেশলাই কাঠি জ্বলতে পারে যতক্ষণ। শিখা জ্বলতে থাকা
আর দপ্ ক’রে নিভে যাওয়া সেই ঘরে যতক্ষণ তুমি দেখতে সক্ষম। যতটা
পারছো ধ’রে রাখছো ছবি, ছোট ক’রে, খুব ছোট ক’রে, আবার নিভছে। কয়েকটা লাইন তুমি লিখতে
পারছো, হারিয়ে যাচ্ছে ওরা, আবার আরেকটা কাঠি জ্বালছো, আবার। পারছো না, মিস হয়ে
যাচ্ছে, খালি পাতা, কাঠি, আবার আরেকটা। মনের মধ্যে যে অচেনা একটা শব্দ গেঁথে ব’সে আছে, তার
সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হও। এবং যেখানে দুষ্টু লোকের ঘরগুলো আছে। ওদের জিগ্যেস
করো যারা হেঁটে যাচ্ছে তোমার পাশ দিয়ে। আবার দেশলাই, টেস্টামেন্টের ভীষণ আবছা কিছু
জায়গা, ওর টুকরো টুকরো কিছু অংশ। আলো অতক্ষণ থাকছে না যতটা সময় লাগে লিখতে, অন্ধকারে
তুমি বুঝছো না পাতাগুলো কি ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে!
লিখছো, একটা দেশলাই কাঠি, শব্দেরা পড়ছে একে অন্যের ওপরে, আরেকটা পাতা, লিখছো, আবার
আরেকটা কাঠি, পেজ ব্ল্যাঙ্ক, লিখতে থাকছো, আরেকটা আধ-লেখা পাতা, পড়ছো, দেশলাই
প্রায় শেষ। পাতাগুলো ওলটাচ্ছো, অনুভূতি অনুভূতি, আঙুলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে। যেখানে যেখানে
খুঁজে পাচ্ছো লেখার অংশ, যুক্ত করছো তোমার নিজেকে, তার নীচে, তুমি লিখছো সেই মাঝখানে।
দেশলাইয়ের একটা কাঠি, পড়ছো, তুমি ও তোমার নবজাতক, একজন অচেনার সাথে, একসঙ্গে, আবার।
যেন তুমি কথা বলছিলে কারো সাথে। আবার দেশলাই, সিগারেট জ্বাললে, সিগারেটের শিখাহীন
স্থির আলোতে পড়ার চেষ্টা। না। লেখাগুলো মিলিয়ে যেতেই, যন্ত্রণা। যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। রাস্তাগুলো সব প্রহরীময়, কেউ যাতে ভেতরে না
যেতে পারে ওর মধ্যে দিয়ে। এবং রাস্তায়
ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে এখন, আমি খুলছি, আমাকে নিশ্চই ওরা বাঁধবে। বাকিরা পালিয়েছে ভোর
হওয়ার আগেই। একমাত্র বণ্ড, সাক্ষী আর ভীষণ গুরুত্বপূর্ণরা বাদে। তীর্থযাত্রী
অতিকায় ডানা-পাখিদের জন্য এক বিশেষ মহকুমা নির্মাণ করেছে রাষ্ট্রহীনেরা। স্বাধীন
হওয়া সত্ত্বেও ভাবা হয়েছে যাদের কথা। সেই রাস্তার ওপরে, যে রাস্তার কোনো দেশ নেই।
শেষতম কাঠি
পূর্ণ চাঁদ
গাছে ঝুলছে
শুকনো,
জানলায় আলো
বাছাই করা হচ্ছে
পশ্চিমের দিকে যে জঙ্গল
আমাদের হাসিই— সেরা ওষুধ
শেষের সে হাতকে শস্ত্র দিতে
যে হাত মাতাল
জোয়ারের ছায়া
হঠাৎ ড্রামস্ দুমদুম ক’রে ভীষণ
বাজতে থাকলো আর চলে গেল জানি না কোথায়
এবং শান্ত ওদের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দিলো
আমার
কবর ও কফিন
তুমি বলবে তোমাকে পাঠিয়েছি আমি
শবযাত্রায়
হৈ-হট্ট করতে
রাতে, এখানে কবর দিয়েছে তাদের
এবং তুমি আমার জন্যে অপেক্ষা করছো বুড়ো হয়ে উঠবে ব’লে একদিনের মধ্যে
আগুন-প্রান্তে
অনেকের সাথে দেখা করলে তুমি
যারা তাদের স্তন হঠাৎ সরিয়ে
রেখেছে
খুঁজে পেলাম
মাখন ডিম রুটি আর মধু এবং
পরে...
সেইদিন ওদের মেয়েদের বিয়েতে দিচ্ছিল
তারপর ভেঙে পড়লো জ্ব’লে পুড়ে খাক ডালপালার মধ্যে
এবং দিগন্তে ঐ তারার আলো এবং
এবং একটি আগুন
নিজেই, তার মুখের
উজ্জ্বল ও উজ্জ্বলতা
(আত্মত্রাণের প্রত্যাশাগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে কাঠের
মধ্যে, কাঠ থেকে দৌড়ে যাচ্ছে প্রেত, অথবা তারই মতো কিছু একটা)
হারিয়েছে যা, তার জন্য সেই সন্ধ্যার কোন্ স্মৃতি আমি
চারণ করব।
২৩.
লোকটা বলেছিল
আমি কিন্তু পেছনে পেছনে তাড়বো শেষতক আমি কিন্তু টপকে
যাবই
আমার মাংসের আত্মা আমি পুরোটা উপচে দেবো যতটা গলেছে
পিঠে সওয়ার হয়ে রক্ত-গঙ্গার
ফিসফিস ঢেকে দেবো ওদের
তার আগে
রাত্রি নামবে তার আগে
চলো গান হোক
এই দেওয়ার জন্য
মাঠে-ঘাটে শাদা-ধূসর পালক বরফ
শিকারী কুকুর চেল্লাচ্ছে তার গন্ধ পেয়ে ওরা ফল হচ্ছে খাবার হয়ে যাচ্ছে ওরা
গাছ, যখন জলের সাথে খেলা চলত গাছের
মিষ্টি ক’রে দিত জল
আর সকাল
অবধি যদি সে খেলা চলে
পোকারা জন্মাচ্ছে পোকারা ঘুরছে আর পচা গন্ধ জলসীমার তলায়
বাটি ভরা জল, মুখে দিতে পারত না কেউ
গ’লে গেছে সব তার মধ্যে, শুধু একটি বাদে।
সূর্যের নীচে হাড়গুলো হয়ে গেছে জিপ্সাম্
লোকটা এবার মরুভূমিতে গিয়ে উঠল
রাস্তায়, তাঁবু পেতে বসলো সেখানেই।
হাত দাও হাত যে-হাত ছড়াতে
চাইছি জলের ওপর
ঈশ্বর, যে রওনা দেবে আমাদের আগেই
পাহাড়ের নীচে নীচে ঘুরছে ধ্বংস-জাহাজ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন