• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

রতন দাস

(কাব্যগ্রন্থ- ‘কাকতাড়ুয়ার গান’,’পিরামিড ও অন্যান্য কবিতা,‘সাইনাইড পৃথিবী’ , ‘মুখোশের আড়ালে’...)


কবি রতন দাস তাঁর ‘পিরামিড ও অন্যান্য কবিতা’ র উৎসর্গে লিখছেন ‘আমার কবিতার শত্রু ও মিত্রদের’। মহাকাল আর মহাশূন্যের ভেতর কবিরও কি তবে রয়েছে অস্তিত্বের ত্রাস! ভরহীন স্মৃতিহীন সম্পূর্ণ নগ্ন ভাসমান বিন্দুর মত কবিতা নিয়ে কবিরাও কি তবে থেকে যেতে চান রেশনলিটির ভেতরে! অথচ এই ডটকম দুনিয়ায় এই ব্যালাস্টিক সংগ্রহশালায় ‘বিন্দু মানে নিঃসঙ্গতা’ বিন্দু মানে ভুলে যাওয়া। আর এখান থেকেই প্রশ্ন জাগে কবি তবে কাকে উত্তরাধিকার দিয়ে যান তার অক্ষরের উঠোনে রোদ পোহাবার জন্য?আর যাদের দিয়ে যান তারাও কি গুছিয়ে রাখে তাঁর সাহিত্য শস্যের তাঁবু? প্রশ্ন জাগে শিল্পী তবে কি আদতে একা! প্রকৃত প্রস্তাবে অসম্ভব রকম একা? ভিক্ষুবালকের মত দোরে দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার লাবণ্যভাণ্ডার রাখার একটি আদর্শ পাত্রের খোঁজে আর তার সতেজ স্বপ্ন উপচে পড়ছে রাস্তায় রাস্তায়।নাহলে আমরা ভুলি কিভাবে একটি জায়মান কবিসত্তাকে!কীভাবে আত্মপ্রসাদে মুছে ফেলি একের পর এক স্বাগত আত্মীয়কে! কবি রতন দাস মানুষের সাথে মিশতে না পেরে মাছজন্মের শুদ্ধতম গণিতের খোঁজে শুভেচ্ছায় পাখনা নাড়াতে নাড়াতে চলে গেলেন তা প্রায় মাস সাতেক হবে।এবং যথারীতি আমরাও ভুলে গেলাম গুল্মের মত নাড়াচাড়া করতে করতে।মনে কি রেখেছিলাম জীবিত কবিকেও?কালের প্রেক্ষিতে দেখলে কাল নিরবধি,সময় প্রবহমান অর্থাৎ বিস্মরণের যৌক্তিকতা নিয়ে যুক্তি থাকতেই পারে,কিন্তু উপেক্ষিত কবিজন্মগুলির কাছে এলে উপেক্ষার মত মানুষী অভ্যাসগুলোকে মৃদু ও অত্যন্ত মানবিক বলে কিছুতেই সম্পূর্ণভাবে মানা যায়না।কবি আসে কবি ফিরে যায়, নির্বাসন দন্ড তার জন্য বরাদ্দ থাকেই। কিন্তু অন্তঃকৃতির লিপিরূপাগুলি অন্বেষী পিঁপড়েদের মত আমাদের সস্তা বিস্মৃতিতে কখনও কি খুঁজতে আসেনা মায়াকাননের শর্করা!

কবি রতন দাসের কবিতার ময়নাতদন্ত আজ না হয় থাক। আসলে কবিতা নিজেই তো একটা প্রোটাগনিস্ট, জ্যামিতি কেটে তার ব্যাখা ও বিশ্লেষনে নতুন করে নায়ক বানানোর দুর্বোধ্য খেলা আমরা শুধু খেলে যাই আপাত দার্শনিকতা খুঁজতে। যে কবি বলে যেতে পারেন- “ কে কোথায় যাব আমি জানি না/কে কোথায় জুতো খুলবে, পা রাখবে, আমি জানি না/ কে বসে পড়বে, কে দাঁড়িয়ে থাকবে, আমি জানি না/ঢেউ গুনতে গুনতে কত মাঝির বেলা কেটে যাবে/কত তরী তীরে এসে ডুববে, আমি জানি না/...কে কার পিছু নেবে/ আমি কী করে বলব?/ আমি শুধু বলতে পারি – শব্দরা/সত্যবাদী হয় না সবসময়”- সে কবির কবিতার আর কি ব্যাখা করার থাকে, তিনি তো শেষ সত্যি বলে গেছেন, লিখে গেছেন শব্দের শূণ্য সাক্ষ্য। আসলে কবি হয়ত তার স্বগতব্যাখায় প্রতিনিয়তই ফেরার শব্দ শুনতে পান প্রতিনিয়তই হয়ত জানেন আমি উৎপন্ন হব আমি উৎসর্গিত হব আমি উদ্বৃত্ত হব; আমরা পাঠকরা চেটেপুটে খাব তার রন্ধন প্রণালী আর হাত ধুয়ে গোটা জীবন নিয়ে ঢুকে পড়ব এক ভয়ংকর বৃত্তের মাঝখানে। কেউ তো কুড়িয়ে নেবনা তার মোহনবাঁশী, কেউ তো জানব না এর নাম মৃত্যু। কবিতার।কবির।

বাক এ হারিয়ে যাওয়া কবিদের নিয়ে লিখতে আসার এবং তাদের কবিতার সংরক্ষনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কবিদের মত কিছু অভিশপ্ত বিলুপ্তপ্রায় শ্রেনী যেন সর্বস্বান্ত হয়ে লুপ্ত না হয়ে যায়। রতন দাসের মত কবির কবিতার কাছে এসে বারবার মনে হয় সৃজনের শেকড় আঁকড়ে ধরতে চাইলে চারিদিকের এই উপকরনের ভীড়ে এমন অন্তঃকরনের সংরক্ষণ বড়ই প্রাসঙ্গিক।


চামড়া

দশজন মানুষকে পাশাপাশি দাঁড় করো
অনেক রকম প্রভেদ পাওয়া যাবে
বস্তুত দশ গুনিতক দশ, মানে একশ রকমের প্রভেদ
পাওয়াও আশ্চর্যের নয়
যেমন, দশজন দশ জাতির
কিমবা দশ দেশের হতে পারে
দশজনের রূপ ও ভাষা আলাদা আলাদা
খাদ্যাভাস, নেশা, প্রবৃত্তি, এমন কি যৌনক্রিয়াও
আলাদা হতে বাধ্য !

এবার ধরো দশজনের শরীর থেকে সমস্ত চামড়া
মাংসসমেত খুলে ফেলা হলো
অর্থাৎ দশটি নিপাট কঙ্কাল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
তোমায় দেখছে !
তুমি কি করে প্রভেদ করবে এবার?
সুতরাং চামড়াতেই সবকিছু
চামড়াই আসল ...

অথচ যারা দিনরাত ত্বকের যত্ন নিয়ে দুধ ও ক্রিম লাগায়
কিমবা বিউটি পার্লারে যায়
তারা চামড়ার এই গূঢ় বিষয়ে অতো ভাবে না কোনদিন
কিন্তু, কেন জানি না, এসব ভেবে
আজকাল আমার চামড়া ক্রমশ কুঁচকে যাচ্ছে !


টাইগার হিল

কুয়াশার ভেতর গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে
যেন গুমখুন করবে বলে ওৎ পেতে আছে আততায়ীরা
জিপের আলোয় পথ ভাগ হয়
সোয়েটারের সান্নিধ্য শিশুদের রক্ষা করতে পারেনা
বড়দেরও না
হাড়ের ভেতর চামড়া ফুঁড়ে শীতল-ওস্তাগর
হিমসুতোয় সেলাই করে !

আমি এখন কোন দিকে যাবো
পাপ না পূণ্য?
চারিদিকে কুয়াশা !
আমি এখন কোন দিকে চাইবো
সুখ না দুঃখ ?
চারিপাশে কুয়াশা!
কুয়াশার ভেতর ছায়ামূর্তির মতো শুধু প্রেত-গাছ
আর জুবুথুবুদের জটলা
তারই মধ্যে শিশুর কান্না,বৃদ্ধের হি-হি
যুবতীর ফিসফাস,যুবকের ধোঁয়া শহরকে মনে করায় ।

সূর্য ওঠে না !
কুয়াশায় ভরে আছে জীবন
হে হুজুগের দল, তোমরা ফিরে যাও নিচে
ফিরে গিয়ে কামড়াকামড়ি কর, বেচাকেনা কর মূল্যবোধ
এ সূর্য্য তোমাদের নয় !


ঢেউ

ঢেউ এর কাছে তেমন কি আর চাইবার আছে?
তেমন গান ও শোনাতে পারে কি?
তেমন ছবি ও এঁকে দিতে পারে?
তেমন মূর্তি ও গড়ে দিতে পারবে?
তাহলে আর মিছিমিছি ওর কাছে যাওয়া কেন?

শুধু ভুরভুরে বালির চর দেখে কি হবে?
একমুঠো মামুলি ঝিনুক বহে এনেও কোন লাভ নেই
সূর্যোদয়ের রহ্যসের গূঢ়তাও মানুষ বহুবার দেখে ফেলেছে
কচিছেলে ভোলানো ছড়ার মতন ঢেউগুলো একবার
তীরের কাছে এসে আবার ফিরে যায় মূঢ়তায় ...
এইসব বুজরুকিতে ভবি ভোলবার নয় !

ও শুধু ফেলে দিতেই জানে
কোন মানুষকে দাঁড়াবার কৌশল ও বাতলাতে পারবে না
তা হলে ওর ঐ মান্ধাতার আমলের ভেল্কিবাজী দেখতে
এতো কাঠ-খড় পুড়িয়ে
হাঁসফাঁস করতে করতে কাতারে কাতারে ছুটে যাওয়া কেন?

তবু বলি, ধীমান, যাচ্ছিস-ই যখন
একবার মনে করে ঢেউ এর গায়ে আমার নাম লিখে যাস
বলিস, ভাল আছি !


চাল

ঘোড়াটাকে খেয়ালতে পারছো না যখন
বোড়ে এক-ঘর এগিয়ে রাখো
তারপর চুপচাপ লক্ষ্য করো তোমার প্রতিপক্ষের মতিগতি
মনে রাখবে, রাজাকে ফ্যাসাদে ফেলার ফন্দি হচ্ছে !

বোড়ে কয়েকটা যায় যাক; আপশোস কোরো না
নিচুতলার ওরা ওরকম যায়
মন্ত্রীকে তৈরী রাখো
তবে আড়াই-চালই সবচেয়ে মারাত্মক
সজাগ থাকো
রাজাকে কিছুতেই খোয়ানো চলবে না!

ধৈর্য ধরে খেলা চাই হে –
অতো হড়বড় করলে হয় না
একটু ভাবো
প্রতিপক্ষকে ধৈর্যহারা করার চেষ্টা করো
ও বেদম হলে তবেই তোমার জিৎ !

মনে রেখো, একবার বাগে পেলে
তোমার প্রতিপক্ষ,জীবন,তোমাকে কিছুতেই ছেড়ে দেবে না !


পৃথিবী

শোলা জলে ভাসে,লোহা ডোবে
এবং নুন গুলে যায়
খুব উঁচুতে কালো ফুটকির মতন যে পাখিটি উড়ে যাচ্ছে
এসব তার জানার কথা নয়
কিন্তু তুমি-আমি এসব ভালমতন জানি
কারণ, প্রত্যেক প্রানীর পৃথিবী আলাদা রকমের !

একজন মদ্যপের পৃথিবী লম্বা ও গোল –
বোতলের মতন
একজন সুদখোরের পৃথিবী চৌকো ও মোটা –
নোটের বান্ডিলের মতন
একজন ধান্দাবাদের পৃথিবী সরু,মোটা,চ্যাপ্টা,গোল,
লম্বা,চওড়া,ছুঁচলো,ভোঁতা, প্রভৃতি
নানারকম হতে পারে …

মদ্যপের পৃথিবী, সুদখোরের পৃথিবী এবং ধান্দাবাজের পৃথিবীর
মধ্যিখানে আমি আর একটা সুঠাম পৃথিবী রাখতে চাই
যে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে শিশুরা হেসে ওঠে
এবং যমরালরা তাদের বিষ-কাঁটা ঝরিয়ে
প্রজাপতি হওয়ার অপেক্ষায় থাকে !


খেলা

আমার হাতের বেড়ি খুলে চোখ বেঁধে দিলে তুমি
এতক্ষণ আমি যা দেখছিলাম
তা ছুঁতে পারছিলাম না
আপাতত যা দেখছি না তাকেই
আমার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে
তোমার এ খেলাটি বেশ !

চোখ বন্ধ করে আমি এখন এক ঐশ্বর্যময় শূণ্যতার দিকে
ভেসে যাচ্ছি
এই শূণ্যতার নানান রঙ, ফেনা,স্বপ্নময়তা
আমি ভেসে চলেছি উগ্র তারাদের পাশ দিয়ে
রঙিন ঘাগরা পরা মেয়েদের গা-ঘেঁষে
বায়ু,বৃষ্টি,বিদ্যুৎ আমার মাথা ও শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে
অথচ, কি আশ্চর্য ! আমি তড়িতাহত হয়েও ভয় পাচ্ছি না
তোমার খেলাটি বেশ !

শুধু বন্ধচোখ খুলে দিলেই আমি ঐ শূণ্যতা থেকে
সটান নিচে পড়ে যাবো
আর এক কুৎসিত নরক তার অক্টোপাশ বাহু দিয়ে
আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে
আখের মতো চিবিয়ে খাবে
তারপর ছিবড়ে করে ফেলে দেবে শহরের প্রসন্ন রাস্তায় ...


এলোমেলো

ভাব নেই
ভাবনা নেই
স্পোক খোলা সাইকেল –
কী করে চালাব তোমায়?
কী করে লিখি তোমায়?
চোখের ভেতর নেমে আসে চিলকিগড়ের সবুজ হাওয়া
তোমার শরীর মনে পড়ে যেন শীতের ডুলুং নদী ...

তুমি হয়ত এখন টুথব্রাশে পেস্ট লাগাচ্ছ –
ফেনাময় জীবনের ঘ্রাণ নিতে নিতে এসে দাঁড়াচ্ছ জানলার সামনে
সেখানে শুধুই টায়ারের শব্দ এখন
থ্রি-টায়ার,টু-টায়ার প্রেম আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে
মেঘের শুধুই সীসের দাঁত ; ঘাপটি মেরে থাকা আর্সেনিক আকাশ
কী করে বুঝবে বুকের হুহু-হাহা ?
রাস্তা পার হয়ে চলে যায় লিওনার্দো – কাঠবেড়ালি
তুমি তাকিয়ে দেখার সময় পাও না ।

আজই বিকেলে হয়ত আউট্রামের যাবে তুমি –
আইসক্রিম খাবে স্কুপে, মুন-ম্যাজিক – আর গ্যাংগ্রিন গঙ্গার জল
দেখতে দেখতে ভুলে যাবে পুরোনো ছেঁডো,গন্ধমাখা
গা ঘিনঘিন করা গোলা প্রেম –
এদিকে ফুলডুংরি টিলার মাথায় তখন আকাশ আস্তে আস্তে
হেলে যাবে পশ্চিমে আর একটা আদিবাসী,অশিক্ষিত,গেঁয়ো
দেহাতি রাত আনবার জন্য ...
মদে ডুবে যাবে পশমিনা চাঁদ টিলার টেবিলে !


সাঁতার

সাঁতার শব্দটা নতুন নয় –
আকাশ সাঁতার কাটে
ঘরবাড়ি সাঁতার কাটে
গাছেরাও সাঁতার জানে ...
নদী,সমুদ্র,পাহাড়,গোটা ব্রহ্মান্ডই সাঁতরে বেড়াচ্ছে !

একবার সাঁতার কাটতে কাটতে আমি বৃহস্পতিতে চলে গিয়েছিলাম-
দেখলাম, সেখানে গাছেরা স্তন্যপান করে
পর্বত সন্তান প্রসব করে
বৃষ্টি উধ্বর্মুখী এবং সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়
কিন্তু কোনো হাহাকার নেই, হানাহানি নেই, ল্যাং মারামারি নেই
সবকিছুই বেশ স্বচ্ছন্ন, ধামাকাহীন ...
এসব দেখে আমার বেশ ভালো লাগল
আমি পৃথিবীতে এই নিয়ম চালু করতে চেয়েছিলাম !

কিন্তু তা করা গেল না ...
কারণ, সাঁতার এখানে সন্তরণ নামে খ্যাত –
এখানে ফ্রি-স্টাইল,ব্যাকস্ট্রোক,ব্রেস্টস্ট্রোক,বাটারফ্লাই এসব নিয়ে
ক্ষুর-ঘষাঘষি প্রতিযোগিতা হয়
এবং কিছু মানুষ সাঁতারের সঙ্গে চালাকি মিশিয়ে অন্যকে ডোবাবার
চেষ্টা করে –
আর কিছু মানুষ ঠিকমতন সাঁতার না জানায় নিজেরাই ডুবে মরে !
গাছ কিংবা মানুষ

একটা গাছ ...
টবের মধ্যে অফসেট-গাছ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছে
আমি সেই গাছের পাতায় পৃথিবীর মানচিত্র দেখতে পাচ্ছি
বন্ধুদের ঘরবাড়ি দেখতে পাচ্ছি
জলাশয় দেখতে পাচ্ছি,পাথর দেখতে পাচ্ছি
এমনকী সেলফোনে বেজে ওঠা রিং-টোন শুনতে পাছি !

একটা গাছ, না মানুষ?
একটা গাছ-মানুষ, না মানুষ-গাছ সবুজ সেলুলয়েড পাতা নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে টবের ওপর?
টবকে মনে হচ্ছে আল্পস পর্বতের চূড়া –
আমার মনে হছে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি
আল্পস পাহাড়ে উঠে যাচ্ছি ...
সঙ্গে সঙ্গে চলেছে একটা সফটওয়ার গাছ
আমি ল্যাপটপে ডাউনলোড করছি
গাছেদের কথাবার্তা,যৌনতা,ক্ষুধা,মারামারি,হিংস্রতা,প্রেম ...

একটা গাছ ...
একটা গাছ-মানুষ, না মানুষ-গাছ এভাবেই দেখছে আমাকে ...
এভাবেই দেখতে পাচ্ছি আমি পৃথিবীকে –
পৃথিবী দেখছে আমাকে –
আমরা পরস্পরকে দেখছি নিবিড়ভাবে ক্লোরোফিল-চোখ দিয়ে !


মীন

বহুরূপী তুমি। ঘনঘন রং বদলাও, গতি বদলাও, লক্ষ্য বদলাও,
এমনকী পরিচয় বদলাও। স্বপ্নও হয়তো – বা বদলে বদলে যায়। নতুন স্বপ্ন তৈরী
হয়। স্বপ্নের বৃত্তরা ঘোরাফেরা করে তোমার আশেপাশে। তোমার অন্তর্গত চেতনার
রং- কে নিয়ন্ত্রণ করে বারবার। পৃথিবী দুটো হলে একটা সম্পূর্ণ তোমার। গোপন-
রহস্যময়, সুন্দর-বর্ণময়,নৈঃশব্দ্য-স্বপ্নময় সবকিছু তোমার জন্মের মধ্যে লীন
হয়ে আছে। তবে ফুল ও ফাগুন যেমন আছে,হারপুন ও বঁড়শিরাও আছে
তেমনই । অসময়ে শত্রুর উৎপাত বিপদে ফেলে দিতে পারে।মাথা ঠান্ডা রেখে
মোকাবিলা করবে। প্রেম এগিয়ে আসতে পারে। তোমার বুদবুদ দিয়ে তাকে
অভ্যর্থনা করবে। সৃজনকর্ম উপলক্ষে দূরভ্রমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চলাফেরায়
বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। তোমার প্রতিদ্বন্ধীরা তোমাকে লক্ষ্য
রাখছে সবসময়। নিজের শ্রম ও সৃষ্টির জন্য প্রশংসিত হবার লক্ষণ আছে ।।


হাওয়া

দুই আর তিনে গুণ কর – গুনফল হবে-
একটা গাছের পাতা ...
নয়কে উনত্রিশ দিয়ে ভাগ করঃ ভাগফল হবে-
দুটো চাঁদ ...
একটুও আশ্চর্য হবার নয় –
মাস্টার বিনয় মজুমদার এমন অঙ্ক কষতেন ...
একটা ছোটো পানপাতা ঢেকে দিচ্ছে বড়ো চওড়া মানপাতাকে
একটা তৃণ চাপা দিয়েছে একটা বটবৃক্ষকে
একটা পিঁপড়ের পায়ের নীচে চ্যাপটা একটা আস্ত হাতি
আমার হাতের মুঠোয় লুকিয়ে আছে একটা
জ্যান্ত শহর !

একটুও ঘাবড়াবে না তুমি –
তেষ্টা পেলে জল খেতে পার ...
এমনটা হয়
এমনটা হবারই কথা
সবই হাওয়ার ব্যাপার ...
শুধু হাওয়া –
হাওয়া সব পারে ...
ফুরফুরে
অথবা
ঝোড়ো; হাওয়া চাই
কেবলি হাওয়া ...


স্বপ্নমন

ঘুমের ভেতর একটা সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি –
হরবোলা সেতুর নীচ দিয়ে মেঘ বয়ে যাচ্ছিল
পিচ্ছিল সেই মেঘের মধ্যে দিয়ে দু-একটা চাঁদিয়াল ঘুড়ি, একঝাঁক পাখি
এবং কিছু বারমুডা বেলুন উড়ছিল ...
ধরা যাক, প্রথম যে পাখিটা চোখে পড়ল তাকে দেখে আমার
প্রথম প্রেমের কথা মনে পড়ল ...
সে ছিল ওরই মতন উড্ডীন, বেপরোয়া, এবং স্বাধীন ...
পাখিটাকে ভালোভাবে দেখবার জন্যে আমি ঘুড়িগুলোকে আকাশ থেকে
সরিয়ে দিলাম !

আমি সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে চললাম –
কয়েক খন্ড কুলফি-মেঘ আমার হাতে ঠেকে গেল; মাঝে মাঝে কয়েকটা
হেলোজেন-তারা আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিল
আমি লেবু-চনমনে অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে সেতু আর শেষ
হয় না যেন ...
এই অনন্ত সেতুর ওপর দিয়ে কিছু পর্যটক শব্দকে আমি হেঁটে আসতে দেখলাম
শব্দগুলোকে আমি সেতুর ওপর থামিয়ে দিয়ে তাদের গন্তব্য
জানতে চাইলাম –
সঙ্গে সঙ্গে তারা পাখি হয়ে গেল
তাদের ব্লক প্রিন্ট পালক, স্টিরিওফোনিক শিস, কী অপূর্ব কলমকারি রং –
আমি একেবারে জমে গেলাম
তারা আমাকে ডিজিটাল ডানা দিল; আমি
উড়ে গেলাম আকাশে –
আকাশের ওপারে অন্য আকাশে, অন্য সেতুর দেশে –
অনন্যতায় !


মৃত্যুমন

যখনই ভেবেছি মৃত্যুই ঠিক ...
তখনই টুপ করে একটা বানজারা বাঁশপাতা খসে পড়ে মাটিতে
প্রসূতি আকশ তার ফোলাপেট নিয়ে আমাকে ডাকে –
জিজ্ঞাসাচিহ্নের মতো মায়াপাখি উড়ে যায় আড়াআড়ি ...
ডুবুরি স্তব্ধতা নামে বুকের ভেতর
আদিবাসী জোনাকিরা নিশাচার গান গাইতে গাইতে মিলিয়ে যায়
অন্ধকারে !

যদি আর একবার মৃত্যুর কথা মনে হয় ...
নৈঃশব্দ্য চিরে একটু জল দিয়ো আমাকে –
আমি স্মৃতিগুলো বাসি ফুলের মত ফেলে দেব জানলা দিয়ে
হাত-পা ধুয়ে নেব ভেষজ বাতাসে ...
বৃষ্টিমোম মেখে নেব গায়ে
পাললিক মেঘ ভেঙে ফেনি বাতাসা চাঁদ উঠবে এ্যক্রিলিক আকাশে ...

যদি সত্যি আর কখনও মৃত্যুর কথা মনে হয় ...
তাকে বলে দিয়ো –
জলের ভেতর বুদবুদ হয়ে
হাওয়ার ভেতর বাষ্প হয়ে
কাদার ভেতর কাঁকর হয়ে , মাখামাখি, জাপটাজাপটি করে
হাইব্রিড স্বপ্ন নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছি ।।


হিম-সন্ত্রাস

কম্বলের ইগলু –
হাতের মধ্যে ঢুকে যায় হাত, পেটের মধ্যে পেট
বুকের মধ্যে বুক
শীত ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো করি কাগজের মতন
ঠান্ডা হতে হতে শরীর জমে ভ্যানিলা আইসক্রিম ।

হাড়ের ভেতর মরফিন বাঁশি –
বাঁশির শব্দে পপ-পরিরা হুইস্কি খেয়ে নেচে ওঠে শিরায়
খুলির ভেতর অন্ধকারের গুঁড়ো ঝরে ...
মনে হয় ঘুমিয়ে পড়ি
মনে হয় জেগে থাকি
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে উড়ে যায় বাতাসে
আবার জুড়ে যায়
প্রানপ্রণ চেষ্টা করি হা-পা টানতে –

হে মহাকাল –
শুনতে পাচ্ছ তুমি ?
একবার এসে উদ্ধার কর আমাকে –
কম্বল-কফিন থেকে টেনে বার কর, প্লিজ –
আর পারছি না, মমি হয়ে গেছি !

আমার পরমাত্মা –
একবার শেষবার এসে আমাকে জাগাও ...
প্রাণ দাও, তাপ দাও, ক্ষুধা দাও,আলো দাও, যৌনতা দাও –
হিম দিয়ো না, শূণ্যতা দিয়ো না, মৃত্যু দিয়ো না ...



********************************
My Blogger Tricks

1 টি মন্তব্য: