স্বপন রায়
তমসাভেদী আধারে
স্বপন রায়
স্বপন রায়
রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
“তামস জার্নাল” আমায় কবিতার লগ্নীকৃত আবহাওয়া
থেকে বিলগ্নীকরণের দ্বন্দ্বপ্রাখর্যে নিয়ে এলো! এ সেই কবিতাঘন অনাস্থা যা আমায় আরো
একবার মনে করিয়ে দিলো কবিতা আমার মধ্যে নেই,মননগত হয়ে নেই কবিতার তথাকথিত অস্মিতা,কবিতা
সেই অনাস্বাদিত চারণভূমি যেখানে কবি কবিতার সঙ্কেত খুঁজে পায়,চমকে ওঠে,আহ্লাদিত
হয়!রুণার এই বইটি তার নিজের পূর্বে প্রকাশিত
বইদুটি থেকে অন্যমাত্রার! এই বইটিতে সরন্তদ্যুতির সঙ্কর রসায়ন অবিরত চলতেই
থাকে,সেখানে কবিতার চালু মাপকাঠিগুলো পানসে হয়ে যায়,হারিয়ে গিয়ে ভেসে ওঠে আদৃত
মূল্যবোধের অসম্বৃত সূচিমুখগুলোঃ
“একা হাওয়া
একলা আকাশ
একপশলা প্যাশন
অলখ স্বরে ডেকে নেয় কমলা রঙের বেলুনগুলো...”
লিখেই রুণা এক স্বয়ংপ্রভ টেক্সটের অভাবিত নিয়ে
আসে, ভেঙে দেয় কবিতার সিঁড়িকামোহ,সরাসরি গদ্যের কাঠিণ্যে নিয়োগ করে নিজের
প্রতিসরিত দেখাশানাগুলোর তমসাদীর্ণ
আলোকরেখাগুলি,মনে হয় কবিতার সাজানো বিভ্রমে এসে গেছে কণাবিজড়িত সেই অভিঘাতসমূহ
যা এক এস্পার ওস্পারে দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠককে!
আর এখানেই শুরু হয় যা
রুণা লিখেছে,’চলো,দেয়াল ভাঙি/গড়ার আগে’!ভাঙা যখন সুপ্রযোজিত হয় এবং নিয়ন্ত্রিত,তখন”গ্রহ
নক্ষত্র ফেরে না আর/চাঁদ বিছানো প্রেমাবোল তাবোল ফোটায়/লালবাতির অবৈধ
হরফে...”পাঠক,অসহায় পাঠক তো “সংশয়ে টলটলানো নিউক্লিয়াস...” সে দেখে রুণা কিভাবে
বন্ধনের অনুগামী সমস্ত এককগুলো ভেঙে দু টুকরো করছে আর কবিতা তার সুখি গৃহকোণ ছেড়ে
বেরিয়ে যাচ্ছে এক মুহূর্তের এক সম্ভাবনার দিকে....আমিও তো পাঠকই,আমি এমন বিগঠিত
চলনে কত ভাবেই না আরোপিত করি নিজেকে!রুণা দেখিয়ে দেয়,”হাড়ের ভেতরে লাফিয়ে উঠছে
ছায়া”,দেখায় আমার”বুননগ্রস্ত আঙুল” আর আমার “হারমোনিকাপ্রবণ ঠোঁট”....রুণার
“ম্যাজিক শহর” কখন যেন আমার হয়ে ওঠে!
এবং আমি দার্শনিক হতে
পারিনা আবার!ঔকাদ দেখিয়ে দেয় রুণাঃ”দরজার নিহত হলে যাওয়ারা স্বপ্ন দেখে/স্মৃতিজটে
ঝুলে থাকে/ফেরার
নির্দেশ((পৃঃ১১/দার্শনিক),কবি চাইলেও সত্যের চরমে আস্থা রাখতে পারেনা,রুণাও
তাই তার পাঠককে ব্যতিক্রমী অস্থিরতায় নিয়ে যায়,তার কবিতা পাঠকের কাছে নিয়ে আসে
হাজার দরজার বিকল্প,কবিতা’র ব্যক্তিগত সীমানা ছড়িয়ে পড়ে পাঠকের সংশয়াচ্ছন্ন
পাঠসূত্রগুলিতে,কবিতায় চমক থাকেনা আর,সেভাবে পালিশেও থাকেনা,শুধু এক অনিবার্য
অসমাপাতনে রুণা বিস্মিত করে চলেঃ
১.ভরের কথা অনেক হল
গতির কথাও
হয়তো বা গরগতির অসমান প্রতিরোধেই তোমার মার্জিত
জাগরণ অথবা একান্ত
ঘুমঘোর(অনন্তের প্রশ্নচিহ্ণগুলো)
২.ভাবনার খোলা পিঠে
আভূমি নদীর ঝোঁক
গাঢ় ঘুম
মৃদু স্বপ্ন
শুধু জড়তার পাশে জেগে থাকে আমার ঘুমের সমস্যা
৩.
স্নায়ুকোষে খুব সতর্ক এক সাপ
দুলছে
এপাশ
ওপাশ
বিষন্ন তার নাম
খুঁজছিল (চিহ্নকের অদৃশ্য ছুরি)
অদ্ভুত না? রুণার কবিতা
যেন উত্তরের অপেক্ষায় না থাকা প্রশ্নের স্বাধিকারপ্রমত্ত বিকিরণ,ওই “একটু ডিও নাকি
ধুনো” ধরণের,যেমন রুণা লিখেছে!আর মনে করিয়ে দিয়েছে হাল্কাভাবেই “আনসারটেনিটি প্রিন্সিপলের”
কথাও!রুণা ধারণাকে ভাবনার বিভঙ্গে রাখে,তার সুপ্তি ভেঙে দেয়,আর জাগিয়ে দিয়ে দেখাতে
চায় এক ছকহীন দুনিয়ার কেওটিক তরঙ্গনৃত্য যেখানে কি এক অসম্ভবের ছোঁয়ায় এমন নাদৃশ্য
হতে থাকেঃ
তোলপাড় রোল
বোল
ও বোলানো ধারাবাহিক
খুলে খুলে যায়
শ্রীমতীর বাজুবন্ধ
(অস্বীকার)
রুণার এই তৃতীয়
কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক,”কৌরব”!পাঠক আপনাকে এই “বেরংনামা” পড়তেই হবে,নইলে “রুমাল
থেকে নোস্টেট বেড়ালে” পৌঁছবেন কি করে?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন