‘একটানা
ঝিঁঝিঁগান জ্যামিতিক সরলরেখায়’…
সুবীর
সরকার
১।আমাকে ভাসিয়ে তুমি
বেহুলা
আমি লখিন্দর।
২।প্রসন্ন বিকেল,বিভ্রান্ত তুমি
মালা দিও না পাশে বসে থাকা গাধাকে।
৩।শিকার ও শিকারীর চোখ
ভোরের বালিশে!
৪।মিলন চাইলে ছলনা বাড়ে
নৌকা বর্ষাজলে
৫।আমাকে খুঁজছো মেলার
ভিড়ে
নেই দূরে
মাননীয় পাঠক,উপরের কবিতার
অংশগুলি উড়ে এল অসম্ভব স্মার্ট ও শক্তিশালী এক তরুন কবি রাহেল রাজিব-এর
কাব্যগ্রন্থ ‘জুঁইদি ও মাতাল প্রেমিক’ থেকে।৬৪ পাতার এই বইএর
অনবদ্য প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান।প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর।বইটি ২০১৪-র ফেব্রুয়ারীতে
প্রকাশ পেয়েছে।কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন ৩ জন অগ্রজ কবি সাজ্জাদ শরিফ,টোকন ঠাকুর ও
জাফর আহমদ রাশেদ-কে।বইএর শেষ চার পাতায় বইটির ইতিবৃত্ত বলেন তিনি ‘সম্পর্কে
প্রাসঙ্গিক’ শিরোনামে।
রাহেল রাজিবের জন্ম ১৯৮৪।দিনাজপুরের ফুলবাড়ির
এই কবি বর্তমানে অধ্যাপনাসূত্রে ঢাকার বাসিন্দা।শুণ্য দশকের রাহেল কেবল শক্তিমান
কবি নন,গদ্য গল্প প্রবন্ধ সাক্ষাৎকার গ্রহণ ইত্যাদি বহুমুখিনতার
ভিতর তার সৃষ্টিময় যাপন।
‘জুঁইদি ও মাতাল প্রেমিক’ এক অদ্ভুত
মাদকতায় ভরা বই।জুঁইদি একজন আবহমানের নারী।প্রেমিকা।আশ্রয়।জুঁইদি মানেই আকাশভরা
মেঘ ও রোদ।জুঁইদি সবার জীবনেই থাকেন,কিন্তু জুঁইদিরা তা টের পান না!বাল্য পেরোন দিনকালগুলিতে
জুঁইদির জন্য কবির যে মুগ্ধতা,আবেগ,আশরীর তুমুল ভালোবাসা
আর সর্বোপরি বুকের খুব নিজস্ব এক উঠোনে
জুঁইদি’কেই বহন করে চলা; নিঃসন্দেহে পুরোটা বই
জুড়ে কি তীব্রভাবে তীরের ফলার মতন তা আমাদের বিদ্ধ করে চলে।‘জুঁইদি ও মাতাল
প্রেমিক’_এই বইটিতে রাহেল রাজিব এক নুতন জার্নির সূচনা করেছেন।
হালকা একটা মেঘের ভিতর ডুবে থাকেন কবি।ভাষার
সহজতায়,প্রতীক ও ইশারায়;আদিঅন্তহীন জীবনযাপনের
জায়মানতাকে রাহেল নিখুঁত তুলে আনেন আর মজা ও ম্যাজিকের মতো দোলাতে থাকেন কবি।আর
বলেন-’বৃত্তভয়ে ডেকে নাও তপ্তদুপুরে,একা’।এক চোরাটানের কুহক জুঁইদি’র দিকে কেবলই
ধাবিত করে কবিকে,তার পৃথিবীময় কেবলই জুঁইদি আর জুঁই দি।জীবনের প্রতি
বাঁকেই পল অনুপল পরিক্রমণ করতে করতে কবি নিরাপত্তা খোঁজেন।আশ্রয় ও উষ্ণতা খোঁজেন
জুইঁদি’র কাছেই।এক তীব্র আর্তিতে তিনি বলে ওঠেন,
‘জুঁই,ভাঙন এখন চারিদিকে’
অসহায় কবি দেখেন,
‘নোংরা মানুষের ভিড়ে কাকপক্ষী চেনা দায়’!
রাহেল স্বপ্নময় এক
কবি।সারাক্ষণ কি এক খোঁজ তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়!বিকেলের রাজহাঁস,হেমন্তের খড়স্তূপ,কাঁটাতার,তিস্তাপাড় তাকে
সুদূরতাময় এক ঔদাসীন্যের কাছে নিয়ে যেতে থাকে।আর জুঁইদির জন্য,জুঁইদিকে নিয়েই
যে তার ‘ছায়াবৃত্ত আঙিনা’।ঘুমিয়ে থাকা চিঠির বান্ডেল খুলে রাহেল দেখেন অপরূপ বৃষ্টির
পৃথিবী।তার মনে হয়,
‘জুঁইদি যেন বৃষ্টির প্রতিশব্দ’
জীবনের গহীনে ডুবে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে
জুঁইদির কাছেই কবির সমর্পণ!জুঁই দি অন্য এক জীবনের সাবলীলতায় হয়তো সাবলীল,কিন্তু তবুও কবির
অকপট উচ্চারণ,
‘তোমার ভ্যানিটি ব্যগে আমার ঘরের চাবি’
কবি দেশকালসমাজসচেতন মানুষ।তার দেখা
আন্তরিক।তিনি লেখেন,
‘জুঁই,এই বর্ষায়
জামাত-শিবির নিপাত যাক’
তিনি ছলাকলা নিয়ে বুঁনে যান সম্পর্কের
ভিত।তার চেতনায় গেঁথে থাকে টিপাইমুখ বাঁধ,চে গেভারা,দেশের জনমানুষ ও
প্রকৃতির মায়াকাজল।
কবি বিস্বাস করেন সম্পর্কের সারল্যে।আবহমানের
মানুষজন,প্রেমভালোবাসায় ভরা এক পৃথিবীর স্বপ্নই দেখেন,দেখে যেতে থাকেন
অন্তহীন।নৈঃশব্দের ভিতরে খুঁজতে থাকেন বিষাদ।তুমুল আকড়ে ধরেন জুঁইদিকেই,
‘তোমার মোহে স্বপ্নচূড়
মাতাল আমি!’
আর হাহাকার গড়িয়ে নামে গোপন গানের
মতোন।মেঘনদীবাজনার কোরাসে নির্মিত হতে থাকে জুঁইদিকুহক।জুঁইপুরাণ।
রাহেল রাজিব তার এই বইটি জুড়ে দীর্ঘ এক
আত্মজীবনী লিখে গেছেন।একটানা বলে গেছেন তুমুল ও তীব্র সব অফুরন্ত গল্পগাছা।আলোকিত
শব্দভাষার উঠোন পেরোছেন রাহেল।কি গতিময় তার ভঙ্গী,শব্দব্যবহার!সাধারন
দৃশ্যগুলি অসাধারন হয়ে ওঠে,পুকুরের হাঁস যেমন।ইটপাথরের ঘরবাড়ি,ঢেকিকচুবন আর
জুঁইদি সব কেমন চিরকালীনতায় গিয়ে মেশে,মিশে যায়।
মুগ্ধতা ও অভিবাদন রাহেল,আপনাকে।
জুঁই
দি ও মাতাল প্রেমিক ॥ রাহেল রাজিব
শুদ্ধস্বর,কাঁটাবন,ঢাকা
মূল্যঃ১২০
টাকা
‘ভাবনার জল ভিজিয়ে দেয় কালের কটিদেশ’
সুবীর সরকার
‘অলৌকিক স্বপ্নের যৌথ বিবৃতি’। কবি সানাউল্লাহ সাগর-এর নতুন কাব্যগ্রন্থ।৫৬
পাতার এই বইটিতে ৫০ টি কবিতা রয়েছে।অনবদ্য প্রচ্ছদ এঁকেছেন এম. আসলাম লিটন।প্রকাশকঃ আড্ডা
প্রকাশন,বরিশাল,বাংলাদেশ। বিনিময় মূল্যঃ ৮০ টাকা।
সানাউল্লাহ সাগর বাংলাভাষার কবি। বরিশালে
বসবাস করেন।সম্পাদনা করেন ২ টি ছোট পত্রিকা__আড্ডা ও কীর্তনখোলা। ২৭ বছর বয়সী এই
তরুন কবি একজন স্বপ্নময় ভাষাশিল্পী। দু’চোখে ভুবনমায়া।সর্বাঙ্গে মেখে নেন
কীর্তনখোলার সবুজ ও সহজ বাতাস। তিনি বুঝিয়ে দেন বুঝিবা যে তিনি লিখতেই এসেছেন।
সাবলীল ভাষা,শব্দপ্রয়োগ-এ সচেতনতা,সহজভাবে
কথা বলা সানাউল্লাহর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।তার কবিতা বিবৃতিধর্মী।স্বপ্নময়,মায়ামেদুর
উচ্চারণ দিয়ে তিনি তার বোধের জগতকে গহীন গাঙে যেন সাম্পানের মতো ভাসিয়ে দেন;ভাসিয়ে
দিতে থাকেন। কবি বলেন__’তুমি মেঘজলে ধুয়ে দিলে অসমাপ্ত গীতিনাট্যের আঁচল/পাশে আমি
ব্যস্ত আহত সংলাপের জলছবি আঁকতে...’
তীব্র এক জীবন গনগণে দুপুররোদে যেন খেলা করে
যায়।
প্রেম,প্রকৃতি,সম্পর্কের জালকে কবি বারবার
নিজেকেই শুদ্ধ করেন,খুঁজে বেড়ান__
‘মধ্যরাতের নীরবতায় সাঁতার কাঁটে স্বপ্নের পেন্সিল’
মিথ,লোকজীবন,আবহমান বাংলার দিকে ঝুঁকে পড়েন
কবি;অনবদ্য শেকড়ের টান যেন—
‘অজ্ঞাত বাউল হাওয়ায় উদাসী সুর তোলে’।
অথচ কোথাও জায়মানতা থাকে না।নদীপাড় থেকে
হাওড়বাউর থেকে হাহাকারের মতো হাওয়া আসে।জীবন আদতে এক খুঁটিনাটি
ভ্রমণ।যাত্রাসঙ্গীত।দিনের পিঠে কিভাবে চলে আসে দিন!জন্মমরণশাসিত জীবন সেজে ওঠে
আশ্চর্য এক বাধ্যবাধকতায়।তুমুল এক ঘোরে সানাউল্লাহ বিড়বিড় করে বলেন—
‘আমি তোমাকে আপাদমস্তক প্রেমের জলে
ডুবিয়ে রাখতে চাই’;
আমাদের যাপিত জীবন আদ্যন্ত শস্যময়।নাগরিক কবি
দেশকালচেতনার ভিতর আন্তরিকভাবেই শেকড়সন্ধান করেন।ঐতিহ্যের প্রতি দায়বধ্যতা তার__
‘নিচে ধৈর্যের পতাকা হাতে অলস কৃষক’।
আর,
‘একই জলে হামাগুড়ি,একই জলে স্নান’
গোটা বই জুড়ে,৫০ টি কবিতার পরতে পরতে
চিরকালীন সব গান যেন বাজতেই থাকে।কবি সানাউল্লাহ সাগর একটানা বলেন নদীজলবাতাসের
কথা আর আমরা আবিষ্ট হই কবির উচ্চারণে,
‘জমানো যাতনা ডুবে গেলো কীর্তনখোলার
মোহনায়’।
সানাউল্লাহ সাগর,আপনাকে অভিবাদন ও শুভেচ্ছা
নিরন্তর।
অলৌকিক স্বপ্নের যৌথ
বিবৃতি
সানাউল্লাহ সাগর
আড্ডা
প্রকাশন-বরিশাল,বাংলাদেশ
bhalo laglo.. boi gulo porte pele bhalo hoto..
উত্তরমুছুন