তামিল ভাষার কবি
মালতী মৈত্রী-র কবিতা
অনুবাদ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
তামিল ভাষার কবি মালতী মৈত্রী-র জন্ম ১৯৬৮ সালে। বড়ো হয়েছেন পুদুচেরীতে। সম্পাদনা করেন ‘অনঙ্গু’ পত্রিকা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বই চারটি। ‘শঙ্করাপরানী’(২০০১), ‘নীরিন্দ্রি আমাইয়াথু উলাগু’(২০০৩), ‘নীলি’ (২০০৭) এবং ‘এনাথু মধুকুদুভাই’। ২০০১ সালে পেয়েছেন তিরুপুর তামিজ সঙ্গম পুরষ্কার। জেণ্ডার পলিটিক্স এবং ফেমিনিজম-এর ওপর প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন মালতী। সম্পাদনা করেছেন ‘ইণ্টারন্যাশনাল তামিল উওমেন পোয়েমস্’ সঙ্কলন।
পৃথিবীর মতো বড়ো
এক একটা বাঁকে, এক একটা না-বোঝা এই সময়
আমার শরীরের প্রত্যেকটা অংশ একটা জন্তু হয়ে যাচ্ছে,
একটা পাখি। যাত্রা শুরু ক’রে দিচ্ছে ওরা আমার থেকে দূরে
কয়েকটা আবার ফিরেও আসবে কখনো
হারানো জাহাজের মতো তখন ঘরে ফিরবে ওরা
তারপর আবার যাবে। এ’ যেন ওদের কোন্ তীর্থযাত্রায় যাওয়া।
একসাথে সব দলবেঁধে, এই বিরাট সময় জুড়ে ঘুরবে কোথায়
জল আর জায়গার খোঁজে, অনেকদিন ধ’রে নানান পথ
আমি জানতেও পারব না, আমার কোন্ অংশটা এখন কোথায়
নিচু রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, ক্লান্ত। ঘরে ফিরবার পথে,
গন্ধের ভারে নুয়ে। বিভিন্ন জায়গার নানান স্বর আসছে।
ভেঙে দিচ্ছে আমার চামড়াগুলো।
শাফল্ করছে আর রি-অ্যারেঞ্জ করছে আমার পরিচয়।
কয়েকটা মেয়ে জঙ্গলে গেছিল
রান্নার কাঠ কুড়োতে
ফেরার পথে বললো, ওরা আমার ভ্যাজাইনাটাকে দেখেছে
একটা প্রজাপতি হয়ে উড়ছে
ঐ পাহাড়ে... দূরে
মনোরোগ : পূর্ব ও পর
মেয়েদের ফেলে দেওয়া ন্যাপকিন চিবোচ্ছে
রাস্তায় দিকশূন্য একটা গোরু
কোকের খালি বোতলগুলো
ডাস্টবিনের কোণ জুড়ে
বাড়িটি কাঠের, গরীব ভেতরে থাকে
এই দুপুর, কয়লার গরম বৃষ্টি
রাস্তার সব কুকুরগুলো উধাও
কোকের ক্যানগুলো খেলতে দৌড়চ্ছে
থেকেই যাচ্ছে এই হৈ-হৈ
সারাটা দিন জুড়ে
যখন সন্ধে ফুটছে হলুদ নিয়ে শূন্যতার
দাঁত-নখওয়ালা জন্তুমানুষ ঘরে ফিরছে, যেমন ফেরে আর কি
টিভিতেও খবর চলছে, লাউড
লোহার পাখি বুলেট ফেলছে আকাশ থেকে
লম্বা পা ফেলে ফেলে ট্যাঙ্ক চলেছে একটা আয়রনের জন্তুর মতো
শরীরগুলো ছিটকে যাচ্ছে এদিক সেদিক ওদিক, নারকোলের খোল
মাটিতে শুয়ে পড়ছে বাড়ি ঘর দোর
একটা টিপিক্যাল ঢিলেঢালা সন্ধে, ভেসে যাচ্ছে
ঘরে ঘরে বাজতে থাকা টেলিভিশন সেটের সাথে
বিছানায়
সন্ত্রাসের কালো লেপ মুড়ি দিয়ে আমি
মাঝরাত্তিরে কোকের খালি ক্যানগুলো এক এক ক’রে
সাঁজোয়া বাহিনীর মতো ঘিরে ফেলছে রাস্তা
ভেঙে খান খান হচ্ছে পৃথিবীর পেটের ভেতরের যত শব্দ
প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে আওয়াজ
একটা দৈত্যাকার কোকের ক্যান আমার সামনে উঠে দাঁড়াচ্ছে
আর একটা চলতেই থাকা বিরাট শব্দ জেগে উঠছে তার সাথে
মাটি ফাঁক ক’রে দেওয়াল ঢুকছে নিচে
আমি এখান থেকে বেরোবার যোগ্যতাহীন
এই লোহার রাক্ষস সারারাত আমার খুলির ভেতরে
বুকে ভর দিয়ে চলবে
আমি তুলে আনছি, আর ছিঁড়ে ফেলছি একটা একটা ক’রে মাথার সব চুল
ভোরও যখন ভেঙে যাবে
মরা-মাংসের কাদায় আটকে যাওয়া এই সূর্যকে
কে আসবে রেসকিউ করতে?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন