মানিক সাহা র কবিতা
ফরমায়েশি
১.
কিছু কবিতা লেখার বায়না পেয়েছি।
কবিতা এক ধরণের বাতিক। চাইলেও আমি তার কাছ থেকে সরে থাকতে পারি না। ফলে অনেকদিন পর বউয়ের গিফট করা ল্যাপটপ নিয়ে আবার বসে পরেছি। একরোখা প্রেমিক বারবার তাকে মানাবার চেষ্টা করছে। অবশেষে তাকে ইমেজারি দিয়েই শুরু করি -
ঘাসের শরীর জড়িয়ে আদর করছে শিশির।
সাত সকালের হাওয়া চুমু দিচ্ছে মেঘেদের তুলতুলে গালে...
এইভাবে একটি দুর্বল চিত্রকল্পের সাহায্য নিয়ে আমি সকাল তৈরি করি। কিন্তু সকাল ভেঙে পরে। কেননা এখন প্রচণ্ড গ্রীষ্ম চলছে। শিশির নেই। শিরশিরানি আছে -
মেঘালাপে প্রেম প্রেম গন্ধ ভেসে আসে।
অনেক প্রেমিকা
ঘুমের প্রাচীর জুড়ে
হা হুতাশ করে। জিভ ছুঁয়ে
রাত কেটে যায়।
রাতের পোশাক ছেড়ে শুয়ে থাকে ঘুম।
ঘুম শুয়ে থাকে।
বুকের ওঠানামায় ঘরভর্তি পালক আর সমুদ্রের ফেনা। তাদের সম্ভোগের আশ্বাস দেই। তাকে পুনরায় টুকরো করে ছড়িয়ে দেই। আর কখনো কবিতা লিখবো না- একথা বলার চেষ্টা করি।
এসবের পর হুকে গেঁথে যাওয়া প্রেম শেষ-কথা হয়ে পরে থাকে -
আর ঘুমিয়ো না প্রেত। চলো
কবিতার হাত ধরে স্বর্গের পথ খোঁজা ফের শুরু করি।
২.
ধর্ষকের চোখ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা দেখার প্রয়োজন ছিল। তাদের পাথরের মত লিঙ্গ নৃশংস ছুরির ফলা হয়ে ওঠার রসায়ন জানার চেষ্টা করেছি বহুবার। বহুবার পথ পালটে পালটে মানুষের ক্রোমোজোমগুলি ছুড়ে ফেলেছি অচেনা কক্ষপথে। আর এভাবেই আমাদের জীবন ক্রমশ রেখাচিত্রের বাঁধন ছিড়ে ফেলে। আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই লিখতে হয় অজস্র মিথ্যে কথা-
বিকেলের শামিয়ানা বিছিয়ে দিয়ে গেছে রোদ।
ওখানে ধান রোপণের নাটক লিখছে কাকতাড়ুয়ারা।
শীতের ভোরে এখানেই
মিডিয়ার চোখ উড়ে আসবে।
একগাছা দড়ি ঝুলবে, একপাটি হারানো হাওয়াই,
ছেড়া ছেড়া মুখ নিয়ে
পরে থাকবে বোবা ব্রেসিয়ার...
আমাদের চোখ
রক্তাক্ত যোনীতে দেখবে
কত লাল ফুল ফুটে আছে।
চাইলেও আমাদের হাত শান্তি লিখতে পারছে না। ঘুরে ফিরে মেয়ে না-ফেরার গল্পই ছুটে আসছে। দু’চারটে ভুল-নাম-জানা পাখি, কিছু ছেঁড়া পোস্টার, রাতে ফেলে যাওয়া বাইকের দাগ – এছাড়া কারো কোন ইতিহাস নেই। ধরা যাক, আমি লিখতে যাব চাঁদ; কিন্তু সেটা কিশোরীর মোচড়ানো স্তন হয়ে যাবে। কিংবা
জাল ফেলতেই অসংখ্য মাছ
তারা হয়ে ঢুকে গেলো মেঘের শরীরে।
মেঘ আসলে মেমসাহেবদের সখী
ওরা গান গায়:
‘সখী যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বল দিবস রজনী ভালবাসা ভালবাসা
সখী ভালবাসা কারে কয়
সে কি কেবলই যাতনাময়।’
এ এক অন্য জাতের মানুষ।
রক্ত মাংস সব আছে
প্রতিক্রিয়া নেই।
৩.
আমার এক পরিচিত মানুষ ছিল অরিন্দম, হয়ে গেছে চারুলতা। আমি চিনতে পারিনি। অরিন্দম বলল- দাদা আমি তোমাদের পাশের পাড়ার মেয়েলি ছেলেটা। চারুলতা অনেক পালটে গেছে। পালটাতে পালটাতে কত কষ্ট হয়েছে সেটা সে বলতে পারলো না। মেয়ে হয়ে একটা ছেলের শরীর নিয়ে চলাফেরা করা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক, দাদা তুমি বুঝতে পারবে না। ছেলের শরীর নিয়ে ছেলেদের চিনতে পেরেছি। মেয়েদের মন নিয়ে মেয়েদের।
এখন নিজেকে পালটে নিয়েছে।
যেভাবে রাত বাড়লে শিশিরের বিন্দুগুলি আরও গোলাকার হয়
ফুলের জরায়ু বেয়ে ভোরের পোশাক নেমে আসে
আর দালানকোঠাগুলি গান গাইয়ে, আলো নাচিয়ে ক্লান্ত হয়
কে একজন চিত্রাঙ্গদা বলে ডাক দেবে -
তার ডাকের রেশ ধরে ঝুলে থাকে প্রেম, ক্ষোভ
মোহিনী রূপধারী কৃষ্ণের চোখের গহীন।
জল আর ছায়া মিলে মিশে এক হয়ে যায়।
আমরা শুধু জল দেখি;
জলের ছায়ার কথা কখনই
মনে আসে না।
৪.
মধ্যদুপুর ছুঁয়ে শুয়ে আছে রোদের বালিশ।
ভিখারি শহর পেতে আছে হাত ।
যার কিছু নেই,
সে-ই সুখি। তার হারাবার কোন ভয় নেই।
বিয়ের পর সম্পর্কগুলো অনেক পালটে যায়। বাবামা, ভাইবোন, বন্ধুরা সবাই হঠাৎ পোশাক পালটে ফেলে। ঘুমের বিছানায় অনেক রাতজেগেথাকা নষ্ট হয়। আমি ভাবি কার দাকের জন্য এতদিন সুর্য উঠছে। কিংবা ক্লোরোফিলেরশরীর থেকে যে ঘ্রাণ তৈরি হয়, তাকে অরিজিতের গান মনে হয়। ও রে মনবা রে ...
ফুলের গাছে জোঁক লেগেছে
ঘরভরা ক্রন্দন;
রঙের ছোঁয়ায় রং মরেছে,
খুন হয়েছে মন।
আমাদের শুধু শরীর, শুধু শরীর। আমাদের মন নাই, কুসুম!
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
একটা স্ক্রিপ্ট পড়লাম মনে হল। দৃশ্য চলমানতা স্থিরতা নিয়ে সুন্দর। এই প্রকাশ আগে দেখলেও এটাও ভালো লাগলো। Mr Manik :)
উত্তরমুছুনচিত্রময়তা , বেশ ডুবিয়ে দেয়
উত্তরমুছুন