কবি নজওয়ান দরবিশ। জন্ম ১৯৭৮-এ জেরুজালেমে। প্যালেস্তাইনের শূন্য দশকের কবি। তাঁর প্রজন্মের প্যালেস্তাইনের আরবি ভাষার কবিদের মধ্যে ভীষণ অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও, পরবর্তীতে সাহিত্যচর্চায় আরো বেশি সময় দেওয়ার জন্য আইনব্যবসা ছেড়ে দেন। ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিখ্যাত আল-আকবর পত্রিকায় শিল্প-সমালোচক হিসেবে কাজ করেছেন। সম্পাদনা করেন My wa Ila (‘Starting to’) পত্রিকা। এই পত্রিকাটি মূলত আরবি ভাষার তরুণ লেখকদের কাগজ। দরবিশ প্যালেস্তাইন সাহিত্য উৎসবের (প্যালফেস্ট) আয়োজক ও উপদেষ্টা। সাহিত্য, ভিস্যুয়াল আর্ট, থিয়েটার, সাংবাদিকতা এবং প্রকাশনা ক্ষেত্রে একাধিক প্রকল্প-পরিচালনার সাথে যুক্ত।
প্যালেস্তাইনের আরবি ভাষার কবি
নজওয়ান দরবিশ-এর কবিতা
অনুবাদ :
অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি নজওয়ান দরবিশ। জন্ম ১৯৭৮-এ জেরুজালেমে। প্যালেস্তাইনের শূন্য দশকের কবি। তাঁর প্রজন্মের প্যালেস্তাইনের আরবি ভাষার কবিদের মধ্যে ভীষণ অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও, পরবর্তীতে সাহিত্যচর্চায় আরো বেশি সময় দেওয়ার জন্য আইনব্যবসা ছেড়ে দেন। ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিখ্যাত আল-আকবর পত্রিকায় শিল্প-সমালোচক হিসেবে কাজ করেছেন। সম্পাদনা করেন My wa Ila (‘Starting to’) পত্রিকা। এই পত্রিকাটি মূলত আরবি ভাষার তরুণ লেখকদের কাগজ। দরবিশ প্যালেস্তাইন সাহিত্য উৎসবের (প্যালফেস্ট) আয়োজক ও উপদেষ্টা। সাহিত্য, ভিস্যুয়াল আর্ট, থিয়েটার, সাংবাদিকতা এবং প্রকাশনা ক্ষেত্রে একাধিক প্রকল্প-পরিচালনার সাথে যুক্ত।
দরবিশ সম্পর্কে বলা হয়, ‘One of the most exciting young voice
in the Arab world’।
প্যালেস্তাইনের স্ট্রাগলের একটা জোরালো স্বর এই নজওয়ান দরবিশের কবিতা।
কবিতা-সমাজ-রাজনীতি— এই তিনটের পৃথক বাস্তবতাগুলোকে ভাঙতে
এবং একজায়গায় এসে মিলতে দেখা যায় ওঁর লেখায়। সমালোচক বশির আবু-মান্না’র মতে কবিতার যে নিজস্ব একটি রিয়ালিটি রয়েছে, এবং ওর নিজের
পারিপার্শ্বিক রিয়ালিটি, কবিতার মাধ্যমে এই দুইয়ের প্রতিই জাস্টিস করার শক্তিশালী
ক্ষমতা রয়েছে ওঁর হাতে।
ইংরেজিতে অনূদিত প্রথম প্রকাশিত কবিতা সংকলন ‘নাথিং মোর টু লুজ’ (২০০০)। ইংরেজি ছাড়াও অনূদিত হয়েছেন অন্তত
দশটি ভাষায়। Antoine Jockey-এর অনুবাদে ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে ওঁর কবিতার ফরাসি
অনুবাদ সংকলন, Je me lèverai
un jour । এছাড়াও
প্রকাশিত হয়েছেন একাধিক অনূদিত কবিতা সংকলনে, Palabras
Pour la Lectura (Spain, ২০০৭), Pères (Paris,
২০০৭), Language
for A New Century, Contemporary Poetry from the Middle East, Asia, and Beyond (New York, ২০০৮), Le Poème Palestinien Contemporain (Belgique, ২০০৮),
Wherever I Lie Is Your Bed (San Francisco, ২০০৯), Beirut39 (London,২০১০), Revolutionary Poets Brigade (California,২০১০), In Ramallah
Running (London,২০১২),
Printemps Arabes, (France, ২০১২) ইত্যাদি।
আইডেন্টিটি
কার্ড
কুর্দরা তাঁদের উদারতার জন্য বিখ্যাত— আমার বন্ধুর এই মশকরা
সত্ত্বেও, গ্রীষ্মের ঠাণ্ডা হাওয়ার থেকেও শীতল ছিলাম আমি, যখন পৃথিবীর চার কোণে
ভাইদের আমি বুকে জড়িয়েছি।
আমি একজন আর্মেনীয় ছিলাম, যে কখনো বিশ্বাস
করেনি ইতিহাসের বরফমাখা চোখের পাতার নীচে যে জল তা’ কখনো খুন ও খুনী দুজনকেই ঢেকে দেয়।
যা কিছু ঘটেছে সেই সমস্ত কিছুর পরে, আমার
কবিতাগুলো কি কাদায় ফেলে দেওয়ার মতো?
প্রত্যেকটা ঘটনায় আমি বেথলেহেম থেকে আসা
একজন সিরীয়, যে তার আর্মেনীয় ভাইয়ের কবিতা তুলে আনছে। এবং কন্যা শহর থেকে আসা একজন
তুর্ক যে দামাস্কাস গেট দিয়ে জেরুজালেমে ঢুকছি।
এবং এই একটু আগেই পৌঁছেছি বায়াদের ওয়াদি
আল-সীরে, আমাকে স্বাগত জানিয়েছে সেই শীতল হাওয়া। একমাত্র যে হাওয়া জানে ককেশাস
পর্বত থেকে আসা একজন মানুষ মানে কী। যার একমাত্র সঙ্গী তার মর্যাদা এবং
পূর্বপুরুষের হাড়। আর আমার হৃদয় যখন আলজিরিয়ার মাটিতে পা রাখছে, একমুহূর্তের জন্যেও
সন্দেহ হয়নি আমি একজন আমাজীঘ ছিলাম।
যেখানেই গেছি আমাকে ওরা ভেবেছে একজন ইরাকি। এবং
ওরা ভুল ভাবেনি। অনেক সময়েই নিজেকে একজন মিশরীয় ভাবি। বেঁচে থাকছি আর ম’রে যাচ্ছি সময়ের ভেতর। আর
আবার জেগে উঠছি আমার আফ্রিকান পূর্বপুরুষের সাথে নীল উপত্যকায়।
কিন্তু এই সমস্ত কিছুর আগে আমি একজন আর্মেনীয়
ছিলাম। এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অন্তত আমার কাকারা এসেছিলেন বাইজেন্টাইন
থেকে। আর আমি ছিলাম একজন হিজাজী শিশু। জেরুজালেমের দরজা যখন আবার খুলেছিল, ওমর আর
সফ্রোনিয়াস আগলে রেখেছেন আমায়।
এমন কোনো জায়গা ছিল না— যে তার এই আক্রমণকারী
দখলদারদের আটকাবে, একমাত্র আমি ছাড়া, যে এই মানুষদের একজন ছিলাম। এমন কোনো স্বাধীন
মানুষ নেই সেখানে, যার কাছে আমি আত্মীয়তায় বাঁধা নই। এবং এমন একটাও গাছ বা মেঘ নেই
যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ নই। আমি আন্দালুশিয়া থেকে নির্বাসিত একজন ইহুদি, জিওনিস্টদের
প্রতি আমার অভক্তি থাকলেও এ’ কথা বলার থেকে আমাকে আটকানো
যাবে না। অস্তগামী সূর্যের আলো থেকে মানেগুলো আমি এখনও বুনে চলেছি।
আমার ঘরে একটা জানলা আছে, যেটা গ্রিসের দিকে
খোলে। একজনের ছবি আছে, যা রাশিয়াকে দেখায়। হিজাজ থেকে বেরোনো একটা মিষ্টি গন্ধ
সমানে ছড়িয়ে যেতে থাকে হাওয়ায়।
আর, একটা আয়না : এক্ষুনি আমি দাঁড়াব না
তার সামনে, বরং দেখবো সিরাজ, ইসফাহান আর বুখারার বাগানে বসন্তে কিভাবে গভীরে জড়িয়ে
যাচ্ছি আমি।
আর এসবের থেকে একটুও কিছু কম হ’লে, সেটা কক্ষনো আরব নয়।
ফাঁদ থেকে বলছি
ইঁদুর উবাচ :
ইতিহাস আমার দিকে নেই
সমস্ত সাপেরা মানুষের এজেন্ট
সমস্ত মানুষ আমার বিরুদ্ধে
এবং বাস্তবও আমার পক্ষে নয়।
এতদ্সত্ত্বেও আমি বিশ্বাস করি
আমার বংশ প্রচণ্ড বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে
বিজ্ঞপ্তি
একজন দক্ষ ম্যানেজার চাই আমার
একজন উদ্যমী
সেক্রেটারি
একজন কাজের
লোক, চা-কফি বানাবেন যিনি
একজন
বুদ্ধিজীবী দরকার আমার
একজন কবি
এবং একজন
মাফিয়া ধর্মপিতা
আমার জীবনকে
তাদের সবার মধ্যে ভাগ করার জন্য
কিছুক্ষণ পরে, আমি ঘোষণা
করব
আমার দেউলিয়া অবস্থা
যেভাবে কোম্পানিগুলো করে
একজন চাকর চাই আমার
একজন বিশ্বাসঘাতক
আমাকে খুন করার জন্য
একজন প্রেমিক
আমার একজন রাণি দরকার
রাজার কারণে আমার সাথে
বেইমানি করবেন যিনি
‘রিজার্ভড’
প্রত্যাশার একটা খালি
সীটে একবার বসতে চেয়েছিলাম।
‘সংরক্ষিত’
এই কথাটা হায়নার মতো
বসেছিল ওখানে, হাঁটু মুড়ে
(আমি বসিনি ঐ সীটে; কেউই
বসেনি)
প্রত্যাশার সব সীটগুলো
সবসময়েই সংরক্ষিত থাকে
সেখানে
মানুষ মরছে সেই আদেশনামার
বছর থেকে
খবর
শুনছে বিবিসি-র, কাঁদছে দ্রুত শ্বাস ফেলতে ফেলতে
জেলের কয়েক একর জমিতে
আটকে
’৩৬-এর
বিদ্রোহের হাঙ্গার স্ট্রাইক ভাঙবে কখন
ম্যাণ্ডেলবাম গেটে
অপেক্ষায় মানুষ
নরকের দরজা কখন খুলবে
সেখানে
একটা ভাষা চেষ্টা করছে মাটিকে সংস্কারের
নগ্নতাকে শরীরী করবে
ঘুম ভাঙবে
পৃথিবীর শেষ মাটিতে
যেখানে পবিত্র হয়েছে নির্বাসন
সেখানে
এক একটা শব্দ থেকে
চুঁইয়ে নামছে রক্তের ফোঁটা
যেন যিশুর পা
দুঃস্বপ্নের
বাস
আমার খুড়িমাকে ওরা
প্লাস্টিকের ব্যাগটায় ঠেসে ঢোকাচ্ছিল
ব্যাগের কোণে লেগে গরম রক্ত
(কিন্তু আমার কোনো
খুড়িমা নেই)
জানতে পেরেছিলাম,
নাতাশাকে ওরা মেরে ফেলেছে। নাতাশা, আমার তিন বছরের মেয়ে।
(কিন্তু আমার কোনো মেয়ে
নেই)
আমাকে বলা হয়েছিল, ওরা
আমার বৌকে রেপ করেছে। তারপর ওর বডি ছেঁচড়ে নিয়ে এসেছে সিঁড়ির নীচে। রাস্তায় শুইয়ে
চলে গেছে।
(কিন্তু আমি বিবাহিত নই)
ওদের জুতোর নীচে যেটা
ভাঙছে নিঃসন্দেহে ওটা আমার চশমা
(কিন্তু আমি চশমা পরি
না)
.........................................................
আমি বাবা-মা’র ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর স্বপ্ন
দেখছিলাম ওর বাড়ির। ঘুম ভেঙে দেখলাম আমার ভাই
ঝুলছে
কেয়ামতের চার্চের ছাদ
থেকে
গলায় কোনো সহানুভূতি না
রেখে, ঈশ্বর বললেন, এ’
তোমার একার তকলিফ
ঝুলন্ত মানুষটার সব
অহংকার এক জায়গায় জড়ো ক’রে
আমি বললাম,
আমার মনে হয়, এটা
আমাদের।
.......................................................
দুঃখ সবকিছুকে উজ্জ্বল
করে।
আমার দুঃস্বপ্নের থেকে
আমি অনেক বেশি ভালোবাসি একে
........................................................
এখান থেকে কোত্থাও
পালাবো না, পালিয়ে উত্তরে যাব না
ত্রাণশিবিরে শেল্টার
খুঁজতে থাকা একজন বানিয়ে দেবেন না আমায়
..........................................................
পরে আমরা আবার এই সংবাদ
পরিবেশন জারি রাখব
এখন আমায় ঘুমোতে যেতে
হবে।
সাব্রা থেকে শাতিলাগামী
দুঃস্বপ্নের বাসটা আমি মিস করতে চাই না।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Facebook er serious pathok apnake khuujbe,,,anubad porar por instantly etai mone hochhe.
উত্তরমুছুনগোটা বাঙলা ভাষাতেই 'সিরিয়াস পাঠক' তো একটি সংখ্যালঘু শ্রেণি। সেটাকে 'ফেসবুকের সিরিয়াস পাঠক'-এর কুঠুরি অব্দি নামালে 'সিরিয়াস'-এর সংখ্যা যে ক'মে হিমোগ্লোবিন কমার মতো হয়ে যাবে। সে এক যমে-মানুষে টানাটানি অবস্থা। যাই হোক, এহ বাহ্য। মজা ক'রে বললাম। কিন্তু প্রশ্ন, [এটা মজা নয়], আপনি জিনাত ইসলাম নিজেকে ফেসবুকের সিরিয়াস পাঠক ভাবতে ভালোবাসবেন? নাকি বাঙলা সাহিত্যের সিরিয়াস পাঠক?
উত্তরমুছুনকেননা, অধিকাংশেই তো দেখি ফেসবুকে গল্প করতে করতে, এটা-সেটা পোস্টে লাইক-কমেন্ট মারতে মারতে কোনো লিঙ্কে কৌতূহল পেলে সেখানে এট্টু ঢুঁ মেরে আসেন জাস্ট। অনেকে তো না-পড়েই দেদার লাইক মারতে থাকেন র্যাপিডলি। পড়া-টড়ার মতো কাজকম্মো করে নাকি কেউ? আমি নিজেই তো পড়ি না। পড়ার ভান করি।
আমি ভান করি না। পড়ি। আপনার সব লেখা।
উত্তরমুছুন