অনেক বেলা
জুড়িয়ে গেলে অপেক্ষা যখন...অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়
শালপাতায় উড়ে যাচ্ছে আমাদের মেয়ে। একটা অ্যাশট্রে
ফিরে তাকাচ্ছে ওর দিকে।আর আমি জমে যাওয়া আড্ডার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি ইশকুল থেকে
তুলে আনা চোখের দুইপার।
দেবাদৃতা বসু’র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ বিরল গন্ধ থেকে ’’ এইযে প্রতিশ্রুতি আর প্রাণের অসামান্য
আবেদন তাকে আলতা পড়ালে কি দারুণ ছবি আর মেজাজের বাহার খুলে গেল।খুলে গেল একটা
একপেয়ে সংসারে বসে থাকা চুলের পরিপাটি আর সংলাপের হাত ধরে চেনা রান্নাঘর যখন ভরে
উঠছে রসনার পানপাত্রে,
‘‘ ঠন
শব্দ! খেয়ালীর গার্হস্থ উনুন,
আছে মেধা।
খেয়ালী’র কাছে ফিরে যেতে চাওয়া ’’
প্রিয় মানুষটার আলো হাতড়ানো পড়ন্ত বিকেলে
কেউ পড়ে ফেলছে হলুদ শাড়ি। হেসে উঠছে নিজের আনন্দে যখন
কবি’র মনে পড়ে গেল কোথাওতো আমাদের আত্মহত্যাও ছিল ‘পাঁচিল পেরিয়ে মন্দির
নির্মাণ’ এ।
এইযে ধরে রাখা সুন্দর আর সুন্দরের পাশে কেউ নিজেকে ঐশ্বরিক করে তুলছেন কিছু জ্বরের
আলাপ নিয়ে, অনেকটা পেতে চাওয়া নিয়ে তাকে দেখছে তার ইশারার পুরুষও এবার...
‘ হাতে
টিফিন বাক্স
সুমহান রুমালে বাঁধা’ পাতাগুলি।
মেয়েটার পলাশ মরসুম ফিরে পাওয়া হল।ফিরে
পাওয়া হল পৌষের বিছানা বালিশও।এভাবেই খেলার সাথী আর আমাদের বিলাসিতা গুলি কখন যে
জুড়ে যায় আবার ভেঙেও যেতে থাকে হাতেগোনা রোদ্দুরের সাথে।
তখন দেবাদৃতা আবার দেখতে পায় অনেক দূরে
পড়ে আছে ভেজা ভেজা গন্ধগুলি শুধু মাত্র ওর জন্য।আরেকটা নেশার ভ্রমণের জন্য......
দুলে উঠলো নৌকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে আসা ভালবাসার ইচ্ছে সকল । আর আমরা দাম্পত্যের অজানা পর্বে কি সাবলিল ভাবে
‘‘ভাগাভাগি করে নিচ্ছি ঋতুচক্র।বিষ্ফোরণের তবু দেরি। আসমানি আলোয়
মাথার ওপর ছটফট করা কালো চাঁদিয়ালকে ।’’
এইতো কবির নীরবতা।এভাবেই ক্রমাগত সীমানা
আঁকতে চাওয়া আর সেই সীমানাকে বারংবার অবহেলায় পার করে যাওয়া ভেতরের মানুষটা জীবনের
প্রথার কথাও ভাবছে এবার।ভাবছে নিজের পরিবারের কথা।অসুস্থ বাবার
কথা।
প্রাত্যহিকে একটা মেয়ে কেমন অভিভাবক হয়ে
উঠতে থাকে,
‘‘ আপেলের সূত্র ধরে
বাবাদের নিয়মিত স্নান শেষ।
নিমেষে ভোর।
ভোর যখন মরসুম কমলা,
সমূহ রঙ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ইতস্তত বাজার বসে
পড়ে
পাট ভাঙ্গা শাড়িতে সামান্য গোড়ালি
এসব দেখতে দেখতে কেমন
পর্যটন ও গুহাচিত্রের গল্প
জমে ওঠে।’’
সাথে আমরাও দেখতে পাই কিভাবে বড় হতে থাকে
মানুষের অভিমানগুলি শব্দের নিবিড় আয়জনে।কবি দৃশ্যত লাজুক থাকেন। আর প্রিয়মেয়েটা
বারবার সাজিয়ে রাখে বিছানা তার সিঁদুরের পাশে। দুপুর গড়িয়ে যায়। সে অজান্তেই কারু’র মা হয়ে ওঠে।
হয়ে উঠতে হয় কবিতা লিখবে বলেই।
তবু কোথাও লুকিয়ে থাকা অপরাধ। এই সফরনামায়
শীত আসে।আসে বেগুনী আঁচলের ঈর্ষারাও। আমরা ফ্রেমের দিকে তাকাতে থাকি আবার আর কবি
সকলের অজান্তে লিখে ফেলতে থাকেন,
‘‘ স্নান ঘরে
নিঃস্পৃহ চলে যাওয়া।
দেখি,
বৃদ্ধার লবণাক্ত চোখে
বাদামী ঈশ্বর বসে ডিনার টেবিলে।’’
শুরু হতে থাকে আরেকটা কাহিনী এবার। কবি
নিশাচর হয়ে ওঠেন আবার।প্রিয়জনের মৃত্যু ভরা এইমাত্র নিয়ে। পাশে কোথাও পড়ে আছে
ধানের উৎসব। দেবাদৃতা হাঁটছে। হেঁটেই যাচ্ছে সকলের বিরল গন্ধের দিকে। ওর প্রিয়
হলুদের দিকে।আসুন অপেক্ষা করি আরেকটা রোদ্দুরের...দেবাদৃতার চোখে চোখ রেখে।
‘বিরল
গন্ধের দিকে’...দেবাদৃতা
বসু
প্রচ্ছদ... হিরণ মিত্র
প্রকাশক...যাপনচিত্র,
মূল্য...৪০টাকা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন