"এই চাঁদ হারাবেই । তাকে আর কাছে পাবে না।
দোলনচাঁপা চক্রবর্তী
শূন্য দশকের কবি। ‘বৈখরী ভাষ্য’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। কার্যকরী
সম্পাদনা করেন ‘বুকপকেট’ ওয়েবজিনটির। ২০১৫ কলকাতা বইমেলায় কৌরব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত
হচ্ছে দোলনচাঁপার প্রথম কাব্যগ্রন্থঃ ‘ঈভ, একটি ডালিমক্ষেতের বিজ্ঞাপন’।
যোগাযোগঃ koiiry@gmail.com
পারো তো লোপাট
করে দাও এই স্নায়ু নিরাময়
"আমি জন্মেছিলাম আমিরায়
কিন্তু আমার বয়স যখন আট
আমরা ইজরায়েলে চলে এলাম ওরা বলেছিলো
যে আমার নামটা আরবী এবং আমার পুরো নাম আমিরা লিওনি
আয়নাৎশি থেকে বদলে লিয়া করে দিলো আমি নাম হারালাম বাড়ি হারালাম আর যখন আমি এক ইজরায়েলি মহিলাতে পর্য্যবসিত হলাম আমার
কোন গর্ভ রইলো না যেখানে ঘর গর্ভও সেখানেই কিন্তু
আমার তো শরীর ভর্তি দুঃখ ছিলো
আমি ভীষণ চেষ্টা করেছিলাম এরকম না হতে ঠাট্টাতামাশা করে বেড়াতাম যাতে
মানুষ আমায় ভালোবাসে"১
কবির থেকে কবিতাকে কখনও কখনও আলাদা করতে পারি না
আমি। হলফ করে কি বলা যায় যে উপরের বা নিচের এই কথাগুলো কবিতা নয়, অথবা কোনও কবির
ব্যক্তিগত জার্নাল থেকে নেয়া গদ্য নয়? বিষয়, পরিবিষয়, না-বিষয়, বিষয়হীন – সব
শেষমেশ গিয়ে একটা দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে মনে হয়। নিজের অনুভূতির সেই কাচের বলয়।
নিজের বলার সেই কথাগুলো, যা একজন কবির কাছে অন্যভাবে বলতে চাওয়া নেই। শুধু বলতে
চাওয়া আছে, বলা আছে, শোনা আছে। বলা আর শোনাটা আছেই। নেবে কি নেবে না – কীভাবে
নেবে, সেটুকুই ব্যক্তিগত। সেটুকুই চয়েস। কিন্তু সেটুকুই ফর্ম? এভাবে কি ফর্মকে
ডিফাইন করা যায়? এভাবে কবিতার শরীরকে নির্দিষ্ট করা যায়? আঁটিয়ে নেয়া যায় নিজের
নির্ধারিত ভাবনার মধ্যে? একটা ফিক্সড প্যাটার্ণের মধ্যে?
"আমি
আমিরা সালিমার কন্যা পাঠকের ক্ষমা প্রার্থনা করি যদি আমার মুখের সাথে সেইসব কাহিনী
না মেলে যা বলতে আমাকে পাঠানো হয়েছিলো... আমিরা
হেজ্ আমিরা বার-হাইমকে ডাকে তারা কথা বলে, নোট বিনিময় করে হৃদ্ধ্বনি শোনা যায়,
হাত কাঁপে ওরা দুজনেই মৃত কীভাবে ওরা নিষ্পত্তি করবে"২
কবি যা লিখছেন, সেটা তার যাপন। কবিতা সেখানে কিভাবে
ও কতোটা আলাদা? আমি মনে করি, যাপনের কোনও নির্দিষ্ট ফর্ম নেই, কেবল ফ্রিকোয়েন্সি
আছে। দুজনের ফ্রিকোয়েন্সি মিললে বন্ধু, না মিললেই শত্রু নয়। বন্ধু আর শত্রুর মাঝে
কি? ইয়েমেন আর ইজরায়েল? ফিলিস্তিন আর ইয়েমেন? বাংলাদেশ আর ভারত? শ্রীলঙ্কা আর
ভারত? উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ? কি? যে নো ম্যান্স ল্যান্ড – সেটাই কবিতা বলে মনে
করি। নিজেদের রোজকার ভাবনায় এমন অজস্র বৃত্তহীন জমি, প্রতিনিয়ত আঁকড়ে রাখতে চায়,
শিকড়ে জড়িয়ে ফেলতে চায়। অথচ ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে যেতে হয় সেখান থেকে। রেখে যাই বিষাদ
বিরহ অভিমান। রাগ ক্ষোভ ঠোঁট নখের আঘাত।
ডিফাইন করতে চাওয়ার চেষ্টাটুকু শুধু, সেই জার্নিটা শুধু –
আমাদের। আর কিছু আমাদের না। আসাটা কবিতা ছিলো। নাড়ি না ছিঁড়ে কেউ আসে না। ওই ছিন্ন
রক্তটুকু জীবিতের যে কোনও ক্ষত সারিয়ে দিতে পারে। ওটা কবিতা বলে মানি। যাওয়াটাও
কবিতা হবে। হৃদ্রোগে হোক, না খেতে পেয়ে হোক, কোমায় হোক, সিরোসিসে হোক, ঘুমের
মধ্যে হোক – মৃত্যুর জন্য যেমন কোনও স্বাভাবিক হয় না, শুধু কান্না হয়, একা হয়। এইটুকু
– এটাই কবিতা। এই শূন্যতা। ধরতে চাইলাম, পারলাম না – এই না-পারাটা সারাজীবনের,
ছিন্নরক্তকোষেও যার শুশ্রুষা নেই।
কিছু কথা এমন একা একা বলা যায় না। সামনে বসিয়ে বলতে হয়। মুখের
প্রতিক্রিয়া - এইটুকু দরকার অন্তত। যেমন এই প্রশ্নটা - কবিতা বললে প্রথমেই কি মনে
আসে? ভাবা চলবে না, উত্তর দিতে হবে সঙ্গে সঙ্গে। কবিতা কি? নারী পুরুষ ভূত বাস্তব
ঘুম খাওয়া স্বপ্ন চিন্তা জল জঙ্গল বৃষ্টি খরা জন্ম রক্ত যৌনতা নাড়ি ঘি চিতা আগুন
কাফন শ্মশান হৃৎপিন্ড টাওয়ার অব সায়লেন্স– এইটুকু সম্পৃক্ত ও বিপরীত অনুভব? ফ্রি
মিক্সিং-এর বিরোধী এক গন্ধযুক্ত আত্মার ট্যাবু?
পা পড়েনি অথচ হেঁটে বেড়াচ্ছি ভেবে আত্মতৃপ্ত শব্দ, ধ্বনি ও
তাদের সংঘাত-উদ্ভুত সেনাবাহিনী। গোল হচ্ছে, ঘনসংবদ্ধ আবার ছিটকে যাচ্ছে ভাগ হয়ে;
সেখান থেকে আরও ভাগ আরও আরও ক্ষুদ্রতর ভাগ – সবই ওই পায়ের ছাপ রেখে যাওয়ার আনন্দ,
আকাঙ্খা। সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসছে চিলেকোঠার জানালার কাছে। আকাশের আরেকটু সমকৌণিকতায়।
যেখানে দাঁড়ালে বিধ্বস্ত জল এসে অভ্যাস এসে ঠোঁটে চুমু দিয়ে যায়। সেখানে প্রেমিক
নেই বা যে আছে সে প্রেমিক নয়। কিন্তু চুমুটা আছে, আদর আছে। তাকে নেবে কি নেবে না,
সেটা ব্যক্তিগত চয়েস। এবং একেই পরবর্তীতে কখনও তারা স্মৃতি বলবে এবং এভাবে মূল
চেতনাটা ক্ষয়ে ক্ষয়ে অজস্র সন্ততির জন্ম হচ্ছে। কেননা, এক বৃষ্টি মনে রাখলে আরেক
বৃষ্টিও মনে থাকবে ও একে অপরের সাথে চেন রিঅ্যাকশানে জড়ো হতে হতে হতে পরে কোনও
দুর্বল মুহূর্তে একেই প্রেম বলে মনে হবে না – তাও কি লিখে দেয়া যায়?
আর কবিতাকে সামনে বসিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করি – কোনও কথা না বলে
যদি জিজ্ঞাসা করি, শুধু প্রশ্নচিহ্ন দিয়ে? চিহ্নের গভীরতা তো আমাদের কাছে। আমরা
ভাবতেই পারি সে এই চিহ্ন সাঁতার দিতে পারবে কিনা, পেরোতে পারবে না ডুবে যাবে।
কিন্তু সে বলতেই পারে – এই চিহ্নের সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই, আমার শরীরের কোনও
সম্পর্ক নেই। আমার বস্তুত কোনও শরীরই নেই। কোনও ফর্মই নেই, শুধু তারল্য আছে,
প্রবাহ আছে। কাঠামো বলতে তরলের কিছু নেই। যদি রক্তে মিশতে চাস তো রক্ত হ।
"আমার
দাদী বলতেন যদি শৈশবকে তিনবার দেখতে
পাও দীর্ঘজীবি হবে বাবা তার শৈশবকে দু'বার দেখেছিলেন প্রথম যখন তিনি যুদ্ধে যান গাড়ির জানলা দিয়ে দেখেন সে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি গ্রাম
থেকে এতটা পথ এসেছে বিদায় জানাতে দ্বিতীয়বার তিনি ওকে দ্যাখেন যখন সৈন্যরা তাঁকে নির্বাসন দিতে নিয়ে গেলো তিনি
বাঁক ঘুরেই ওকে দেখলেন গ্রামের
প্রান্তে আর এক পাও তাঁর সঙ্গে এলো না
লুকিয়ে পড়লো রাতে পুরনো এক মিনারের মধ্যে বুনো পায়রার সাথে সোভিয়েত পুলিশ মিনারটা গুঁড়িয়ে দেয় ও–ও মরে
গেলো তৃতীয়বার নির্বাসন থেকে ফিরে যখন পাহাড়ে এলেন বাড়ি ফেরার অনুমতি ছিলো না বাবা
তার পরিবারকে সমতলে রেখে জন্মস্থানের খোঁজে গেলেন ফেরার পথে পিছন ফিরে
শৈশবকে আর দেখেননি...।" ৩
কবিতা কী ভাবে হবো? আমার যাপন বাদ দিয়ে আমি আর
কিছুই কী ভাবে হবো? আমি আর আমার যাপন সমমনস্ক, সমার্থক এক সত্তা। ওই সত্তার যেটুকু
দৃশ্যমান, সেটুকুই কবিতা। বাকি যা ধরাছোঁয়ার বাইরে রইলো, তাকে নাম দিই অলিগলির
বিষয়আশয়। ছিন্নভাণ্ডের মধুপত্রিকা। যাপন রইলো বা রইলো না – কি কি দিয়ে কবিতা হয়ে
উঠছে, দেখে নিই।
শব্দ
বোধ চর্চা ইতিহাস যাপন মিথ সংকেত বিন্যাস চিহ্ন
"…অদম্য মাংস
পোড়ে মেচেতার মর্মে
সংহত মাংসে কমনীয় কূটমন্ত্রণা
ভুল হয়, ভালো হয়
সার্বজনীন
বিপথিক জাঁতাকলে নিশ্ছিদ্র ঘুম হয়
ঘুম থেকে উঠে ভাবি–
যাকে জন্ম বলি সেও এক পথ মাত্র
অপূর্ণতার কাছে বন্ধক রাখা এক মূক তাঁতকল" ৪
"যেখানে
থাকার কথা
সেখানে আমি নাই
যেন আমি এক ঊনিশ টাকার কাঠের বুদ্ধ
ভূমধ্যসাগরের ধারে
'নির্বাণ'
নামের এক ভারতীয় দোকানে
নানান পুতির মালার আড়ালে
বসে আছি অন্ধকারে -- আলোয় ---
তিনদিকে সবাই সমুদ্রে নামছে" ৫
"…গ্রামবাসীরা
মানতেই চায় না
আমি খেয়াল করিনি বলে আজ জ্যোৎস্না হয়নি। সেই
দু'পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ানো,
বাঁকা ঠোঁটে সিগারেট – এহেন অঙ্কন পদ্ধতিতে ফাঁদ
পাতে...
আর আমি জেগে বসে আছি ওরা আসবে বলে
আজ স্মৃতিতে ডিম পাড়া হবে।" ৬
"...পশ্চিমে পাহাড়, আর পুবে গেলে প্রেইরি
তৃণভূমি
এটুকু বিস্তার ছুঁয়ে তার গান বাড়ি ফিরে আসে।
পোষা কুকুরের মতো অনুগত। বিশ্বস্ত, ধারালো।
ছেলেটি আদর দেয় তাকে, আর যত্নে তুলে নেয়
মুখে করে নিয়ে আসা ছেঁড়া পালকের গুচ্ছ,
খসে
যাওয়া গিটারের স্ট্রিং..." ৭
"এভাবে অদ্ভুত হতে হতে চিনে ফেলে রুপোর
নগ্নতা
পাখি পুড়ে যাচ্ছে
ঘোড়াটা ঘাড় উঁচু করে দেখে নিচ্ছে জলের ওড়া
এখানে হাওয়াসংঘের কথায়
বৃষ্টিতে জাদুকর নামে
প্লটের শুরুতেই একটি এলাচ গাছ
বদল করছে সেক্স" ৮
"এই চাঁদ হারাবেই । তাকে আর কাছে পাবে না।
যৌনতা-জাগানিয়া গাছের বিস্তার পেরিয়ে সবকিছু
একদিন শূন্যতায় ডুবে যাবে। তুমি দেখবে না আর
কারো চিবুকের তিল, দেখতে
পাবে না ক্ষতচিহ্নেরা
কেমন সন্তর্পনে বেড়ে উঠেছে! এই বিমর্ষ ছায়ার
ভ্যালিতে
ছড়িয়ে পড়েছে অগুনতি ছাইরঙা নেকড়ের দল।
তাদের অস্পষ্ট গোঙানিতে ভরে উঠেছে কল্পনৈর্ঋত,
সমস্ত ঘোরলাগা গাছের কন্দর।" ৯
"জলপাই বাগান ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে কান্নারা
তারা গড়াচ্ছে এই বিষণ্ণ কর্কটক্রান্তি ছুঁয়ে
তারা বিকল নৌকায় ফেরী করছে বসন্তবাতাস
আমি দমবন্ধ চাষ করি
মৃত সব ফুল
তার পরাগের স্রাব
আর কান পাতি পাতায় ঢাকা তোমার গোপন সুড়ঙ্গে
ঝিনুকের মত সে শোনায় অতি প্রাচীন গান
কিছুটা ঘুঙুর আর গোমড়ানো বাতাসের শ্বাস
কোথাও মাংস পুড়ছে..." ১০
ব্যক্তিগত সমষ্টিগত প্রজন্মগত
ব্যক্তি থেকে কীভাবে কীভাবে যেন কবিতা সমষ্টিতে চলে যায়। ব্যক্তিগত
জ্যোৎস্নার অরণ্যে সমষ্টির হিম। হিম গাঢ় না জ্যোৎস্না – এই তর্ক অসম্ভব হয়ে ওঠে
মাঘের জানলায়। Single space communication
থেকে Multi generational, dimensional communication. নিয়ামক কি? কীভাবে হবে? কে ঠিক করে দেবে? একই ঘরের দুই দেয়ালের দুটো
জানলার মধ্যে যতটা দূরত্ব। ইউক্রেনীয় উপকথার আয়নার মতো। আয়নার ভিতরে যে দ্বিতীয়
সত্ত্বা, শ্বেতগহ্বর, সে একই মুখকে সময় ভেদে একেক জিনিস দেখায়। নিজের মুখ দেখার
আয়না হয়ে ওঠে না কখনও। মেটাস্ট্যাটিক গ্রোথ যেন একটা। আর এমনই জট পাকিয়ে গিয়েছে সব
- বিদ্রোহ যুদ্ধ উদ্বাস্তু পার্টিশান স্বদেশ কাঁটাতার আন্দোলন! চাক্ষুষ নয়।
অভিজ্ঞতায় নেই। অর্থাৎ যাপন নয়। তবু কোনটা আমার ক্রাইসিস ও কেন, এখানে ব্যক্তির
নিজের সাথে নিজের, multi-এর নিজের সাথে নিজের, এবং ব্যক্তি ও
মাল্টি-এর কম্যুনিকেশানে বিরোধ থাকছে। থাকতেই হবে। এটাও যাপন। ছদ্ম।
কিন্তু সত্যিই ছদ্ম কি? স্টিমুলেন্ট নয়?
"পিতলের থালায় নৈবেদ্য সাজানো
কাটা পানিফলের খোসাগুলি দেখে মনে হয়
আমি তুখোড় ফুটবল খেলতাম আর
ডেসডিমোনার মৃত্যুদৃশ্যে ভুরভুর করছিল এলাচ".. ১১
"ওই
বনে মাঠে তোমার ছায়ারা সব মরে পড়ে আছে – দূরে হলুদ চাদরে
মোড়া
হিব্রু অবতার – সূর্য ডুবে যায় –তুমি মুছে ফ্যালো রেকাবির
ধূলো আর
আমি রোগ থেকে নিরাময়ে যাই – ঘুমের ভেতর শুনি অশ্রুত
গান – মৌসুমী
বাগানে মরে আছে গন্ধগোকুল–..." ১২
"একদা একটি বাঘের গলায়
মাংসের কান্না ফেলে রেখে কাঁটা উঠে গ্যালো
ফুটতে ফুটতে বসন্ত মানে একুশে মার্চ
আলোয় ফেটে পড়ছে মাটি। ব্লাডলাইন
এমনকি গোটা একটা ভাষা। …" ১৩
"পৃথিবীতে ঘুম আনা আলো, এ' পৃথিবীরই কোনও
কাজে লাগলো না-
এ নিয়ে একটা ট্রাজিক ফিল্ম বানানো যায়
শেষ সিনে মারপিটও রাখা যায়, ওই ধর্মযুদ্ধ গোছের,
প্রত্যেকটা গাছে আমাদের প্রতিবার মেরে ফেলা হবে –
আর বসন্ত নামবে ফিল্মে...
লোক হাততালি দেবে"
এই মৃত্যু যে এডিটেড, সেটাও তারা বুঝবে না" ১৪
কোনও রকম চিহ্ন বাদ দিয়ে, শুধুমাত্র স্তব্ধযতির ব্যবহারে,
একরৈখিক একটা পদ্ধতিতে দেখছিলাম মুখোশ পরা কবিতা অথবা কবিতা-না কে। না-সেলাই করা
পর্দার উড়ানে ঢেকে যাওয়া অসমাপ্ত দরজাগুলোকে। চৌকাঠ আছে দেখছি প্রত্যেকের, থামার
ইঙ্গিত রয়েছে। বাকি ইঙ্গিতগুলো থেকে এবার দেখে নেবো কে আসলে কি ও কেমন।
"আমি জন্মেছিলাম আমিরায়, কিন্তু আমার বয়স যখন
আট, আমরা ইজরায়েলে এলাম। ওরা বলেছিলো যে আমার নামটা
আরবী এবং আমার পুরো নাম, আমিরা লিওনি আয়নাৎশি থেকে বদলে লিয়া করে দিয়েছিলো। সুতরাং
আমি নাম হারালাম। বাড়ি হারালাম। আর যখন আমি এক ইজরায়েলি মহিলাতে পর্য্যবসিত হলাম,
আমার কোন গর্ভ রইলো না। যেখানে বাড়ি গর্ভও সেখানেই থাকে। কিন্তু আমার তো শরীর
ভর্তি দুঃখ ছিলো। আমি ভীষন চেষ্টা করেছিলাম এরকম না হতে। আমি ঠাট্টাতামাশা করে
বেড়াতাম যাতে মানুষ আমায় ভালোবাসে।" (ইয়েমেনি-ইহুদী কবি আমিরা হেজ্-এর
সাথে সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ) ১
আমি, আমিরা,
সালিমার কন্যা...
পাঠকের ক্ষমা প্রার্থনা করি
যদি আমার মুখের সাথে
সেইসব কাহিনী না মেলে
যা বলতে আমাকে পাঠানো হয়েছে...
... আমিরা হেজ্ আমিরা বার-হাইমকে ডাকে
তারা কথা বলে, নোট বিনিময় করে
হৃদ্ধ্বনি শোনা যায়, হাত কাঁপে
ওরা দুজনেই মৃত
কীভাবে ওরা নিষ্পত্তি করবে"
- অ্যান্ড আ মুন ড্রিপ্স
ম্যাডনেস / আমিরা হেজ ২
"আমার দাদী বলতেন
যদি শৈশবকে তিনবার দেখতে পাও
দীর্ঘজীবি হবে
বাবা তার শৈশবকে দু'বার দেখেছিলেন
প্রথম যখন তিনি যুদ্ধে যান
গাড়ির জানলা দিয়ে
তিনি দেখেন সে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে
পাহাড়ি গ্রাম থেকে এতদূর এসেছে
বিদায় জানাতে
দ্বিতীয়বার দ্যাখেন
যখন সৈন্যরা
তাঁকে নির্বাসন দিতে নিয়ে গেলো
তিনি বাঁক ঘুরেই দেখলেন ওকে
গ্রামের প্রান্তে
ভীত, এক পাও সঙ্গে এলো না
রাতে লুকিয়ে পড়লো
পুরনো এক মিনারের মধ্যে বুনো পায়রার সাথে
সোভিয়েত পুলিশ মিনারটা গুঁড়িয়ে দেয়
ও–ও মরে গেলো
তৃতীয়বার
নির্বাসন থেকে ফিরে
যখন পাহাড়ে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি ছিলো না
বাবা তার পরিবারকে সমতলে রেখে
জন্মস্থানের খোঁজে গেলেন
ফেরার পথে
পিছন ফিরে
শৈশবকে আর দেখেননি"
- শৈশব / অ্যাপ্তি বিসালতানভ ৩
কবিতায় মাংসের কথা বলি। মাংস মজ্জা হাড় বোমা স্প্লিন্টার।
এইসবের ছবি তুলতে আকাশ লাগে। আকাশের বিক্ষিপ্ত আলো, রক্তের দুর্গন্ধ, ইতস্তত ছড়ানো
বিক্ষোভ, টায়ারের টুকরো, পোড়া বিধ্বস্ত জিপ – এদের সকলকে প্রয়োজনে তালিম দিতে হয়,
নাটকের উপযুক্ত করে নিতে হয়। বিভিন্ন ক্যামেরায় এর রঙ আলাদা হয়ে উঠবে। কেননা সময়ের
সাথে বিক্রিয়ায় মৃত রক্তের রঙ পালটায়। কবরের মধ্যে থাকা অবস্থাতেও খুব সুন্দর অথচ
উলটো বিবর্তনে পালটে যায় রঙ! আমরা দেখতে যাই না। যেহেতু অন্ধকারের কোনও শরীর নেই।
যে আছে সে নিজেই অন্ধকার। এইভাবে প্রতিটি জীবিত ও মৃত দেহই একটি অন্ধকার।
অন্ধকারের দেহে বোমার আঘাত লাগে না। তবু কম্পন তো হবে। অথচ ছিন্নভিন্ন হওয়ার
বিরুদ্ধে অন্ধকারের কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই।
বেলুন, যুদ্ধবিমান আর নক্ষত্রমন্ডলী বাদ দিলে কবিতায় আকাশেরই
বা সাম্প্রতিক অবস্থান কি? কান্দাহার
ফিল্মের দৃশ্য মনে পড়ছে। আকাশ ও মরুভূমির মধ্যে হারানো লিঙ্ক - সারি সারি নকল পা। হাঁটার
জন্যও আকাশ লাগছে তবে – শুধু সৌরজগতের অনুষঙ্গেই নয়। প্রস্থেটিক পা কাঁধে বহন করছে
কেউ যার হাত-পা বোমায় উড়ে গেছে আংশিক-! এও কবিতা। কোনও এক ধরনের সংগ্রামের ভেতর যন্ত্রণাময়,
তুমুল এক নিঃশব্দ উচ্চারণ।
রোজ, একটু একটু করে পালটে যাচ্ছে সংগ্রাম, ক্রাইসিস, গিমিক্
আর তাদের চুলে বিলি কেটে দেয়া, ঘুম পাড়ানো। পালটে যাচ্ছে তাদের অনামিকায় আংটি
পরানো কবিতা।
৪ দীর্ঘ কবিতা / সব্যসাচী সান্যাল
৫ নির্বাণ / মেসবা আলম অর্ঘ্য
৬ স্প্রিং খাট / দেবাঞ্জন দাস
৭ অপরাহ্ণ ডাউনটাউন - ৬ / অপরাহ্ণ ডাউনটাউন / রাকা দাশগুপ্ত
৮ দৃশ্য / হাসান রোবায়েত
৯ বিমর্ষ ছায়ার ভ্যালী /
আন্দালীব
১০ কান্না পৃথিবীর প্রাচীনতম
গান / ফয়সাল আদনান
১১ ১৪ নম্বর কবিতা / রান্নাঘর
/ অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়
১২ বসন্তে লেখা কবিতা – ১/ হিজল জোবায়ের
১৩ ২১শে মার্চ / ট্রিপ / নবেন্দু বিকাশ রায়
১৪ শেষ সিন বসন্ত/ ইন্দ্রনীল ঘোষ
শিরোনামসূত্র - ৩ নম্বর
কবিতা / 'এবং বিহু' : সঙ্ঘমিত্রা হালদার
ছবি সূত্র- কান্দাহার /
মহসিন মখমলবাফ
আরও অনেক প্রিয় কবিতার
পংক্তি ব্যবহার করে আরও বিস্তৃত এবং গুছিয়ে লেখা গেলো না রিসোর্স এবং সময়াভাবে।
কিন্তু গদ্যটা লেখার সুযোগ দেয়ার জন্য অনিমিখ আর অনুপমকে অকুন্ঠ ধন্যবাদ !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন