রিভিউ : একটি কবিতার বই
জিনত ইসলাম
কোনো এক মুদির দোকানের ছেঁড়া পাতায় যদি লেখা পান “আমার
নির্বোধ সন্তান মিথ্যে সান্ত্বনায় ঘুমিয়ে
পড়েছে অনাহারে।হে কবিতা ,তুমি একমুঠো ভাত হতে পারনা”।তবে ভাববেন না মুখ
থুবড়ে পড়েছে কবি ও তার লেখনী।ওই হতাশাকাতর তরুন অখ্যাত কবির ঘরেই হাঁড়ি ভর্তি
কান্নার সঙ্গে ফুটতে ফুটতে জন্ম নিয়েছে ফিনিক্স পাখীর মত আর এক কবি। ওই পরিবারে
পরবর্তী প্রজন্ম।নাম অনিমেষ মন্ডল।
বাবার সতর্ক বানীকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে তিনি কলম ধরেছেন
কবিতার জন্য।লিখেছে্ন ”আমার কোনো প্রতিভা নেই”নামের একটি গদ্যকবিতার বই।একদম
সাদামাটা,৩১ পাতার বই।গভীর হতাশায় নিশ্ছিদ্র অমাবষ্যায় লেখনি স্পর্শ করেছে অতল
গহ্বরের লুকানো বিপন্নতা কিন্তু মুখ লুকিয়ে নয় অসাধারান স্পষ্টতার সঙ্গে কবি দারিদ্র্য আর যন্ত্রণা কে চ্যালেঞ্জ
জানিয়ে বলে উঠেছেন ,’এখন দুঃখ কে স্নিগ্ধ মনে হয়’।
তার প্রেম, নির্জনতার অনুভব নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে ‘দ্বিপভুমি’
ও ‘বিচ্ছেদ’ কবিতায়।‘সুবর্ণরেখাকে কবির নির্জন পত্র’ কবিতায় তার ব্যর্থ প্রেম ভাষা
পেয়েছে ‘সারাদিন দুজনে বালির সৌধ গড়েছি’
এমন কথামালায়। ‘অসমাপ্ত’ কবিতায় কবি একাকিত্ব ও অপ্রেমের ভারে নুজ্ব্য হয়ে
লিখেছেন,’আমার আকাশ রাত্রিভর অসমাপ্ত থেকে গেলো’।‘শেষ চিঠি’ তে তার করুন আর্তি,
“ভালো আছ?ভুলে যেও আমার অধ্যায়”।তার সারা কবিতার বই জুড়ে রয়েছে বাবার
অসহায়ত্ব,প্রেমের বিপন্নতা আর একটুখানি মা।“আমি এক অযোগ্য উত্তরাধিকারী” কবিতায়
তিনি প্রকাশ করেন মায়ের প্রতি তার জীবনভোর উপলব্ধি।‘আমার ক্লান্তিহীনা মা তিরিশ বছর ধরে সুতোর কাব্য বুনে
চলেছেন’। ‘সতী’ কবিতায় তিনি মায়ের কথা স্মরন করে লিখেছেন, ‘জেগে উঠলেই শিয়রে আমার
পদ্মিনী মায়ের মুখ ভেসে উঠে’।কবির মন কল্পনাবিলাসী,তার এই স্বপ্নউড়ান ‘বিবর্তদিন’
কবিতায় বনিকের নৌকাভরতি প্রজাপতির ডিম হয়ে আসে গ্রীস থেকে।
কবি তার ‘দৌড়’ প্রকাশনার বই এর
মুখবন্ধে নিজের কবিতা কবিতা কিনা তার ভার সমালোচকদের উপর ছেড়েছেন এক অবিশ্বাস্য
উদারতার সঙ্গে।একবুক হতাশা আর একঝাঁপি
পরাজয়ের নাম “আমার কোনো প্রতিভা নেই”
আবার সমালোচকদের হাসতে হাসতে দমবন্ধ করা পাগল বা অপদার্থ হতাশ কবির কবিতার বই এর
নাম “আমার কোনো প্রতিভা নেই” । মনে হতে পারে কোনো দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের নাম
“আমার কোনো প্রতিভা নেই’।তবু চেহারায় এটি
কবিতার বই।স্বাদে,শব্দে জনপ্রিয়তার শিখর ছোঁওয়া বইগুলির মতই। যদিও অতিসাধারন একটি প্রচ্ছদ । রং ও তুলির বহুল
ব্যাবহারকে অতন্ত্য সচেতন ভাবে বর্জন করেছে শিল্পী।একটি সাদা পাতায় কবিতা শুরুর
আগেই কবি গদ্য কবিতার জয়গানে মুখর হয়ে
লিখেছেন,’এবার কঠিন, কঠোর গদ্য আনো/প্রয়োজন নেই,কবিতার স্নিগ্ধতা- /কবিতা তোমায়
দিলাম আজকে ছুটি’।কবিতার ফর্ম এর কারনে পুনর্মুদ্রণ
করেছেন তার প্রথম প্রকাশিত বই এর ‘নুপুরকথা’ কবিতাটি।কবিতার প্রতি তার এই আবেগ
ছড়িয়ে আছে সারা বই এর বিভিন্ন পাতা জুড়ে যা মুগ্ধ করবে পাঠককে সন্দেহ নেই।
কবিতায় তিনি স্ববিরোধিতায়
ভুগেছেন কবির ডেফিনেশান নিয়ে। বাবাকে তিনি
কবি প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি কিন্তু কবির কবিতার মুল্য সংকটময় সংসারের
টানাপোড়েনে কতটা নিঃস্ব তা অনেকটা দ্বিধাগ্রস্থভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘আমি এক অযোগ্য উত্তরাধিকারী’
কবিতার মধ্যে দিয়ে।এর সঙ্গে যদিও
state of art এর
কোন সম্পর্ক নেই।কেউ যদি art এর নির্ধারিত ফর্ম বাদ দিয়ে বলেন যা গ্রহণযোগ্য, যা সর্বজনবিদিত,যা
জনপ্রিয় তাই কবিতা তবে অনেক কবিতাই হয়ত
নির্বাচনের পরীক্ষায় অনুরত্তীরন হবে। কিন্তু কবিতার গতিময়তার যে যাত্রাপথ তা কখনো
অবরুদ্ধ হবার নয়।অনিমেষ মণ্ডলের এই অখ্যাত বইটি সেই ঐতিহাসিক ঘোষনার এক দলিল।কবির
ঘরে কবিতা চর্চা অব্যাহত থাকার এক করুন তবু মহিমান্বিত এক দৃষ্টান্ত।
অসঙ্গতি আছে,আছে মেথেডোলজিকাল
গ্যাপ তারপর কবি শেষ করেছেন ‘on a highway in Vietnam ‘ কবিতা দিয়ে তার বই।জীবনের
গতিময়তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।‘বাঁচার তাড়নায় ছুটে যাচ্ছে উদভ্রান্ত, নিরপরা্ধ। ছুটে
যাচ্ছে আজো।‘ এক অনামী তরুন কবির অসহায়ত্বকে ছুড়ে ফেলে তিনি বলে উঠেছেন,”Even though I suffered physically
and mentally and emotionally I am happy because I am living without hatred “।
লেখকঃ অনিমেষ মণ্ডল
প্রচ্ছদঃ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ মুকুল
প্রকাশকঃ দৌড়,কলকাতা ৭০০১২৭
পরিবেশকঃ বইঘর
দামঃ ৩০টাকা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Arekbar Pori baak er kobita review,,,,,
উত্তরমুছুন