এ
মাসের কবি – ডিসেম্বর ২০১৪ – নীলাদ্রি বাগচী
১৯৮৭ সাল থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা
প্রকাশিত হতে থাকে। তবু, অ্যাতোদিনে
একটিমাত্র কিতাব! হ্যাঁ সংযম।
হ্যাঁ নীলাদ্রি বাগচী।
হ্যাঁ নির্লিপ্তি আর ঔদাসীন্যে মোড়া এক আশ্চর্য কবিমানুষ। পরিচিত অনেক কবির বোধ হয় ততোটা কবি হয়ে ওঠা হতোনা
জলপাইগুড়ির এই মানুষটির সান্নিধ্য ভালোবাসা একদা কখনো না পেলে... শোনা যায়। অথচ এই প্রসঙ্গে ‘যাপন বুঝি নি তাই এতদিন বেঁচে বর্তে আছি...’ ওঁরই কবিতার বই থেকে মনে পড়ে। বইয়ের নাম? অস্বাভাবিক নয়। ‘ফেলে দেওয়া জীবনযাপন’।
২০১০ সালের জানুয়ারীতে ‘এখন বাংলা কবিতার কাগজ’ ও ‘জার্নি 90s’ থেকে প্রকাশ পায়। উল্লেখ করতেই হবে, ‘এরকা’ পত্রিকার সাথে একদা ওতপ্রোত নীলাদ্রি
জড়িয়ে ছিলেন সংহত কবিতা আন্দোলনে।
এই পাতায়
খানিকটা নীলাদ্রি বাগচী...
বইমেলা- ২০১৩
তার এইদিকে শব্দ, চলা রাস্তা আর অন্য দিকে অর্ণবের ঢাল। শহরের শরীরে যখন রোদের নক্সাও লাগে নি তারা দেখল তখনও
খানিক বাকি আছে। অর্থাৎ, দোকানের সামনে
দাঁড়িয়ে এই আকাশ আর পোস্টারে পোস্টারে তার মুখে ওই জন্মের হিরোকে দেখে নেওয়া-এই তো
সুযোগ। পাখীর ডানার জন্য যতটা
বাতাস তার মসৃণে কমনীয়তার ঋণ এইভাবে শোধ হতে পারে। এই কথা ভেবে, শব্দের কি অর্থ যেন- এরকম শিস দিল সেও। আর তার ওইদিকে তখন চলাশব্দ, নিচু রাস্তা আর অন্যদিকে
গমরঙা খাল।
তবে কি খাবারও
লাগে?
জল আর আশ্রয়ের
খোঁজ?
সবে তো
রোদ্দুর
সবে তো টেবিল
সারে সেজেছে বিচ্ছিন্ন
আলো, লীন
শৃঙ্খলায়
এ শহর গ্রাম
যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে
যেন বাড়ালেই
ব-দ্বীপ
যেখানে আসলে
পাও নেই
আর হাতও
তবে কি অনুচ্চ
ভয়? লোভ আর সঙ্কেতের মূল্যগাত্রে মধুমঞ্জরীর কৌতুক? ভেবে দেখলে কতটা বেজেছে মধু?
সব পাত্র ফাঁকা করে, সব জলে মনোরম এঁকে, চিহ্ন হয়ে গেছে তাও?
সময় ফুরিয়ে
গেলে দোকানও সেতার হয়ে যায়?
বেজে ওঠে
মণিবন্ধে। ঘরের কোনায়। অপরিসরে রাখে সংজ্ঞার সকল ভাবনা। ঘরে ঘরে বিলেতের নানান রকম ডাক ছবি।
প্রশ্ন শুধু
পথে আনে। নিয়ে আসে নর্তকীর তরল
উপমা। আর তারা ফিরে আসে। সমস্ত দিনের নামে ছাতা রাখে কালোর গরলে। ওভারব্রিজের শর্তে তৈরি হওয়া টঙের গুমোটে সমবেতে গড়ে
ভেঙে পড়ে।
এতক্ষণ
যা ছিল
প্রস্তুতি
তাই অনিবার্য
হয়
বাষ্পদিন ছেয়ে
থাকে চোখের সরলে
ফেরের গল্পের
মধ্যে
ঘোরটুকু থেকে
যায়
হাঁটার গভীরে
শুধু ব্যথা, ভুল। টালমাটালের বোঝা বয়ে
এভাবে প্রবীণ বাড়ে। শীত বাড়ে নামেমাত্রে।
আস্কারা
প্রবলে বাড়ে মোরাম বাতাস...
প্রায় সরাসরি...
০।। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শব্দটায় আমি সেই ঘোড়াটিকে দেখতে পাই যার শক্ত ক্ষুর আর
তেজী লাগাম। দুর্বল কেশরের সাথে বাধ্যতামূলক দীর্ঘশ্বাস আর
কৃপাপূর্ণ শরীর গঠন কিন্তু একেবারে মাথায় এলো না।
মাপা শব্দে এইসব অকারন ছবি।
রাতদুপুর, ময়ূর, কনকাঞ্জলি।
আসলে ডানদিকে তিল বললে কমপক্ষে এক লক্ষ লোক।
জমায়েত বললেও তাইই। আর
ডান দিকে তিলের জমায়েত?
উড়ো পাখি ডাকছে রাতজাগা।
এই ভাবে বিষয়কে আড়াল বা ঘোরানো যেতে পারে
১।। হাঁটার শেষেই আছে দাঁড়ান, বসার লাগোয়া।
ভেবে দেখলে, শোয়া কিন্তু ততখানি কাছাকাছি নয়।
বসা ও শোয়ার মধ্যে অনেক মাইল শব্দ ছড়িয়ে রয়েছে।
বৃন্তকে সরিয়ে রেখেছি, পরে ব্যাবহার করব ওই রঙ।
এইভাবে অতীতও রয়েছে।
খানিকটা আত্মত্যাগ আর আত্মখুন মিলিয়ে মিশিয়ে
২।। সামান্য আগুন।
পাতায়, টেবিলে। একটু বেশী তো নিঃশ্বাসে।
আর একটু তো চোখে। এই হল দেখা।
মানে মণিবিন্দু শব্দ শব্দে প্রতিস্থাপন। উপমায় আরও কত।
বিশেষণে ধিকিধিকি। লেলিহান বর্ণনার চেষ্টা শুধু।
যা ঘটেছে সেটা কিন্তু মধ্যরাত।
করাত তুলনা সেই বছর কয়েক
৩।। ভালোবাসা সম্পূর্ণ আবেগ। বিজ্ঞানে আবেগ বলে কিছু বোধহয় নেই।
তাই ভালোবাসা বিজ্ঞানে নেই। হরমোন রয়েছে বহু পাতা।
ফলে হরমোন উড়ছে, হে মধ্যরাত।
স্বচ্ছ, তবে খুলল না।
হাঁটুও ডুবল না নদী পারাপারে। ভিজল না যথারীতি বেহায়া স্বভাব।
এটাও আবেগ।
হাই উঠছে প্রত্যাগত।
ঝরে যাচ্ছে আলো, তার ঘুম, কাঁধের আড়ালে সেপটিপিন
বৃষ্টি- ১৫
মাঘ
চলা চলতি পথে
এসে ঝুঁকে গেছে জরির মুকুট।
কে মায়া কি
মায়া দিচ্ছে লাগাতার ঝরে পড়ছে জল
বারান্দা
পেরিয়ে এলে সামান্য চটির শব্দ হানা দেয় মাথার ভিতর
ভিতরে বৃষ্টির
টান, এত রাত্রে হাঁটা দেয় পথ...
ক।।
কাঠের গুঁড়োর
গন্ধ সর্ষে ফুল বিকেল পেরিয়ে
হাতরিকসা পার
হচ্ছে পেয়ারা বাগান গলিঘুঁজি...
আধখোলা কপাটের
আড়, একটু ঠাণ্ডা বাতাস উঠেছে...
সামান্য
নিদ্রার দৃশ্য, নিদ্রাতুরা স্বয়ং দেবতা...
পদপ্রান্তে বসে
আছি একা আমি এই দুর্যোধন...
খ।।
সবুজ জঙ্গল
ঠেলে সূর্য খোঁজা সকালের ঘুম
এদিক বাড়িয়ে
দেয়, সেইদিকে অন্যমনে হাসে।
পাকানো কাঁথার
মধ্যে একাকার আশ্চর্য জগত...
ছ’দিন পেরিয়ে গেছে, দিন রাত্রি এখনও
বোঝো নি...
গ।।
সম্পর্ক বুঝি
না বলে এক নৌকো শব্দ নিয়ে আসা
পারা না পারার
মধ্যে আলো আসে মন ভালো করা,
অনেকেই দেখে
গেছে, এখনও অনেকে আসা বাকি;
সাজানো গোছানো
নৌকো বারবার এ’পার ও
‘পার...
গঠনের দিনগুলি
তুমি শুধু ঘুমিয়ে কাটাও...
ঘ।।
নক্ষত্র লবঙ্গ
যেন তার কথা ভেসে আসে দূরে,
লোকে গল্প
করে, আমি হতবাক হয়ে যাই শুনে...
শব্দে রাখনি
পা, আলাপচারিতা তবু কি সহজে ঘণ্টা পেরোয়...
ঙ।।
ঘণ্টার ধ্বনির
সাথে সন্ধে আরও ঘন হয়ে ওঠে,
ধাতুকলসের
রাতে পথে পথে জমে ওঠে জল...
কখনো দেখি নি
তবু
তিনি যা দিলেন,
আমি অংশ নিয়ে, তাতেই পাগল…
সহসার
ডালপালাগুলি-১
বাতাস সাঁতার
কাটছে, এই শীত নক্ষত্রপ্রবণ।
ক্ষতিকারকের
মতো সমূহ উপমা
ধীরে ডুবে
যাচ্ছে আর চোখ শব্দের আকর...
কোহলবিষণ্ণ অই
শামুকের প্রবণতা
এতদিনে
প্রকাশ্য এনেছে...
কেবল শুরুর
জন্য ঋণ আর ঋণের গভীরে
তার জলদেশ,
দেশলাই, সাধারণ আলো...
ক।।
মোম যা জানে
না তার দৈর্ঘ্য সেই মায়া
রাত্তিরে ছায়ার
বুকে, দিনে শুধু আলো,
বিকেলে টিভির
পাড়ে, সন্ধে হলে ঘোর
কাটিয়ে উঠেছে
জেগে, ভ্রমক্রমে চাপ
মাথার পেছন
থেকে, এও এক খেলা...
সকল খেলার
মধ্যে বিভাবতী এলে
গল্প শেষ হয়ে
যায়, শুরু হয় ক্ষণ...
খ।।
দীর্ঘ চিরুনির
শেষে আমাকে রহস্য বলে পথ,
বলে নীল
সম্ভাবনা, অনন্ত বাঁ পাশে রেখে
এইমাত্র ছুঁয়ে
গেছে গলিমোড়...
এখনও ধূপের
গন্ধ,
এখনও
প্রার্থনা আর নীচু বিকেলের মুখে
জল, তুমি,
মায়াবী আঁচল হয়ে আজও...
গ।।
আমিও শান্তির
জন্য তোমাদের বিরল করেছি
আর
দণ্ডকলসের
বুকে আমিও খুঁটিয়ে দেখি কেবল মনন
এইমাত্র...
বাকী সব
রৌদ্রে কথা বলে ওঠা পলাশ-সেগুন...
ঘ।।
উপমা পেয়েছি,
তবে, ব্যবহার করি নি কখনো...
ঙ।।
যে কোনও ভাঙার
শব্দে একটি প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা
যে কোনও খেলার
মধ্যে একাধিক দর্শকের মতো
হারিয়ে যাবার
পথে পা বাড়িয়ে ফিরে চলে আসে...
চ।।
যে আমি থাকি
নি, তার উত্তরে দক্ষিণা আলো,
মা কেবল খরস্রোতা,
আর
প্রবল দুপুর
এলে আশ্চর্যের সাথে আমি ফোনালাপে
মগ্ন হতে থাকি...
‘বাবা
আমি মন খারাপ করেছে...’
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
বিষয় প্রকাশের ভাষা কেন্দ্রে আটকে না থেকে কেন্দ্রবিমুখ ডানা ছড়িয়ে রচনা করেছে অজস্র চরাচর; যেখানে মা হয়ে ওঠে খরস্রোতা আর বাবা মন খারাপের আতুরঘর; রচিত হলো এমন একটি ঘর যে ঘরে আমি আপনি অথবা তিনিও অবস্থান করেন; নীচু হয়ে আসে বিকেল; জলের কাছে এসে থমকে থাকে মায়াবী আঁচল; আর যখন আমরা ফোনালাপে মগ্ন হতে থাকি তখন নীলাদ্রির ভাষা হয়ে ওঠে একান্ত গোপন ও ব্যক্তিগত শামুক প্রবণতা। ক্রমশ কবিতা ডালপালা ছড়াতে থাকে; আমাদের মাথার মগজে অনুভূতির সিস্ট; এমন কোনো শল্য চিকিৎসক নেই যিনি সিস্ট বিমোচনে দক্ষ; আমরা সিস্ট আক্রান্ত হলে কবি নীলাদ্রি মানবীয় সম্পর্কের অধিক করে তোলেন এক নৌকো সমূহশব্দসম্ভার এবং অতঃপর ইহাকেও কবিতা বলা সম্ভব; কেননা ইহা দ্বারা আমি আক্রান্ত হলে, নক্ষত্র লবঙ্গ যেন তার কথা ভেসে আসে দূরে... এবং চঞ্চলমতিদের জন্য ইহা পাঠযোগ্য নহে; অলীকবাসী নয়; জগতবাসী, যিনি শুধুমাত্র চোখে দেখেই ম্যাসেজ সংগ্রহ করেন না বরং মিলিয়ে নিতে পারেন পরা আর অপরালব্ধ সংবাদ.........তাহাদের জন্য রচনা করেন কবি নীলাদ্রি বাগচী এহেন কাব্যসমশব্দবন্ধন।
উত্তরমুছুন