দলিত প্যান্থার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নামদেও ধাসাল শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিভূমিতে দাঁড়িয়ে কবিতাকে আয়ুধ হিসেবেই ব্যবহার করেন নি, আধুনিক মারাঠি কবিতাকে এক আশ্চর্য বিস্তৃতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।১৯৪৯ সালে পুনে তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নামদেও ধাসাল। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘গলপিথা’ প্রকাশিত হয়।‘মুরখা মাথরায়ানে দোঙ্গার হালাভিলে’, ‘খেল’, ‘গান্ডু বাগিচা’, ‘মি মারালে সুর্যা রাথাচে ঘোড়ে’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। পদ্মশ্রী ,সেভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার ছাড়াও সাহিত্য অকাদেমির লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইতে মৃত্যু হয় তাঁর।
নামদেও ধাসালের কবিতা
(অনুবাদ : শৌভিক দে সরকার)
দরগার রাস্তায়
একটা ফেঁসে যাওয়া সূর্য
পুড়ে যাচ্ছিল
রাত্রির দুহাতের ভেতর।
আমার জন্মমুহূর্ত
ফুটপাতে, নোংরা বস্তার ওপর
জন্মেছিলাম আমি
আর এতিম হয়ে গিয়েছিলাম
আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েই স্বর্গে
আমাদের বাবার কাছে চলে গিয়েছিল
রাস্তার ভুতগুলোর অত্যাচারে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল মা
শাড়ির অন্ধকারটুকু শুধু ধুয়ে ফেলতে চেয়েছিল বেচারি
আর আমিও বেড়ে উঠছিলাম
একটা ফিউজ কেটে যাওয়া মানুষের মত
রাস্তায় পড়ে থাকা গুয়ের ওপর
চেল্লাতে চেল্লাতে,”আমাকে পাঁচটা পয়সা দাও
না হলে পাঁচটা অভিশাপ নিয়ে যাও”
দরগায় যাওয়ার ঐ রাস্তাটায়।
একটি শিরোনামহীন কবিতা
আমি মাঝেমাঝেই ওকে দেখি
আর তাড়িয়ে দেই
আমার লাশ,যেটা সারাদিন
শহরে শহরে ঘুরে বেড়ায়
এই সন্ধ্যার আলোর ভেতর একটু দাঁড়াও
একটা মাতাল ঈশ্বরকে ফোন করছে
আমাকে অত দয়া দেখিও না
দয়া শব্দটাই ক্ষয়ে যাবে
আমাদের সম্পর্কটাই ফুরিয়ে গিয়েছে
তোমার কাঁধদুটো ঝাঁকাও
আর পুরোটাই ঝেড়ে ফেল
তুমি তাহলে
এই জলটাকে আরও কয়েকবার কোপাতে পারবে
দিন আসে,দিন চলে যায়
রাস্তায় হাঁটছিলাম আমরা
হাঁটাটা ঠিক হয়নি আমাদের
একটু এগিয়ে যেতেই অন্ধকারও চেনা হয়ে উঠছিল
একটা বোবা হাওয়া শহরের আত্মজীবনীর মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল
একটা বিশ্বাসঘাতকতার অনুরণন
একটা খোঁজ, সব যন্ত্রণার শেকড় বাকড় খুঁজে বেড়ান
গতকাল,শুধু অন্ধকারই শুকনো পাতার মত ঝরে পড়ছিল
আজ,ভেতরের পুরো পৃথিবীটাই পুড়ে যাচ্ছে
অনেকদিন পর বৃষ্টি নেমে আসছে
অস্পৃশ্য মাটির ওপর।
দিনটা এসেছিল তাই আমরা এভাবে কাটিয়েছিলাম
দিনটা ফুরিয়ে যেতেই আমরা সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম
একটি গাছ অথবা ডালপালায় নুয়ে পড়া একজন নারী
এতিম,মেঘভর্তি
একটি ঘরছাড়া আকাশ
অন্ধকারের ঐ ভুতটাই কানাগলিগুলোকে জাগিয়ে রাখছে
আলোর দিকে সারি বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধরা
ধর্মনিরপেক্ষ মাটি বর্ণমালার বীজগুলি ঢেকে দিচ্ছে
তাহলে কোন সাম্প্রদায়িকতা চাঁদ বেচারিকে কলঙ্কিত করল?
আমাদের যৌথ চিৎকারই জীবনের সবকিছু ধরে রেখেছে
আমরা কি সবুজ ক্ষেতগুলিকে হাওয়ায় নেচে উঠতে দেখিনি?
এই শূন্যতার ভেতর আমার ছায়ার পেছনেই লাথি মারলাম আমি
দুমুখো জীবনের খুলে ফেলা ছায়া মাঠ পার হয়ে চলে গেল
আমাকে তাহলে কে আদর করবে?
একটি গাছ নাকি ডালপালায় নুয়ে পড়া একজন নারী?
জাদু
এই নাটকের নিয়মগুলিই আমার জ্বালাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে
ট্র্যাজেডি আর কমেডির ভেতর আর কোন ফারাক খুঁজে পাইনা আমি।
ভাগ্যের তামাশা, দুর্দশার দশাবতার;
কিভাবে যে সময় চলে গেল! ব্রিজের নিচ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেল!
বাঁজা গাছটাতেও শেষমেশ ফুল চলে এল
অথচ এই দেশ,আমাকে সবসময় বহিরাগত বলে গেল;
হাওয়াও আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল;
শুধু ঐ অন্তহীন আকাশটাই আমাকে দয়া দেখাল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন