মীনা
কান্দাসামিঃ
সমসাময়িক ভারতীয় ইংরাজী কবিতার অনড় নন্দনতত্ত
এবং অরাজনৈতিক স্থিতিজাড্যটিকে আক্রমণ করেছেন মীনা কান্দাসামি তাঁর কবিতায়।
উন্মুক্ত লিখনভঙ্গীমা,কালো হিউমর,সারকাজমের তীব্র কশাঘাতে বারবার পাঠককে বাধ্য করেছেন পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলির স্থানচ্যুতির
কথা ভাবতে।নারীবাদ,দলিত রাজনীতি,তামিল জাতিসত্তার বিষয়গুলি উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়।১৯৮৪
সালে চেন্নাইতে জন্মগ্রহন করেন মীনা।২০০৬ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘টাচ’
প্রকাশিত হয়।‘এম এস মিলিটান্সি’ তাঁর উল্লেখজনক কাব্যগ্রন্থ।সম্পাদনা করেছেন
‘ওয়েকিং ইজ আনাদার ড্রিমঃ পোয়েমস অন দা জেনোসাইড ইন এলাম’ সঙ্কলনটি।সম্প্রতি
প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দা জিপসি গডেস’।
মীনা কান্দাসামির কবিতা
শিশুরা এবং স্নানের জল
সপ্তাহের কয়েকটা দিনেই
ওরা পদ্মফুলের সাথে ভেসে উঠত
আর সূর্যের প্রথম আলোকে শুষে নিত
ওদের তাজা/মাংস/ফুটে ওঠা গোলাপি রঙের ভেতর।
একটি পয়েন্টিলিস্ট ক্যানভাসের মত মন্দিরের
সবুজ-ছাইরঙা পুকুরের ওপর জেগে থাকা অজস্র বিন্দু
জলের ওপর মাছের খাবারের মতই ভাসত ওরা
ফুলে ওঠা,সদ্য-জন্মানো,সদ্য-মরে যাওয়া শিশুরা।
চোয়াল শক্ত করে,অনেক
পুরনো একটা পদ্ধতিতে
পবিত্র মন্দিরটা এইসব ভুলের চিহ্নগুলি সরিয়ে ফেলত
ক্লোরিন ছিটিয়ে দেওয়ার পর
স্নানের জল আবার আগের মত পবিত্র হয়ে উঠত।
এক চোখের দৃষ্টি
জলের জগটা শুধুমাত্র একটি দুরন্ত বাচ্চাকে দেখছিল
গ্লাসটা শুধু একটি আকুল আর থ্যাবড়া হাত দেখছিল
আর জল দেখছিল দাঁড়ের ওপর বসে থাকা একটা গলার নুয়ে পড়া
তৃষ্ণা
কিন্তু মাস্টারমশাই দেখছিলেন নিয়ম ভেঙ্গে ফেলা একটি ছোট
মেয়েকে
ডাক্তারবাবু দেখছিলেন একটি আপতকালীন পরিষেবা
আর স্কুলবাড়িটা তাকিয়ে দেখছিল একটি বিরক্তিকর অবস্থা
সংবাদপত্র খুঁজে নিচ্ছিল হেডলাইন আর ফোটোফিচার
শুধু ধানম দেখছিল দুভাগ হয়ে যাওয়া একটি পৃথিবী
ওর বাঁ চোখের পাতাটা খোলাই ছিল, শুধু আলো দূরে সরে
যাচ্ছিল
ঐ স্পৃশ্য জল ছুঁয়ে দেখার চরম মূল্য চোকাতে হচ্ছিল শুধু।
একটি লম্বা আয়নার সামনে সব অহংকার শেষ হয়ে যায়
ভুলবেন না যে এই পৃথিবীটা
কপালে এয়ারব্রাশ চালানোর অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছিল
ওইসব এডিটিং, যা দিয়ে সবকিছু নিখুঁত করা যায়,
অ্যাডোব ফটোশপ আবিষ্কার হওয়ার অনেক আগেই
তিনটি স্তন অথবা তিনটি চোখ
অথবা বেখাপ্পা জড়ুল, আঁচিল নিয়েই
দেবতারা জরাজীর্ণ চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকতেন
যেগুলিকে অনেকটা যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের মত দেখাত
কয়েকজন ব্যাং-জাত, কয়েকজন আবার কুকুর-জাত
আর সবচেয়ে বিখ্যাত মিডিয়ার প্রিয় দেবতাটি তো
আসলে একটি হাতির মাথা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন।
আয়নাকে ঘেন্না করাটাই তাঁদের চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল
তাঁরা দৃষ্টি হারিয়েছিলেন, এমন কি দূরদৃষ্টিটিও
পরে সবকিছুর চেহারা কেমন হবে সেটাও বুঝছিলেন না।
কয়েক ডজন হাতে ক্ষতচিহ্নের পাপের মত শুধু অমঙ্গলের বীজ
পুঁতে দিয়েছিলেন
যেগুলিকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা,ন্যায়বিচার আর শৃঙ্গারের জন্য
ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিজেদের কুৎসিত চেহারার জালে ফেঁসে গিয়ে ঐসব ধর্ষকামীরা
সমাজের ট্যারা বেঁকা সিঁড়িগুলি বানিয়ে ফেলেছিলেন।
সত্যিই তাঁরা একটি বিপ্লব করে ফেলেছিলেন।
মাটি খাওয়া
ওর আধমরা জিভ স্বপ্ন দিয়েই পেট ভরাতে চাইছিল
আর ও শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছিল-
কাঁচা
আমের কাই একঘেয়ে চক
লেবুর
রস শক্ত কয়লা কাঁচা ভাত
বরফের
গুঁড়ো ক্রেয়নের ছাই
পাউডার হয়ে যাওয়া কাঁচ আচারের রসুন
নোনতা
বৃষ্টি মাখা মাটি
একটি ছেলে জন্মাল, তাকে খাওয়ান হল
কদিন পর সে নিজেই খাওয়া শিখল
আর মাটি খেতে গিয়ে ধরাও পরে গেল
একটি
ছেলে অবিকল তার মায়ের মত
একটি
ছেলে তার মায়ের জিভ নিয়ে বেড়ে উঠছে
একদিন ও তার বোবা চাঁদটাকে একটি মাইলস্টোনে বেঁধে রাখল
আর পাগলের মত চাবকালো
তারপর ওর মেঘভর্তি মুখটা খুলে দেখল
ত্রিভুবনের একমাত্র সত্যিটাকে-
চারিদিকে শুধু বালি,সবকিছু
বালি হয়ে যাচ্ছে।
মহান অষ্টাঙ্গিক মার্গ
ইহা মধ্যম
পন্থা, ইহা অষ্টাঙ্গিক মার্গ
ইহাই
পরিত্রাণের একমাত্র পথ।
সৎ দৃষ্টি
সৎ দৃষ্টি এই
রাস্তাটির প্রকৃত দিশা নির্দেশ করে
সৎ দৃষ্টি সঠিক কর্মপদ্ধতিটিকে এগিয়ে দেয়
সৎ দৃষ্টি মানুষকে একটি সৎ জীবনের দিকে নিয়ে যায়
আর ঐ রাস্তার শেষেও দাঁড়িয়ে থাকে সৎ দৃষ্টি।
সৎ দৃষ্টিই আপনাকে জানাবে যে
মৃতপ্রায় মানুষেরা আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে
আর তাই হাসপাতালগুলির ওপরেই বোমা ফেলা উচিত।
সৎ সংকল্প
এই জন্ম যন্ত্রণার, বার্ধক্য যন্ত্রণার
জরা যন্ত্রণার, মৃত্যু যন্ত্রণার,
শোক ,দুঃখ ,ব্যাথা,বেদনা
হতাশা সবকিছুই খুব যন্ত্রণার
অসুন্দরের সংস্পর্শটাই যন্ত্রণার
সুন্দরের কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়াটাও যন্ত্রণার
অপ্রাপ্তির বিষয়টিও যন্ত্রনার
আর এইসব যন্ত্রণার দ্রুত উপশমের জন্য
সৎ সংকল্পের প্রয়োজন,যার জন্য দরকার
পালাতে থাকা মানুষগুলোর ওপর কার্পেট বম্বিং
সৎ বাক্য
সৎ বাক্যের অর্থ কু কথা না বলা
মিথ্যাচার থেকে দূরে থাকা,অপবাদ না দেওয়া
অশ্রাব্য কথাবার্তা, অযথা গুলতানি থেকে দূরে থাকা
কথা অনেক সময় জীবন শেষ করে দেয়, যুদ্ধ ডেকে আনে
তাই ঐসব শান্তির কথাবার্তা থেকে দূরে থাকাটাই সবথেকে
ভালো।
সৎ কর্ম
সৎ কর্মের অর্থ অনৈতিক কাজকারবার না করা
আর এই বিষয়টি একটি অভিব্যক্তি হিসেবেই
শরীরের সাথে শুরু হয়।তাই জীব হত্যা করবেন না।
যা কিছু আপনার নয় তা ছিনিয়ে নেবেন না।
ভুলেও অপ্রীতিকর যৌনতা করবেন না।
চিরকুমার বুদ্ধ আর তাঁর ভিক্ষুরা কখনও বীর্যপাত করেন নি
তাই প্রতিটি মেয়েকে ধর্ষণ করাটাই আপনার কর্তব্য
সৎ জীবিকা
বুদ্ধ পাঁচটি জীবিকার দিয়েছিলেন
অন্যের ক্ষতি করাটা কখনই ঠিক না।
আর প্রথম উপদেশটিই ছিল অস্ত্রব্যবসা বন্ধ করার পক্ষে
তাই ভারত আর চিনকে ঐসব খেলনাগুলি উপহার দিয়ে দিন
সৎ প্রচেষ্টা
সৎ প্রচেষ্টার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন
অদৃশ্য অন্ধকারের ভেতরেও একটি বিশেষ উদ্যোগ থাকে
যা ঐ অপরূপ আলোর গোলক কিম্বা মৃত্যুর প্রতিবিম্বটিকে
দেখার শক্তি জড়ো করে।
আর বাসনার নিবৃত্তির জন্য তো ধ্যানই সহজ রাস্তা
যেটা কোনকিছুকে আঁকড়ে ধরার অভ্যাসটাকেও উড়িয়ে দেয়
আর জীবনে অন্ধকার তাড়িয়ে আলো পেতে হলে
আপনার শত্রুদের বোমা দিয়ে ঝলসে দিন
আর ওদের আঁকড়ে ধরার অভ্যাসটিকে শেষ করতে চাইলে
ওদের বাঙ্কারগুলোর ওপর বুলডোজার চালিয়ে দিন
ওরা শেষবারের জন্য একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে পরে থাকবে।
সম্যক সমাধি
সম্যক সমাধির প্রথম পদক্ষেপটিতে
শরীরের একদম গভীরে চলে যেতে হয়
আর শেষ পর্বে শরীরের সমাধির জন্য দরকার হয়
ঐসব সমাধিক্ষেত্রগুলি যেখানে মৃত্যুর ছায়া আর
পচে গলে যাওয়া লাশগুলি ভেসে বেড়ায়
চেম্মানি আর মুল্লিভাইক্কালের গণকবরগুলিতে বসে ধ্যান করে
দেখুন।
সৎ চিন্তা
সৎ চিন্তার অর্থই হল শারীরিক চাহিদা
আর নোংরা চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলা
দীর্ঘদিন পরিশ্রম করলেই সৎ চিন্তা করতে শেখা যায়
তাই নাপামের সঠিক পরিমাণ নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিন
অথবা আকাশ জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সাদা ফসফরাসের কথা ভাবুন
তামিলদের জন্য এগুলিই নির্বাণের রাস্তা খুঁজে দেবে
আর আশীর্বাদ পাওয়া মানুষরা
লাফিং বুদ্ধর লাফিং গ্যাসের ভেতর শ্বাস নিতে থাকবে।
অনুবাদ ঃ শৌভিক দে সরকার
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন