• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

ভূদেব সেন


....ভূদেব সেন...
(১৯৪১-১৯৬৪)
(কাব্যগ্রন্থ-শোণিতের ঋণ,আমি যেতে চাই নরকে, )



কবি আর কবিতাকে আমার মাঝে মাঝে যীশু আর ক্রুশকাঠের মত একাত্ম মনে হয়; যতক্ষণ সে ক্রশকাঠ যীশুর গায়ে গায়ে বুকে বুকে মৃত্যুস্পষ্ট হয়ে রয়েছে ততক্ষণ সে যেন চৈতন্য ও জড়ের অন্যোন্যসংক্রমন ততক্ষন সে যেন একইসাথে মরলোকের আর জীবনায়নের এক অনন্ত ছবি। অথচ যীশু ব্যতীত সে যেন কেবলই অবহেলাবেষ্টিত টুকরো খন্ড। অনেকেই হয়ত এ মতের বিপরীত হবেন বলবেন কলম থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কবিতা আর কবির পথ ভিন্ন, তা হয়ত খানিক সত্য কিন্তু এই বিশ্বসংসারে কবিতার থাকাও যেন কবির থাকার সাথে সাথেই সহজ চিহ্নিত। নয়ত সে স্মৃতিবিচ্ছিন্ন এক অনায়াস অবহেলা।

কিন্তু ওই যে মার্লামে বলেছিলেন না –“ এই পৃথিবী অহর্নিশ তাড়া খেয়ে ফিরছে কিছু একটা অবিদ্যমানতার কাছে-তেমনই হয়ত আমরাও মাঝে মাঝে খুঁজি সেইসব প্রতিদিনের বিনাশী বাক্যাংশকে ,খুঁজি না থাকা কবির না থাকা কবিতার এক থাকা এক দ্বিতীয় জন্মকে । বাকের বোধের অন্ন জল হাওয়া বাতাস দিয়ে জড়িয়ে ধরি অন্য এক আত্মার অপ্রতিষ্ঠ অলস রংটিকে। আর সবচেয়ে আশ্চর্য হই অমৃতত্ব অবধি নয় কেবল আমাদের আত্মার অতিরোহ অবধি এই সব হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষের স্বরকে এনে দিতে যে ধাক্কার প্রয়োজন তা যখন আসে আমাদেরই স্বজন বন্ধু সহকবিদের কাছ থেকে। পুনঃপুনঃ মনে হয় নির্মাণ শব্দের মানে আজও কেবল নিজেকে নয় অপরকে গড়া -এ কথাটা আজও কতটা সত্য কারও কারও কাছে। ঠিক যেমন হারিয়ে যাওয়া কবিতার এ পর্বের কবি ভুদেব সেন বা তাঁর কবিতার সাথে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবেই অচেনা ছিলাম। সুজনকবি ইন্দ্রনীল বক্সী তাঁর কবিতা সংগ্রহও স্ক্যান করে পাঠিয়ে আরও একবার মনে করিয়ে দিল কবি বা কবিতা আসলে কেউই হারায় না, কোনো এক অষ্পষ্ট এলাকা থেকে তাঁর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন তুলে আনে কোনো না কোনো প্রজন্ম কোনো নিবিড় পুরষ্কারের জন্য না কেবল এক অনাবিল কবিতা উৎসবে সামিল হওয়ার তাগিদে। এবারের হারিয়ে যাওয়া কবিতার পর্বে তাই আন্তরিক ঋণ স্বীকার রইল কবি ইন্দ্রনীল বক্সীর প্রতি।

ইংরেজী ১৯৪১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলা ১৩৪৮ সালের ৪ঠা বৈশাখ পাটনায় ভূদেব সেনের জন্ম; আদি নিবাস খুলনা। প্রথমে মর্ডান স্কুল এবং জগদ্বন্ধু ইন্সটিটিউশনে শিক্ষালাভ করে দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজে প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সে সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন ভূদেব। এবং মাত্র ২৩ বছরে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার সময় ভূদেব সেন ছিলেন ডিগ্রী কোর্সের ইংরেজী অনার্সের ছাত্র। এই স্বল্প জীবনে তাঁর কবিতার বই শোনিতের ঋণ, আমি যেতে চাই নরকে, তিনটি উপন্যাস চরিত্রহীনা, একটি প্রাণ দুটি বিক্ষোভ, এবং এই কোলকাতা প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর প্রাককালে তাঁর নাটক কালস্রোত অভিনয়ের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছিল। ১৯৬৪ সালের ১০ই জানুয়ারী দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজের এক বিক্ষুদ্ধ সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিতে অকালে হারিয়ে যায় তেইশ বছরের এই প্রতিশ্রুতিময় জীবন। কিন্তু কবি কোথায় হারান?

উল্লিক্ষিত সব কটা কবিতাই তাঁর আমি যেতে চাই নরকে কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত; কাব্যগ্রন্থের মুখবন্ধে কবি লিখে গেছেন- জীবনদর্শনের সমীক্ষায় এখন আমি বিভ্রান্ত তরুণ। তারই ফলে দেখা যাবে, একই আমার দুই ভিন্ন আকাঙ্খা। যৌবনের অর্ণব মন এখনও পর্য্যাপ্ত গভীর ও শান্ত নয় আবার গভীরতার প্রতিশ্রুতি মাঝে মাঝে ফুটে উঠেছে হ্যাঁ, শ্রুতি প্রতিশ্রুতি প্রেম প্রত্যাখানের যতিচিহ্ন ছড়াতে ছড়াতে কবি কখনও তারুণ্যের প্রতিধ্বনি হয়ে নতুন আনন্দে নতুন যন্ত্রনায় শিউরে উঠেছেন তো কখনও বা পথচ্যুত উল্কার মত হয়ে উঠেছেন আত্মঅন্বেষনে নির্বিকার। প্রেম প্রবাহের উষ্ণ নির্দেশ থেকে অনেক দূরে শোনা গেছে তার স্থির কন্ঠ –“ আমি এতদূর গেছি এসে একেলা/ আর যে কেউ আসেনি/ নেই যে কেউ দাঁড়ায়ে আমারই পাশে-

আসলে কবিতার গাঢ় ভাষা বোধহয় যুগে যুগে একই- পেয় জল পেয় বাতাসে যুগে যুগে তা অনন্ত আর্ত হাহাকারময় অস্তিকে তুলে আনতে চায় নাস্তি থেকে, আবার কোনো এক সন্ধ্যেবেলা আনন্দের ছদ্মবেশ খুলে রেখে আতিশয্যের ছন্দোময় চরন খুলে রেখে ফিরে চলে নাস্তির দিকে। অর্থাৎ আদির যে আত্মা আর ইদম এক ছিল যা থেকে কবি নিজেই অধিকারের বন্ধনে স্বীকৃত হতে চেয়েছিলেন হতে চেয়েছিলেন হিসেবের মায়াবী শুভ্রতায় দগ্ধ যেখানে আত্মাকে অন্নাদ আর ইদমকে অন্ন গড়ে সারাবেলা ঢেঊয়ের ধাক্কা খেতেন সেই কবিই হয়ত শেষমেশ ঘরে ফেরবার ডাক পান,  শেষমেশ ভেঙে দিতে চান অন্নাদ আর অন্নের এই মেরুসম্পর্ক। তাই তো কবি ভূদেব সেনকে কখনও বলতে শুনি- চিন্তার জাল বুনে যাওয়া কবি !/ পেট ভরে ওতে,বাড়ি ভাড়া মেটে !/ পাওয়া যায় এক মুঠো চাল?/ নন্দিতাকে দুষে বৃথাই ফুসছো তুমি/ ও ঠিক জানে,/চিন্তার স্বপ্লে আলাদিনের পিদীম জ্বলে না/ভরে না পেট,মেটে না বাসনা/চাই তেল, অনেক অনেক তেল/ ঈশ্বরের সৃষ্টির ইতিহাসে/তুমি এক অনাসৃষ্টি- নিয়তিবদ্ধ এতসব প্রশ্ন করে কবি আসলে নিজের পিঠ পুড়িয়ে বারবার বারবার খুঁজে চলেছেন সেই তিলমাত্র জায়গা, জীবনের  ঠান্ডা বাতাসে কুঁকড়ে যাওয়া তিলমাত্র জায়গা- আবার সেই কবিই আসক্তি অস্থিরতা অশ্রু পেরিয়ে বলেন- আমি মুক্তি চাই... মুক্তি চাই/ এ পৃথিবীর বঞ্চনার যাতনা থেকে/ স্বর্গে যখন ঠাঁই নাই/ আমি যেতে চাই নরকে- কিন্তু কি সেই প্রকৃত ফেরার পথ? শীতরাত্রির মাঝ দিয়ে এসে বিপুলা পৃথিবীকে আড়চোখে রেখে কি সেই প্রকৃত ফেরা। ঠিক এই প্রশ্নই আসলে কবিতা। যেখানে কবি নিজেই নিজের আত্মবিনাশের অংশ খুঁজে নিচ্ছেন , খুঁজে নিচ্ছেন পথের বাঁকে আরও বড় পথের বিজন বাঁক । সবচেয়ে আশ্চর্য জীবন ও যাপনের মাঝের এই ফাঁকটুকু খুঁজতেই কবিকে পেরোতে হয় যোজনবিস্তৃত পথ। তবে কখনও কখনও ভূদেব সেনের মত কবি মাত্র ২৩ বছরের জীবনেও পেয়ে যান সেই অলীক অনুরণন, যা যাবার আগে ভাবায় সত্যিই তো কোথায় যাব ,যা ফেরার আগে ভাবায় সত্যিই তো কোথায় ফিরবো ! আর পৃথিবীকে উলটো পিঠ করে ঝুলিয়ে পরম সত্ত্বার দিকে বয়ে চলে তাঁর সুমহান ধারনা; জীবনের দীর্ঘ পিপাসা পেরিয়ে মাত্র তেইশ বছরের এক তরুণের কন্ঠে তখন স্রোতের বিপরীতে এক সপ্রতিভ শূণ্যের মহড়া। কবি বলে ওঠেন

মীমাংসা ,উপাখ্যান,ভূমিকা,উপসংহারের বাজার
হারিয়ে গেছে,
নিবিড় নিপুণ সৌন্দর্য্যে
আর, নিগূঢ় নিস্পন্দতার বিস্ময়ে।
কেউ নেই... কেউ নেই ...
প্রিয়া শোনো,
তুমিও নেই-
তোমার চুড়ির রিনিঠিনি
বস্তাপচা কথার কাকলি
-নেই ।
কেবল আমার চেতনার চিন্তা

শরীরের জরা বাঁধন পঞ্চভূতে মিশে গিয়ে
-কেবল চেতনাই ।
মনটাকে বহুদূর এক শান্তির পথে নিয়ে যেতে চাই ।

যদি একটা প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে
চিন্তার সে চেতনার দলিল কোথায় যাবে,
হারিয়ে?
নিজের অস্তিত্বই যদি সে চিন্তায় স্বীকৃত না হোল,
তবে লাভ?
ক্ষতিতো সবটুকুই ।
উত্তর ?
আছে ।
গভীর নির্মোক হয়ে সে বেঁচে আছে
-গাছের সবুজে,গাভিনীর চোখে,সমুদ্রের কল্লোল
আর পাখির কাকলিতে ...


ভূদেব সেনের একাধিক কবিতায় আমরা পাচ্ছি প্রেমের জন্ম এবং তার আর্ত্ততা; বয়সোচিত প্রণয় শিহরনে কখনও কবিতা জায়মান আবার কখনও বা বাসনামিশ্রিত এক দ্বন্ধের সংঘাত।দীর্ঘ আত্মজিজ্ঞাসার অনুগামী এক তরুণ তাঁর তন্বী শব্দের ছায়ায় ছায়ায় ধরে রেখেছেন মনোজগতের রণিত আলো অভিমান।

কেমন লিখতেন কি লিখতেন ভুদেব সেন তার আলোচনার থেকেও যা ভাবায় তা হল আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগের এক মিতায়ু কবির ভাষা,অভিব্যক্তি আজও আমাদের দৈনন্দিন চেতনায় কতটা সহজ সম্পৃক্ত কতটা জীবন্ত ।যেন পঞ্চাশ বছর আগের কিছু শব্দ আমাদের সামনে চোখ মেলে জেগে আছে, শোনাচ্ছে আজকের গল্প। ভুদেব সেন তাঁর একটি অনার্য্য চিন্তা কবিতায় যখন লেখেন- বহুদিনের পুরানো এক বির্বণ পান্ডুলিপির বুকে/ আরশোলা আর ইঁদুরের গল্প/ ধূসর আলো আর চোখের শান্তি কেড়ে নিয়ে উপহার দিল/ এক গুচ্ছ কবিতা/প্রেম,ঘৃনা,কামনা, বাসনা,হিংসা আর শত প্রতিবাদের/ সে এক জ্বলন্ত অধ্যায়/ এক উদাসী, মনবিলাসী মানুষের চরিত্র/ ফুটে ওঠে আমাদের সামনে -তখন বারবার মনে হয় আজকের ভুদেব সেনের কবিতার খোঁজের মত প্রবৃত্তচালিত জীবনের দৌড়ে তিনিও হয়ত খুঁজে পেয়েছিলেন এমনই কোনো এক অবহেলায় ফেলে যাওয়া ফুলভার এমনই এক পরিযায়ী পান্থনিবাস। খুঁজে পেয়েছিলেন কোনো এক হারিয়ে যাওয়া কবিরই অন্ধকার পান্ডুলিপি যার ভেতর লেগে থাকে কেবল একজন কবির নয় বরং একজন সম্পূর্ণ মানুষের একটা সম্মিলিত জীবন-যাপনের শুকনো আঠা , লেগে থাকে অনন্তে উড়ে যাওয়ার অনুরণন.........


                                                                                 
নয়ন মানুষের হয়ত
                 নয়ন ভগবান

মানুষের চোখ দুটির দিকে
সহস্র বছর ধরে আমি তাকিয়ে ;
কিছু পাবার আশায় নয়,
দেওয়ার আশায় নয়
কেবল অনুভূতি গভীরের বিস্ময়ে !
অনন্ত গভীরতা; যেন এর শেষ নেই
অথচ তাতে এত আশাহীনতা ।
কত কোটি বছরের তিল তিল তিলোত্তমা
অথচ... অথচ...
ঐ কুলপাতার মত সবুজ চোখের মাঝে
কত অনন্ত গভীরতা,
নিরুপায়ে নিতান্ত নিবিড়, নিদাঘের বেলায় ঘুমিয়ে ।

আমি জানি,
ঐ অনন্ত গভীরতা আর জাগবে না
ও ঘুমায়ে রবে ঐ নয়নের তলে লুকায়ে ।
ঐ চোখ-
পৃথিবীর মানুষের চোখ,
কত দেখেছে, চেয়েছে ।
কত পাওয়া না পাওয়ার কাহিনী
পেয়েছে রূপ ।
কত অনাচার, কত আচারের অত্যাচার
কত বিশ্বাসহীনতা, শোষণ, হত্যাকারীর লোলুপতা
কত প্রেম- ভালবাসা
তবু ও অভ্রান্ত ও কৃষ্ণ সাধনায় গভীর বিষন্ন ।

তাই ভাবি,
নয়ন মানুষের, হয়ত নয়ন ভগবান ।।

একটি চাওয়া

কোজাগরী পূর্ণিমায়,
তোমায় প্রথম দেখেছিলাম ঋতেনদের বাড়ীতে।
তারপর কোন এক অমাবস্যায় স্বপ্নাদের ওখানে
দুটি দেখা
পূর্ণিমায় তুমি... অমাবস্যায় তুমি...
রাত্রিতে কাচিন কন্যা
আলোতে অম্লান বহ্নিবন্যা তুমি অপর্ণা ।

জোর করে ভুলে যেতে চেয়েছিলাম
তোমার দাম্ভিক চেহারাকে।
সাহস পাবো কোথায়?
তোমায় ভালবাসতে গেলে
হরতনের দু হাজারী সাহেব হওয়া চাই ।
আমি চিড়িতনের চালভাজা শতকের গোলাম ।
আমায় ভালবাসতে গেলে,
নদী পেরিয়ে স্তব্ধ এক অহল্যাকে আনতে হয় ।
তুচ্ছতা ... না না তা নয় ...
বেশ জানি সে তোমার চেয়ে অনেক কিছুতে মহান ।
চোখে তার পবিত্র পূজার বিল্ব,
মুখে তার স্তব্ধ রহনার রুদ্ধ ধরিত্রীর ধ্নাতরশ্মি
-সে অহল্যা ।

সব বুঝি... সব জানি ...
তবুও তোমার চন্দ্রাভ পায়ে,
কোটি আকুতির সমাহারে ,
-একটি চুম্বন এঁকে দিতে ইচ্ছে জাগে-
শুধুমাত্র একটি... পূর্ণ গভীর অনন্ত এষনায় ঘন
-শুধু একটি রক্তাভ চুম্বন ।                                                 

ভেবেছিলাম

কত কথা ভেবেছিলাম, তোমায় জানাব ।
ভেবেছিলাম মনের ভাগীদার বুঝি হবে, তুমি ।
কতবার ভেবেছিলাম,
তোমার সব কথা শুনবো,
প্রাণে প্রাণ রচবো ... গাইবো... হাসবো...
যদি প্রাণ চায়-কাঁদবো ।
কতদিন ভেবেছি ,
তোমার মুখে মুখ রেখে চাইবো ।
কত ক্লান্ত যামিনী কেটে গেছে,
ভেবেছি তোমার কুন্তলে মুখ ঢেকে অকূল পারাবারে
মনটাকে ভাসারে দিয়ে ফিরবো ।

কত দিন ভেবেছি , মেঘলা আকাশ-
তুমি দাঁড়িয়ে , চুল এলিয়ে, জানলার ধারে, আকাশে তাকিয়ে;
আমি দুরু দুরু  তোমার স্কন্ধের নীতাদেশে
এঁকে দেবো নীল বিশ্বাসে ।
তুমি চমকে পিছু ফিরে দেখো- আমি দাঁড়িয়ে ।
ও তুমি !
হ্যাঁ, আমি, আমি নিতান্ত ভিখিরী
তোমার দুয়ারে ফিরি, কত কিছু ভেবে ।

ও বরং জুড়িয়েই মরুক

পাহাড়ের গায়ে কোন এক শৈলনিবাস এসেছি
বুকের উত্তাপ জুড়াতে।
বুকের উত্তাপ দিয়ে ঐ রাস্তার ছেলেটিকে যদি বাঁচান যায়
তো এখনই করি ।
কিন্তু ভয় হয়,
বুকের ঘুস ঘুসে জ্বরের উত্তাপ দিতে গিয়ে যদি
বুকের ব্যাসিলাইগুলো দিয়ে বসি?
না... না
ছেলেটি না হয় জুড়িয়েই মরুক ।
আমার ঝাঁজরা বুকের উত্তাপ দিয়ে
ওকে জ্বলতে দিতে চাই না-
চাই না দেখতে ওর ভেতর
মধ্যবিত্ত মানুষের লোভাতুর মনের
হ্যাংলা এষণার নানান বিভীষিকা ।
গভীর শীতল শান্তিতে
জুড়িয়ে যাক ওর প্রাণ, ওর ক্ষুদ্র ভুবন
ও বরং জুড়িয়েই মরুক ।

সবুজ পাতা
          হলদে ফুল

একটি সবুজ পাতার হাসিতে ভেবেছিলাম মিশে হয়ে যাব একাকার।
হারিয়ে যাবে চিন্তার ডালি ।
শুধু সবুজ,
আর হলদে ফুলের প্রাণের মত
ফুটে ওঠা গভীর সবুজের সাম্রাজ্যে ।
রৌদ্রের আলো ,
তারার ঝিকিমিকিতে ভরা রাত্রি
প্রাণের বিশ্বাস,
আর আত্ম-উপলব্ধির গভীর বিপুল উন্মাদনায়
চলে যাব সত্যের সেই একান্ততার পথে ।

আমি একেলা সে পথে শুধু যাব না,
সবুজ পাতাটি , হলদে ফুলটি সাথে যাবে
প্রতি গাছে প্রতি পল্লবের সত্য উপস্থিতির ছন্দে ছন্দে।

আমি তো চাই না সেখানে যেতে
সেখানে সবুজ পাতা, হলদে ফুল নেই ।
হোথা যত গম্ভীরই হোক
জ্বলুক যতই ধূপ ধুনা
বাজুক যতই শঙ্খের মহানির্ঘোষ-
বেদের মন্ত্র-
আমি তো ওখানে যাবো না।
আমি যাব সেই পৃথিবীতে,
যেখানে কবিতা প্রেমের তপস্যায় বিষন্ন,
যেখানে যুবক বুকের তপ্ত রক্তের ফোঁটায়
ফোটে অন্য প্রেমের রক্তগোলাপ ।
সেই দেশে, সেই পৃথিবীতে আমি যেতে চাই,
নয় সেখানে,
যেখানে সবুজ পাতা হলদে ফুল নাই ।

এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা
( সুবোধ ঃ একটি মহান প্রাণ ঃ তার উদ্দেশ্যে)

বন্ধু, তোমার পত্র দুখানি,
যথাসময়ে এসে বাজিয়েছে মোর অন্তরবীনা ।
ক্ষুদ্ধ এ জীবন ছিল নিধিহারা-
এবারে তার তারের ঝঙ্কার।
তোমার প্রেমময় প্রথমা, অনামিকা, মধ্যমা-
সাথে বৃদ্ধা রঞ্জনা
-রাঙি দিল নতুন বসন্তের মহুয়ায় ;

বন্ধু, তুমি সুন্দর দূরের হৃদয়-
বহুদূরে-
যেখানে আমার দৃষ্টিপথ গিয়েছে হারিয়ে,
দূর সেই-
আসমান যেথায় আভূমি সেলাম জানিয়ে
হারিয়ে গেছে নিজের সৃষ্টিরই প্রেমে
সেখানে তোমার বসবাস
যেখানে সূর্য্য ডোবে,চন্দ্র অস্ত যায়
-আর মুঠি মুঠি তারার গুঞ্জরণ ।
ওখানের রং লাল।

হৃদয়রক্তের পরশে অপুর্ব বাঙ্ময় সে ধরিত্রী
তাই দেখি- অবাক বিমুগ্ধ হয়েই দেখি-
সে সাঁঝের আর রাতের লাল হয়ে যাওয়া আসমানে।
বন্ধু, তোমার সেথায় বাস
সে রক্তিম আত্মার বিস্মরনে, তোমায় নমস্কার।
বন্ধু তোমায় কোটি নমস্কার।
হৃদয়বীনাখানির যে অসীম ঝঙ্কার ,
অনন্তের সন্ধানে তুমি মিলিবারে চাও,
তোমার রক্তিম দেশের মত,
-সেইখানে ।
সেইখানে বার বার অসীমার চাওয়ার মন্ত্র
অশান্ত অভ্যুদয়ের অব্যক্ত ব্যঞ্জনায় বধির হয়ে চলেছে বেজে ।

আমি জানি বন্ধ,
তোমার ঐ রক্তিম হৃদয়ে,
যেখানে হৃদয়রক্তে মাখামাখি- লাল;
নিশ্চয়ই জেনেছে, কেঁদেছে অনেক ।

ধন্য আমি, ধন্য বন্ধু ।
তোমার করুণাসিন্ধু
আমায় বিহ্বল করে দিল অবিস্মরনীয় এক রাত্রির প্রতিশ্রুতিতে ;
আমি ঠিক জানি ,
তুমি নিছক উড়িয়ে দেবে আমার ভাষাহীন ব্যথা-
এযে তোমার নিত্যের নিরর্থক সমস্যা ।
কিন্তু তবুও বন্ধু,
আমার হৃদয়ের নিবিড় অমাবস্যার অন্ধকার
কবে যেন বাজিয়েছিল মঙ্গলশঙ্খ ।
সাঁঝের সে বেলায় তোমার স্পর্শ
মোর বন্ধ্যা হৃদ্যের আলে-আলতোভাবে ।
আর অবাক !
সেই ভিজে আলে দেখি ফুটে আছে বর্ষার রাতে
-একগুচ্ছ রজনীগন্ধ ।
আমার সারা সুরের, সারা রূপের,সারা ভালবাসার, সারা সুখের দুঃখের
সীমানা গুটিয়ে শুধু এইটুকু-
মাত্র এই-ই... সামান্য... অসহ্য অল্প
-একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ।


দিবাশেষের গান

সায়াহ্ন সীমান্তে এসে গাই
দিবাশেষের গান,
দিগন্তের কোণে ঐ রক্তাভ সূর্য্য ডোবে ;
তবুও তো গৃহে ফিরিবার ডাক এলো না মনে ।
মনের প্রান্ত নেই
কেউ দিতেও চায়নি
-আসেনি তো কেউ অধিকারের বন্ধনে স্বীকৃত হয়ে ।
নিদাঘের গম্ভীর দহন শেষ হয়ে,
বেলা শেষের হিসাবের পালায়-বেদনাবোঝায় অসীম।
অশান্ত অর্ণব মন
উত্তর মেরুর মায়াবী ছোঁয়ায় শুভ্রতায় স্থির,
পেঙ্গুইনের শ্বেত নিতল স্পর্শে সংগা ফিরে এলো,
-হায় ! আমি এতদূরে একেলা বসে, আর কেউ নাইতো-
সে তো আসেনি সারাবেলা,
মর্ম্মরিত মনে ঢেউয়ে গড়া শরীর নিয়ে !

দিন্তের কানে, কান্নার ঢেউ কি হারিয়ে যাবে?
না ওই আকাশে তৈরী দেওয়ালে মাথা কুটবে,
-তারপর প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসে
আমার বুক রক্তাভ করে দেবে বিপুল হিংস্রতায় ।
সান্ত্বনার বর্মে আর তো বুক বাঁচে না,
রক্তাভ হৃদ্যে এবার নতুন যন্ত্রনায় শিউরে উঠি;
এতদূর এসে গেছে বুকের পাঁজরা গেঁথে,
অথচ আর কেউ আসেনি
-কপালে সিঁদুর
আর ঘোমটার ফাঁকে শিহরিত প্রানে ইষ্টদেবতারে একান্ত করে চাইতে ।

হায়! আমি এতদূর গেছি এসে একেলা,
আর যে কেউ আসেনি ।
নেই যে কেউ দাঁড়ায়ে আমারই পাশে ।


অন্য সীমান্ত

তোমার দূরে সরিয়ে দিয়ে,
-নির্ভাবনার জালে জড়িয়ে গেলাম ।
চেতনার প্রত্যন্ত প্রদেশে তোমায় না পেয়ে
অবচেতনের দ্বারে দাঁড়িয়ে পড়ি-
খুলে গেল দূর সায়রের অসীমতা-
আমি মুক্ত ।
মুক্তি আমি পেয়েছি- তোমার দূরে সরিয়ে ।
সামনের পথে,
তুমি আর আলেয়ার মত নেই,
তুমি বিস্মৃতির পাতায় একাকার,
এই পৃথিবীতে চলার পথে
তোমার আধার- আর নেই ,
-আমি মুক্ত ।

জন্মান্তরে তুমি আমার হয়ে আসবে কিনা,
সে হিসাবে আজ বড় বর্তমানের তাড়া,
তুমি আমা হতে দূরে বহুদূরে হারা,
তুমি এখন বিচিত্রার ভীড়ে, আমার কাছে নতুন মানবী ।
তাই জানাই,
অতীতের সমাপ্তির সীমানায় রেখে,
এসো ভবিষ্যতের ভাবনায়।
এসো অর্ণব মনেরে শান্ত করে-
বিপুল সম্ভাবনার অসীমতায় ;
-এসো শান্ত হয়ে ।

পাথরের পদ্ম

প্রকৃতির মাঝ হতে যেতে গিয়ে দেখি,
বার বার হারিয়ে গেছিলাম ধানের শীষে-
অবারিত প্রান্তরের নিঃসীম শূন্যতায় ।
নির্বেদ এক চেতনা গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে
বোধের মৃদু শৃঙ্গারের নিবিড় অনুভূতিতে ।
পাশের সীটের অষ্টাদশীরে তখন মনে হয়,
একখন্ড মেঘ
নীলাভ আঁকাসের বেপুথমান যৌবন ।

নতুন রাস্তা তৈরীর কাজে ,
বিপুল যৌবন-শ্রীফল নিয়ে উদভ্রান্ত সাঁওতাল রমনী,
মাঝে মাঝে
ঢিমে তেতালা সুরের পর্দারে বিকল করে দিয়ে,
-আর্তনাদে নিয়ে চলে অবলীলাক্রমে ।
অষ্টাদশী তখন আঁচল টেনে চেপে ধরে নিজের গোলাপি বুকের
                                                             বন্যতাকে ।

প্রান্তরের বাতাস ব্যর্থ আক্রোশে মুখ ঘষে ঘষে সারা ।
আব্বার নির্বেদ চেহারাটায় ফিরে যাই ।
মাঝে মাঝে হাসি পায় ।
দুষ্টুমিভরা চোখে
অষ্টাদশীর স্কন্ধের পেলবতায় অনুভূতির স্পর্শ রাখি ।
ও বোঝে,
রক্তাভ হয়ে ওঠে যেন নিতল পেশীর চন্দ্রিমায়।

কোণারক এসে গেছে !
অতীতের মনের যত ইতিহাস ঝেড়ে পুঁছে ,

মৌলিক হয়ে উঠি ।
গাছের আবডাল হতে সরে এসে দেখি,
দাঁড়িয়ে আছে
কালো কৃষ্ণ অন্ধকার কীরিঞ্চার মত
বিপুল কোণারক ,
পাগলের মত ছুটে যাই ওর কাছে ।
তারপর বুঝি নতুন এক মনের অবস্থা ,
স্ত্রী, পুত্র,পরিজন,বন্ধু,শুভার্থী কেউ নয়
-কেবল আমি একা,
বিপুল নিস্তব্ধতা ঘিরে থাক আমার চারিপাশে।
আর শত সহস্র শৃঙ্গার মূর্তি ।
মদনশরে জর্জরিত প্রাণে
মিলিত মিথুন মূর্তির ভিতর
শত সহস্র বছর যে যৌবনসুখ দীপ্ত,
-তাতে ফিরে যেতে চাই !
আমি যে মানুষ
ঐ তীব্র অনুভূতি ধরে রাখি
সে সাধ্য কোথায় !
কোটি বছর ধরে কত সহর জ্বলে গেছে, গেছে কত মন,
কামনার দীর্ঘনিঃশ্বাসের বাতাসে একাকার হয়ে !
অথচ অবাক-
কত শতাব্দী ধরে ওরা সম্ভোগে শান্ত ।


ভগবান,
তোমার কালদূত,ঐ নীলাভ সরসী তো পারেনি,
ও নিজেই দেখি পরাজিত হয়ে সরে গেছে দূরে ।
পাথরের ভাষার বুকে মাথা ঠুকে বুঝি,
আমি দুর্বল... আমি দুর্বল... আমি নিতান্ত রক্তমাংসের ভূত-
কিন্তু কেন... কেন এ হল ভগবান ?


একি আপনার কপালটা যে রক্তে একাকার।
মুখে রক্তের লোনা স্বাদ নিয়ে ঝাপসা চোখে দেখি
অষ্টাদশী একান্ত আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপলক চোখে ।
চলুন, এখানে আর নয়- এত নীচুতে কেন;
মন্দিরের উপরে চলুন,
-দেখে এলাম কত বড় এক পাথরের পদ্ম ফুটে আছে।

********************************




·        আমি শুধু কবিকে , কবিতাকে উপস্থাপনা করেছি।  একজন প্রকৃত হারিয়ে যাওয়া কবিকে খুঁজে দেওয়া ,তাঁর কবিতাকে সংগ্রহ করে দেওয়ার মত মূল্যহীন অমূল্য কাজের জন্য কবি বন্ধু ইন্দ্রনীল বক্সির কাছে রইল অনন্ত ঋনস্বীকার ও ভালোবাসা......

My Blogger Tricks

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন