• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

‘বাক্-৮৬’ প্রসঙ্গে


বাক্ ৮৬-র কবিতা বিভাগটি সম্পাদনা করেছেন কবি শ্রী ধীমান চক্রবর্তী। আশা করি এবারের কবিতা বিভাগ আপনাদের সামনে এক নতুন মাত্রায় নিজেকে হাজির করতে পেরেছে।

বাক্-এর সম্পাদক আমি নই, পরিচালক মাত্র। কাজেই বিধিবদ্ধ সম্পাদকীয় লেখার দায়ও আমার নেই। আমার এই কলামকে বাক্-এর মত হিসেবেও মেনে নেওয়ার ব্যাপার নেই। বাক্-এর প্রতিটি সম্পাদক তাঁর নিজের পতাকাতলে স্বাধীন। এই কথাগুলো শুধু আমারই কথা। একটা গদ্য হিসেবেই পড়ুন আপনারা। 

না, আধুনিকের ধারণায় কালের কষ্টিপাথর একেবারেই অচল। স্থানও কিছু বলে না তার ব্যাপারে। সমাজও না। একজন ব্যক্তি আধুনিক হতে পারেন, অনেক ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে আধুনিক হয়ে উঠতে পারেন, কিন্তু একটা সমষ্টি নয়। একটা আস্ত সমাজ আধুনিক হয়ে উঠতে পারে না। আধুনিক শব্দটার আভিধানিক রূপে অধুনা অবশ্যই বাস করে [অধুনা+ইক (ঠঞ্) তত্র ভব অর্থে], এবং সে মনে করিয়ে দেয় সাম্প্রতিক-কে। একটি শব্দ শুধুমাত্র একটি মাত্রায় থাকে না, সে বহুমাত্রিক হতে বাধ্য। আধুনিক কবিতা কখনই সাম্প্রতিক বা অর্বাচীন কবিতা নয়। আধুনিক শব্দটা আমাদের অনেক সময়েই প্রতারণা করে। ঠিক যেভাবে মৃগ আভিধানিকভাবে যে কোনো পশু হলেও আমাদের কাছে আজ শুধু হরিণ। যেমন আজ ইংরেজিতে gay’ মানে আর আনন্দময় নয়, সে বোঝায় পুরুষ সমকামীকে। আধুনিক শব্দটার আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন, সে আসলে একজন মানুষের জীবনশৈলীর নাম, সে আসলে একক ব্যক্তিজীবনের এক বিশেষ যাপনভঙ্গি, ব্যক্তির জীবন দর্শনের এক নিজস্ব ধাঁচ। সময়ের সঙ্গে তার সংযোগ আপেক্ষিক, তার আসল যোগ মানসিকতার সঙ্গে। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে নতুন খৃস্টানরা নিজেদের জন্য একটি বিশেষণ বেছে নেন, একটি লাতিন শব্দ মদার্নাস। অখৃস্টানদের থেকে নিজেদের আলাদা করার জন্য এই শব্দ। নিজেদের শুদ্ধতা ও মৌলিকতা বুঝিয়ে দিতেন তাঁরা এই শব্দটি দিয়ে। এই শব্দ থেকেই মডার্ন তথা আধুনিকের ধারণা। পৃথিবীর দুজন মানুষ কখনই একইরকম ভাবে আধুনিকের ধারণায় বাঁচতে পারেন না। প্রত্যেকের আধুনিক তাঁর নিজস্ব, ও একক।
এবং কবিতা শুধুমাত্র কবিতাই হয়। ব্রম্ভের মতোই তার আগে কোনো বিশেষণ লাগে না, অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় যে কোনো আখ্যা। আধুনিক, অধুনান্তিক, পুনরাধুনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রেমের, প্রতিবাদের এমনকি বাংলা/ইংরেজি/পারস্য/ফরাসি ... এগুলোর কোনোটাই কবিতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়, হাটে-ঘাটে-মাঠে আমরা নিজেদের সুবিধা অনুসারে এগুলোকে প্রয়োগ করি, নিজেদের সুবিধা অনুসারেই সরিয়ে নিয়ে আবার অন্য কোনো অভিধা খুঁজি। কবিতা লিখিত হয় কবির আত্মার অংশ হিসেবে, কিন্তু ছাপার পরে তাকে শরীর ধারণ করতেই হয়, এবং প্রতিনিয়ত ময়লা ও সাফ হতে হয় বিবিধ পাঠকের হাতে ও চোখে। ছাপা কবিতাটির আর সেই শুদ্ধ ও একক অবস্থান থাকে না। তার একটা নাম লাগে, ঠিকানা লাগে পিনকোড সহ, এমনকি তার অর্থমূল্যও থাকে
ঠিক সেইভাবেই পুনরাধুনিক কবিতা। হয় না, এবং হয়। পুনরাধুনিক শব্দটাকে আপনারা বিশেষণ হিসেবে না দেখলেই ভাল। সে একটা ধারণা। তাকে বিশেষ্য হিসেবেই দেখতে হবে। ইদানীং কবিতার নামের পরেই আমি একটি লেবেল অথবা ট্যাগ ব্যবহার করছি : একটি পুনরাধুনিক কবিতা। ঘটনা হল, খুবই অস্বস্তির সঙ্গে ওটা ব্যবহার করছি। এভাবে কোনো কবির তাঁর নিজের লেখাকে একটি বিশেষ ধারণায় সীমাবদ্ধ করা বেমানান। তবু এটা করছি, কারণ চাইছি পুনরাধুনিকের ধারণাটা লোকসমাজে প্রচলিত হোক। এবং, একমাত্র কবিতা ছাড়া তো আমার লোকের কাছে পৌঁছনোর পথ জানা নেই।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতার একটা বড়ো অভিশাপ হল রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতি বিদ্যায়তনের দৃঢ় অবস্থানের অভাব। বিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতার বিদ্যায়তনিক তথা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যার মধ্যে যত ঢুকবেন, দেখতে পাবেন, তিনের দশকের কবিতাই হয়ে উঠতে চেয়েছে বাংলা কবিতায় আধুনিকের ভিত্তিভূমি। বিদ্যায়তন চেয়েছে তিনের দশকের কবিতাই আধুনিক কবিতার পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠুক সমস্যাটা হল, সে ওই দশকের আধুনিককে হাশিল করতে চেয়েছে রবীন্দ্রনাথের অনাধুনিকতা দাবি করে। ছলে-বলে-কৌশলে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়েছে, কালের কষ্টিপাথরে রবীন্দ্রনাথ ঠিক আধুনিক নন। একজন জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, বা সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, এমনকি সমর সেনের কবিতায় আধুনিক যেভাবে ধরা দেয়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায় নাকি দেয় না। কবিগুরুর উপনিষদে অধিকার, তাঁর আশ্চর্য আভিজাত্য, ব্রাম্ভ উত্তরাধিকার, নাছোড় রোমান্টিকতা, সর্বোপরি তাঁর পরম আস্তিক্য নাকি আধুনিক কবি হিসেবে তাঁকে মান্যতা পেতে বাধা দেয়। অসংখ্য মূল্যবান প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা হয়েছে। অসংখ্য বই। কিন্তু, সভয়ে বলছি, তাঁর অন্যান্য দিকে পর্যাপ্ত আলোকপাত হলেও, একমাত্র আবু সায়ীদ আইয়ুব এবং শঙ্খ ঘোষ ছাড়া আর কেউ রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রনাথের নিজের আধুনিকের ধারণায় প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হননি গত ৫০ বছরে। বরং শিবনারায়ণ রায়ের মতো একজন বিদগ্ধ মানুষও তাঁর প্রবন্ধে গ্যেটের সঙ্গে তুলনা করে রবীন্দ্রনাথকে হেয় করেছেন, তাঁর সাহিত্যে রক্তমাংসমলমূত্রের অভাবই যেন রবীন্দ্রনাথকে প্রতিবন্ধী করেছে আধুনিকের দরবারে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিপুত্রটি যে কিছুতেই মানুষের বিছানা এবং টয়লেটটাকে দেখাতে চান না, কিছুতেই সত্য-শিব-সুন্দরে বিশ্বাস হারাতে চান না, এটাই যেন পর্যাপ্ত কারন তাঁর প্রতি ঘোর অবিশ্বাস রাখার।
সেটা স্বাভাবিক ছিল কি? হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যজীবনের সোনাঝরা পর্বটা কাটিয়েছেন বিশ্বযুদ্ধের আগে। সেই পরিসরটা অন্য ছিল। সেই পরিসরের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিতে খারাপ লোকেরা ছিলেন, কিন্তু শয়তানরা ছিলেন না। নেপোলিয়নের স্মৃতি ছিল, কিন্তু হিটলারের অভিজ্ঞতা নয়। লর্ড ক্লাইভের কাহিনি ছিল, কিন্তু মুসোলিনির নয়। সেখানে প্রাকৃতিক মন্বন্তর ছিল, মানুষের হাতে তৈরি পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ ছিল না। সিপাহী বিদ্রোহ ছিল, কিন্তু কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল না যেখানে মানুষের হাড় দিয়ে বানানো হবে সিগারেট হোল্ডার। মানুষ যে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, ঈশ্বর যে তাঁর নিজের অবয়ব দিয়েছেন মানুষকে, মানুষের উপরে কোনো সত্য থাকতে পারে না... দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ এসে সেই ধারণাকে চুরমার করে দিয়ে চলে গেল। একটা নীল গ্রহ যেন তার সবটুকু আস্থা নিয়ে তলিয়ে গেল। সেই গ্রহের বিরাট একটা অংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সর্বস্ব রেখেছিলেন। এর ফলেই রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বাস করা চুরমার দুনিয়ার পক্ষে মুশকিল হল, বিভিন্ন পশ্চিমী দেশে যুদ্ধকাতর পাঠকের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তা কমে গেল, বইয়ের বিক্রি লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস পেল আইনস্টাইন, চ্যাপলিন, আঁদ্রে জিদ, রমাঁ রলা, ব্রেশট, হারমান হেসের মতো চিরকেলে লোকেরা তাঁর সুনাম করলেও, এমনকি লোরকা, বুনুয়েলের মতো দুর্দমদের কাছে তাঁর সমাদর হলেও, রিলকে, থমাস মান, কাফকার মতো সাহিত্যিকের কাছে তাঁর অচল আশাবাদের কোনো মর্য্যাদা হল না। আন্তর্জাতিক সময়টা কিন্তু রিলকে, মান আর কাফকারই অনুগত ছিল।
আমাদের এখানেও সময়ের ধারণা এসে দাঁড়াল রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর বিচারের মাঝখানে। তিনের দশকের কবিরা এসে পড়লেন সমসময়ের প্রতি তাঁদের আনুগত্য নিয়ে, আন্তর্জাতিক কবিতার গতি তাঁদের কবিতায় দেখা দিল। এই ধারণা মহাসমারোহে প্রতিষ্ঠিত হল যে, আধুনিক কবিতাকে হতে হবে কুটিল,  তার মধ্যে প্রসন্নতা থাকবে না, সে অবশ্যই মানুষের অন্তর্গত অন্ধকারকে উদযাপন করবে, শান্তিকল্যাণের ধারণাকে মাইলের পরে মাইলে উপহসিত হতে হবে প্রেম নয়, পাপ ও কদর্যতার বিশ্লেষণ হয়ে উঠল কবিতার উপজীব্য। মূল সুর হল বিতৃষ্ণা। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, বিপন্নতা, অনিশ্চয়তা হয়ে উঠল অপরিহার্য গুণ। কবি হলেন অনিকেত। তিনি যদি একজন নিরাশ্রয়, শিকড়হীন, ব্যর্থ নাগরিক মানুষ হন, হন নেশাখোর, এমনকি উন্মাদ, কামুক, অসামাজিক... তাহলে যেন তাঁর কবিস্বভাব সবচেয়ে মান্যতা পায়। এই মানসিকতা বাংলা কবিতায় ঢুকে এল বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে শার্ল বোদলেয়ারের হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথ নন, মাইকেল নন, তথাকথিত আধুনিক বাংলা কবিতার বিগ্রহ হয়ে উঠলেন শার্ল বোদলেয়ার, আর্তুর র‍্যাঁবো, এবং প্রথম পর্বের টি.এস. এলিয়ট। আধুনিক ব্যাপারটা আর একক ব্যক্তির থাকল না, তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হল বেশ কিছু মান্য শর্ত।
আধুনিক আর অবক্ষয় এক হয়ে দেখা দিল তার ফলে। কিছু কবির একটা বিশেষ ইমেজ তৈরি হল, জীবনে তাঁরা ব্যর্থ বলেই যেন কবিতায় তাঁরা দেবতা কিছু কবির বোহেমিয়ানপনার প্রতি এই ধারণা ও আসক্তি আজও মরেনি। এখনও আমার সমবয়সী কবিকে দেখি নিজের গাঁজা, মদ নিয়ে গর্বিত, যারা নেশা করে না তাদের তিনি কবি মনে করেন না। একটু দাড়ি থাকবে, পোশাক-আশাক হবে অগোছালো ময়লা, হাতের নখ কাটা হবে না, একটা মলিন গিটার নিয়ে যে কোনো সিঁড়িতে বসে পড়লেন... অনেকেই ভাবছেন এই তো এক সত্যিকারের কবি! এই তো কেমন ইনি নিজের যাপন দিয়ে কবিতা লিখছেন! কেমন নিজের অচেতন খুঁড়ে সুররিয়াল আনছেন! যেমন অনেকে কবিতার পত্রিকার নাম রেখেছেন উন্মার্গ, রসাতল, দুর্বিপাক, পাগলাগারদ... ইত্যাদি। এতে আধুনিক অনেক দূরে সরে গেছে। এইসব নামকরণ পোস্টমডার্ন মানসিকতাকেই দর্শায়, আধুনিককে ধর্ষায়। রবীন্দ্রযুগের পত্রিকাগুলোর নামকরণের ( ভারতী, সাধনা, সবুজপত্র, ভারতবর্ষ ... এমনকি কল্লোল) পাশাপাশি এই নামগুলোকে বসালেই পরিসরের বদলটা চোখে পড়বে, এবং চেতনার বাঁকবদলটাও। আজও চরম ঋণাত্মক নামকরণ নিয়ে পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকার নামকরণ থেকে কিন্তু অনেকটাই বোঝা যায় তার শ্বাসপ্রশ্বাস কীরকম। সম্পাদক যদি তাঁর পত্রিকার নাম রাখলেন সায়ানাইড, পাঠক সেখানে অমৃত না-ও পেতে পারেন।
যাই হোক, জীবদ্দশায় অবহেলিত হলেও তাঁর মৃত্যুর পরেই রবীন্দ্রনাথের প্রতিস্পর্ধী হিসেবে খাড়া করা হল জীবনানন্দ দাশকে। অনেকের কাছে রবীন্দ্রনাথ তখন বাতিল এক কবি, আর জীবনানন্দই হলেন উপাস্য ও অনুসরণীয়। অথচ, প্রথম জনের তুলনায় দ্বিতীয়জন এক কিংবদন্তি ছাড়া কিছুই নন। যদি তাঁর লোভনীয় মিশ্রকলাবৃত্ত তুলে নেওয়া হয়, ব্যাবিলন-মিশরের হাতছানি থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়, জীবনানন্দর অসংখ্য কবিতা তাঁর সমকালীন বিপন্ন পৃথিবীর ধারাবিবরণী ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ভাবের নিরিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র দুঃসময় কবিতাটিই যথেষ্ট হবে জীবনানন্দর ওই কবিতাগুলির এবং তথাকথিত কালচেতনার ভার সামলাতে। অবশ্য জীবনানন্দর চেয়ে স্টাইল-সচেতন কোনো কবি সম্ভবত আসেননি বাংলা কবিতায়। আন্তর্জাতিক কবিতার প্রতি জীবনানন্দর সচেতনতা অগাধ। জীবনানন্দ আন্তর্জাতিক কবিতার নিবিষ্টতম পাঠক ছিলেন। কতখানি গভীরে গিয়ে তিনি বোঝাপড়া করতে চেয়েছিলেন বাংলা কবিতার সঙ্গে, সেটা তাঁর গদ্যগ্রন্থ কবিতার কথা পড়লেই বোঝা যায়। রবীন্দ্রনাথের আধুনিক সম্পর্কে জীবনানন্দের নিঃসংশয় উক্তি ওই গ্রন্থে আছে। জীবনানন্দ দাশ নিজের একটা পৃথিবী চেয়েছিলেন বাংলা ভাষায়, যেটা রবীন্দ্রনাথের ভুবন থেকে প্রশ্নাতীতভাবে আলাদা। তিনের দশকে একমাত্র জীবনানন্দ দাশই সেটা পেরেছিলেন, বাকি সকলের লেখাতেই রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি না হোক মুখর অনুপস্থিতি অনুভব করাই যায়।
নিঃসংশয়েই এই কথা বলা যায় যে, জীবনানন্দ দাশ লিখিত আট বছর আগের একদিন হল বাংলার প্রথম পোস্টমডার্ন কবিতা, জীবনানন্দ দাশ প্রণীত সাতটি তারার তিমির তার নামকরণ (নামটাই যা বলার বলে দেয়) থেকে শুরু করে প্রতিটি কবিতার প্রতিটি শব্দে বাংলার প্রথম পোস্টমডার্ন কাব্যগ্রন্থ। উত্তর-উপনিবেশ এবং পোস্টমডার্নকে আমাদের এখানে আলাদা করার উপায় নেই। বিশ্বযুদ্ধের আঘাত, এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্ব এবং পর অবধি যে দেশব্যাপী রক্তপাত, খোদ ভারতবর্ষ নামক ধারণাটিরই একাধিক দেশে খণ-খন্ড হয়ে যাওয়া, বন্যার মতো ঢুকে আসা উদ্বাস্তুর দল আমাদের চেতনা থেকে আধুনিকের সবটুকু আলো শুষে নিয়েছিল। চিরকালীন আদর্শের, সনাতন জীবনদর্শনের সাময়িক গ্রস্ত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তিনের দশক থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বাংলা কবিতার পোস্টমডার্ন পর্ব। দেশভাগের পরে তার সঙ্গে যুক্ত হল উত্তর-উপনিবেশের খোয়ারি। সত্যিই রবীন্দ্রনাথ এই পরিসরে অনেক দূরের এক নক্ষত্র, তাঁকে সম্ভ্রমের সঙ্গে অবলোকন করা চলত, কিন্তু তাঁকে স্পর্শ করার আঙ্গুলগুলোয় তখন কুষ্ঠরোগের লক্ষণ। বরং শার্ল বোদলেয়ার এই পরিসরে একজন জাগ্রত দেবতা। র‍্যাঁবো একজন দেবদূত জীবনানন্দ দাশ এই পরিসরের ভাষ্যকার। বাংলার প্রথম পোস্টমডার্ন কবি। একজন প্রতিনায়কের মোহময়তা তাঁকে ঘিরে নিয়েছে। তাঁর প্রভাব বিস্তৃত হল পঞ্চাশের দশকে। আলোক সরকার, শঙ্খ ঘোষের মতো কবিরা থাকলেন নিজস্ব লাইট হাউসে। শতভিষা পত্রিকা আধুনিকেরই সাধনা জারি রেখেছিল, কিন্তু রাবীন্দ্রিকতা অনুসরণ না করলেও তাকে অতিক্রম করতেও পারেনি। আর স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার মহারথীরা বোদলেয়ারীয় তথা জীবনানন্দীয় রক্তকণিকাগুলোতে আরো দিলেন অক্সিজেন। সেটা গড়াল ছয়ের দশক অবধি। ছয়ের দশকের সাহিত্য আন্দোলনগুলো... যেমন হাংরি বা ধ্বংসকালীন ... আদৌ আধুনিক ছিল না। ওগুলো পোস্টমডার্ন আন্দোলন ছিল
বাংলা সমাজে পোস্টমডার্ন তার প্রভাবের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছিল সাতের উত্তাল দশকে। কিন্তু এই দশক থেকেই বাংলা কবিতায় জীবনানন্দীয় আবহাওয়ায় ফাটল ধরতে শুরু করে। এই দশকের যারা সমর্থ কবি, তাঁদের মধ্যে উত্তর-উপনিবেশের ছায়া প্রত্যক্ষ নয়, কারণ তাঁরা ব্রিটিশ উপনিবেশের স্মৃতি করোটিতে নিয়ে, বা দেশভাগের রক্ত কপালে নিয়ে কবিতা লিখতে আসেননি। পোস্টমডার্নের ব্যাপারটা তখন একটা আবহাওয়া, অনস্বীকার্য। কিন্তু  জীবনানন্দর সংক্রমণ বেশ ক্ষীণ। আশির দশকে তা আরো স্তিমিত হয়। নব্বইয়ে আরো। আজ জীবনানন্দ দাশের প্রভাবে কোনো শূন্য দশকের বা প্রথম দশকের সচেতন কবি কবিতা লিখবেন, এটা প্রায় অবাস্তব। আজ তাঁর কবিতার চেয়ে জীবনানন্দর উপন্যাসের মূল্য বরং অনেক বেশি। বাংলা কবিতার একটা যুগান্তরের কারণ হওয়ার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক জীবনানন্দ দাশ, কিন্তু এ এক প্যারাডক্স যে, আমাদের দেশে তাঁর উপন্যাস পাওয়া যায় না সহজে, অনেক ক্লেশে সংগ্রহ করতে হয়।
মজার ব্যাপারটা হল, আমাদের এখানে পোস্টমডার্নের ধারণাটা প্রবেশ করল তখন যখন সে বাস্তবে স্যাচুরেটেড হয়ে গেছে। নব্বইয়ের দশকের শেষে আমাদের তাত্ত্বিক-রা তাকে শনাক্ত করলেন। জীবনানন্দের মৃত্যুর অর্ধেক শতাব্দী পরে। সেটাও আবার করলেন এমন ভঙ্গিতে যেন সেটা একেবারে নতুন ব্যাপার, যেন সেটা পরিস্থিতি নয়, ভবিষ্যতের বাংলা কবিতার পথ। যে বৈশিষ্ট্যগুলোকে তাঁরা পোস্টমডার্ন কবিতার লক্ষণ হিসেবে তুলে ধরলেন, একটু মনোযোগ দিলেই এবং তুলনামূলক পাঠের অল্প শ্রম স্বীকার করলেই বোঝা যাবে সেগুলো আসলে তিনের দশক থেকে শুরু হওয়া বোদলেয়ারীয়-জীবনানন্দীয় বাংলা কবিতার গ্রাফিক বর্ণনা। সেই কবিতাকেই আধুনিক কবিতা হিসেবে প্রচারিত করা হয়েছে জনমানসে এবং বিদ্যায়তনে। ক্লান্তি, নৈরাশ্যবোধ, আত্মবিরোধ, শিকড়হীনতা, যান্ত্রিকতা, অবচেতন মনের খনন, আর্তনাদ, প্রলাপ, প্রেম-সুন্দর-কল্যাণ-ধর্মের মতো সনাতন মূল্যবোধগুলোয় অনাস্থা, চিন্তার কুষ্ঠরোগ, অসম্বদ্ধতা, উদ্বেগ, দৈহিক ক্ষুধার মান্যতা... এগুলোকে আধুনিক কবিতার নির্ণায়ক হিসেবে উপস্থিত করা হল। কিন্তু তা কী করে হয়? আলোর পিপাসা ছাড়া, জগতের সঙ্গে আত্মীয়তার বোধ ছাড়া, আত্মার শুভ উদ্বোধন ছাড়া, বিবেকের সায়, মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসা ছাড়া, নিজস্ব চিন্তাভাবনার অতল গভীরতা ছাড়া একজন কবি কী করে আধুনিক হতে পারেন? বিশেষ করে আমাদের দেশে, যে দেশ উপনিষদের, গীতার, মীরার ভজনের, মঙ্গলকাব্যের, পদাবলীর, রামপ্রসাদের, গালিবের, লালনের, কথামৃতর, রবীন্দ্রনাথের, বিবেকানন্দের? সাধারণ পাঠক যে বাংলা কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তার একটা কারণ আধুনিকের এই অপব্যাখ্যা। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য বোদলেয়ারের বিতৃষ্ণা অন্য গ্রহের জিনিস। এটাও অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় সব কবিকে এই আবহাওয়া স্পর্শ করেনি, করলেও তাঁরা গ্রস্ত হননি। তাঁরা জনমানসে সেই অর্থে প্রবল হননি, হতে চাননি। নিজের-নিজের আলোয় ঘেরা একেকটি দ্বীপ হয়ে আছেন। বোঝা গেছে আধুনিকের মৃত্যু নেই। বিবর্তন আছে।
হ্যাঁ, তিনের দশকের পর থেকে প্রবাহিত এই অধুনান্তিক হাওয়াকে শনাক্ত করা গেছে বিংশ শতাব্দীর শেষে, কিন্তু শনাক্ত করা হয়েছে বিদেশী তত্ত্ববিশ্বের সাহায্যে। এই আবহাওয়াই সাধারণ শিক্ষিত মানুষ এবং কবিতার মধ্যে পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক যে ব্যাপারটা হয়েছে, বিরাট কবি এবং মহৎ কবিতার ধারণাটা এখানে এখন লুপ্ত হতে বসেছে। বিশেষ করে ২০১০ পরবর্তী কবিতায় এই মানসিকতা প্রকট হয়ে উঠছে। কবিতা লেখার কাজটা আজ অনেক তরুণ/তরুণীর কাছে ইউজ অ্যান্ড থ্রো-র পর্যায়ে চলে গেছে। পত্রিকাগুলো ছেয়ে যাচ্ছে কবিতার প্রোডাকশনে। কবিতা লেখার চেয়ে সোজা কাজ বুঝি আজ পৃথিবীতে নেই, বিশেষ করে তা যদি হয় ভাল কবিতা। নিজের কবিতায়, নিজের কবিতার কোনো আবিষ্কারে কবির মালিকানা আজ হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে, যে কেউ তাঁর কবিতায় অন্যের কবিতার গুণ আরোপ করতে পারছেন, এবং তাতে সাবাশির কোনো অভাব হচ্ছে না। হাইব্রিড কবিতার শেষ নেই, একবার ছাপা হয়ে যাওয়ার পরে কবির কাছেই মূল্যহীন হয়ে যাওয়া কবিতাগুলোর স্তুপ আকাশ ছুঁতে চাইছে। এই পরিসরের স্বপ্নই তো দেখেছিলেন বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে পড়া পোস্টমডার্নের  চিন্তকরা, তাঁরা তো এটাই চেয়েছিলেন যে, কোনো প্রবল কবিকে তাঁর প্রবলতা ধরে রাখতে দেওয়া হবে না, ক্ল্যাসিক বলে কিছু থাকবে না, মৌলিকতার প্রশ্নটাকে তুড়ি দিয়ে অচল করা হবে, বরং অগণিত অন্যমনস্ক যশোলোভী কবিতে ছেয়ে যাবে লেখার ভুবন, প্রমাণিত হবে ছাপার উপযুক্ত কবিতা লেখাটা আসলে অনেক খেলো ব্যাপার, যে কেউ পারে। সেটাই হচ্ছে। পত্রিকার চেয়ে পত্রিকার সূচীপত্র নিয়ে আজকের কিছু কবি বেশি ভাবছেন। তাঁরা আবহাওয়ার সস্তা শিকার। আধুনিক শব্দটা আজ তাঁদের কাছে অলীক।
তাই পুনরাধুনিক। না, মোটেই আবার ফিরে যাওয়া নয় তিনের দশকের আগের পরিসরে, রবি ঠাকুরের কালে। সেটা অবাস্তব। পুনরাধুনিক টাইম ট্রাভেল নয়। সে মোটেই নয় re-modern, সে বরং neo-modern । পুনরাধুনিক হল আধুনিককে নতুন করে আবিষ্কার। সামাজিকভাবে সেটা সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই সম্ভব।  পুনরাধুনিক একটা ভাবনা, একটা জীবনশৈলী, আদৌ কোনো তত্ত্ব নয়, কোনো গাণিতিক বিশ্লেষণ নয়, সাহিত্য আন্দোলন নয়। কে একজন পুনরাধুনিক কবি? তিনিই যিনি একমাত্র নিজের কবিতার উৎকর্ষের প্রতি দায়বদ্ধ। কোনো ধান্দা ও ফাটকার লাইনে তাঁকে দেখা যাবে না। তিনি নিজের এক অবস্থান বেছে নিয়েছেন। একজন গবেষকের ল্যাবরেটরি বা একজন শিল্পীর নির্জন স্টুডিওর মতো তাঁর লেখার ঘর, বা টেবিল, বা তক্তাপোষ... এক সাধনাকক্ষ। তাঁর কোনো গোষ্ঠী নেই। গুরুদেব নেই। তিনি একলব্য। সাংস্কৃতিক রাজনীতি থেকে তিনি দূরে থাকেন। কবিতা উৎসবে তিরিশ সেকেন্ড কবিতা পাঠের জন্য লালায়িত হয়ে তিনি একশ কিমি যাত্রা করবেন না। দামি পত্রিকায় লেখার জন্য নিজের জিভ বন্ধক দেবেন না। প্রতিষ্ঠানের চৌকাঠে হত্যা দেবেন না। কোথায় লিখছেন, এটা তাঁর প্রশ্ন নয়, কী লিখছেন, সেটাই প্রশ্ন। নৈতিকতার ধারণা তাঁর কাছে হাস্যকর নয়। সমাজের মধ্যে তিনি অন্ধ নন, তাঁর মধ্যেই আছে একটা আস্ত সমাজ-পরিস্থিতি, তাই ঘটনাবলীর ধারাভাষ্য দেওয়াটা তাঁর কাজ নয়। সমাজ-রাজনীতি তাঁর কন্ঠ শুনতে পাবে, তাঁকে শারীরিকভাবে পাবে না। তিনি ভঙ্গিসর্বস্ব নন, আবার শুধু বক্তব্যনির্ভরও নন। তাঁর বলার আছে ঢের, বলার অনুচ্ছিষ্ট পথটাও তিনি খুঁজেছেন, খুঁজছেন, পাচ্ছেন। নিজের কবিতার জন্য তিনি নিরাপত্তা নয়, সর্বস্ব পন রেখে একটা দুর্দান্ত ও বিপজ্জনক রণ বেছে নিয়েছেন। তিনি নতুন শতাব্দীর শিকড়সন্ধানী কবি শতাব্দী একটা কালখন্ড নয়, একটা বাসভূমি, সে ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয়েরই
আর পুনরাধুনিক কবিতা? সে হল সেই কবিতা যার মধ্যে আবহমান কবিতার জেনেটিক সংকেত ও সার্বিক উত্তরাধিকার আছে, কিন্তু স্থাবর বা অস্থাবর কোনোরকম সম্পত্তিরই দাবি নেই। পুনরাধুনিক কবিতার জন্য কোনো নির্ধারিত তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য থাকবে না। কারণ, প্রত্যেক পুনরাধুনিক কবি তাঁর কবিতাকে তাঁর নিজেরই পৃথিবীতে খুঁজে নেবেন। সেই পৃথিবীটাকে শুধু হতেই হবে... প্রথম পৃথিবী। এই কবিতার কিছু জীবনধর্ম অবশ্যই আছে, কারণ কবিতার কোনো নির্ধারিত সংজ্ঞায় সে আটকে থাকবে না, থাকলে সে বাঁচবে না এই নতুন পরিসরে। সেগুলোর আলোচনা অন্য অবসরে।


অনুপম মুখোপাধ্যায় 
(পরিচালক : বাক্)



My Blogger Tricks

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন