না-ফেরা পর্যন্ত
১০.
সে ভাঙে না গড়ে,সে কি রাজ্যে না
নৈরাজ্যে?বাড়িতে না বাড়াবাড়িতে?চৌমাথায় হারিয়ে যায় খামারপিয়াসী ডাক আর তারে বসার
আগে লৌকিক রাসবিহারী জুড়ে চিন চিন করে না-ফেরা
চোখের টানা বারান্দা,যেখানে আমি লাবণ্য’কে দেখি আর সে লাবণ্যপিপাসায়
বলে,লস্যি হবে?
-চিনি ছাড়া?
-না,তবে সামান্য,মিষ্টি তো ইনপুট
মাত্র
-একটু ফিকে করে দিই?
লাবণ্য’র রায়প্রীতি থাকলেও সে তাকে
বিভাজ্য দিয়ে দিল!ব্যতিক্রমের সতিল ছুটকারা পিয়াবাসন্তি’র সুর-ঐ-হাসির
তাকে নরমে পান দিল সবুজভাপা,সে লিখলোঃ
“আজ সন্ধ্যায়/মৃত্যুর অর্ধেক
আলো নিয়ে চুপচাপ/বসে আছি লাবণ্যয়”
আমৃত্যু পানের চরায় ঝাঁপালো আধা আলো’র অর্ধেক পৃথিবী,লাবণ্য!
৯.
“এতো রিয়া নয় এতো
অন্যপ্রসঙ্গ...”একদিন লিখেছিলাম!
তখনো “এক লহমা স্কুল”পড়িনি,দেখিনি”ভালোলাগার অল্প আলো!”
রিয়া সোমবারিয়ায় মিশে গেল,সেই যে সিকিমের চোরাস্রোতের মহল্লা,যেখানে রোদ নামে
অলস নাগরের পেনিট্রেশন
নিয়ে,সে ওখানে ছিল না,রিয়া সোমবারিয়া হয়ে গেল না-ফেরা পর্যন্ত!বাহান্ন টুকরোয়
ছিন্ন তার অপ্রকাশিত শরীরের
কামাল ফাইবার লাগলো এসে তার বুকপকেটে, রাসবিহারীর সে ভাবলো,”স্বপনের চোখ আস্তে নামিয়ে
রাখলো
রিয়া....”
৮.
হয়ে গেল তার,লিখতে শুরু করলোঃ
১.নিজের আলোয় নিজেই বেড়ে ওঠো;/আর ভাটিয়ালি থেকে নামিয়ে আনো/এক ছোট্ট আকাশ
২.হঠাত হেসে ফেলে দরজার গান/আমি তা মন দিয়ে শুনি/আর একটু একটু টুসকি দিই
কিশলয়ে
৩.রাত হলে ডানদিকে ঘুমিয়ে থাকে/সারাদিন বলে যাওয়া কথাদের ছায়া
৪.মাকড়সার পায়ে জুতো পরিয়ে/কে যেন ছেড়ে দিল বাগানে/তারা ওই আলো বেয়ে/উঠে
যাচ্ছে আগুনের দিকে
৫.কাঠের ঘোড়া চুপচাপ বসে থাকে/ওয়াশিং মেশিন ধোওয়া নিরক্ষরেখায়
এই যে দুনিয়াকে বায়োস্কোপিক চিহ্ণ দেওয়া এ তার স্বভাবে শালীন,সে এই মেদুর
শস্যে শহরের ময়লা মুছে দেয়!
তার মূর্তি নেই,কিন্তু দেখায় আছে! এক নালীন নাদিটি হয়ে বা নাগরিক বদ্ধতার
ভিতরে রয়ে যাওয়া বাংলাপাখিদের
উড়ে যাওয়া হয়ে..’সে নিজের কংক্রিটে এইসব সজলব্রাশের দিগন্ত বসাতে বসাতে বলে ওঠে,দেখো এই যে প্রযুক্তিহীন
নিশ্বাস আমি কলকাতাকে দিলাম এ কিন্তু আর কেউ দেয়নি!
৭.
সে ফিকে লস্যির আড়মোরায় অভিজ্ঞ হয়!জীবনে কি ভাবে নতুন কুয়াশা আসে,কুহক তৈরি
হয়,কিভাবে কালিঘাট
মেট্রো স্টেশনের পরন্তপী আলোয় সে হেঁটে যেতে যেতে ভাবে,”চোখ থাকলেও সবাই/আকাশ কিংবা
মুখোশের নড়াচড়া
টের পায়না..”
৬.
কবিতা চেয়ে থাকে,কবিতা পাশ ফেরে,কবিতা
সেডাক্টিভ হয়,কবিতা....
কবিতার সামান্য মুচকি।
সে এই কবিতাবিপথ ধরে কতদিন!সে আর তার “তনহাই”...মাঝে মাঝে চেতনাবিরল
জায়গায় ঘোর ভাঙ্গে,সে তো
ঘোরের কবিতা লেখিনি কখনো,তবু আজ এই
ভালোবাসার স্পর্শকে,রিয়ায় লাবণ্যে সে অফুরন্ত হয়,অচেনা টারমিনাসে
এক অলীক বাসের সেজে ওঠা দেখে আর অবাক
হয়ঃ
১.সে কি শিস দিয়ে বাজাতে পারে এই
পৃথিবী/আয়নায় লাগা রোদ?
২.গাছের পাতা খুলে ফেলে
কাফলিঙ্ক!/হেঁটে যায় আগুনের দিকে
সে তো লিখবেই,তার নিজেরই তো আছে “আগুনের আরামকেদারা”!
৫.
সে পরিব্রাজকের পায়ের সীমারেখায় লাগিয়ে দেয় ভালোবাসার পয়েন্টারগুলো!তার ঝোলায়
জমে থাকা বিতরণের
ছায়াসমগ্রে উঁকি মারে শাদা কালো ফিল্মে রাখা সেই ট্রামের শন শনানি,যা এখনকার
মেট্রোচালিশায় নিষ্প্রভ হয়ে
গেছে,বা সেই স্কুল,সেইসব ইস্পাহানি চাকু,আর বিপ্লবের সীমন্তে লাগানো অস্তরাগের
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত,সে দেখেছে আর
হেঁটেছে,সে কবিতা লেখার বাহানায় অনিবার্য করে তুলেছে এক চরাচরের মুসাবিদা,হয়ে
উঠেছে রিয়াপসন্দ মাতোয়ালা!
আর সে লিখতে চেয়েছে, ’মুখময় অপেরা নিয়ে ছায়ালাগা জল/গাছের তলায় বসে/জীবনের ভাঙা টুকরোগুলো গাইছে
রিয়া..’সে এক চূড়ান্ত প্রেমিকও,নইলে লিখবে কেন,’পঞ্চান্ন বছর চোখের পাতা এক
করিনি/শুধু তোমাদের ভালোবাসবো
বলে..’
৪.
আর সে “খালি কলসির পাশে শুয়ে চিঠি’র কথা ভাবে!সে এক অপার্থিব
লেন্সের ভিতর দিয়ে আমাদের দেখায়
চেনা সংসারের অচেনা স্থাপনগুলো,’মানুষ টেবিলে সাজিয়ে
রাখে/সেঁকা রুটি,সিঁদুর কৌটো এবং রেকাবিতে প্রতিফলিত
কয়েকটুকরো আলো..’সে ব্যবহারিক প্রয়োগে আলাদা
করে দেয় তার ভাষা, স্পষ্ট হয়,’নিজের ছায়া মুছে ফেলা
দ্বিতীয় পৃথিবী..’তার লেখা সহজটানে ধরতে চায়
সেই জীবন,যা আজ পুরনো আবারই কালই নতুন,যার ব্যাটন
হাতে নিয়ে সে বসে আছে গতির লাবন্যপুশ দেবে বলে....সে
জানে,’আট বছর আগের
পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে/আজ
তোমার আঙুলে..’
তুমি,যদিও আর সেই তুমি নও,তবু তুমি
তুমিই!
৩.
জট ছাড়াতে চায় সে,আমাদের কবি!লাবণ্য আর রিয়া তার দুপাশে আস্কারা দেয়!বলে,স্বপন
তো সারান্ডার প্রজাপতি
ডুয়ারসে ছাড়তে গেছে,তুমি বলো,কি চাও আমাদের কাছে!
সে,আমাদের কবি হাসে!
ভালোবাসা!বলে না সে,নাটুকে হয়ে যাবে,কবিতা আর নাটকের দূরে থাকাই ভালো!
সে বলে,’আকাশের ছড়িয়ে পরা রঙ/আজ হেলমেট পরে উড়ে যায়..’
-এ তো ছেলেমানুষি!বলে রিয়া
-আমি ছেলেমানুষ নয়?
লাবন্য বলে,আমি স্বপন’কে বলেছিলাম,তুমি কিন্তু অমিত রায় নও!তবে তোমায় দেখে মনে হচ্ছে,হলেও হতে পারো!
তার স্বপ্নের শেষে সে ওঠে,লিখে ফেলে,’আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসি/আমার ছায়া চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়তে
থাকে/গড়ানো
বল/রিয়া আর লাবণ্যর পেনসিল...’
সে তার সারাজীবনের স্বপ্নের কবিতা লিখতে থাকে,সে লিখতে লিখতে একটা নামও ভেবে নেয়,’ছায়াদের ভালোটুকু’
তারপর...
২.
তারপর আমি ওকে ডাকি,সে এক সূর্যাস্তের সময়!
১.
আমরা হাঁটতে থাকি!একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে,অস্তের দীঘল সীমায় একটা নাছোড়
রেখার দিকে আমাদের
যাওয়া,”যখন জল পড়ার ঝিরি ঝিরি আওয়াজ টোকা দিয়ে সরাচ্ছে মেঘ..’
০.
আমি আমার বন্ধুকে বলি,ধীমান তোর বইটা পড়লাম... ‘ছায়াদের ভালোটুকু’...আমার তো আবার প্রেমিক হতে
ইচ্ছে
করছে...কি লিখেছিস....আর ওই ব্রিজটা...রিয়া আর লাবণ্য’র মাঝখানে রাখা ব্রিজ..কি
যান নাম...কি যেন....
-দয়ালু বর্ষা
-ভেজা দূর্বা ঘাস
-বর্ষাতি ও ঝুরোপাতা
-গাছ ও চিবুক
-এক টুকরো রোদ্দুর
আমাদের তর্ক চলতে থাকে,আমরা অস্তের দিকে এগোই,আর আরো একটা উদয় ঠিক তখনই রওয়ানা
দেয় আমাদের
দিকে!
আলোচিত গ্রন্থ : ছায়াদের ভালোটুকু
ধীমান চক্রবর্তী
ভিন্নমুখ
মুল্য-৫০ টাকা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন