এক যে ছিলেন পোঁদমারানে নাম ভগবান,
বিগত
শতকের এলিয়টেস্ক ট্রাডিশন ভেঙে যে'কজন ইংরেজি কবিতায় লিরিসিজম বা গীতিময়তাকে প্রাধান্য
দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তাঁদের পুরোধা ডিলান থমাস। ডিলান থমাসের নাম উঠলেই তাঁর যে
কবিতার কথা সবার আগের মনে পড়ে,তা হল তাঁর অসুস্থ বাবাকে উৎসর্গ করে লেখা 'Do Not
Go Gentle Into That Good Night ',এছাড়াও আছে 'And Death Shall Have No Dominion',
'Fern Hill', 'Under The Milkwood Tree' ইত্যাদি। হ্যাঁ, ডিলান বরাবরই গাছের ছায়া
থেকে মাথা তুলে হেঁটেছেন মৃত্যুর বিপক্ষে, সমষ্টির দিকে -
'And you, my father,
there on the sad height,
Curse, bless me now
with your fierce tears, I pray.
Do not go gentle into
that good night.
Rage, rage against
the dying of the light'.
এই শব্দচয়ন, এই আত্মগত
অনুস্বার থেকে কবিতাকে আজাদ করায় প্রয়াসী ডিলানের কবিতার অর্থগত দুর্বোধ্যতা
সম্পর্কে বলতে পারি—
'এটা অনেকটা মোজার্টের
কনসার্টের মতো। দু'টোই বাচ্চারা
অনায়াসে বুঝতে পারে, কিন্তু
বড়োরা হিমশিম খায়'।
কবি ডিলানের চাষ-আবাদে
পাঠক ডিলানের অবদান অনস্বীকার্য। বারো বছরের ডিলানের বুক সেলফ ঘাঁটলে যে নামগুলো
পাওয়া যায়, সেগুলোকে একত্র করলে যা
দাঁড়ায় তা অনেকটা এইরকম- ব্রাউনিঙ, ডি
কুইন্সি, ব্লেক, মার্লো, কিট্স, লরেন্স, দস্তয়েভস্কি, জয়েস, মিল্টন, দান্তে। কি
ছিল না তাঁর চর্চার তালিকায়? গ্রেটা গার্বো থেকে ডন
ব্র্যাডম্যান, মিকেলেএঞ্জেলো থেকে কারাভাজ্জিও, আইন্সটাইন থেকে এপ্সটাইন, স্ত্রাভিন্সকি থেকে লরেন্স অলিভিয়ার— সবই ছিল তাঁর নখদর্পণে।এমন মানুষের কি শুধু কবি
হওয়া সাজে? তিনি (শুধু কবি) ছিলেনও না। বরঞ্চ,
এই ফাংশনাল অ্যানার্কিস্ট ডিলান ভালো গল্পকারও ছিলেন বটে। উল্লেখ্য তাঁর
'পোর্ট্রেট অব্ দি আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ডগ'(১৯৪০) যা কিনা জয়েসের 'পোর্ট্রেট অব্
দি আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ম্যান-এর লালিকামাত্র। যদিও লালিকার মোড়কেই এই গ্রন্থের 'রিটার্ন
জার্নি' নামের এক গল্পের ন্যারেটর খুঁজছেন ইয়ং থমাস নামের এক বন্ধুকে, বলা ভালো ডিলানের অল্টারইগোকে।
ডিলানের বোহেমিয়ান
ব্যাক্তিজীবন এক্ষেত্রে আপাতভাবে কম প্রাসঙ্গিক হলেও, তার বর্ণময়তা কম চোখ-ধাঁধানো নয়। কখনো তিনি চার্লি চ্যাপলিনের টেনিস
কোর্টে গাড়ি নিয়ে সটান ঢুকে যাচ্ছেন, কখনো আবার বিবিসিতে নিজেরই লেখা কবিতা আবৃত্তি
করছেন, আবার কখনও বা মদ্যপ ডিলান ঢলে পড়ছেন কোনো স্বল্পবসনার
জেল্লাদার বুকে। এমন আ-নারী মদ্যপ বেহিসাবি ডিলান সম্পর্কে নোবেলজয়ী শেমাস হিনী
যেমন বলছিলেন,
'Thomas the Voice,
Thomas the Booze,
Thomas the Debts,
Thomas the Jokes,
Thomas the Wales,
Thomas the Sex,
Thomas the Lies!',
এতজনের ভিড়েও 'Thomas
the Poet' সত্তাটি স্বয়ংদীপ্ত ও জাজ্বল্যমান। কাউন্ট ভালসেইগের স্ত্রীর মৃত্যুতে
যেমন মোজার্ট রিকোয়েম কম্পোজ করলেও তা ক্রমে তাঁর নিজেরই শোকগীত হয়ে উঠেছিল, কিংবা জন অব গন্টের স্ত্রীর মৃত্যুতে লেখা
চসারের এলিজির (বুক অব দ্য ডাচেস) পংক্তিরা যেভাবে তাঁর নিজের সমাধিলেখ হয়ে
উঠেছিল, তেমনই ডিলানের তাঁর মৃত পিতার
স্মৃতির উদ্দেশে লেখা এলিজি তাঁর নিজেরই রিকোয়েম হয়ে ওঠে। এখানেই তিনি মহান কবি
কিটসের পাশে গিয়ে বসতে পারেন, কারণ
কিটসের এপিটাফও যে এক অন্তহীন এলিজির অন্তিম আরম্ভমাত্র, যাতে বলা আছে -
'Here lies one whose
name is writ in water.'
ঐ রাতের ভেতরে ঢুকো না
নীরবে (Do not go gentle into that good night)
বন্ধ্যা যদিও সময় তবু মূহূর্তের শ্রম
ভেঙ্গে দিতে পারে যত উৎপাদনের ভ্রম।
ঐ রাতের ভেতরে ঢুকো না নীরবে
পুড়ে যাক যত বার্ধক্য, আর স্বাগত জানাক শেষরাতে ;
প্রলয় হয়ে ওঠ, আলোর শেষযাত্রায় হেঁটো না নীরবে।
প্রাজ্ঞরা যদিও জানে ঠিকই তাদের দিনান্তের
নাম অন্ধকার,
কারন তাদের কথার সালোকসংশ্লেষ হয়নি
তারা
ঐ রাতের ভেতরে ঢুকো না নীরবে।
সুজনেরা, শেষ তরঙ্গ শুনে, কাঁদে কত উজ্জ্বল
ছিল তাদের দুর্বল শ্রম, হয়ত নৃত্যপরহত সবুজ উপসাগরে,
প্রলয় হয়ে ওঠ, আলোর শেষযাত্রায় হেঁটো না নীরবে।
বনমানুষেরা, যারা সূর্যোদয়ের গান ধরেছিল যাত্রাপথে
আর শিখেছিল, বড্ড দেরিতে, তাই বিলাপ করেছিল,
ঐ রাতের ভেতরে ঢুকো না নীরবে।
মৃত্যুর কাছে, কবরের লোকজন, যারা দেখে চমকের চোখে
জ্বলে উঠতে পারে অন্ধচোখ প্রফুল্ল উল্কার
মতন,
প্রলয় হয়ে ওঠ, আলোর শেষযাত্রায় হেঁটো না নীরবে।
আর, হে পিতা, তোমার ঐ বিষণ্ণ পাহাড়ে,
মারো, রাখো, তোমার হিংস্র কান্নায়, আমাকে দয়া করো।
ঐ রাতের ভেতরে ঢুকো না নীরবে।
প্রলয় হয়ে ওঠ, আলোর শেষযাত্রায় হেঁটো না নীরবে।
লিমেরিক
(Limerick)
এক যে ছিলেন পোঁদমারানে নাম ভগবান,
রেশমগুটির মধ্যে তিনি কুমারীকে পান।
এমন একটি আচরণ আদৌ সাধু নয়,
এর ফলেই ত্রাতা যিশুর জেনো জন্ম হয়,
শালা এক ঘাসপিন্ড! ক্রুশে অক্কা পান।
প্রলাপে প্রেম
(Love in the Asylum)
আজনবি এসেছে
আমার ঘরে আমার বাড়িতে মাথার ঠিক ভেতরে নয়,
পাখির মত পাগল একটা মেয়ে
দরজায় দাঁড়ানো রাত ঝেড়ে ফেলে পালকের হাত দিয়ে।
বিস্ময়ের বিছানায় একটা নালা কেটে
শরণার্থী মেঘে আড়াল করে একটা চাঁদের বাড়ি
আড়াল করে দুঃস্বপ্নের ঘরে হেঁটে,
মূলতঃ, মৃতের মতন;
কিংবা পুরুষ পাটকের বানানো গঙ্গাসাগরে।
আচ্ছন্ন স্বীকারোক্তি তার
সে দেখেছে বিভ্রান্তির আলো পাঁচিলের লাফানো খাঁজে,
আকাশের সম্মোহনে
ধুলোর সরু নালায় শুয়ে হেঁটে
তার প্রলাপ দাবী করে শোওয়ার
আমার কান্নার গ্রেফতারী গারদের পাগল পাটাতনে।
আর ওর বাহুর অগুনতি আলোর শেষে
নিশ্চয়ই আমি
আমার চোখ পুরিয়ে নেব তারাদের আগুন থেকে।
অনুবাদ : দীপায়ন দত্ত রায়
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন