(চলবে)
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: তেতে যৌনমুখর
বায়ুনাল পরা টপক রিপিট টপক
হাওয়া গুঁড়োর গুণ গুণ লাগে গায়ে গাওয়া
যেন জেন-এ জার্নি
লিঙ্গনে ফিদাই
বেশ রাত ব্রিফকেসে যেমন হয়, রাতে এসে ভুডু, কারণ বৃষ্টি পড়েছিলো
কে কাকে প্রশ্নে আজো সিগার! বৃষ্টি পড়ে, সিগার পোড়ে, একটা জেদি বর্ষাতিকে মনে হয়
মাশুকার সন্দেহ
মনে পড়ে কিছু? স্বপন রায় বারীন ঘোষাল আমি কোনদিন চোখের
সামনে তোমাদের একে অপরের লেখা নিয়ে কথা বলতে শুনিনি। আজ এই লোভ সামলাতে পারছি না।
বারীন ঘোষাল: স্বপন রায়, স্বপন, উপমার 'মতো'- কে এড়িয়ে
গেলি উদাহরণের প্রয়োগে, বেশ করেছিস। আমি
এটাকেই বলি উদাহর্ণ। যেমন -- ভেজা বর্ষাতির গায়ে লেপটে থাকার প্রবণতাকে মাশুকা'র সন্দেহ -- বলা। এই 'মাশুকা'-র এভাবে ব্যবহার অসাধারণ নতুন।
কবিতাটাকে আকাশে তুলে দিলো। তাই না? কি বলিস ? আর, জীবনানন্দকে ছাপিয়ে যাবার এই কলার ওঁচানো ধৃষ্টতা আর সাহস
আমার তো আজও মহার্ঘ মনে হয়। তোর হয় না ?
বারীন ঘোষাল: মৃগাঙ্ক, এটা সেপারেট ফাইল করে ফেল, যেখানে আমরা কথা
বলব। ওপেন থাকলে অনেক বেনোজল ঢুকে যাবে।
স্বপন রায়: বারীন দা মিথ ভাঙার কবি,মিথ গল্প তৈরি করে আর সে গল্পে ঢুকে যায় শব্দের চেনা প্রয়োগ, বারীন দা তাঁর কবিতায় প্রায় একা হাতে এই চলতি নিশ্চলতাকে
ভেঙে দিয়ে একটা বিকল্প শব্দাবহ তৈরি করতে থাকে,টপক রিপিট টপক এটা শব্দের আবহ, শব্দবাহ!এরফলে অশ্বগতির রিপিটেটিভ মুভটি প্রতিষ্ঠিত গতিসঞ্চার কে এড়িয়ে গেল,কবিতার এই নতুন স্পর্শক মিথানুসরণ করলো না,যৌনতা থেকে জেন এই নিঃসরিত গমনাগমনে বারীন দা মিথ'কে বানালো বাপি আর বাড়ি পাঠিয়ে দিল স্টেপ আঊট করে! আমার ওই
লেখাটা সিনেমা সিরিজের,ওতে সিনেমা ওঁত
পেতে আছে আর মত শব্দটা লেন্সে ফেললে গুলিয়ে যায়, মনে হয় মোতো হয়ে যাচ্ছে!....আমি একমত, আলাদা ফাইলে বা মেসেজ বক্সে আলোচনা হোক!
বারীন ঘোষাল: ঠিক বলেছিস স্বপন। জেন সেই জাপানী জেন । ধ্যানবিন্দু। যৌনতা
থেকেই তার সরনের কাল। এটা শুধু শব্দে বাহাদুরী না, কুউউউউ শব্দেও। তোর কবিতাটা সচল দৃশ্যময়, রিয়ালি সিনেমাটিক ল্যাঙ্গুয়েজ। সিগার, বর্ষায়, সো রোমান্টিক। তুইই পারলি, হইচই না করেই। সাবাস।
স্বপন রায়: শব্দে আটকে যাওয়াটাই পুরনো চলন,শব্দে সঞ্চার না ঢুকিয়ে দিলে এর ভেঙে পড়াটা স্তূপ হয়ে যাবে,অচল স্তূপ!তো সঞ্চার তো পল্লবিত তরঙ্গ ছাড়া হয়না,তাতে জীবনাসক্তি ঢেলে দেয় অনুভবের নেসেন্ট প্রবাহ,তবে কবিতার ভেতরে এই ভাবনা ইঁট হয়ে থাকলে কবিতাও ইটের বাচ্চা
হয়ে যাবে.....এ সব চ্যালেঞ্জ ছাড়া কবিতাভিযানের কোন সার্থকতা থাকতো না," হাওয়া গুঁড়োর গুণ গুণ লাগে গায়ে গাওয়া " লেখা হত না!
বারীন ঘোষাল: তোর মনে আছে স্বপন, আমাদের কবিতার ওয়ার্কশপ চালাবার প্রথম দিকে আমি নতুন শব্দাবহ তৈরি করার সময়
লিখলাম সাঁতাকেন, গানান, এই আরো শব্দগুলো ? প্রথমে গ্রহণযোগ্যতা নেই মনে হলেও ধীরে ধীরে তোরাও শব্দমিথ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে
নিজেদের ডিমিথিং শুরু করেছিলি । এভাবে শব্দের অপার রহস্যে ঢুকে যেতে কী ভাল লাগে। না
?
স্বপন রায়: একদম!নতুন কবিতা'র শুরুর দিন গুলোয় এমন মিথ ভাঙা ব্যবহারে সমসাময়িক এবং প্রবীণ কবিদের কোঁচকানো
ভ্রু'র বিরক্তিগুলো ছিল দেখার মত! তবে পরবর্তী সময়ে এমন ব্যবহারই
তরুণদের ভ্রুণ হয়ে উঠছিল!
বারীন ঘোষাল: অগ্রবর্তী অভিযাত্রীর কঠিন পথ উন্মোচনের দিনগুলো পেরিয়া যাবার
পরে কালে কালে সেখানে রাজপথ তৈরি হয়ে যায়। কত মানুষের আনাগোণা। কত তরুণ এসে পড়ল। এটাই
তো নিয়তি।
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:
বারীন ঘোষাল স্বপন রায় এটা আমি তুমি
স্বপনদা বাদে আর কেউঁ দেখতে পারবে না। এটায় ভিউ পারমিশান সেই ভাবেই সেট করেছি।
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:
হাসপাতালে এসে আমার অনেক উপকার হল
অবাক হওয়াও বেড়ে গেল খুব
বনে জঙ্গলে গিয়ে যা বুঝতে পারিনি আগে
আজ কেবিনের জানলায় দাঁড়িয়ে আবিষ্কার হল তা
কেমন ঘাসেরা এমনকি ঘাসের ঘাসেরাও সবুজ উগলে
দিচ্ছে
আর আমি উগলে দিচ্ছি বারীনকে
বুদ্ধিমানেরা তাদের বুদ্ধি
আর বোকারা তাদের বোকামী
নার্সরা ঝরিয়ে ফেলছে নার্সিং এবং বাড়ির ভাবনা
আকাশে টনকনীলিকা
গানে গানে ইয়া কি ইয়েল্লো সাবমেরিনের ভিনেকা
যাওয়া
সরন্ত ইজেল, পড়ে যাচ্ছে সারাবুক তেপান্তরের হাওয়ারা বাঃ বাঃ বাঃ
খুচরো রান
ছাঁটা ঘাসে কেমন আছোতে মাখা সোঁ সোঁ ছাড়বে না
মারবে তো এই হলো
একটা রান একটি কুন্তল
আর চমৎকার লেটকাট পরে
চোখে বাসা বাঁধার পরে
আর কি বুকে বুকে আসানো বেরোন তূনীর, ফতেহ বলতে পারি
যদি ফোর্ট হয়ে যায়
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:
বলতো এই কবিতা দুটো কেন বললাম ?
বারীন ঘোষাল: কেনওওও
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: এই দুটো লেখা নিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন আলোচনা হয়েছে ? তোমার লেখাটা নিয়ে স্বপন দার লেখা পড়েছি। স্বপন দা র লেখাটা
নিয়ে তোমাদের আলোচনা হয়েছে ? আর একটা বিষয়
বারীন দার এই লেখা আর আগে যে কবিতাটা দিলাম তাতে কি সময়ের পার্থক্য কতটা স্পষ্ট বলে
মনে হয় তোমার, স্বপন দা?
বারীন ঘোষাল: না, এই কবিতাটা নিয়ে
আমাদের কোন কথা হয়নি। তবে 'ফতেহ' খুব ভাল প্রয়োগ হলেও শেষ লাইনটা ইচ্ছে করেই আবহ ভাঙ্গার জন্য
গড়া। আর হাসপাতাল সিরিজের কবিতাগুলো আমি আমাদের মধ্যে বারে বারে পড়েছিলাম।
স্বপন রায়: আমার লেখাটা ১৯৯৮ এর,আমি লিখে ভুলে গিয়েছিলাম,এটা একটা সিরিজ
ছিল!ভুলে যাওয়াতে এ লেখা আমি কোথাও পড়িনি,কোন বইতে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই!পুরনো ডায়েরির মধ্যে রাখা এই সিরিজটি ২০১৩ হাতে
পেয়ে খুব মজা পেয়েছিলাম!তো এই লেখা নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগই ছিল না!বারীন দা'র কবিতাটি
তো বিখ্যাত কবিতা!আবার পড়তে গিয়ে আটকে গেলাম এই লাইনে," নার্সরা ঝরিয়ে ফেলছে নার্সিং এবং বাড়ির ভাবনা .."এর
ভেতরে কোন অসুখ নেই , নার্সদের ঝরে
পড়ায় নার্সিং সরিয়ে বাড়ির ভাবনাহীন এক সুখ উঁকি মারছে,নারী এখানে ত্ব অব্দি না গিয়ে ছুঁয়ে দিল এক কবির এক অবাক
কবিকে,যে অসুখে নিরাময় পেয়েছে,নিজত্ব আর তার কাছে অহং মাত্র নয়!
বারীন ঘোষাল: কিন্তু সেই পুরনো কবিতাটা মৃগাঙ্ক পেলো কোথায় ?
স্বপন রায়: সিনেমা সিনেমা সিরিজে লেখাগুলো ছাপা হয়েছে!
বারীন ঘোষাল: আচ্ছা।
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: স্বপন দা’র দু’টো কবিতা-র মধ্যে এবং তোমার-ও
দুটো কবিতা-র মধ্যে, একটায় যে শব্দ দিয়ে আবহ তৈরী হচ্ছে, অচেনা শব্দ আসছে, আর
অন্যটা কিন্তু সেই দিকে যাচ্ছে না।
বারীন ঘোষাল: স্বপনের মেশিন খারাপ। সেরে উঠুক।
স্বপন রায়: মেশিন ঠিক হল! কবিতার আলোচনায় যাচ্ছি আবার!সিনেমা সিনেমা
সিরিজে চলাছবি আর কবিতা'র আঙ্গিক নিয়ে
খেলাধুলো আছে,শব্দের প্রতি যে তির্যক বোহেমানিয়তা
থাকে আমার,সেটা সিনেমা সিনেমা সিরিজে
সে ভাবে নেই,কবিতা তো একভাবে লেখা হতে
পারেনা,জীবনও তো এক জায়গায় থেমে থাকেনা মৃগাঙ্ক!
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:
স্বপন রায় বারীন ঘোষাল কবিতার বয়ে
চলা নিয়ে একটু কথা বল না।
বারীন ঘোষাল: কবিতা বয়ে যায় যেমন মন বয়ে যায়। কখন কোন দিকে জানা নেই। মন
তবু অভিজ্ঞতায়, কল্পনায়, নিজের আপন পৃথিবীকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভাসে। কবিতা কখনো বা ছোঁয়।
আগে পরে কিছুই বোঝা যায় না। শব্দ কিছুকে রেফার করে, বা রেফারেন্স থেকে শব্দ আসে, যা ধ্বনি থেকে উপজাত, অভিধান থেকে নয়, কারণ শব্দের কোন মানে হয় না। ধ্বনি তো স্থির থাকে না। সেই
সাথে শব্দ বদলে যায়। আবহ থেকে বিরহে। প্রতিটি শব্দ পৃথক ব্যাঞ্জনা দেয়। প্রতিমুহুর্তে
তা অচেনা লাগে তাই। আমার আর স্বপনের চয়ন পন্থা ভিন্ন। ওই যে স্বপন বোহেমিয়ান শব্দের
কথা বলল। শব্দেরা কবিতার ট্রেকিং-এ বেরিয়ে যায়। এটা আমার খুব ভাল লাগে। আমি কিন্তু
সাউন্ড আর ওয়ার্ড-এ তফাৎ করে দিলাম
স্বপন রায়: বয়ে চলা না থাকলে বয়ে যাওয়াও থাকবে না!কবিতা'র কোন ফ্রেম নেই,অথচ দেখো কবিতা'কে ফ্রেমে আটকে
রাখার জন্য কত কসরত,শ্রাবণ লিখে যাপন
বা বর্ণ'কে সামান্য দিয়ে মেলাতে মেলাতে কত কবি'র সারাজীবন কেটে যায়!পদ্য আর কবিতা যে এক নয় এটা শব্দ বয়ে
না গেলে প্রমাণ হত না!শব্দ'কে ধ্বনির মুখে
নিয়ে গেলে তার শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে কিন্তু ব্যবহারের দক্ষতায় তাতেই মিউজিক বেজে ওঠে,আর তাকে থামানো যায় না,তার থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় -এর মাত্রাযাপন ছেড়ে কবিতা বাইরে চলে আসে!আমার
তো এ রকমই মনে হয় কবিতা খুঁজতে গিয়ে!
(চলবে)
(চলবে)
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন