ক্রমান্বয়ে উদ্গীরণ
ঢেঁকুর এক
রঙের নাম নগ্ন !
মোজার নাম শুকনো
রাশির নাম সিং হ
হাসির নাম দৈন্য
নদীর নাম স্বপ্ন
কাজের নাম ভগ্ন
ছুটির নাম যজ্ঞ
পথের নাম সুইন হো!
গায়ের নাম গাত্র
এনামেলের পাত্র
ব্লাউজ পরা ছাত্রীর
স্কিন কালার বাথরোব
ন্যুড পরিপার্শ্ব
রঙের নাম নগ্ন...
ঢেঁকুর দুই
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে নেমে যায় পরবর্তীকালে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে গা হাত পা চুলকোতে থাকে খালি
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে ঘুম আর আসে না সহজে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে খাতা রাখি হাতের সম্মুখে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে পাহাড়ের ওপরে তখন
কুয়াশা জমেছে আর ঢালুপথে গড়িয়েছে মাথা
যে মাথার মধ্যে নেই কোনরকমের মাথাব্যথা
তবুও অস্বস্তি কেন? শালা! এই হুলুস্থুলু গালি
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে ঢেঁকুর উঠেছে খালি খালি
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে
বিনামেঘে বজ্রপাত হবে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে কাদাজলে স্নান করে উঠি
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে অ্যান্টাসিড গলায় ঢেলেছি
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে সেই ক্ষারে হৃদয় খসখসে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে রাশি রাশি খারাপ চিন্তারা
এসে এসে দাঁড়িয়েছে উইংসের বাঁপাশে ডানপাশে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে দমাদম দরজা জানলা পড়ে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে সারাদিন ঝড় হতে থাকে
অস্বস্তি চূড়ায় উঠলে ব্যাগ ঢুঁড়ে কলম নিকালি
অস্বস্তি নামাতে আমি এক গুচ্ছ কবিতা লিখেছি
ঢেঁকুর তিন
(ট্রাকবাহন , লিখিত ২০০৭,
অদ্যাবধি অপ্রকাশিত)
ফুলকপি দিয়ে ছাওয়া ট্রাকে
কে শুয়েছে ওপরের তাকে
তার দুটি শ্রীচরণ দেখি
আড়ালে থেকেছে দেহতনু
গামছায় ঢাকা তার কটি
শ্যামল চরণদুটি রোগা
যদি হাইওয়ের পথে যেতে
ঝাঁকুনি লাগে গো তার দেহে
ঘুম হঠাৎ ভেঙে যাবে নাকি?
পথেই কি পড়ে যেতে পারে
ঘুমোতে ঘুমোতে চুপিসাড়ে?
ট্রাকের ওপরে রাতদিন
সে এখন রয়েছে আসীন
তার কাজ নামানো-ওঠানো
ফুলকপি, মালিক-বোঝানো
ভেতরে কী? চোরাই সামান?
ফুলকপি মুখোশ সমান?
যে রয়েছে চালক আসনে
তারি সব আছে জারিজুরি
আমি কে বা! আদার ব্যাপারি
কাজ নেই অত সন্ধানে
চেকপোস্ট গলে যেতে পারে
সে এখন অবলীলাভরে
গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খেয়ে
ফুলকপি-আসনে, রসিয়ে
মাঝে মাঝে পথপাশে ধাবা
ধূমায়িত চায়ের গেলাস
মাঝে মাঝে গোসলের তরে
পুকুরে ভাগাড়ে নেবে যাওয়া
বাকিটুকু তড়কা ও রুটি
অথবা ভাতের পাশে থাবা
আলুচোখা লংকা ও নুন
এই তার জীবন জাহাজে
সে এখন কেবল খালাসি
মাল শুধু ওঠানামা করে
ট্রাক যায় বাজারে বাজারে
এন এইচে স্টেট হাইওয়েতে
তার এখন হেলদোল নেই
সে ঘুমোয় এখন অঘোরে
ট্রাকের লোডিং শেষ করে
ঘুম ভেঙে দাঁতনের কাঠি
চায়ের দোকানে লীলাভরে
ঝুলে আছে মেয়েদের ছবি
ছত্তিস ইঞ্চির ছাতি
দেখে যাওয়া এখন নিয়তি
বিয়াশাদি হয়নি এখনো
মেয়ে তার বাঁধা নেই কোন
উষ্ণতা নেই তার বাঁধা।
হাওয়া বয় হুহু করে প্রাণ
দেবতার আকাশপ্রয়াণ
ট্রাকের ওপরে বসে বসে
দেখেছে অজীব রোশনি সে
চাঁদ আহা! সুহানা সফরে
মাথা শুধু সামলাতে হয়
যখন লোহার রড আসে
খুলি তো দুফাঁক হয়ে যাবে
ভুরুয়ার যেটা হয়েছিল
মাথাফাটা , ওভারব্রিজের
রডে ঠুকে, ট্রাক থেকে পড়ে
লোডিং নিয়মছাড়া হলে
অথবা বেগানা
তকদির
কেন মরা এমন বেঘোরে?
প্রাণ আজো রয়েছে এটুকু
বুকের ভেতরে ধুকুপুকু
মরিবার সাধ কেন হবে?
শুয়ে শুয়ে রাত হল ফিকে
ফুলকপি দিয়ে ছাওয়া ট্রাকে
সে শুয়েছে সরল দিমাগে
তার দুটি শ্রীচরণ তোলা
শ্যামল চরণদুটি খোলা
কার দিল পদছাপ মাঙ্গে?
হাইওয়ের পথে যেতে যেতে
ঝাঁকুনি লাগে গো দিনেরেতে
ঢেঁকুর চার
আমার কবিতা তো আমারই মত।
জীবন্ত।
দেবব্রত বিশ্বাসের গানের ঘরোয়া রেকর্ডে
গলা ঝাড়ার শব্দ
হারমোনিয়ামের বেঠিক রিডের হঠাৎ বেজে ওঠা
বাচ্চাদের চীৎকার, ব্যাকগ্রাউন্ডে
গান,
গান,
কথার আদল।
জীবন্ত।
আমার যাবতীয় ত্রুটিতে,
কথায়, ভেঙে যাওয়া গলায়
আমি তো আমারই মতো!
ঢেঁকুর পাঁচ
(রূপদক্ষ সিরিজ ২০০৮)
১
ভৌতিক মন্দিরশিল্প। কর্মপ্রবচনে হেরে যাওয়া।
আমাকে কথার প্যাঁচে কষ্ট দেয় মূঢ়তার দিন।
তারপর অপার শিল্প। আহা!
আর স্পষ্ট বেঁচে থাকা, লোভ তার বড়
আবার ফিরেছি আমি কাজহীন প্রলয়গর্জনে
ভৌতিক নির্মাণশিল্প। নিন্দাপ্রবচনে নিভে যাওয়া।
২
ভুলে যাওয়া প্র্যাকটিস করেছি।
দিন যায় দর্পণ প্রেক্ষণে।
আজো ভাবি অমানিশা নয়
পূর্ণিমাই আমার মুকুল :
অথচ সমস্ত যায় নীলে।
ঝরে যায় অঙ্কুরিত হুল।
৩
বিষাদের হর্মোন চষেছি।
আকুলতা দেখিয়েছি ভুলে।
কাতর ও হতাশ্বাসভাবে
পুনরায় বসেছি তো, এ ডালে, ও ডালে
একদিন হবে গুরুতর
ঘটনা এ ধরিত্রীকপালে
লিখে দিলে অনুতাপ বোধ
আমি, ও আমার ঋণশোধ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন