এ মাসের কবি –
এপ্রিল ২০১৫ – রঞ্জন মৈত্র
সেভেন বেলোর বাড়ি।
রঞ্জন মৈত্র নিয়ে কিছু বলতে গেলেই প্রথমে এই বইটার কথা মনে আসে আমার। সর্বোচ্চ মনে
হয়। এই বই প্রকাশের পর আরও আঠারো বছর কেটে গ্যাছে। এখনো কী অবলীলায় লেখেন “আমার উচ্চারণ থেকে আকাশ পড়ে যায়”... এখনো নতুন এখনো কবিতায় চিররঞ্জন। অতিরঞ্জন নয় বরং
রঞ্জনরশ্মির কথা ভাবুন পাঠক। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ‘নতুন কবিতা’ পত্রিকার অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক রঞ্জন মৈত্র তার আগে দীর্ঘদিন ‘কবিতা ক্যাম্পাস’ পত্রিকার সম্পাদনায় যুক্ত
ছিলেন। ২০১১ সালে কলকাতা বইমেলায় ‘কৌরব
প্রকাশনী’ থেকে
প্রকাশিত হয় তাঁর নির্বাচিত কবিতাসমগ্র ‘রঞ্জনরশ্মি’। তার আগে কবিতার পাঁচটি বই।
প্রথম বই আমার আজান প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। তারপর সুবর্ণরেখা
রানওয়ে আর সেভেন বেলোর বাড়ি যথাক্রমে ১৯৯৩ আর ১৯৯৭তে।
মাইলস্টোন। একেকটি। হ্যাঁ। তারপর দীর্ঘ বিরতি নিয়ে ২০০৮ সালে একসাথে দুটি বই। কলোকাল ট্রেন আর আলোতোয়া
অডিও মঞ্জরী। রঞ্জনরশ্মির ব্যাককভার থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দেওয়ার লোভ
সামলাতে পারছিনা...
“ভিশনারি
– এই ধ্রুপদী আত্মসম্মান
নিরারোপণ করতে পারে তারা, যারা নতুন পথে হাঁটবে বলেই বারে বারে নতুন পথ তৈরি করে
মিলিয়ে যেতে চায়, সঙ্গী শুধু ঊনপঞ্চাশের গুনগুন, পদচিহ্ন মুছে মুছেও যেটুকু
লিরিকের দাগ রঞ্জনের পথগুলো চেনায়, তার চেয়েও কম ডট কম।”
রঞ্জন মৈত্রের কিছু নতুন কবিতা
এই পাতায় রাখতে পেরে অনেকদিনের জমানো আনন্দ বের করে আনলাম। আর হ্যাঁ, লক্ষ করুন, এখানে
নতুন কবিতা-র আগে পরে কোট আনকোট বসালাম কিনা কিছু এসে যায় না...
রঞ্জন মৈত্র-র কবিতা
টিকিট
পাশ দিয়ে ওমনিবাস চলে যায়
ট্রেন ভ্যান নৌকো থেকে
মারুতির দরজা থেকে
ফেলে আসা নথি
হেঁতালে গরাণে নেই
শব্দভেদী বারান্দাটি
বালিভেদী রহস্য তমস
আসো নাই
কন্ডাক্টর চলে যায় চারপাশ দিয়ে
লাল কারা
গুপ্ত নগরী ফুঁড়ে
যুগ ফুঁড়ে
ছোটাছুটি করে কিছু আমি ও ছায়াটি
হাসি হয় ছোট ছোট অস্তের গায়ে
রোদ গায়ে
আদুল দুলিয়াজান হাত রাখে
হর্ন দেয় সামান্য টিকিট
কোথাও রওনা রেখা
কোহরা দ্রোহরা
বারান্দা চেয়ার গাঁদা
নবীন বুদবুদ হয়ে আছে
দূরবিন্দু
অ্যাপ-এ যে ছবি করো
রাতের বিন্দুগুলি
হৃৎশব্দ বড় হচ্ছে ছোট হচ্ছে
বৃষ্টি
করাতের এপার ওপার
দেখা যায়
ভ্যানরিকশা চেপে ঢেউ বেড়াতে চলেছে
দেখা যায়
বিছানা পাতা রইল শিমুলে
গাছ রইল
দূর হয়ে জল দিচ্ছ
সূর্য দিচ্ছ না লেখা চিঠিতে
চশমা
চিনি যেসব যাব না
এপিক হারা সোমবার
ফোটোকপি কুয়াশায় মাঘে
জানলার গায়ে এক আসমা এসেছে
তারাপাখি অস্তর সুর্মাই চোখ
ওড়ে যেসব যাব না
দূরের চশমা ট্রলি একজিট রেখা
আলোদের পোল ছিল
সুকুমার ছিল ও খনন অরোরা
মেনুমাখা গ্রীল ফুল আশিক সেক্টর
বাঁধানো পদক্ষেপ পুলিনে এসেছে
তারপুলিন তারপুলিন
হাতদুটো রোদ লেখে
যেসব এসেছি স্কেচ করে
আয়না
আলো তুমি কালিন্দীতে বসে ছিলে একদিন
লাগোয়া শ্মশানে একদিন
এইকথা মনে হোল বনহুগলী স্টপে
ফাঁসিতলা মোড়ে বাস ঘুরলে তখনও
বরানগর হাওড়া
মাঝে যতেক উড়াল ফুল
লোয়া লোয়া চিৎকারে বাবড়ি উড়ছে
থেমে ভাবি
থেমে আয়নার টুকরোগুলি ফিক্স করি যথার্থ কুইক
ফলে সূর্য কমে যায়
রজনীও
বঙ্কিম সেতুর মাঝে ঢেউ করে খরস্রোত হাওয়ায়
চোখ চাই
বসে আছ দিনরাত্রি দেউলিয়া করে
জামাকাপড়ের গপ্পে পিউ আসে মেজদি পাপিয়া
বসে আছ একদিন
জন্মদিন
ডিপোর তো চাক্কা নেই
পুষ্করিণী
গুল্লা ভেঙে গেলে তুমি কোন রাগে কেঁদেছিলে
উতার চড়াও জানা নেই
চাঁদোয়া
পায়ে পায়ে দুপুর মিলানো
বল ছুটছে অ্যারোবিক
নাবিক জার্সির মধ্যে নৌগুলিস্তান
ওঠা পড়া
ভোর থেকে রঙ চড়ছে
ছায়া চড়ছে তরুছায়ে
কাত করা ধরণী বেয়ে কোথায় কোথায়
শব্দ ডাম্পার হয়ে
ভ্যাট হয়ে
কুহু করছ বিসমিল্লাহ হে নবীন
শিসপালং-এর বাড়ি
মিটমিট কোরে ফেরা ফেরারি চাঁদোয়া
দু মিনিট জড়িয়ে থাকব
দু মিনিট গুলাল পঞ্চম
আগাম ডাকের দিকে ছুটে গেল বলগুলি
তলটানগুলি গেল
জাল আছে
তার হাঁ-এ আলো ছায়া গোল হয়ে যায়
হে যায়
পলাশ যে পলায়
রাস্তাও পলাশের ছোটভাই
তার ঘুমঘর
ভাঙতে ভাঙতে উঠে বসি
মেঘ করি
সপাট লিখিত চিক্কুর
এত শব্দ দীন মানেবই
তোমার আঙুলগুলি দূরবৃষ্টি
মার্চের গাছগুলি দূরে ভরে যায়
সাতভোরে একমনা আলম
সেলফোন
সুলুক তালুক অঞ্জুমন
জালের গায়েও এক ফোঁটা লেগে আছে
তার ঢালে কেঁপে ওঠা
সামান্য ব্রেক, ব্রেক-থ্রু
ক্ষণ ও টানেল তারা সাপা টেপে
জুড়ানো লিরিক ভাঙে
ছোটভাই ভেঙে ফেলে
তারপর স্টোনচিপস ফ্লাই অ্যাশ
চৈত্রের ভারী চাকা
শব্দে দিগন্ত উড়ে গেল
ভিন্নমুখ
আকাশ যেসব ভর্তি করে দেয়
আকাশ ভরে
ভোরে কি ছড়ানো
ভোরে কি মোরগ
আমার উচ্চারণ থেকে আকাশ পড়ে যায়
ও বাড়ি বাসা থাকে
আর স্কুলবাস
আর ক্যাম্বিসের ক্যাচ
ঘাসে টমেটো সস
ঘাসে হলদি গুঁড়ো কালিমির্চ
ওয়াকে ওয়াকে এসে গানঘর
ওভেনের কুকারের
সামান্য নরম ভাজা শুকতারাটির
আড়ালের রক্ত
ছুপকে শোণিত
তুমি চেয়ে আছ
তুমি যে চেয়ে আছ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন