চারপেয়ে আর পৈতেধারী
বীজতলার চারপাশ ঘুরে –
নাঃ, ঠিকই আছে। কাল একবার গরম টাটকা জল বুলিয়ে দিতে হবে। তেজও ভালো নিয়েছে। মনে মনে বোরোচাষের হিসাব করতে লাগল হাবু মানে হাবু সরকার। বীজতলা থেকে আলুর জমি-যদি বৃষ্টি না হয় গাছ যা হয়েছে মনটা উফুল্ল হয়ে উঠল, সরষেটাও ঠিকই আছে। বছরটা মনে হচ্ছে ভালই যাবে,শুধু দামটা পেলেই বাঁচে। রোদটাউঠেছে, গোরুগুলো দোকায় বাঁধতে হবে। এখ্খুনি ঘোষ ব্যেটা আসবে, ঠান্ডায়দুধকম দেবে।রোজ সাড়ে চার কিলো দুধ বিক্রি করে হাবু, সলিড পয়সা। পয়সা দেখলে হবে, খাটনি কত!
খরচা নেই? পয়সাটাইসবাই দ্যাখে। কোন ভোরেউঠে গোয়াল থেকে গোরু বের করে চালার ডাবায় বেঁধেছে,
এতক্ষণে খাওয়া হয়ে গেছে, এবার রোদে গা গরম করে নিক।
ওয়ার সময় বাদল পশারীর দোকান হয়ে যেতে হবে, বাদলের ছেলে বলেছিল কুমড়োর বীজএনে দেবে,
শক্তিগড়ে ওর চেনা কার কাছ থেকে। কুমড়োর বাজারটা দুবছর ভালই যাচ্ছে। আগেকার লোকেরা বিশ্বাসই
করবে না, কুমড়ো! সে আবার ত্রিশটাকা কেজি! হাবু নিজের মনে হাসল। অঃ হ্যাঁ, একটু নলেন গুড়ও নিতে
হবে, ঠান্ডায় নলেন গুড়ের পায়েস – এই তো সময়। আগের দিন গুড়টা ভাল ছিল না।
সব সেরে হাবুর এক এক করে গোরুগুলো রোদে বাঁধা হল, আজ পায়েসের জন্যে এক কেজি দুধ বেশী রাখবে,
ঘোষটা আবার না খ্যেপে যায়, একটু কাঁই কাঁই করবে করুক। কালো গাইটার দুধটা পুরো নেবে, খুব মিষ্টি।
কালোগাইয়ের গায়ে হাবু হাত বোলাতে লাগল।
পুকুরে এক রাউন্ড সাঁতার দিয়ে হাঁসগুলো দল বেঁধে পাড়ে উঠে রোদে বসে আছে, গোটা কুড়িতো হবেই। তারমানে শীতকালে জলে ওরা পেটের তাগিদে নামে! হাবু মনে মনে ভাবল। এমন সময় দিন পাঁচেক একটা কুকুর ছানা টলমল করতে করতে হাঁসেদের ভীড়ে হাজির, কি চিৎকার! –
প্যাঁক প্যাঁক করতে করতে সব হাঁস নিরাপদ দুরত্বে সরে যাচ্ছে। হাবু ভাবে এটা কেমন হল! অতটুকু ছানা ঠিকমত হাঁটতে পর্যন্ত শেখে নি। চারপায়ে এত ভয়? হাঁসেদের মধ্যে তো জমিদার, বড়লোক, পার্টির নেতা, কুলীন এসব কিছুই নেই। তাহলে প্রজন্মের বিশ্বাস মজ্জায় ঢুকে গেছে! তাই হবে, হাবু যেমন পৈতে দেখলেই সাত খুন
মাপ,
হাজার হলেও বামুনের ছেলে বলে কথা।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন