• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

নিজন দে চৌধুরী

.....নিজন দে চৌধুরী..
                    (কাব্যগ্রন্থ-নিজের বৃষ্টিতে , জলছবি , হৃদঘটিত জার্নাল)                 
                                                                                                                                                                                                                                                                                          

পঞ্চাশের কবি নিজন দে চৌধুরী। তাঁকে এক কথায় নির্জনবাসী যেমন বলতে পারি তেমনি বাংলা কবিতার অন্যতম অবহেলিত বললেও অত্যুক্তি হয়না। আজকের বহু প্রতিষ্ঠিত কবিই হয়ত ব্যক্তিগত স্তরে একসময় তাঁকে চিনতেন, শুরুর দিনগুলিতে তাঁর মূল্যবান মতামতের অপেক্ষাও করতেন অথচ আজ তিনি নিজেই বাংলা কবিতার উল্লেখযোগ্য অনুল্লেখিত কবি। নিজন দে চৌধুরী জীবনের কবি, সৌন্দর্যের কবি, নীরব গভীর শান্ত প্রেমের প্রকৃতির কবি। কিন্তু তাঁর কবিতাযাপন শুরু হয়েছিল চল্লিশ পঞ্চাশের টালমাটাল বাস্তব ও বিপ্লবের দ্যোতনায়। ধীরে ধীরে সমকালীনতার গন্ডি অতিক্রম করে তাঁর সার্থক কবিতারা  সময়োত্তর এক নতুন মাত্রাচেতনায় পৌঁছে যায়। তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টির চরাচরে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে যায় জীবনানন্দে সেই কটি কথা- কবি সকলের কাছেই ঋণী- যে সময়ে সে বাস করছে , এবং যে সময়ে সে বাস করেনি, যে সমাজে সে কাল কাটাচ্ছে, এবং যেখানে কাটায়নি, যে ঐতিহ্যে সে আছে, এবং যেখানে সে নেই-সে সকলের কাছেই।

আত্মসমীক্ষনে কবি নিজন দে চৌধুরীও বলছেন তাঁর শুরুর সময় ধরা রয়েছে জীবনানন্দের ৪৬-৪৭ কবিতার ফ্রেমে। তাঁর নিজের কবিতা শুরুর দিনটিও যে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট। অনতিক্রান্ত কৈশোরের এক কবি যার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেশভাগ রক্ত আর দাঙ্গা , যার চারিদিকে বাংলার লক্ষ গ্রামরাত্রি নিভে গেছে সুকেশী অন্ধকারে, যার চারিদকে পৃথিবীর উপেক্ষিত জীবনগুলির বিষাদ আর আর্তি; তাই হয়ত  তাঁর কবিতা শুরুর দিনটিও হয়েছিল- ভারতমাতার মুক্ত বীনায় সঙ্গীত ওঠে বাজি/ ভারত স্বাধীন আজি র মত দেশজ প্রেমের সমাজমুখী ভাবনাতরঙ্গের দু লাইন দিয়ে।কিন্তু প্রকৃত কবি যে উর্ত্তীণ হবেন তার নিজেকেই, সৃষ্টি থেকে স্রষ্টাকে নতুন নতুন দূরত্ব দিতে পারবেন প্রতিমূর্হুতে আর এই আবেগ পেরিয়ে অন্তর্লোকে  যাত্রাই যে কবিতার শ্রেষ্ঠ অর্জিত সম্পদ তাই যেন তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন তাঁর কবিতায়। রাজনৈতিক বাতাবরনে গড়ে উঠেও নিজন দে চৌধূরীর কবিতাও তাই ধীরে ধীরে এড়িয়ে গেছে সক্রিয় সামাজিকতার মত কিছু স্থিরতা । হয়ে উঠেছেন জীবনসংযোগের কবি, ছিন্নমূল মানুষের ভীড়ে দাঁড়িয়েও স্মৃতি সত্তা আর কল্পনায় ভর করে সময় ও সাময়িকতার দাগ অতিক্রমী এক কবি। কথা প্রসঙ্গে কবি নিজেই বলতেন- খুব একটা আটপৌরে কৈশোর ছিলনা আমার। অপরিনত এই জীবন টেনে এনেছিল আমাকে বিপন্ন এক জীবিকা-যাপনে। সে জীবনে আমি ছিলাম একা এবং অসহায়। সংসার-বিদেশে বিদেশীর বেশে। সেইটিই ছিল আমার পৃথিবী দেখার মনুমেন্ট। চোখের সামনে ছিল চলমান জীবন,উচ্ছল ও ফেনময়। ঘোর লাগা সেই চোখে কখনো ছিল আকাশচারী মগ্নতা। কখনো কুটিল আবর্তের অতল পাতাল। সেইসব হারানো ছড়ানো স্মরনের সরণি বেয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত সব পংক্তি কেমন যেন ঘোর লাগাতো আমার মেধায় আর মননে। এসে যেতো এক আধতা পূর্ণাঙ্গ প্রয়াস। জমে উঠতো নেশাটা। আর তখনই আমি পৌঁছে যেতাম অন্য এক অলৌকিক জগতে। বাহ্য জগত মাটির পৃথিবী সব কিছুই আমার কাছে অবলুপ্ত হয়ে যেতো ।  আর তাই সমাজ মনস্কতার পাশাপাশি তাঁর কবিতার নির্যাসে ঝঙ্কৃত হয়েছে একধরনের লিরিকধর্মী রোমান্টিসিজম, যেখানে জীবনের বহুসত্তায় লীন হয়ে কবিতা ছুঁয়ে গেছে আবহমানের নিগূঢ় দর্শন। একদিকে যেমন দেশ বিভাগ ও উদ্বাস্তুদের শেকড়হীন জীবনের প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন চড়ুইচিন্তার মত কবিতা তেমনি অন্যদিকে জলছবি কবিতায় শব্দ দিয়ে তৈরী করেছেন অনন্য চিত্রকল্প। ছন্দের সাথে দৃশ্যকে মিলিয়ে মিশিয়ে ছবিই যেন হয়ে উঠেছে কবির কবিতা। কোনো ধরাবাঁধা বিষয় বা আঙ্গিক নয় বরং পঞ্চাশের কবিতার প্রেক্ষিতে দেখলে আমরা দেখি এক সমান্তরাল আত্মমগ্নতায় নিজস্ব বৃত্ত গড়ে তুলেছেন নিজন দে চৌধুরী।এ হয়ত নিজেকে ছুঁতে চাওয়ারই এক অসহায় প্রয়াস যা একজন স্রষ্ঠা তার সৃষ্টির সমস্ত জুড়ে কুড়োতে থাকে, হয়ত পায় না, হয়ত কেবল ছায়াটুকু পড়ে, হয়ত শব্দের কালশিটে থেকে রোজ রোজ তিনি মুছে দিতে থাকেন না-শব্দের ব্যথাটুকু। কিন্তু প্রতি মূর্হুতে স্রষ্ঠা যেন স্রষ্ঠার থেকে ক্রমাগত দূরে যেতে থাকেন হয়ত কথাগারের সেই দুর্লভ ছবিটি কোনোদিনও আঁকতে পারবেন বলে; আর এভাবেই হতে থাকে বাঁকবদল, কবিতার , বাকপ্রতিমার, ভাষা ও চেতনার। নিজন দে চৌধুরীর কবিতায় পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা এই ভাঙচুর এই আত্মবিরোধই লক্ষ্য করতে পারি।

প্রায় পাঁচ দশকের কবি নিজন দে চৌধুরী। অথচ জিজ্ঞেস করলেই বলেছেন কবি তাঁর জীবনকে যাপন করেন। তাঁর অস্তিত্ব যাপনের নির্যাসই তাঁর কবিতা। যুগ-মন্থনের সমস্ত সুধা গরল তিনি কন্ঠে ধারণ করেন। সবকালই তাঁর কাছে সমকাল। তিনি যুগের হুজুগে বাঁচা মরার পরোয়া করেন না- সত্যিই তো পাঁচ দশক পরেও আজ যখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে মর্মাহত কবির লিখে যাওয়া সেই কটা পংক্তির দিকে আমরা তাকাই- কথা ছিল, একা তুমি কখনো যাবে না,/আমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবে।/মিথ্যেবাদী, তবে কেন একা একা চন্দন-চিতার/আয়-আয় ডাকে সাড়া দিলে?-তখন মনে হয় এই তো কবি এই তো আমাদের অন্তরঙ্গতার মাঝে আমাদের জীবনমাপের মাঝে এঁটে রয়েছেন । তাঁর কবিতায় যে আত্মস্বাতন্ত্র্য তা কোনো বাইরের জিনিস নয় বরং জীবনচর্যার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর স্রোতগুলিকেই তিনি সাজিয়ে নিয়েছেন তাঁর কবিতার অনুভূতিদেশে। জীবনানন্দ দাশের সাথে দেশ পত্রিকায় একই সংখ্যায় যেমন তিনি লিখে গেছেন কবিতা তেমনি পঞ্চাশ দশক ধরে নিজেকে নিজের সৃষ্টিকে নতুনের সাথে নিরিবিল ভ্রমণ করিয়েছেন।

তাঁর স্মৃতিচারনে বাংলা সাহিত্যের এই শক্তিশালী অথচ অবেহেলিত কবি প্রসঙ্গে সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায় যখন বলেন –“ তাঁর প্রজন্মের বৃত্তে তিনি হয়ে রইলেন আউটসাইডার। কোন স্বজনভোলানো কুহেলিকায় আচ্ছন্ন হয়ে এমন একজন নিরীহ,উপযুক্ত,উপকারী বন্ধুকেও তাঁর প্রজন্মের কবিরা এভাবে ভুলে থাকতে পারলেন!-ঠিক তখনই মনে পড়ে যায় সৃষ্টির স্থায়িত্ব প্রসঙ্গে নিজন দে চৌধুরীর নিজস্ব সেই মন্তব্য- কবিতা লেখা সম্পর্কে ও সেই সৃষ্টির স্থায়িত্ব সম্পর্কে আমার সেই পুরোনো উপমা। কবিতা আমার হৃদয়ে অমোঘ অথচ অবিরল জলধারার মতো। তার তরঙ্গ-রঙ্গ কতো মূর্হুতে কতো বুদবুদ সৃষ্টি করে। রঙীন ও নিটোল। স্ফুট ও অস্ফুট ও অর্ধস্ফুট। পাঠকের অনুরাগের আলোকিরণ তার ওপর হয়ত বা সাত রঙা রামধনুও কখনো তৈরী করে। কিন্তু তা কতক্ষণের? নিরবধি কাল, বিপুলা পৃথ্বী। আমি কি বলব?-

আমরাই বা কি বলব? কবি আছে ! কবি নেই ! নাকি তাঁর কবিতারা কেবল এই মধ্যবর্তী শূন্যতারই একটি গল্প হয়ে উঠতে পারত !
                                                                                 
নান্দনিক

অযাচিত মুক্তি ছিলো আমার নিয়তি,আমি জানি
আশ্চর্য নির্মম ।
দু চোখে শ্রাবণ ঢেলে আজ হঠাৎ কেন মুছে দিলে
লিপিবদ্ধ ভ্রম ।

সমস্ত দুয়ার জুড়ে কেন আলুলায়িত অমায়
হঠাৎ দাঁড়ালে ?
খড় কুটোর শান্তি ছিলো যতটুকু,কেন তার দিকে
দু হাত বাড়ালে?

রহস্য ইজেলে তুমি এতকাল লগ্ন হয়ে ছিলে,
শান্ত মোনালিসা ।
অলক-লাবণ্যে হলে আজ হঠাৎ দূরন্ত ম্যাডোনা,
খুঁজে পাইনে দিশা ।

মুখের প্রচ্ছদে লেখা, রহস্য তোমার বর্ণমালা
হায়ারোগ্লোফিক ।
মুখোশে মুখশ্রী ঢাকো, অন্ধকারে অনন্য পরমা-
তবু নান্দনিক ।

কাগজের ফুল

সে নিজেই জানে যে সে কাগজের, তাই
তার ভোর প্রতিদিন মালিনী ছাড়াই ।
দিন তার বৃথা যায়, বৃথা রাত বাড়ে;
চোখের শিশির ঝরে অবুঝ ইথারে ।

রঙীন ভ্রমর কেউ, অথবা সে কোনো
বালিকা- বয়সী কীট ভুলেও কখনো
এখানে রাখেনা দাঁত।করুণ কাগজ
জানে না লোভের লালা, নখরের খোঁজ ।

ক্কচিৎ কাঁদাতে আসে সাবানের ফেলা।
ধুলো আর মলিনতা তবুও ঘোচেনা;
পাপড়ি ছড়িয়ে ফুল কেঁদে ওঠে, সেই
ম্লান হাহাকারটুকু বাজে বাতাসেই ।

কাগজের ফুল জানে, ভুল ভালবাসা।
তবুও কেন যে তার সুরভি- পিপাসা?                                               

অমূর্ত

জানি, সে বিখ্যাত শিল্পী। জানি তার স্বপ্নের ইজেলে
সে কত সুন্দর ছবি আঁকে; তার নিপুণ তুলিতে
বিচিত্র মূর্হুতে মূর্ত সে সৌন্দর্য, তাকে এঁকে নিতে
হীরক-সকাল কিম্বা সূর্য-ডোবা মায়াবী বিকেলে
সে হয়ত খুব ব্যস্ত । তাদের যথার্থ রূপায়ণ
রাখবেই প্রতিজ্ঞা যেন; এই রং তুলির ক্যানভাসে
তার মন সারাক্ষণ। তাই সে এ চিত্রল আকাশে
সর্বদাই খুলে রাখে দৃষ্টির দূরন্ত বাতায়ন।

তারপরে একদিন অকস্মাৎ বিহ্বল মলিন
হৃদয়ে সে শিল্পী ভাবে ঃ যে আশ্চর্য তুলির রেখায়
এ দীর্ঘদিনের শেষ,মৃত্যুময় এ রিক্ত সন্ধ্যার
অন্ধকার রেখায়িত দেবদারু দিগন্তের গায়,
তারই পরে বিশ্বাসের অপরূপ নক্ষত্র ওঠার
এ দুর্লভ ছবিটি সে ঠিক আঁকতে পারে কোনোদিন?

চড়ুইচিন্তা

রোজই দেখি, আমার ঘরের পাশে
কেমন করে ঘুরে বেড়ায় এক-বুক বিশ্বাসে
দুটো তিনটে পাঁচটা দশটা চড়ুই ।
কেমন যে নির্ভয়ে, কেমন নির্ভাবনায় আসে
এই উঠোনে ঘুরে বেড়ায় এক-বুক বিশ্বাসে
দুটো তিনটে পাঁচটা দশটা চড়ুই ।

হায়রে চড়ুই । কেবল হাহাকার ।
হায়রে চড়ুই, চারদিকে সব অভাবী সংসার ,
খুঁটে খাবার খুদ কুড়ো কি রুটির টুকরো আর
তাও মেলে না, এমন হাহাকার
আহা, চড়ুই উড়ে বেড়ায়,ঘুরে বেড়ায়, তার
চারদিকে সব বাড়ন্ত সংসার ।

ফাঁকা উঠোন। শূন্য ধানের গোলা।মরাই খালি,
ক্ষেতখামারে মা লক্ষীর শূন্য বরণ ডালি।
নটে গাছটা মুড়িয়ে গেছে কবে ।
দুঃখী মায়ের থান কাপড়ে রোদ্দুর ধবধবে,
ফাঁকা উঠোন। শূন্য ধানের গোলা। মরাই খালি ।
তুলসী তলায় মাথুর গায়ে বলাই-বনমালী ।

তবুও আজো আমার ঘরের পাশে
কেমন করে ঘুরে বেড়ায় এক-বুক বিশ্বাসে
দুটো তিনটে পাঁচটা দশটা চড়ুই ।
কেমন যে নির্ভয়ে, কেমন নির্ভাবনায় আসে
এই উঠোনে ঘুরে বেড়ায় এক-বুক বিশ্বাসে
দুটো তিনটে পাঁচটা দশটা চড়ুই ।


বিমর্ষ গাছপালা

না হয় তুই শালপ্রাংশু, নেহাৎই তাই বলে
শাখার থেকে শিকড়
এমনি করে ছড়িয়ে যাবি সারা বনস্থলী?
ভীষণ আপত্তিকর

এই বলে সব একগুঁয়ে আর বিমর্ষ গাছপালা
দারুণ ভাবে দল বাঁধল দুর্বোধ জংগলে।
ঠিক বলেছ,ঠিক
বলল হাওয়া, হাওয়া তো নয়,ক্রুদ্ধ কাপালিক ।

বিমর্ষ গাছপালারা সব দল বেঁধেছে, তার
তুলে ফেলবে মূল।
মাটির থেকে হাসিল হবে অরণ্য, তাই আজ
বাঁধবে হুলুস্তুল

শুনে অবাক মুচকি হাসে প্রসন্ন দেবদারু,
জংগলেরা দুলে উঠল দূরন্ত সজারু।
সাক্ষী মহাকাল-
বিমর্ষ গাছপালারা হয় চকিতে চন্ডাল।

খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে খুঁড়তে একদিক শেষকালে
আত্মঘাতী পামর
জংগলেরা ক্লান্ত, শালপ্রাংশু তাদের ঘুমে
দোলালো তার চামর ।


মৃতদেহ

লোকে বলে
ছুঁয়ে থাকতে হয় ।

নিরগ্নি শ্মশানে একা
রেখে দিতে নেই ।

আমি তাই
ছুঁয়ে বসে আছি ।


গ্রহণ

কে নেবে সর্বস্ব তোর?
আগ্রাসী আগুন ।
কী পড়ে থাকবে শেষে?
ছাই ।
তবু যদি কিছু বাকি থাকে?
জলধারা নেবে ।
তারপর?
পরমা গতির শূন্যে সারা হবে সব গ্রহিষ্ণুতা।

এই দিন রাত্রি

এই দিন রাত্রি তার স্মরনের মধুর ঝংকারে
মুখরিত সারাক্ষণ। নির্বিকার বিবাগী হাওয়ায়
জাগে শুনি অপরূপ জীবনের অশ্রুত কামনা ,
প্রতিটি নিঃশ্বাসে অন্তহীন স্বপ্নের সুরভি ।

আলো হাতে অন্ধকারে, বেদনার দীর্ঘ মরুপথে
সর্বদা আহ্বান তার, বিদীর্ণ রৌদ্রের মরীচিকা
সুতীব্র কটাক্ষে হানে নিরন্তর- তবু আমি জানি,
সে আমার মৃত্যু লগ্নে সুদুর্মর প্রাণের পিপাসা।

জলছবি

কিছুই থাকে না, শুধু স্মৃতি থাকে ধ্বংস ও আঁধারে
এয়োতী বলয়, শঙ্খ-কংকণের অলক্তক স্মৃতি,
বুকের ছলাৎ শব্দে সিঁন্দুর-মোছানো জলধারা
তরংগে তরংগে শুধু লিখে রাখে ভুল সপ্তপদী

কিছুই থাকে না, এই অশথের প্রাজ্ঞ পদমূলে
মংগল সূত্রের গ্রন্থি ছিঁড়ে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়,
পড়ে থাকে শুধু শঙ্খ-কংকণের অলক্তক স্মৃতি,
সীমন্তিনী দিন যায়, জল-ছবি ধরে রাখে ঘটে।

লেখার টেবিল

বড়ো কষ্ট লাগে। আহা! আমি কিছু ফেলতে পারি না।
পুঞ্জীভূত স্তুপাকারে আবর্জনা লেখার টেবিলে
বেড়ে ওঠে। আহা, থাক;
                          ওরা তো তেমন তুচ্ছ নয়।
যাকে তুমি তুচ্ছ বলো, লুকোনো লাবণ্যটুকু তার
তুমিতো জানোনা।
তুমি মমতা-রহিত ঋজু ঠামে
লেখার টেবিল শুধু সাফ সুতরো করো সুনসান ।
কুটিল ফুল্লতাটুকু চিবুকে তোমার
তুলে ধরো ।
যতো অকিঞ্চিৎকর, যতো তুচ্ছ
হোক, তবু জেনো
যাকে রাখো, সেই রাখে- এ সত্য
প্রবাদে লেখা আছে ।
আহা! থাক, ওরা থাক, সব থাক-
কিছুই ফেলোনা ।






My Blogger Tricks

২টি মন্তব্য: