• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

অনিমিখ চক্রবর্তীর কল্পনাশক্তি ( পর্ব-৬)

অনিমিখ চক্রবর্তীর কল্পনাশক্তি : একটি পুনরাধুনিক উপন্যাস

অ নু প ম  মু খো পা ধ্যা য়

পরের দিন সকালে উঠে অনিমিখ টের পেল নিজের কল্পনাশক্তির থেকে এতখানি পিছিয়ে পড়া নিয়ে আর তার তেমন কোনো অস্থিরতা নেই তার বদলে রয়েছে একটা গ্লানির ভাব। শরীর অবসন্ন হয়ে আছে এখনও। মুখ টক হয়ে আছে। গতকাল সে যা করেছে, তারপরেও অন্বেষা তাকে ক্ষমা করতে সময় নেয়নি তাকে অভুক্ত অবস্থায় ছাড়তে চায়নিসে নিরাপদে বাড়ি ফিরল কিনা, খবর নিয়েছে অন্বেষা নিজেও ওটাই চাইছিল, সেটা ভাবতে ভাল লাগছে না তার সেটা হলে তার নিজের অপমান কোনো মেয়ে তাকে যৌনসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে নিয়েছে, করতে চাইছে, এটা ভাবা সম্ভব নয় তার পক্ষে সে নিজেও একটি মেয়ের প্রতি ওই মানসিকতা রাখতে চায় না জীবনে কোনো একতরফা পর্নোগ্রাফি অনিমিখ পছন্দ করেনি হিন্দি সিনেমায় ধর্ষণের দৃশ্যে চিরকাল অস্বস্তি বোধ করেছে, নায়ক দরজা ভেঙে ঢুকে এলে উল্লসিত হয়েছে
তবু ওটা ঘটল!
যা ঘটেছে, একটি মেয়েকে ঘরে একলা পেয়ে সে যা করেছে, নিজের কল্পনাকে অনিমিখ আর দেখতেই পাচ্ছে না আশেপাশে ওই দৌড় প্রতিযোগিতা নিয়ে সে আর ভাবছে না, ভাবতে পারছে নাকল্পনার কাছে হেরে গেলে সেই বিস্ময়ে বা বিষাদে সম্ভবত কবিতার জন্ম হয়, সে ভেবেছিলকিন্তু এমন বিশ্রীভাবে হারলে সেটা হয় কি! নিজেকে এত কম চিনলে কবিতা লেখার অধিকারটাই তো থাকে না!
এরপরে অন্বেষা তাকে জীবন থেকে মুছে ফেলবে, একজন ধর্ষক হিসেবে দেখবে তাকে, সেটা সম্ভবত নয় তবে সে যেটা করে এসেছে, আয়নায় নিজের চোখের দিকেই তাকানো মুশকিল হয়ে গেছে অন্বেষার মোচন অবধি তবুও ঠিক ছিল, কিন্তু তারপরের জান্তব আচরণটা সম্ভবত এর পরে মেয়েটির কাছে অনিমিখ আগের মর্যাদায় থাকতে পারে না এখন একটি মেয়ের পক্ষে তাকে করুণা করাই স্বাভাবিক একমাত্র করুণা মেশানো শারীরিক কামনাই সে আশা করতে পারে ওর কাছে, একজন হ্যাংলা কামুক হিসেবেপাপ শব্দটার গরিমা ওই আচরণে নেইনিজের চোখে অনিমিখ এখন একটা ফালতু লোক ছাড়া কিছুই নয়
জ্যোতির্ময়বাবু ঠিক বলেননি। একটা স্তর পেরিয়ে গেলে কাম মানুষকে আর সুন্দর থাকতে দেয় নাহিংসার আরেক নাম হয়ে ওঠে। উনি সেই স্তরের দেখা পাননি। দুর্ভাগ্যক্রমে, অনিমিখ পেয়েছে।
এতগুলো বছর প্রতিদিন নিজের বৌয়ের দেহের আনাচে-কানাচে ঘোরার সুযোগ পেয়েও আরেকটি মেয়ের দেহকে সে ব্যবহার করতেই শিখল না! তাকে অসুস্থ করে ফেলল! ওটাকে তো একরকম ধর্ষণই বলা চলে!
কিন্তু অন্বেষার শরীর কি খুবই খারাপ হল! কোনো খবর নেই কেন?
অনিমিখ নিজের উদ্বেগ বুঝতে চাইল কিছুটা হলেও উদ্বিগ্নতা তার মধ্যে জেগে আছে মেয়েটির জন্য
কিন্তু ফোন করা চলবে না
স্কুল চলাকালীন একটা মেসেজ অবিশ্যি এল aaj shorir vaalo aachhe aamaar. chintaa koro naa. phone baa message koro naa. o baari-te aachhe. sujog pele aami jogaajog korbo.

তারপর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেল, সেই সুযোগ এল না এর মধ্যে অনিমিখ স্কুলে তো বটেই, নিজের বাড়িতেও একজন রহস্যময় মানুষ হয়ে উঠল রিয়ার সঙ্গেও প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা নেই মেয়েকে কোলে বসিয়েও তার সঙ্গে খেলতে ভুলে যাচ্ছে জ্যোতির্ময়বাবুর বাড়িতে একবারও যায়নি উনি এলেও খুব উৎসাহ দেখায়নি আড্ডার
কবিতা কি তার থেকে চিরবিদায় নিয়েছে? গত একমাসে সে একটা কবিতাও লেখেনি এখন সম্পাদকদের ফোন এলেও ধরে না মেসেজের উত্তর দেয় না ফেসবুকেও একই অবস্থা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার উপর একটা গদ্য সে শুরু করেছিল, সুন্দর এগোচ্ছিল, কিন্তু জমা দেওয়ার তারিখ পেরিয়ে গেল অথচ ওই গদ্যটা নিজেই সে লিখতে চেয়েছিল, ওটা লেখা জরুরি ছিল
কী হল তার? সে কি প্রেমে পড়ল নাকি! সে কি দেবদাস হয়ে গেল? ওই লোকটাকেও শরৎবাবু লড়িয়ে দিয়েছিলেন তার নিজের কল্পনাশক্তির সঙ্গে পার্বতী যে রাতে তার ঘরে আসবে এটা দেবদাস মুখুজ্জে ভাবতে পারেনি তারপরে নিজের আচরণের উপরে তার আর কোনো হাত ছিল না কিন্তু ২০১৪ সালে কোনো দেবদাসকে কি মানায়? এখন প্রেমের উপন্যাসগুলো হাস্যকর হয়ে উঠছে, প্রেমের সিনেমাগুলো একের পর এক ফ্লপ করছে! একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে এই প্রশ্ন তার নিজের মনেই জেগে ওঠায় হাসি পেল, নিজের মনেই হাসল আবু সয়ীদ আইয়ুব মোক্ষম অনুবাদ করেছিলেন মির্জা গালিবের লাইন দুটো
                        প্রেমের কৃচ্ছ্রসাধকদের খবর আর কী শুনবে
                        তারা ক্রমশ আপাদমস্তক দুঃখের মূর্তি হয়ে গেল।।

পিপাসা বাড়ছে সে নিজেই ইচ্ছে করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বাড়িয়ে তুলছে ইচ্ছে করেই বুক ফাটিয়ে ফেলছে অন্বেষার জন্য একটা মেসেজ কি ও করতে পারছে না!
দুঃখের একটা মূর্তি স্কুলে ভূগোল পড়াচ্ছে, বাড়ি ফিরছে, বাজার করছে, খাওয়াদাওয়া সেরে বৌকে আদর না করেই ঘুমিয়ে পড়ছে তাহলে সে দুঃখের কবিতা লিখছে কখন?
কেন, পরের দিন! হা হা হা হা

সাতদিন পরে ভোরবেলায় মেসেজ এল ঠিক সকাল সাড়ে এগারোটায় অনিমিখকে পোড়া কোল্ড স্টোরের সামনে বাইক নিয়ে পৌঁছতে হবে এক মিনিট এদিক-ওদিক হওয়া চলবে নাআশ্চর্য আস্থা তো মেয়েটার! সে যে যাবেই, এটা জানে, জানে নড়চড় হবে না! অথচ সাতদিন কথা হয়নি!
মাস্টারমশাইদের ছুটিছাটার ব্যাপারটা সহকারী প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জনবাবুই সামলানঅনিমিখ ওঁকে ফোন করলউনি আঁতকে উঠলেন, আজ ছুটি নেবেন! সেকি, গতকাল সেটা জানাননি কেন?
একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে স্যার
এভাবে হয় নাকি! তাছাড়া আরেকজন ভূগোলের স্যারও আজ আসছেন নাস্কুল চালাব কী করে?
অনিমিখের একটু মাথা গরম হলএটার মানে এই ভদ্রলোক ধরে রেখেছেন তার নিজের এবং সেই অন্য স্যারের কয়েকটি মিলিয়ে তাকে আজ আটটার মধ্যে আটটা ক্লাসই করাবেনএটা এর আগেও হয়েছেসে বলল, কিন্তু আমারও তো কাজ থাকতে পারে! আমারও তো ছুটি পাওনা আছে!
সে তো আছেই স্যার! সেই ছুটি পেরিয়ে গেলে অন্য ছুটিও আছেকিন্তু সমস্যাটা কী জানেন, আমরা আমাদের পেশাটাকে চাকরি ভেবে নিচ্ছিএটা কিন্তু নিছক চাকরি নয়! এটা একটা সেবার কাজকিন্তু সে আর কে ভাবে বলুন? মাস্টারমশাইরা মাসের শেষের বেতনটার জন্যই স্কুলে আসেন, ডাক্তারবাবুরা ওষুধের নাম লেখার আগেই ভিজিটের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন সব ব্রতই আজ চাকরি হয়ে গেছে এই বেতন আর ছুটির ছকেঠিক আছে স্যার, আপনি আপনার কাজ সেরে আগামীকালই আসুনস্কুল চালিয়ে নিতে হবে যে করেই হোক
ফোন কেটে গেলঅনিমিখ অপ্রতিভ হয়ে রইল কিছুক্ষণএই কথাগুলো নিরঞ্জনবাবু বলতে পারেনউনি সকলের আগে স্কুলে আসেনস্কুল শেষ হওয়ার অনেক পরে বাড়ি ফেরেন, এমনকি একেকদিন রাত্তির হয়ে যায়স্কুলটির গড়ে ওঠার পেছনে নিরঞ্জনবাবুর বিরাট ভূমিকা আছেসত্যিই ভালোবাসেন প্রতিষ্ঠানটিকেঅন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিলেন, ছেড়ে যাননি
সে যে মাস্টার হয়েও মাস্টার নয়, এমন একটা বিশ্বাস অনিমিখের আছেইসেই বিশ্বাসের একদম দুর্বলতম স্থানটিতে আঘাত করলেন আজ নিরঞ্জন মাহাতোরোমাঞ্চকর সকালটা তেতো হয়ে গেলচাকরি ছাড়ার একটা সুযোগ কি এর বদলে উনি দিতে পারেন তাকে? পারেন নাএকজন অসামাজিক মানুষের কিছু কি বলার থাকতে নেই? একটা টিউমারেরও কিছু ব্যথা থাকে, আত্মকাহিনি থাকে, টিউমার কাউকে সেটা শোনাতে পারে না, সবাই শুধু তার বিরুদ্ধে নালিশটাই করে, কেটে বাদ দিতে চায়, বা বাধ্য হয়ে মেনে নেয় তাকে নিজের শরীরেঅনিমিখ যে একজন শিক্ষকের যোগ্য করে তুলতে পারেনি নিজের স্বভাবকে, কি তার অপরাধ, না অপারঙ্গমতা? সে চেয়েছে কিনা, এই প্রশ্নও হয়তো কেউ করতে পারে নাতাকে চাকরি ছাড়ার পরামর্শটা অবিশ্যি দিতে পারে, কিন্তু খাবে কী? তারপর সে খাবে কী? জীবনানন্দ দাশ হয়ে যাবে নাকি? কারুবাসনা তাকে অতখানি নষ্ট করতে পারেনি মনে হয়এখন তো ছেড়েই গেছে

বাড়িতে সে জানাল না আজ স্কুলের বদলে অন্য কোথাও যাচ্ছেশুধু জানাল সে আজ খাবে নাকাজ আছেরিয়া কোনো প্রশ্ন করেনিগত কয়েকদিন খুব অল্পই কথা হয়েছে দুজনের মধ্যেরিয়া কি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে? তার কি একটু সতর্ক হওয়া উচিত সম্পর্কটি নিয়ে? চাকরির মতোই কি সে দাম্পত্যেও ব্যর্থ? দাম্পত্যের মতো তাহলে হয়তো লাম্পট্যেও একজন সফল মানুষ হতে পারবে না! অথচ অনেকেই তো পেরেছে, বাইরে গোপন মেয়েমানুষ রেখে বৌকে অগাধ সুখে ভাসিয়ে রাখতে! ঊনবিংশ শতাব্দীর বনেদি বাড়ির কোনো পুরুষের মতো সে কি পারে না? অন্বেষার জন্য তো তার কোনো খর্চাও হবে না। এমন গার্লফ্রেন্ড কটা বিবাহিত লোক পায়!

আজ কনকনে শীতবাইক চালাতে চালাতে কাঁপছিল অনিমিখউইন্ডচিটার, দস্তানা, বডিওয়ার্মার, মোজা সব কিছু পেরিয়ে শরীরে ঢুকে পড়ছে রাঢ়ভূমির নির্মম শীতঅন্বেষা তাকে বাড়িতে না ডেকে বাইরে ডাকল কেন?
হয়তো চায় না পাড়ার লোক তার আসা-যাওয়া খেয়াল করুক! হয়তো আজ অয়ন বাড়িতেই আছে, তবু অন্বেষা বেরোবে!
ঠিক এগারোটার সময়েই সে হাজির হল পোড়া কোল্ড স্টোরের সামনে, এবং বাসন্তী চুড়িদার ও কাশ্মিরী শাল পরিহিতা অন্বেষাকে তুলে নিল বাইকেকেউ খেয়াল করল না, পৃথিবীর শীত কমে গেল
অন্বেষা বলল, জোরে চালাওএই এলাকাটা পেরিয়ে যাও তাড়াতাড়িতবে সাবধানে চালাওআমাকে নিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট কোরো না
কিন্তু যাবে কোথায়?
যেখানে হোক চলো
কোনো লজে যাবে কি? এটাই অনিমিখ ভেবে এসেছেআর কোথায় যাওয়ার থাকতে পারে আজ, সেই ঘটনার পর? অনেকখানি শূন্যস্থান আজ ভরিয়ে ফেলা দরকার, একজোড়া মেয়েপুরুষ সেটা না ভরিয়ে যাবে কোথায় আজ?
একটু ভেবে অন্বেষা রুদ্ধ গলায় বলল, তাই চলোইশ!
কী হল?
ভাবতেই লজ্জা করছে!
বাইক ছুটে চলল প্রায় আশি কিলোমিটার বেগেএত জোরে অনিমিখ জীবনে বাইক চালায়নিএখান থেকে চল্লিশ-বেয়াল্লিশ কিলোমিটার দূরে একটা লজ আছেএই অঞ্চলে কুখ্যাত লজসেখানেই যেতে চায় সেঅনেকদিন ভেবেছে একবার ওই লজে ঢুকবে, কোনো মেয়েকে না নিয়ে হোক, একলাই একটা ঘর নিয়ে একটা রাত কাটাবে, দেখবে ওখানে কেমন চলে মানুষের সঙ্গে মানুষের কারবারসাহস হয়নিকতকিছুই তো করেনি জীবনে শুধু সাহসের অভাবে! সাহস এই শব্দটা তাকে জীবনে এই প্রথম কিছু দিতে চাইছে, তাকে নিজের সীমা ভাঙতে উসকানি দিচ্ছে
হে সাহস, তুমি কি ভারতীয় দন্ডবিধির সবগুলো ধারা জানো?
হেডমাস্টারের ম্যানুয়ালে কতগুলো পাতা আছে তুমি জানো?

লজের সামনে বাইক রেখে অন্বেষাকে সঙ্গে নিয়েই ঢুকল লজের মধ্যেএখানে কেউ তাদের চিনবে এমন সুযোগ নেইতবু অন্বেষা মুখ ঢেকেছে শালেএকটা অসুস্থ গন্ধ ছড়িয়ে আছে ভিতরেদেওয়ালে বিশ্রী সবুজ রঙম্যানেজার গোছের একজন লোক কাউন্টারে বসে আছে, আর এক ছোকরা কর্মচারীতাদের পিছনে একটা বেমানান পাহাড় আর ঝরনার ছবি তার পাশে সম্ভবত মালিকের গুরুদেবের একটি ফোটোগ্রাফ ঝুলছে।
অনিমিখ গলার উত্তেজনা কমিয়ে জিজ্ঞাসা করল,একটা ঘর হবে?
ম্যানেজার খুবই উদাসীন গলায় বলল, হবেকতদিনের জন্য?
ছোকরা যে এই কথায় মুখ ফিরিয়ে হাসল, তার দিকে না তাকিয়েই অনিমিখ বুঝতে পারলপরোয়া না করে বলল, আজ বিকেল অবধি থাকবএকটা আত্মীয়বাড়িতে এসেছিলাম দেখলাম ওরা বাড়িতে নেই জানিয়েছে বিকেলে ফিরবেওরা ফোন করলেই ঘর ছেড়ে দেবো ইনি আমার স্ত্রী।
ঠান্ডা ভদ্র এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ গলায় ম্যানেজার, কিংবা সে- হয়তো মালিক, জানাল, ঘন্টা পিছু আমরা হাজার টাকা নিই স্যারসে এবার আপনি যতক্ষণ খুশি থাকতে পারেননাহলে যেমন নিয়ম, সারাদিনের ভাড়া চারশো টাকাকিন্তু সেটার জন্য আপনাকে আপনার ভোটের কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনো পরিচয়পত্র আমাদের কাছে জমা রাখতে হবেঘর ছাড়ার পরেই ফেরৎ পেয়ে যাবেন
আর ওগুলো আপাতত সঙ্গে না থাকলে?
ঘন্টা পিছু হাজারকিছু করার নেই স্যারআমাদেরও তো রিস্ক সামলাতে হয়! পুলিশ আজকাল খুব ট্রাবল দিচ্ছেএসব ধান্দা আর ভালো লাগে না
শেষ অবধি আটশোয় রাজি হয়ে গেলছোকরা তাদের পথ দেখিয়ে দোতলায় নিয়ে এলএকটা ময়লা সবুজ রঙের দরজার সস্তা তালা খুলে দিলচলে গেল

ঘরের ভিতরে ঢুকতেই সেই অসুস্থ এঁদো গন্ধটা ঝাঁপিয়ে পড়ল একটা মোটে জানলা। সেটা আদৌ খোলা হয় বলে মনে হয় না। একটা খাটতাতে ময়লাটে বিছানাএরা কি বিছানার চাদর বদলায় আদৌ? একটা প্লাস্টিকের চেয়ার ছাড়া ঘরে আর অন্য সামগ্রী বলতে একটা মাঝারি মাপের কমদামি আয়না অন্বেষার দিকে না তাকিয়ে অনিমিখ দরজা বন্ধ করল প্রায় সব জামাকাপড় খুলল। বাথরুমে গেলসেখানকার অবস্থাও খুব সুবিধের নয়অবিশ্যি একটা শাওয়ার আছে
বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখল মেয়েটা বন্ধ দরজার পাশে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেমুখ নত
জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠল, না না ফিরে চলো! এখানে আমার ভালো লাগছে না!
এটা না বললে অনিমিখ শুরু করতে পারত না। অনিমিখ কান দিল নাএকটি শব্দও বলল না উত্তরেশুধু অন্বেষার কাঁধ থেকে দামি ব্যাগটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলতারপর মহার্ঘ্য শালটা, ধুলোর কথা না ভেবেইঅনেকক্ষণ চুমু খেল মুখে মুখ ডুবিয়েঅন্বেষার মুখে সম্ভবত আলুপোস্তর মিষ্টি গন্ধ পেল মাছের ঝোলের তীক্ষ্ণ গন্ধ পেল
এখন শুধু একবার পাপের দেখা পেলে হয় একটা হেস্তনেস্ত করা যায়। পাপের সঙ্গে একটা রেস যদি করা যায়!
অন্বেষার সর্বাঙ্গে সে সেই সুযোগ খুঁজল
সেক্স হল প্রায় একঘন্টার উপরঅন্বেষার মধ্যে যে এতখানি চাহিদা আছে, এতরকমভাবে সে আনন্দ চাইতে পারে, যন্ত্রণা চাইতে পারে, অনিমিখ ভাবতে পারেনিএকটি বিবাহিতা স্কুলশিক্ষিকা যে এতদূর যেতে পারে একজন পরপুরুষের সঙ্গে এরকম একটা জঘন্য জায়গায়, অনিমিখ ভাবতেই পারেনি
অবিশ্যি নিজের কল্পনার সঙ্গে দৌড়নো সে বন্ধ করে দিয়েছে
শেষে শিথিল কিন্তু জোরালো গলায় অন্বেষা বলল, ভিতরে নয়! প্লিজ...
উন্মত্ত অবস্থাতেও অনিমিখ নিজেকে সামলে নিয়ে সেই অনুরোধ রাখতে পারল।
জীবনে এই প্রথম, স্খলনের পরে তার বিরক্তির বদলে হেসে উঠতে ইচ্ছে হল
অন্বেষা তার মুখের দিকে তাকাল না মাতালের মতো উঠে গায়ে কিছু না জড়িয়েই বাথরুমে ঢুকে গেলজলের আওয়াজ আসতে শুরু করল স্নান করছে
আগের দিনের গ্লানি অনিমিখের মনে আর লেগে নেইএই দীর্ঘ সঙ্গম সেটাকে মুছে দিয়েছেসেদিন কেন সে ওটা করেছিল? আরেকটু হলে সারাজীবনের মতো নিজের কাছে বেঁটে হয়ে যেতে হতসারাজীবন ভাবতে হত সে কাউকে সত্যিই ধর্ষণ করেছে কিনাপ্রতিবারই উত্তত হত না, তারপর আবার প্রশ্নটা ফিরে আসতআজকের দিনটায় এই অশ্লীল একটা লজে তার বিষক্ষয় হয়েছে, হয়তো আরো বেশি গ্লানির মূল্যেইতবু, নিজের অহংকার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে অন্য লোকের বৌটা
আগের দিন এই সুযোগই অনিমিখ হারিয়েছিল
পাপ কি হল?
কে জানে?
শুধু এটুকুই যে, এই কয়েকটা দিন সে কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারেনিস্কুলের ছাত্রীদের দিকেও নারিয়ার সঙ্গে চোখ মিললেই যেন শরীরে চাবুকের ঘা পড়েছে! আজও সে রিয়ার চোখের দিকে তাকাতে পারবে নাকিন্তু অভিনয়টা করতে পারবে, যে অভিনয় কিছু পুরুষ করেই থাকে মেয়েদের সঙ্গে

যে অভিনয়টা আজ রাতে অন্বেষা করবে অয়নের সঙ্গে, সেটাও খুব কি আলাদা?

এতক্ষণ ধরে স্নান করছে মেয়েটা!
ওর গরম জলের অভ্যাসএকটা অসুখ বাধাবে শেষে
অনিমিখ উঠে গেল বাথরুমের দরজায়, এখন তো সে যেকোনো অবস্থাতেই মেয়েটিকে দেখতে পারে, অন্তত এই ঘরে যতক্ষণ আছে
শাওয়ার থেকে জল ঝরছেঅন্বেষা খালি গায়ে শুকনো শরীরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদছে
অঝোরে
অনিমিখ বাধা দিল নাচুপচাপ লন্ডভন্ড বিছানাটাতে ফিরে এলবসে রইল
হঠাৎ টের পেল তার আবার খুব শীত করছেএই বিছানায় কোনো কম্বল বা চাদর রাখা নেই

এই লজে যারা আসে তারা কি শীতকালকে বাইরে রেখে ঢোকে, আর শীতকে সঙ্গে নিয়ে বেরোয়?   


(


My Blogger Tricks

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন