রঞ্জিত হসকোটে :
সত্ত্বার
খণ্ডবৈচিত্র,অস্তিত্বের অপরূপ বিস্তৃতি নিয়ে এক আশ্চর্য ভ্রমণরেখার সন্ধান দেন
রঞ্জিত হসকোটে ।দেশান্তরী মানুষ, ছিন্নমূল দোভাষী, ব্যর্থ হিপনোটিস্ট,অন্ধ
প্রেমিকরা তাদের ভঙ্গুর অস্তিত্ব নিয়ে উঠে আসে তাঁর কবিতায়। বারবার পাল্টে যায়
অনন্ত জীবন আর ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিভাজনরেখাটি । ১৯৬৯ সালে মুম্বাই-এ জন্মগ্রহণ
করেন রঞ্জিত হসকোটে। প্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষাজীবন মুম্বাইতে।‘জোনস অফ অ্যাসল্ট’,‘দা
কার্টোগ্রাফারস অ্যাপ্রেন্টিস’,‘দা স্লিপওয়াকারস আরকাইভ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য
কাব্যগ্রন্থ। ১৪ শতকের কাশ্মিরি কবি লাল দেদের কবিতার ইংরাজি অনুবাদ করেছেন তিনি।‘ভ্যানিশিং
অ্যাক্ট’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য ২০০৪ সালে
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
রঞ্জিত হসকোটের কবিতা
সোনালী অরিওল
সূর্যাস্তের আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল জানালা
কিন্তু মেয়েটি কোন কিছুই দেখছিল না,
খাটের ওপর ভেসে বেড়াচ্ছিল শুধু
আর একজন হিপনোটিস্ট দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ওর স্বপ্নগুলো ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল
রাতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কাঁপছিল মেয়েটিঃ
ওর চোখের পাতাগুলো কি পুড়ে যাবে? দৃশ্যগুলো মুছে যাবে?
একজোড়া সোনালী অরিওলের মত ওর চোখদুটোও কি উড়ে যাবে?
শেষ পর্যন্ত ঐ হিপনোটিস্টও ঘুমিয়ে পড়ল
ভেসে বেড়াচ্ছিল মেয়েটি, ঐ ছোট ঘরটা আটকাতে পারল না ওকে
মেয়েটি স্বপ্ন দেখল,হাওয়ার ভেতর, নগ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে সে
এমনকি ঐ পোশাকটা, যেটা ও নিজে,সেটাও বাঁধা দিচ্ছে না ওকে।
গম্বুজ
যে ক্যালেন্ডারটিকে বিশ্বাস করা হয়
তার তারিখগুলো কখনও পাল্টায় না।
কিন্তু রোদ আর হাওয়া মাঝে মাঝে
অতীতকে নিয়ে ইয়ার্কি মারে
শান্তির সময়, শব্দরা আইসোটোপের মত
টুকরো হয়ে যেতে থাকে
ফাঁকা উঠোন, খালি দোনলা,
তছনছ হয়ে যাওয়া বাগান আর ভাঙ্গা ছাদের ভেতর
শুধু একটি পাগল, শুকনো ফুলের মালা গলায় ঝুলিয়ে
এইসব দৃশ্যের ভেতর ঢুকে পড়ে।
আর একজন অন্ধ ভিখিরি, যে সবকিছু ভুলে যায়
তার খুলির ভেতর একটি মাকড়সা হেঁটে বেড়াতে থাকে
এক মুহূর্তের জন্য আলাদা হয়ে যায় দুটি প্রতিধ্বনি,
অতীত আর ফিরে আসতে পারে না।
একটি রুখ পাখির ডিমের মত নীল রঙের শিরা,
হাওয়ার ভেতর গম্বুজটি জেগে থাকে
স্বীকার করো,
নিজের পরিচয়ের জন্য কোন অপরাধ থাকে না
অপেক্ষা করো, যতক্ষণ না গিলোটিন নেমে আসছে
ফাঁকা হৃদয় আর দীর্ঘ দীর্ঘ স্তব্ধতার ওপর!
মৃত্যু
স্তব্ধতা খুব সরল হতে পারে, যেমন একটি ছোট জাহাজ
কোন সাইরেন না বাজিয়েই জেটি থেকে উধাও হয়ে যায়
স্তব্ধতা ঐ থালাটির মত
যার গা থেকে ব্যকরণের দাগগুলি তুলে ফেলতে হয় না।
স্তব্ধতা আগুন,
মুক্তি সম্ভাবনাহীন একটি চরম শাস্তির নাম।
স্তব্ধতা আসলে একটি চিতাবাঘ
সবুজ চোখে যে শুধু আমাদের ওপর নজর রাখে।
অ্যালিবাই
বাতাসের শরীর থেকে তোমার আঙুলের দাগগুলো মুছে দাও
যে কাপটিতে তুমি কাল রাতের
শেষ কফিটা খেয়েছিলে, সেটাকে ধুয়ে ফেল।
জানালা দিয়ে যা দেখা যাচ্ছিল
মেঘ,আকাশ,পাহাড় সেসবকিছুই
পর্দাটা দিয়ে আলতো করে মুছে নাও।
ফটোফ্রেম থেকে তোমার ফটোগ্রাফটা ছিঁড়ে নাও।
অনিক্সের কৌটো থেকে লাল চুলের ক্লিপটা উঠিয়ে নাও
আর ডেস্কের ওপর থেকে চশমাটা
তোমার পায়ের ছাপগুলো ঢেকে দাও
আর জলের ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে ফিরে যাও
তুমি কোনোদিন আসোই নি এখানে।
দেশান্তরী
চলে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল ও
রুপোলী ডানার কোনায়
মেঘের চাদরের ভেতর
একফোঁটা চোখের জল ক্রমশ বড় হচ্ছে।
ওর ভেতর দিয়েই ও দ্যাখে (অথবা ওটাই ভেবে নেয়)
অনেক মাইল নীচে ট্রাফিকের আলোগুলি জ্বলছে
সবুজ আর গাঢ় হ্লুদ রঙের তীরচিহ্ন
বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন
তুবড়ে যাওয়া ট্যাঙ্কের ওপর থেকে লাফিয়ে নামছে সেনারা
পাসপোর্টটা আঁকড়ে ধরে ও
পুরনো নম্বরের জন্য আর কোন জায়গাই ফাঁকা নেই।
চোখের জলের ফোঁটাটিকে ফুঁড়ে দিল মেঘ
আর ও একটি তোয়ালের জন্য ব্যাগটা হাতড়াতে লাগল
কেবিনের ভেতরটা হঠাৎ খুব তেতে উঠছিল
ঠিক যেমন অনেক মাইল নীচে
আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল ওর নিজের শহর।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন