• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

অগ্নি রায়





 ) একজন সাংবাদিকের ইন্টারভিউ নেওয়া সহজ কাজ নয় সাংবাদিকতার পাশাপাশি আপনার এক কবি-লেখক স্বত্বা রয়েছে আপনি পেশা এবং নেশার মধ্যে কাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?

আসলে এই দুই-এর মধ্যে তুলনাটা এই কারণেই হয়তো আসছে যে দুটির সঙ্গেই কাগজ কলম অক্ষর বাক্য বর্ণনা ভাষা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। অথচ বাইরের দিকে এই চোরা মিল থাকলেও একইসঙ্গে বিরোধাভাসও রয়েছে। কোনও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং লেখক,  অথবা পত্রিকা সম্পাদক এবং কবিএই কম্বো হলে এই প্রতিতুলনার প্রসঙ্গটিই কিন্তু আসত না, তাই না? আমরা ক্ষেত্রে এটুকু বলা যায় যে, এই দুটি বিষয় (সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা) অনেকসময়ই পরস্পরের  হাত ধরে না-চললেও, এই দ্বৈত সত্তার মধ্যে কোনও টেনশন কিন্তু নেই একেবারেই। বরং গত ১৮ বছর লাগাতার মাঠে দাঁড়িয়ে পেশাদার সাংবাদিকতা করার সুযোগটা আমি কাজে লাগিয়েছি আমার ব্যক্তিগত লেখালেখির ক্ষেত্রে। অনেকসময়েই আমরা যা খেয়াল করি না, যে মহাভারতে যুদ্ধ হিসাবে আমরা যা পড়ি তা একজন embedded reporter সঞ্জয়ের দিন প্রতিদিনের ঘটনার সাংবাদিকতা আসলে। তা কখনও বাহুল্যে, কখনও সংযমে, কখনও জীববৃত্তান্ত ভূবৃত্তান্তে, কখনও যুক্তির পটভূমিতে, আরোহনে ও অবসানে এক অনুপম সাহিত্যকীর্তিই হয়ে দাঁড়িয়েছে কালক্রমে। একইভাবে লোকমান্য যুদ্ধগাথা ইলিয়াডের ট্রোজান যুদ্ধের দশবছর-- যেন এক আশ্চর্য ডিটেলঋদ্ধ রিপোর্টিং। তবে এটা ঘটনা যে ট্রয়যুদ্ধের অন্তত চারশ বছর পর হোমার তাঁর ইলিয়াড লিখছেন একজন সাংবাদিকের ব্যাকগ্রাউন্ড গবেষণা ও স্টোরি খোঁজার মগ্নতায়। জনশ্রুতি, লোকগাথা, কথা উপকথার তোড় থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে, তাকে ১৫,৬৯৩ লাইনের ২৪ গ্রন্থের এক মেদহীন ধারালো কাব্যে পরিণত করেছেন। লেবানন, ইজরায়েল প্যালেস্তাইনে বোমাবর্ষণ, নেপালের বিদারক ভূকম্প, কেদারে ধস, লে লাদাখের হড়কা বান, কাশ্মীরের রক্তাক্ত এনকাউন্টার, নিকোবরের দ্বীপে সুনামি ধ্বস্ত মানবতা, পূর্ণকুম্ভে জগাখিচুড়ি ভারত, আফগানিস্তান বর্ডারে উদ্ধত বেয়নেটের মুখে স্কুলবালিকার নীল উড়ন্ত রিবনটুকু- আহা, এসবও যদি কবিতা নয় তবে কবিতা কী? এই পেশার সুযোগেই এই সব ফ্রেম হামেশা গড়তে ও ভাঙতে দেখেছি। এই জার্নি থেকে হাজার হাজার উদ্বৃত্ত ছবি এবং অর্থ তৈরি হয়েছে, যার অনেকটাই কাজে লাগানো যায়নি হয়তো। কিন্তু ভাঁড়ার ঘরে রয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে দেখলাম একজন আমার একটি কবিতা নিচে মন্তব্য করেছেন, ইনি সাংবাদিকতা না-করলে আরও অনেক সময় পেতেন এবং আরও মনোনিবেশ করতে পারতেন কবিতায়। আমার ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টি ঠিক সেরকম নয়, বরং উল্টো। আরও একটা কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সাংবাদিকতা থেকে সাহিত্যে যাতায়াতের বিষয়টি কিন্তু খুব হুড়ুমতাল কোনও কিছু নয়। শব্দকল্পদ্রুমের জেহাদ জারি করে নয়। বরং একটু দূর থেকে নির্জন এক পর্যবেক্ষণের মৌলিক ব্যবহারে। আর এহেন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়, সংশ্লিষ্ট মানুষজনের জবানবন্দি ও ঘটনাস্থলের নিখুঁত বর্ণনায় প্রতিবেদনের আশ্চর্য সাহিত্য হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে। ৫৯সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যে একটি পরিবারের চারজনকে নির্মমভাবে খুন করা হল মুখের সামনে থেকে গুলি করে। খুনের কোনও সূত্র বা কারণ পাওয়া গেল না। নিউ ইয়র্কার পত্রিকার জন্য এই খুন নিয়ে একটি ফিচার লিখতে সেখানে যান সাংবাদিক ট্রুম্যান কাপোটি। দলিল দস্তাবেজ ঘাঁটতে ধাঁটতে পুলিশ স্থানীয় লোক আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এবং চারবছর ধরে তা ডিটেলে লিখতে লিখতে, একসময় পরম বিস্ময়ে কাপোটি দেখেন সম্পূর্ণ পুণর্গঠিত হয়ে খুনের ঘটনা খুনিদের অতীত ভবিষ্যত মিলিয়ে মিশিয়ে যেন একটি উপন্যাসই হয়ে গিয়েছে! মাথা চুলকাতে লাগলেন সমালোচকরা, বিশ্বের প্রথম নন ফিকশন এই উপন্যাসটির (ইন কোল্ড ব্লাড)সামনে দাঁড়িয়ে। সাংবাদিকতা এবং সাহিত্যের এই মিলমিশের গোধুলিবেলাটি ঠিকমতো শনাক্ত হয়তো সবসময় করা যায় না, কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তা কিন্তু যৌথখামার (এক্ষেত্রে একটু ভিন্ন অর্থে) তৈরি করতে পারে। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের স্টোরি অব আ কিডন্যাপিং এ যেমনটি ঘটেছে।

) লেখায় এলেন কবে থেকে? সেই শুরুর দিক থেকে একটু বলুন

লেখার আগে শাদা পাতা এসেছিল। মানে, প্রথম টান ভালবাসা যাই বলা যাক, তা সব ওই মোটা লম্বা দোহারা সরু খাতা এবং শাদা প্যাডের সঙ্গে। কভারে লেখা বঙ্গলিপি, বর্ণলিপি, অনেকসময় পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ আঁকা যা নাকি সে সময় রেশনেও দেওয়া হত (বামফ্রন্ট শাসনের বালকবেলায়)। এছাড়া পাড়ার কিছু চিহ্নিত মনিহারি দোকান, এক আধটা এক্সক্লুসিভ স্কেচপেনখচিত দুরস্ত বিপনীতেও থাকতে নানা রঙের খাতা। এছাড়া বাবার অফিস থেকে নিয়ে আসা প্যাড। সেগুলি আজকের এ-৪ সাইজের চেয়েও কিছুটা বড় আর হাল্কা লেবু সবুজ খোপকাটা। বছরের গোড়ায় পাওয়া মোটাসোটা ডায়েরির সানলিট বন্ড। তো, এই খাতার শাদা, সংকেত পাঠাত। ততোক্ষণে নীলকমল লালকমলের নাইটশেয়ারিং আর আরব্যসুন্দরীদের প্রতিরাতে নতুন গল্প শোনানোর টেনশনের সঙ্গে গলাগলি হয়ে গিয়েছে। দেবসাহিত্য কুটিরের অনুবাদে সেপিয়া কভারের বিশ্ব উপন্যাস। বিল সাইকসের জন্য শ্রদ্ধা মেশানো করুনা, আর লিটল উইম্যানদের জন্য মিশ্র রকম নমস্তে! ডেনকালির স্বর্ণসৈকতে ডায়না পামারের বিকিনি, দুর্বোধ্য দেয়ালা করছে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে কিং সলোমনের ঐশ্বর্যে। আশি দিনে পৃথিবী ঘুরে আসা রোমাঞ্চের মধ্যেই আম আঁটির ভেপু বাজাচ্ছে না-দেখা গ্রাম বাংলা। ভস্তকের শস্তা সংস্করণে পেনসিল ও সর্বকর্মার অ্যাডভেঞ্চারএই সব মারণ উচাটনের মধ্যে জ্বাল দেওয়া দুধের মত উথলাচ্ছে, ফুলছে, আর সফেদ হচ্ছে বিভিন্ন শাদা প্যাড-খাতা বর্ণলিপিগুলি। কোনও এক অকিঞ্চিৎকর দুপুর, সন্ধ্যে অথবা অনেকদিন পর জ্বর নাআসা সকালে ওই শাদা পাতার দিকে ঝুঁকে বসা। আঙ্গুলে সুলেখা আর চেলপার্কের কালির বিজ্ঞাপন। যা ক্রমশ ছিটকে গেল ভার্জিন শাদায়। টু কাট দ্য লং স্টোরি শর্টএভাবেই প্রথম লিখতে বসা।

) লিখতে বসার অসাধারণ এই ছোট্ট গল্প শোনা হল এবারে আসি আপনার বইয়ের কথায় আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কী? সেই বই সম্বন্ধে কোন অতিরিক্ত স্নেহ অনুভব করেন কী? পরবর্তী বইয়ের কথাও বলুন আমাদের

প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই ব্যাগের মধ্যে নির্জনতা আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় নব্বইয়ের গোড়ায়, তারপর অনিয়মিতভাবে কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে ২০০২ পর্যন্ত অনিয়মিত, তার কারণ একাধিক এক, আমার লেখা হয়ে ওঠে খুব কম (এখন কিঞ্চিৎ বেড়েছে) দুই, লেখা নিয়ে পত্রপত্রিকায় পাঠানোর উদ্যোগও ছিল যথেষ্ট কম তখনও নেটপ্রযুক্তি আসেনি সম্পাদক, কবি, প্রকাশক, সিনিয়র কবিসঙ্গ এই যে চক্কোরটাতার থেকে বহু দূরে দূরেই থাকতাম আমার বন্ধুরাও ছিল বেশিরভাগই বিভিন্ন পেশার (বেচুবাবু থেকে মাস্টার থেকে গবেষক) যে উৎসাহ নিয়ে বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্য গিলতাম, হাতে গোনা কিছু বন্ধুর সঙ্গে (তাঁরা কেউ মিডিয়াশোভন নন, কিন্তু নিজস্ব ক্ষেত্রে দুরন্ত কৃতী) তা নিয়ে উত্তেজিত তর্ক করতাম, নির্জন ডায়েরিতে লিখতাম, তার যে একটা বাইরের দিক রয়েছে তা ফ্র্যাঙ্কলি সেভাবে কখনও ভাবিনি যেমন ধরুন নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ের এক সন্ধ্যায় কলেজ স্ট্রিট ঘুরতে ঘুরতে আমি আর আমার বন্ধু বিজয়াদিত্য চক্রবর্তী (যার সঙ্গে আমি এক দীর্ঘ কবিতাযাপন করেছি তখন সদ্য দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে এম পাশ করে ফিরেছে এবং একদম অন্যরকম কবিতা লিখছে ডায়েরিতেই) পেয়ে গেলাম দুটি স্বর্ণখন্ড! ১৯৭০ থেকে ৯০ পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল প্রাপকদের পুরষ্কার গ্রহণকালীন বক্তৃতা দুখন্ডে নেরুদা থেকে সল বেলো, ব্রডস্কি থেকে পাজকে নেই সেখানে প্রায় ফাঁকা পকেটে কীভাবে ওই ঝকঝকে বই দুটি আমরা সেই সন্ধ্যায় জোগাড় করেছিলাম সেই গোলমেলে প্রসঙ্গ এখন আর তুলছি না! যেটা বলার তা হল অনেক সাহস করে (অবশ্য সেটা সাহস দেখানোরই বয়স) আমরা ওই বক্তৃতাগুলির অনুবাদ করতে চেয়ে সোজা সুইডিশ একাডেমিকে চিঠি পাঠিয়ে দিলাম তখন তো -মেলের কোনও সিনই নেই আমাদের অবাক করে নোবেল ফাউন্ডেশন কমিটির প্যাডে ইতিবাচক উত্তরও চলে এল! বাংলা কপিরাইট-সহ আমরা টানা কয়েকমাস ধরে জিজান সে আমরা তার অনুবাদ করে ফেললাম করে তো ফেললাম, এবার একে রাখি কোথায়? কে ছাপবে? যাঁদের লেখা পড়ি তাঁদের কাউকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা তবুও খোঁজখবর করে গেলাম অরুণ মিত্রর বাড়ি উনি পান্ডুলিপি রাখলেন, পড়লেন এবং প্রশংসাও করেছিলেন মনে পড়ে কিন্তু ছাপানোর ব্যাপারে কোনও সাহায্য করতে পারলেন না শেষপর্যন্ত অর্কিড নামে একটি লিটলম্যাগে সবটা ছাপা হল দিল্লি চলে আসি ২০০২সালে তারপর অন্য ভুবন, অন্য জীবন জাঠ হরিয়ানভির চর্যার মধ্যে নিজেকে খুচরো পয়সার মত ছয়লাপ করে দেওয়া ঘোরাঘুরি বেড়ে গেল প্রবলভাবে যাকে ভালভাষায় বলে কাজের সূত্রে পর্যটন আজ নেপাল তো কাল চেন্নাই নয়, নয় করে বহু দেশ ঘোরাঘুরি কিন্তু লেখা সেভাবে কিছু হচ্ছিল না দেশ পত্রিকায় অনিয়মিতভাবে কিছু প্রকাশিত কবিতা ছাড়া ২০০৮/০৯ নাগাদ নবারুনদা আমাকে খুঁজে বের করেন এবং ভাষাবন্ধনে লেখার জন্য নিয়মিত তাগাদা দিতে থাকেন ইন ফ্যাক্ট, নবারুনদা না এলে আমার লেখালেখির দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হত কিনা সন্দেহ তো, এই সময় নাগাদ গাঙ্গচিলের অধীরদার (যিনি আমার সহকর্মীও বটে) সঙ্গে একদিন ফোনে গল্প করতে করতেই প্রথম বইয়ের পরিকল্পনা বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০এ ১২ সালে বইটির জন্য বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরষ্কার, বিজনবাবুর গ্রাম আড়বেলিয়াতে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন নবারুনদা দ্বিতীয় বইটি উনিই প্রকাশ করেন ভাষাবন্ধন থেকে ২০১৪ সালে (সূর্যাস্তের সঙ্গদোষ) কবিতার বইয়ের বাইরে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট-এর জন্য আফ্রিকার ছোটগল্প সংকলনের একটি অনুবাদ করেছিলাম অবশ্য

) নবারুণদার প্রসঙ্গ এলো যখন, ওনার সাহচর্যের কথা একটু শুনতে চাই আপনার কাছ থেকে।

  ওনার রোগনির্ণয় হওয়ার পর থেকেই কলকাতা-মুম্বাই-দিল্লির চিকিত্‌সা যুদ্ধের বিভিন্ন পর্বের সাক্ষী থেকেছি। দূর থেকে যতটা সম্ভব। তবুও একবারের জন্য বুঝতে চাইনি যে নিজের গোটা জীবনটাকে দিয়ে যে মারকাটারি পান্ডুলিপিটা লিখে আসছিলেন খেলনানগরের লেখক, তা এত দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। শোকপ্রকাশের মধ্যবিত্ত রুদালিপনার থেকে অনেকটা দূরে থাকা এই পিতৃপ্রতিম মানুষটির (যিনি না থাকলে, দিল্লি চলে আসার পর লেখালেখির এই দ্বিতীয় ইনিংসটি শুরুই হত না আমার) তর্পনের জন্য কোন জল বেছে নেওয়া চলে? অনুমান করি, নবারুণদাকে এই প্রশ্নটি করলে, পরিচিত শিশুসুলভ হাসিটা হেসে, চোখ টিপে বলতেন, গঙ্গা জল নয় কদাচ। ওতে প্রচুর ভেজাল! বরং ভদকায় করতে পারিস। ফিনল্যান্ডিয়া ভদকা!
  বেশ কয়েকবছর আগে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের গ্রাম ঘুরে এসে একটা ফিচার লিখেছিলাম, নবারুণদার সঙ্গে যখন মৌখিক পরিচয় ছিল না। তাঁর সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতেই লেখাটির শিরোনাম দিয়েছিলাম, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। পরে জেনেছি উনি খোঁজ নিয়েছিলেন আমার। ঘাবড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম, নির্ঘাত্‌ খিস্তি খাবো! এরপরেই ফোনে কথা হয়েছিল। ভাষাবন্ধনের জন্য লেখা চেয়ে নিয়েছিলেন। সেই শুরু ওনার সঙ্গে এক ঘোরে পাওয়া জার্নির (যার স্পেল এই জন্মজীবনে কাটবে বলে মনে হয় না)। আর প্রথম চাক্ষুস আড্ডা কবি বন্ধু সুমন ধারা শর্মার আমন্ত্রণে ট্যাংরার এক পানশালা-রেস্তোরায়। অনর্গল আমাদের বাচাল প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন। মনে পড়ে, নিকানুর পাররা থেকে গৌতম বুদ্ধ-শুধু অনায়াস নয়, কি তীক্ষ্ণ বিচরণ মানুষটার। নিছক কথা তো বলছেন না, যে বিষয়ে কথা বলছেন তাতে পাঁচশো ওয়াটের আলো পড়ছে। পার্সোনাল ননসেন্সের গার্বেজে ভরে যাচ্ছে সাহিত্যের পাতাগুলো বারবারই বলছিলেন সেদিন।
   গত বছর থেকেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং কিছুটা বাজারের সঙ্গে আপোস না-করার অনমনীয় জেদের জন্য ভাষাবন্ধন মাসিক থেকে ত্রৈমাসিক করে দিলেন। বললেন, ভালোই হল বুঝলি। কোন আল বাল লেখা আর ছাপবো না! একদম বেছে ভালো কাজই প্রকাশ করব। একদিন এমন একটা কথা বলেছিলেন নবারুণদা, অমন ঋষি বাক্য খুব কমই শুনেছি জীবনে। বলেছিলেন, লেখা হয়ত সবসময় ধরা দেবে না। হয়ত মাসের পর মাসও নয়। কিন্তু মাথার অ্যান্টেনেটা সবসময় উপরের দিকে করা থাকে যেন। লেখা যখন আসবে তখন তাকে পেড়ে ফেলতে যেন দেরী বা ভুল যেন না হয়
   একবার প্রয়াগে গিয়েছি কুম্ভমেলা কভার করতে। চতুর্দিকের বিচিত্র ধর্মনাট্যরঙ্গের মধ্যে থেকেই ফোন করেছি ওনাকে। উত্তেজিত কন্ঠ অপরপ্রান্তে। যতটা পারিস শুনে নে। ওখানকার আবহ, ভাষার তারতম্য, দেহাতি টান, হাজার হাজার বছরের বিশ্বাস, রিচ্যুয়ালের ইতিহাস- সব মিলিয়ে বিপুল মশলা। পরে বড় লেখা হতে পারে। একইরকম উত্তেজিত তাঁকে দেখেছি, যখন কভার করতে গেছি মৌলবাদীদের দাপটে উত্তাল বাংলাদেশের নির্বাচন, কাশ্মীরের রক্তাক্ত পরিস্থিতি, মুজফ্‌ফরনগরের দাঙ্গা, বসফরাসের ধারে যুদ্ধবিদ্ধস্ত তুরস্কের নতুন রূপ। জনজীবনের এই বিপুল ও বিচিত্র যাপনচিত্র বারবার নিয়ে আসতে পরামর্শ দিয়েছেন লেখায়। সেই সূত্রেই প্রকাশকের সাথে কথা বলিয়ে একটি কাজ দ্রুত শেষ করে দিতে বলেছিলেন। যেটি শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে তুলে দিতে না পারার অপরাধবোধ পায়ের তলায় পেরেকের মত ফুটে থাকবে, জানি না কতদিন।      


সাক্ষাৎকার নিয়েছেনঃ তুষ্টি ভট্টাচার্য


      


My Blogger Tricks

1 টি মন্তব্য:

  1. সূর্যাস্তের সঙ্গদোষ পড়ে চমকে গেছিলাম। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

    উত্তরমুছুন