Pages - Menu

'ঈভ, একটি ডালিমক্ষেতের বিজ্ঞাপন'

প্রিয় দোলন

তোর বই আমায় আরেকটু জ্বালানি দিল,বেঁচে থাকার!এক অনির্দেশ্য সারাৎসারের কাঁধে চেপে তোর কবিতা বিশদে চলে গেছে!মনে হয়,এই কি সেই ফোরথ ওয়ার্ল্ড যেখানে জল খাওয়ার শব্দে ভরে যাচ্ছে পেট নাকি এক বানানো কবিতার জগতে বসে আমরা এতদিন থেকে গেছি যার যার নিজস্ব দেশলাইপাতার ঘরে!

দোলন আমি কবি নই,তো আমার পড়ায় কবিদের কনফিডেন্ট জাজমেন্ট পাবিনা!আমি ক্রিটিকও নই,তোর কবিতা কি ভাবে লিখলে আরো সম্পূর্ণ হয়ে উঠতো এও আমি বলতে পারবো না!আমি সেই লোক যে আলো দেখতে পায়,জ্বালাতে পারেনা!তোর বই-এ রাখা আলো,আমার আলো হয়ে উঠেছে!অন্ধকার,আমার অন্ধকার!পাঁচটি ভাগের কবিতায় তুই গঙ্গাকে স্রোতল রেখেছিস;কিছু তরঙ্গবিক্ষোভ,কিছু তল,অবতলের বিভঙ্গ,  কিছু চাপল্যও আছে,আর আছে হাত দিয়ে ছুঁয়ে থাকা জীবনের ধ্বক ধ্বক আওয়াজ!

কথকতা পর্যায়ে তোর আত্মিক পরিক্রমা প্রগলভ হয়ে উঠতে পারতো!মৃত্যু ,এ ভাবে একটি অলীক আর্দ্রতার নাম,একটি অক্লান্ত পরগনালিখেই তুই কবিতার সারাৎসারে চলে যাস,এরপরে পড়া হয় তারই অনুরণন!ব্যক্তিগত তমাল গাছের পাতা উৎপল কুমার বসুকে মনে পড়ালেও তুই নিজের সন্তসুলভ দেখায় চলে গেছিস,যেখানে কথা দর্শন হয়ে ওঠে,এই দুনিয়ার স্ববিরোধী মানবসভ্যতার শিকড়ে চলে যায় তোর লেখা,যেখানে অবিশ্বাস বিশ্বাসের হাহাকারে লেপ্টে যায়,যেখানে এখনও ছায়া,নিষিক্ত ভ্রুণের মতো আনন্দ পারাপার করে... পাঠক হিসেবে আমি আমার পারিপার্শ্বিকের নির্বিকার আপোষময়  অবস্থানে নিজেকেই বিদ্ধ হতে দেখি,ক্লান্তি ঘিরে আসে জীবনের মুখর বিজ্ঞাপনে আবার তাতে নিশ্বাসের সজীব উত্তাপও লেগে থাকে,মনে হয় আমিও বলি,জলের অভিসারে ফাটল ধরেছিল দেখো। এক বিস্তৃত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে..

যাপন কথাটা বিরক্তিকর হলেও হম জীতে হ্যাঁয়!আদা জাফরির লেখায় পড়েছিলাম, জরদ পাত্তোঁকো লে গই হাওয়া/শাখ মে শিদ্দত-এ-নুম্মু হ্যায় অভি/বরনা ইনসান মর গয়া হোতা/কোই বেনাম জুস্তজু হ্যায় অভি(হলুদ পাতাদের নিয়ে গেছে যত হাওয়া/প্রশাখায় তবু গভীর  জীবনকনিকা/ নইলে তো মরে যেতই মানুষ মানুষী/কোথাও তো আছে বেনামী খোঁজের চাওয়া),একটা অক্ষম অনুবাদও করে দিলাম কারণ আমার মনে হয়েছে তোর এই যাপনবিন্যাসের অসহায়তায় যে একমাত্র উদ্দীপকটি আছে সেটি ওই বেনাম জুস্তজু,নইলে তোর রাজনীতি/সমাজবোধ/বীক্ষা/সচেতনতা রক লজিকের পাথরে মুখ থুবড়ে পড়ে যেত,ওই জুস্তজুতোর কবিতায় এত সচলতা এনে দিয়েছে এ ভাবেঃ

১.গাছে আলো দেয় ছায়া দেয় অক্সিজেন মনস্তত্ব উদাসীন মর্ষকাম/কর্ষণযোগ্য জলাভূমি সব দেয়/কাঁটা দেয়/সাবধানে থেকো।

২.নিজেকে যিশু ভাবতে শুরু করো/ভাবো,তোমার স্পর্শে সব কুষ্ঠ সেরে যায়

৩.ট্রামলাইনে মাখো মাখো করে রাঁধছে মরশুমখেতে আসবে না?


দ্রোহ পার হয়ে আসি,কবিতা আরো বিশদ হতে থাকে,যেন ভাঙা গল্প,ছিন্নবিষাদ মাখা আনন্দের রং লিখে যাস তুই!গোল ভাবের মধ্যে বুঝি একটা আদর আছে/ঘিরে থাকার অভ্যাস..কবিতাও তাই,যাচ্ছেতাই সময়ে দাঁড়িয়ে সে কবির আদর চায়।কেউ পারে,কেউ পায়ে দলে চলে যায়!তুই পেরেছিস,এই পারা তোকে আরো সজাগ করুক,লিখতে থাক এমন পংক্তি যাতে আমার মত অভাজনের মনে হবে,তু তো আখির রো লিয়া/ পর ম্যায় রোনে কা কাবিল না রহা...তোর কবিতা কান্নায় জমে থাকা সেই শিশিরসমুদ্র যাতে শয্যা মাস্তুলহীন হয়েও সাহসে ভেসে যায়,মনে হতে থাকেঃ কেউ আছ/যার স্তব্ধতার কাছে সমস্ত মুখরতা ঋণী?মনে হয় শস্যমাদুর সংক্রান্ত আবহে বিষন্ন ,নাম হল সন্ধ্যার/যেমন কুকুরের নাম নেড়ি..এই উইট,অসামান্য!কবির কথকথার অমন বিস্তার থেকে তুই চলে এসেছিস এরকম সঙ্কেতময়তায়ঃবারান্দায় শুকনো পরিজ/কী একটা চূড়ান্ত,অপেক্ষার,সেই অপেক্ষাই তোর নারীজন্মকে মানবজন্মের  সঙ্গে গেঁথে দিয়েছে,তোর কবিতা আর ইস্যুবিদ্ধ বা সময়বিদ্ধ হয়ে থাকেনি,এবার তোকে ঠিক করতে হবে তুই চির সময়ের দিকে যাবি কিনা!তোর পা কিন্তু সময়ের বাইরে এসে পড়েছে,এই বই,ঈভ,একটি ডালিমক্ষেতের বিজ্ঞাপনসেই পদক্ষেপের ফসল!
ভাল থাকিস,ভালোবাসাসহ

স্বপন-দা         

       

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন