চলে গেলেন প্রকাশ কর্মকার। এই সময়ের চিত্রশিল্প অনেকখানি দীন হয়ে পড়ল, আরেকটু হয়ে পড়ল ইতিহাসের মুখাপেক্ষী। বিরাট মানুষদের চলে যাওয়ার মিছিল আরো বর্ণাঢ্য হল। কিন্তু তাঁর বিরাটত্বের সাপেক্ষেই অবাক হয়ে দেখলাম মিডিয়ার খুব একটা ব্যস্ততা নেই, বাইট নেওয়ার হইচই নেই। ফেসবুকেও শোকের উচ্ছ্বাস যেন খুবই কম। যাঁরা উদ্বেলিত হয়েছেন তাঁরা কেউ সাধারণ মানুষ নন। সকলেই বুদ্ধিচর্চা করেন। কবিতা লেখেন। কাগজ করেন। নিজেরা ছবিচর্চাও করেন কেউ কেউ।
এটা কী করে হয়! কিছুদিন আগে সুচিত্রা সেন গেলেন -> তাঁর আগে রবিশংকর -> তাঁর আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সেই যাওয়াগুলোর তুলনায় এ যেন অনেক অবহেলিত মনে হচ্ছে। অবিশ্যি সুচিত্রা জনসাধারণের মানুষ ছিলেন। প্রকাশ কি তা হতে পারেননি!
নাকি এটা আমাদেরই দীনতা! আমরা ক্রমেই আবহমানভাবেই কবিতা থেকে চিত্রশিল্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছি! এর ফলেই জীবনানন্দের মৃত্যু আজও ফুরোচ্ছে না।
আসলেই হয়তো সিরিয়াস সৃজনশীলতার প্রতি আমাদের জনসাধারণ আর কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না। ঊনবিংশ শতকে বটতলা সাহিত্যের রমরমা ছিল। যারা মাথা খাটিয়ে বই পড়তে চাইতেন না, তাঁদের জন্য অঢেল রস থাকত বটতলার আয়োজনে। আজকের মূলধারার সাহিত্য ক্রমেই বটতলায় আশ্রয় নিচ্ছে।
আর সিরিয়াস সাহিত্য সেই কবে থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরেছে, সেই হাত আজও বিশ্বস্ত।
এখন যে ওয়েবজিন এবং ব্লগজিনগুলো হৈ হৈ করে চলেছে, তারাও তো লিটল ম্যাগাজিনেরই আত্মজন, তাই না?
আসলে প্রকাশ কর্মকার সার্থক চিত্রকর হতে পেরেছিলেন, অসামান্য স্টার হতে পারেননি। একজন অ-অভিনেতা দেব বা অ-গায়ক অনুপম রায়ের তুলনায় তাঁর কোনো মূল্যই হয়তো আমাদের জনমনে গড়ে ওঠেনি।
এটা কবে থেকে হল, একটা জাতির অভ্যাস এভাবে নষ্ট হয়ে গেল!
একটা তো দিন ছিল একজন গৃহবধূর বালিশের তলায় লুকিয়ে থাকতেন বঙ্কিমচন্দ্র, মানিক, সমরেশ (অবশ্যই বসু)। তখন ডেইলি সিরিয়াল ছিল না বলেই কি তাঁরা কল্কে পেতেন?
আজকের তথাকথিত প্রধান সাহিত্যিকরা আমাদের পাঠকরুচির হত্যা ছাড়া কিছু করছেন কি? তাঁদের লোকপ্রিয়তা আমাদের অবক্ষয় ছাড়া কিছু দর্শাচ্ছে না সম্ভবত।
এর মধ্যেই এসে পড়েছে ‘বাক ৭৭’। এবারের পোস্ট আমরা প্রকাশ কর্মকারকে নিবেদন করছি। তাঁর আত্মার দিকে হাত বাড়াচ্ছি না, তাঁর কাজ অক্ষয় হোক।