কাঁচের ক্ষয়
এতদিন তো জেগেই
ছিলাম। চোখ কান খোলাই ছিল। একটা শরীরও তো ছিল সাথে। ঠিক বালির মধ্যে বালি দিয়ে
বানানো ইন্দ্রিয় সব। যেটুকু ধুকপুক চলছিল জীবিত থাকার সেটাও জলঘড়ির টিকটিক। আসলে
পুরো স্থিতিটাই তো সাগর, সাগর পাড়ে আছড়ে পড়া। একেকটা সুতো ছেঁড়া ঢেউ জেগে উঠে
ঘুমের মাঝেই। কখনো সখনো একটা ঘুমের খোয়ারি হাইতোলে বহুগুণিত হাইরাইসিং এর মতো।
আমরা পাখির চোখে দেখতে থাকি সিঁদুরে আকাশকে। এক জমাট বাঁধা লালপথ। এখান থেকেই
মাটি-জল-বাতাস কে জিভে জড়ানো ফ্ল্যাশ মনে হয়। হাজার কাঁচের দেওয়াল ঘিরে আমি আর
আমার অসমাপ্ত গানের সিঁড়ি গুলো। ঘষাকাঁচের দেওয়াল থেকে সাগরের দিকেই অনন্ত ধীর
পাতা মেলা আছে। সেই অস্পষ্টতা! অস্বচ্ছতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারি না। কেবল এক
সাগরই পারে নিজের অন্তঃমনকে সরিয়ে নিতে সাগরের থেকে। নিরবচ্ছিন্ন মনকে আলাদা করে
রাখে রাত থেকে আলাদা করে রাখা সকালের মতো। এযেন মুহূর্তের বিচ্ছিন্নতা। দিনের আলোর
মাঝে ডুবে থাকে তারাদের অনুপস্থিতি। সব থেকে কিছুই নেই। অনুভূতি শূন্য পাথরের চলাচল।
আমি আছি এটা সত্য
আমার মাঝে আমারই ঘুম পেতেছে সংহত সংসার
এই শব্দহীন নীরবতা! নিজের সাথে নিজের লুকোচুরি
খেলা!
আমারই যাত্রাপথ! লতপত করা আমার অনুচ্ছেদ!
আমি একটা রোদের কাহিনী হতে পারছি না।
ডুবে যাচ্ছি অন্ধকার ঢেউয়ে,
অতলস্পর্শী মর্মবেদনার যান্ত্রিক কলকব্জায়।
এইতো সেই দিন ফিরছিলাম নিজেরই ফেলে যাওয়া পূরানো
পথে। খুঁজে ফিরছিলাম মূল্যহীন একমুখী পায়ের ছাপ। সেই একই ধুলো, একই বাতাস। তবুও
কেন যেন মনে হচ্ছে আমি বড্ড একা! আমার ফেলে যাওয়া রুমালে মাংসের গন্ধটাও বদলেছে
পরিবর্তনের রঙে। সংকীর্ণ গলিপথ জুড়ে কত ছবি পাল্টে গেছে। যতই দেখছি অবাক হচ্ছি!
শ্বাসাধিকালের সাময়িক ব্যবধানে কি ভাবে পাল্টে যাচ্ছে সব? ফুসফুস জুড়ে কথারা ভিড়
করছে সিগারেটের ধোঁয়ার মতো। কালো হয়ে উঠছে শব্দের ভাষা। একী জিভ না পরিবর্তিত
ভাষার বিবর্ণতা। আমি শুনছি, বোঝার চেষ্টা করছি একটা শুয়ে পড়া দাড়ি, কমা, যতি, একটা
নবগঠিত বাক্যবন্ধ। বিশ্বাসই হচ্ছেনা কতটা বদলেছে এই শরীর।
মনে হচ্ছে আবার নতুন করে
চিনে নিতে হবে ‘অ’ ‘আ’
দেয়ালের কানে শোনা ফিসফিস কথা গুলো
দেয়াল হয়ে উঠছে আজ
চাল থেকে কাঁকড় বাছার মতই
আলাদা করছি আমার ভাত হয়ে উঠার বাসনা
আঙ্গুলগুলো ব্যথায় ভরে উঠছে
একই ন্যুব্জ-বৃত্তিতে
মিশে থাকা
আগুন নেভাতে নেভাতে পাল্টে যাচ্ছে অবসরের
অনুশীলন
বিরতি বলে কিচ্ছু নেই!
মস্তিষ্কের ঘুমের মাঝেও তো কিছু সময় ঘুরে ফেরে।
আসলে বিরতি হোল একটা রিড থেকে আরেকটা রিড চাপার
অন্তর্বর্তী সময়। একটা শব্দ থামার ঠিক আগেই আরেকটি শব্দ বেজে উঠা। আমরা ভাবি কিছু
সময় হয়তো বাঁশি থেমে থাকে। খুবই ভুল! প্রশ্বাস ভেঙ্গে একটা বিস্মৃতি জাগরিত হয়।
আমরা থেকেও না থাকার মত হারিয়ে যাই দিনের আলোর অস্পষ্টতার মতো। একটা আস্ত ধুন
বাজতেই থাকে। ঘড়ির কাটা চলুক বা বন্ধ থাকুক তাতে সময়ের যেমনটি কিচ্ছু আসে যায়
না।
এই হেরাফেরি!
জলের মাঝেই জলের ঘূর্ণি টার্কোয়াজ স্রোত
কল্পনার আজানুলম্বিত শ্বাস
ভাঙ্গন...ক্ষয়...ক্ষতি
হেঁটে বেড়ানো কথাগুলো...আগুপিছু চলছে সত্যতা
একে অপরের হাত ধরতে ভুলে গেছে অনেক কাল
বরফ বেড়েই চলেছে চারিদিকে
এই পোড়ার যন্ত্রণা শিখতে আগুনের ভূমিকা নেই
অদৃশ্য পাতার ভিতর লেখা থাকছে এই দুর্বোধ্য
অস্বীকার।
আমাদেরই মাঝে লুকিয়ে থাকা এক গুপ্তচর। কাগুজে
নৌকার মত ভাসতে থাকছি আমরা। পালহীন, দাঁড়হীন নৌকায় ঢেউয়ের মাঝে ভিজে ভিজে একা একাই
প্রশ্ন ছুড়ছি, এই সমুদ্র পথের উদ্দেশ্যহীন চলাচলের নামই কি সংসার? আমাদের গুপ্তচর
হেসে উঠছে। অট্টহাসিতে মেতে উঠছে বারবার। একই আমারই হাসি? চিনতে পারছি না কেন?
চিনতে পারার নামই তো সর্বব্যাপ্তি
জন্মরহস্য
তার একেকটা ঠিকানা...পরিচয়পত্রহীন ব্লেডমুখ
জীবাশ্মের রেখে যাওয়া ধাতব নখ
আমি আর আমার রহস্যের কুয়াশা
ঠেলে এগিয়ে চলেছে যাপন যান
ফেলে যাওয়া একেকটা বগি ঘিরে অচেনা সাঙ্কেতিক
চিহ্ন
রূপান্তরের শীত...ডাকবাক্সের ডাক... ভুলো পথের
সন্ধান
ধুলোল হওয়া দূরত্বজ্ঞাপক...ক্ষয় চলছে কাচ ঘিরে
আমি অবিন্যাসে বিন্যস্ত হতে থাকি পাতার পুনর্জন্মের মতো।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন