নতুন প্রজন্মের কবিতা
অভীক দত্ত
এখন এমন একটা সময় এসে
দাঁড়িয়েছে যখন নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তিকে অত্যন্ত ভালভাবে ব্যবহার করতে শিখেছেন। কাগজের
বইয়ের পরিবর্তে ই-বুক প্রকাশ হচ্ছে, ঘরের কোণে গাদা হয়ে পড়ে থাকা বইয়ের দিন ধীরে
ধীরে শেষ হচ্ছে। এর বেশ কতগুলি ভাল দিক আছে। এর প্রসার এবং প্রচার দেশ কালের গণ্ডী
অনায়াসে পার করে ফেলেছে। বাণিজ্যের দিকটা এক্ষেত্রে অবহেলিত থাকলেও আশা করা যায়
ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটাও মিটিয়ে নেওয়া যাবে। অদূর ভবিষ্যতে ই-বুক অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
“বাক” সম্পাদক অনুপমদা আমায়
ফোন করে সৌম্যজিত আচার্যের ই-বুকটি রিভিউর জন্য বললে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে রাজি
হয়েছিলাম। এ যেন অনেকটা ভবিষ্যতের সাক্ষী থাকবার মত ব্যাপার। এক তরুণ কবি তার বই
ই-বুক হিসেবে প্রকাশ করছেন- বিষয়টি অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। বইটির শুরুতেই আবার চমক।
বইটি প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা থেকে। আজ থেকে দশ বছর আগেও ভারতের কোন কবি বাংলাদেশ থেকে
বই প্রকাশ করার কথা ভাবতে পারতেন কি? জয় ইন্টারনেট!!!
আজম মাহমুদের প্রচ্ছদটি বেশ
ভাল। সৌম্যজিতের কবিতার ভাষা তার ভাবনার মতই আধুনিক। সুনির্বাচিত শব্দচয়ন। “সারাদিনে যতবার মুখ দেখেছি/বেরিয়ে আসে ততগুলো
প্রতিবিম্ব/ সারাঘরে পায়চারি করে”... “বিন্দুছাড়া বিসর্গ” প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ
করে। দ্বিতীয় কবিতায় তৃতীয় বিশ্বের উদাহরণটি ভাল লাগে...
“তৃতীয় বিশ্বের লোক, হাওড়া
স্টেশানে
চলন্ত এস্কালেটরের ধাপগুলো
সিঁড়ির মতোই বেয়ে ওঠে।
যারা এস্কালেটরে দাঁড়িয়ে
থাকে
তাদের টপকে, হেঁটে হেঁটে
উঠে যায় আরো ওপরে।
...
অজস্র যাত্রীর ধাক্কায়,
স্রোতে, সিমপ্লি আটকে যায়”...
এই “সিমপ্লি” শব্দটি কিংবা
এরকম আরও চলতি ইংরেজি শব্দ যেগুলি এখন বাংলায় কথ্য ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে, তার
অনায়াস ব্যবহার হয়েছে সৌম্যজিতের কবিতায় যা কখনই অনভিপ্রেত বা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে
হয় নি। বরং সুপ্রযুক্ত মনে হয়েছে।
“প্রত্যেক ঘুমন্ত মানুষই
স্বপ্ন দেখতে চায়
তাই বিছানায় রাখে ডটপেন,
প্যারাসুট, ঘাম,
পলিথিনে মোড়া সুতীব্র
সানগ্লাস,
রাকস্যাক ব্যাগ, মোম,
গুগলক্রোম ম্যাপ...
অথবা শুধু চাদরে লুকানো
চাঁদ”
কিংবা
“যারা ঠোঁট দিয়ে লিখলেন
এবার তাদের কালিভরার
ব্রেকটাইম”...
অথবা
“ফেসবুক পাশে রেখে দিলাম
তোমার-আমার বুনো বাঘ”...
“ঝিঁঝিঁ
পোকার ডাক মানে তো কোলেস্টরল রাত”
“দুয়েকটা কাক খুঁটে খায়
‘বার্ধক্যের বারাণসী’...
ভাবনার রসদ যোগায়।কিছু
কবিতায় বেশ কিছু দৃশ্য সিনেমার মত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কবিতাগুলি একলপ্তে পড়ে
ফেলার পরে মনে হয় প্রতিটি কবিতাই প্রতিটির সাথে অদৃশ্য কোন সুতোয় বাঁধা। বইয়ের
ভূমিকায় যশোধরা রায়চৌধুরী যথার্থই বলেছেন “সৌম্যজিত আচার্যের কবিতা এখনকার কবিতা”।
ভবিষ্যতে কবির আরও
কবিতা পড়ার ইচ্ছা থাকল।
বিন্দুছাড়া বিসর্গ/সৌম্যজিত
আচার্য, প্রকাশক “বাংলার ই বই”।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Jak Avik r Anupam to ja boltey chai ta bujlo...anokey sudhu nijerta chara r Kato vasai bojhey na
উত্তরমুছুনbahhhhh besh sundor lekha
উত্তরমুছুন