কোনো চরিত্রই কাল্পনিক নয়
নীলাব্জ চক্রবর্তী
দ্বিতীয় পর্ব
৬
“A story should have a beginning, a middle and an end,
but not necessarily in that order”
--- # --- # --- #
--- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- #
---
--- আর্যনীল ---
বাপরে! সেই কবে
এসেছি নঁসি থেকে। ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গ্যালো। অ্যাতোদিনে কমপ্লিট হোলো ইন্টারভিউ দুটোর কাজ। এই ছুটির প্রায়
পুরোটাই এই নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করতে করতে খরচ হয়ে গ্যালো কিভাবে! এই হয় আমার প্রতিবার। ইউনিভার্সিটি অব
নঁসি (বাঙালীরা কিছুতেই নঁসি বলতে চায় না ক্যানো? খালি ন্যান্সি ন্যান্সি করে।) থেকে ছুটি নিয়ে
কলকাতায় এলেই তিন সপ্তাহ চোখের নিমেষে উড়ে যায়... বাবা-মায়ের সাথেই ভালো করে
দ্যাখা হয়না... ওঁদের বয়স হচ্ছে অ্যাতো... আমরা দূরে থাকি... সবসময় চিন্তা লেগেই
থাকে... অথচ কলকাতায় এলে য্যানো ওঁদেরই সাথে একটুও থাকতে পারিনা। এবার এই
ইন্টারভিউগুলো অ্যাতোটা সময় নিয়ে নেবে ভাবতেও পারিনি। এটা এক অদ্ভুত
ব্যাপার। আমাদের প্রান্তিক কাগজের জন্য প্রথম ইন্টারভিউটা ছিলো এক
ফিল্মপরিচালকের। উফফ, ওঁর অফিসে মোট চারদিন যেতে হোলো। তার ওপর আমাদের অ্যাতোগুলো লোককে ইনভলভড হতে
হোলো... যেদিন শেষ হোলো নীলাব্জকে বলেই ফেললাম, এর চেয়ে কম এফর্ট দিয়ে বোধহয় আমরা
গোদারের ইন্টারভিউও নিয়ে নিতে পারতাম... তবে এবার একটা মজা হোলো। দুজনের ইন্টারভিউ
নিলাম। একটা প্রান্তিক-এর জন্য, আর একটা নঁসির একটা কাগজের জন্য। আর ইন্টারভিউ দিলাম
দুজনকে। একটা ফলিত কবিতা কাগজের জন্য আর একটা এক পরিচিত তরুণ কবি তার প্রথম ফিল্ম
বানাচ্ছে, সেই ফিল্মে রাখবে বলে একটা ইন্টারভিউ নিলো আমার। বেশ অদ্ভুত লাগছিলো। একইসাথে ইন্টারভিউ
দেওয়া আর নেওয়া! স্রোত আসছে স্রোত ফিরে যাচ্ছে...
--- বিদিশা ---
সৈকত আসছে ডেলহি
থেকে। ইয়েহ... দ্যাটস আ গ্রেএএএট নিউজ। গাধাটা অ্যাতোদিনে টাইম-শাইম পেল আসার। সেই কবে থেকে আমায়
ইনবক্স করে করে তড়পে যাচ্ছে পাজি। নাও... উই উইল হ্যাভ ফান... উইল এনজয় টু দ্য
ফুলেস্ট। ওর হেভভি প্যাশন। বহোত মস্তি-শোস্তি করবো। হি ওয়ান্না ডু ইন
মাই পি-ডেজ... হি হি হি... কতোবার যে লিখেছে এই কথাটা... আরও কত্তো ফ্যান্টাসি আছে
ওর আমায় নিয়ে...। আচ্ছা, কোথায় যাওয়া যায় ফর টু থ্রি ডেজ? দীঘা-শীঘা টাইপ কোথাও?
চাঁদিপুর-শাদিপুর? করণকে নিয়ে কোনও চাপ-শাপ নেই। একটা কিছু বলে দেব
ওকে। একটু আদুরে-শাদুরে গলায় বেবি, ম্যয় স্রিফ দো-তিন দিনো কে লিয়ে থোড়া
ঘুমনে যা রাহি হুঁ... দোস্তোকে সাথ... যাঁউ বেবি? এইটুকু বললেই কাফি। গলে-শোলে এক্কেবারে
জল হয়ে যাবে হাবি আমার। করণ আগরওয়াল দ্য বিগ শট। হাহা... কিন্তু...
কিন্তু... সৈকতটা যা ক্যালানে, যদি অ্যাহেম ওয়ক্ত-এ ছড়িয়ে-শোড়িয়ে ফ্যালে? যদি আসতে
না পারে? স্ট্যান্ড বাই অন্য কাউকে ধরে রাখবো? ভারুণ বা আদিত্তিয়া বা ভিকরাম বা
ওইরকম হাঙ্ক-শাঙ্ক টাইপের কেউ...
--- বিশ্ব ---
নীলু বলে রেখেছিলো
আমার বিয়েতে হাজার পনেরো টাকা খরচা করবে। নীলু শালা বহুত হারামি হলেও ভালোবাসে আমাকে। না? হাহ... বিয়েটাই
হোলো না... আর হবে কোনোদিন? কোনোদিন না... অ্যাতোদূর এগিয়েও যখন হোলো না এবার...
নীলুকে বললাম, যদি এর মধ্যে মরে-ফরে যাই, তুমি তো আমার জন্য খরচা করতেই
নীলু, সেই পয়সায় একবার আমার বডি গাড়ি ভাড়া করে পারুলের গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে
যেও, পারুল তো সব ভুলে গ্যালো আমার, আমার মরা মুখ দেখে যদি কিছু মনে পড়ে ওর, আর
ওখান থেকে ঘুরে আসার পর সোজা শ্মশানে নিয়ে গিয়ে তুমি আমার মুখে আগুন দিও নীলু। আমার বাড়ির লোককে
কিছুতেই এর মধ্যে ঢুকতে দেবে না, আমার ভালো চায়নি ওরা... নীলু হেসেই উড়িয়ে
দিলো... বলে কিনা আমার নেশা হয়ে গ্যাছে... বলে কিনা আমি সকাল থেকে মাল খাচ্ছি...
না না নেশা হয়নি... নেশা হচ্ছেনা আমার। আরে! নেশা হবে ক্যানো? আমি কি মাল খাচ্ছি নাকি!
আমি কি রেজিস্টার্ড মাতালচোদা লোক নাকি যে সকাল থেকে মাল খাবো! হতে পারি আমি বেশী
লেখাপড়া শিখিনি কিন্তু তাই বলে ঐ গেঞ্জির কারখানার শুয়োরের বাচ্চাগুলোর মতো নাকি
আমি যে সকাল থেকেই বোতল খুলে ঢুকুঢুকু চালাবো আর এর-ওর বাড়ির বারান্দার তলায় কি
বন্ধ জানলার সামনে মুতে বেড়াবো দিনরাত? পাড়াটাকে দিনদিন নরক বানিয়ে তুলছে
জানোয়ারগুলো...
--- # --- # --- #
--- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- # --- #
---
৭
হয় না একেক সময়? কখনো কখনো? বিছানাবালিশ একটু
বেশিই শক্ত ঠ্যাকেনা কোনও কোনও দিন? কোনও সলিড কারণ ছাড়াই সামনের লোকটাকে চেঁচিয়ে শুয়োরের বাচ্চা বলতে ইচ্ছে করে
না? খরবুটে বয়স্ক একটা লোক আস্তে আস্তে বেঁকে হেঁটে পেরিয়ে যাচ্ছে সামনের রাস্তাটা
তখন একটা লাথি মেরে লোকটাকে চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে না? অফিসের
সিনিয়রকে বাল রাখুন তো আপনার বালের কথা বলতে ইচ্ছে করে না? প্রায় সেরকম একটা
নন-লিনিয়ার সকালের কথা সে ভাবছিল।
সকালের প্রফুল্লনগর। পরপর চারদিন টানা
বৃষ্টির পর আজ পরিষ্কার। প্রফুল্লনগরের সাড়ে ছ’হাজার অধিবাসীদের
মধ্যে প্রায় কেউই মাকন্দোর নাম শোনেনি। সন্ধ্যেবেলার হলুদ সোডিয়াম ভেপার আলোয় জলে ডুবে
যাওয়া প্রফুল্লনগরের রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে জল ছপছপ করতে করতে বাড়ি ফেরার সময়,
তাদের, ফলতঃ, মাকন্দোর কথা মনে পড়ার কোনও কারণও নেই। মার্কেজ মারা
যাওয়ার পর কাগজে তাঁর নাম ছাপা হওয়ার পর কেউ কেউ দেখেছে তাঁর নাম। তার আগে... না। তাছাড়া
প্রফুল্লনগরের লোকের সময় কোথায় অতো? হ্যালো মার্কেজ, আপনি কখনো দক্ষিণবঙ্গের শহরতলীতে
বর্ষাকাল দেখেছেন? দেখেছেন একটার পর গলি কীভাবে জলে ডুবে থাকে টানা তিনচার দিন আর
কীভাবে চলন্ত রিক্সার খোলে জল উঠে আসে আর সকালসন্ধ্যে বাচ্চা ছেলেরা মশারির জাল
নিয়ে ড্রেনের জল রাস্তার জলে মাছ ধরতে আসে...
সেই কবে বছর
বাইশ-চব্বিশ আগে তখনকার শাসক পার্টি জোরজার করে পুকুর ভরাট করে কিছু লোকজন
বসিয়েছিলো। এখন সেখানে বেশ কয়েকটা দোতলা-তিনতলা উঠে গ্যাছে। প্রথম কয়েকবছর
বসতবাড়িই ছিলো শুধু। এখন তিনটে গেঞ্জির কারখানা আর একটা লোহার গ্রিলের কারখানা
রীতিমতো গমগমিয়ে চলে। পাড়ার চরিত্র বদলে গ্যাছে। রাতারাতি। গেঞ্জির কারখানাগুলোতে
স্কুল ড্রপআউট শিশুকিশোর শ্রমিকদের ভিড়, হইহল্লা, খিস্তিখাস্তা, মেশিনের আওয়াজ,
কাঁচামাল দিতে আর প্রোডাক্ট নিতে আসা গাড়িগুলোর আওয়াজ...। গলি পেরিয়ে এসে
পুরনো রাস্তার বাড়িগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ওইসব শ্রমিকদের আড্ডাখানা বলো আড্ডাখানা আর
পেচ্ছাপখানা বলো পেচ্ছাপখানা। নরক গুলজার। ভোটপ্রার্থীরা ঐ জমিতে আর কখনো পুকুর ফিরিয়ে দিতে
পারবেন না। কন্ট্রোল টিপে রেখে জেড টিপে আনডু করার কথা মনে পড়ে তার। হাহ্। আজকাল মাঝে মাঝেই
মনে হয় এপাড়ায় আর বোধহয় বেশীদিন থাকা যাবেনা। কয়েকপুরুষের বাস
উঠিয়ে অন্যকোথাও চলে যাওয়ার সময় হয়ে এলো বুঝি। আপাতত পায়ে পায়ে
জায়গাটা পেরিয়ে আসে সে।
বড়ো রাস্তায় এসে
দ্যাখে একটা সাইকেল ভ্যান যাচ্ছে। বাচ্চাদের মতো লাল ফ্রেমের চশমা পরা একজন রোগাটে
কালো লোক একটা হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে ঘোষণা করতে করতে যাচ্ছে ---
হ্যালো কন্ট্রোল রুম... হ্যালো হ্যালো...
একটা বেয়াড়া উপন্যাস মাঝরাস্তায় হারিয়ে গ্যাছে... জানিয়ে দিন প্লিস... পরনে কিছু
ছিলো না... হ্যাঁ হ্যাঁ নগ্ন অবস্থায়... উপন্যাসের কপালে একটা কাটা দাগ আছে... গায়ের রং লালচে
ধূসর... মানসিক ভারসাম্যের ব্যাপারে কিছু জানা নেই... সালোকসংশ্লিষ্ট মহলকে একটু
জানিয়ে দেবেন... সন্ধান পাওয়া গেলে উপযুক্ত...
আস্তে আস্তে এগিয়ে
যায় গাড়িটা। দূরত্ব... > > বাড়ে। বাড়তেই থাকে...। ফিকে হতে হতে একসময়
মিলিয়ে যায় ঘোষণা। আর শোনা যাবে না। ঘাড় ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ দ্যাখে সে। কোনোকিছুই ত্যামোন
অবাক করে না তাকে। কোথাও একটা অলীক কন্ট্রোল রুম পাশ ফিরে শোয়। আর একটা লালচে ধূসর উপন্যাস। ওষুধের দোকানে
অনেকটা সময় সে বসে থাকে। পৃথিবীতে কোথাও কোনও তাড়া নেই। যিনি রক্ত নেবেন তিনি দূরে কোথাও গ্যাছেন। অন্য কারো রক্ত
অন্য কারো সিরিঞ্জ অন্য কারো হাতে ছোট্ট লিউকোপ্লাস্ট টুকরো। ওষুধের দোকানের
পাশে একটা ফাঁকা শুনশান রাস্তা। তারপর ক্লাবের মাঠ। পাঁচিল ঘেরা। মস্ত লোহার গেট। আটকানো। রোদ বাড়ছে আস্তে
আস্তে। মাঠের ঠিক মাঝখানে একটা লোক দাঁড়িয়ে। উলোঝুলো পোশাক। পাগল? অচেনা লোক। এই এলাকায় দ্যাখেনি
তো কখনো! কোথা থেকে এলো? কীকরে ঢুকলো? ঐ
উঁচু পাঁচিল টপকে? কী গাইছে লোকটা? শোনার চেষ্টা করে সে। আরে! চেনা-চেনা তো
সুরটা। কথাগুলো ক্যামোন অস্পষ্ট লাগছে। আরও মন দিয়ে শুনতে থাকে। গেয়েই যাচ্ছে লোকটা। হুমম, এবার চিনতে
পারে... দিল সে সিনেমার সেই গানটা...
মেরা কলমা উওহী /
মেরা নগমা উওহী / মেরা কলমা কলমা / মেরা নগমা নগমা...
ঐ সুরে টানা গেয়ে
যাচ্ছে
লাল প্যান্টি খোলো /
নীল প্যান্টি খোলো / লাল প্যান্টি প্যান্টি / নীল প্যান্টি প্যান্টি
লাল প্যান্টি খোলো /
নীল প্যান্টি খোলো / লাল প্যান্টি প্যান্টি / নীল প্যান্টি প্যান্টি...
(শেষ)
[ সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে
কোনরকম মিল থাকার কথা নয়। মিল পাওয়া গেলে, তা আকস্মিক ও কাকতালীয়।]
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন