পলাশ দে’র
‘ফুঁ’ : এক ওষুধ বাস্তবতা
রিপন হালদার
একটা বই, হ্যাঁ কবিতারই, কী দেয় পাঠককে! অথবা একজন পাঠক কেন
ফিরে ফিরে আসে একটা বইয়েরকাছে! সে তো আমরাও ঝিল পাড়ে যাই জল শুকোতে!বয়স্ক আম ডালে
বসে দুলিয়ে দেই কিছুটা সময়য়! এখন কথা হল কবিতা লেখক পলাশ দেকে আমি যাপন দিয়ে চিনি।
রেল লাইনে শুয়ে থাকা ধারাল কোন পেরিয়ে,
কামরার গেটে দাঁড়িয়ে বিপরীত বিক্ষুব্ধ
বাতাসমুঠো করে হাতে, অথবা রঙিন মানুষের দেয়াল ঠেলেঠেলে পৌছে যাই মোল্লার হাট।
সেখানে এক ‘ওসুখওয়ালা’ সময়. ধৈর্য, রোদ ,বৃষ্টি গুঁড়ো
করে বানিয়ে চলেছে আশ্চর্য সব বটিকা। তারই মধ্যে নবতম ‘ফুঁ’। না। এক ফুঁ বা
নিশ্বাসে এ বই শেষ করা যায়না।সে হোক না আঠাশটি আনবিক সৃষ্টি!
“কান্না হলেই রুখে
দাঁড়াচ্ছে/জল”-এর প্রত্যয় নিয়ে সন্তানের অভিযানেরসূচনা। যার গন্তব্য পার্থিব অস্তিত্ব পেরিয়ে ধুধু ‘বাবু’ডাকের আকুতি-“তোমার স্নান করে রাখা জল, বাবু/আমি কবিতা লিখব বলে/আরেকটু/ ভেজালাম”। এ ভেজার শেষ নেই,বিশ্রাম নেই-
“যতক্ষণ ঘাম নিজের ছুটি রাখছে নিশ্বাসে”, অথবা “সে কীভাবে খিদে রঙের দৃশ্য”…
“আয়ুভর্তি সে এক জিন্দাবাদ” হয়ে উঠছে
! এটাই রহস্য!
দৃশ্য পেরিয়ে দূরবীন,
না দূরবীন পেরিয়ে দৃশ্য! সে কিছু নয়। “ দূরবীনে নগ্ন
হওয়া চোখ” আসলে “ওটা কিন্তু অনেকক্ষণ
ছায়াপোড়া এক জেহাদ”। এভাবেই পলাশের লেখায় দৃশ্যের অন্তর
ফেটে যায়। ‘ঔরস’, ‘চুপদেশ’, ‘গ্রীনরুম’, ‘পাহারা’, ‘আড্ডা’, ‘জন্মদিন’
প্রভৃতি প্রতিনিধি স্থানীয় লেখাগুলি যেকোন ভাষার সম্পদ। নতুন না পুরনো, এই দশক না ঐ- এইসব কূট প্রশ্ন হাত কচলে অন্যত্র
সরে যায়।
দৈনন্দিন যাপন-ভাঙার মধ্যে যে মেঘ ফুল হয়ে উঠছে, ঘাম আর চামড়ার
মধ্যে যে নাতিশীতোষ্ণ আলিঙ্গন, বি.টি. রোডের চলমান ধুলোয় যে অদৃষ্ট সোনাবিন্দু!
পলাশ কী অপূর্ব, কী পূর্ব সেই অভিজ্ঞতায়!
এই সময়, “বি.টি.
রোডও উবু হয়ে বসে//শুনশান জনপদ,গাড়ি চলাচল, অ্যানাউন্সমেন্ট/ স্টিয়ারিং বেঁকে গেছে যে যার আস্তানা…” অথবা, “বাড়ি বদলের মতো ঝুঁকে আছে প্রতিটি নজর”, “কাঁদতে
কাঁদতে কাঁদতে কাদঁতে, চুপ/ তোমার
শব্দ কাঙাল হয়ে উঠুক”। এরপর, “পিতাপুত্র—সম্পর্ক গুলিয়ে যাচ্ছে/ দু’জনেই পরস্পর টান দিই, চলো”। এটানের শেষ নেই…
“বেঁকে যাওয়া শব্দ আজ আর
নবান্ন হল না”-শব্দের এই নবান্নে “মৃত্যু আর ওষুধের মাঝখানে সেই যে চোয়ানো খোয়াব” পলাশের গায়ে গায়ে তার রং লেগেছে। তাই তো সে বলতে পারে-
“ আমরা ঘুরতে যাব ওষুধে
পাখি বা শিকড়ে
” …
‘ফুঁ’
পলাশ দে
প্রকাশক: ধানসিড়ি
বিনিময়: ৩০ টাকা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন