বরাবরই সময় আমার ছবিতে এসে পড়ে। সব সময় যে
তা চাই তেমনটা নয়। কারণ ছবির জগতে স্টাইল বলে একটা কথা প্রচন্ড চালু আছে। অন্যান্য
মাধ্যমেও আছে। তবে ছবির জগতে একটু বেশি রকমের প্রচলিত। স্টাইল দেখে বোঝা যায় কার ছবি। এ ক্ষেত্রে আমি
একটু পিছিয়ে। আমার স্টাইল বারবার পরিবর্তন হয় ওই সময় কে ধরতে গিয়ে। তাই বললাম সব
সময় চাইনা। কিন্তু না চাইলেও এসে পড়েই। তা এসে যখন পড়ে কি আর করা যাবে! দু একটা উদাহরণ
দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক কোন কারণে আমি গ্রামে রয়েছি। ইঁট পাথরের ধুসর কংক্রিট
জঙ্গল সেখানে দৃশ্যমান নয়। নির্মল বাতাস সবুজ প্রান্তর আর গাছপালা চোখ জুড়ে থাকে। গ্রামে
বসে যখন ছবি আঁকি হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রকৃতি এসে পড়ে আমার ছবিতে। ধুসর রং চলে
যায়, বাড়তে থাকে সবুজের সমারোহ। শহরের
মারপ্যাঁচ ছাড়িয়ে উঠে আসে সহজ প্রকৃতি।
২০০৭ এ সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের প্রভাব কোন
মানুষকে না প্রভাবিত করেছিল! আমিও ব্যতিক্রম হতে পারি না। সে সময় বা তার পরবর্তী
পর্যায়ের ছবিতে উঠে আসতে লাগল তারই প্রভাব। এখানে যে ছবিগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে তারই প্রতিচ্ছায়া। ‘বার্নিং ট্রি’, ‘ড্যান্স ইন এগনি’, ‘ড্যান্স অন দ্য
গ্রীন’ ইত্যাদি নাম
তেমনই ইঙ্গিত দেয় না কী! ভালো করে লক্ষ করলে নিশ্চয়ই বোঝা যাবে তার ভাষা। ছেটানো
রঙও বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে।
নন্দীগ্রামের ক্ষতের মধ্যেই ২০০৮ এর
নভেম্বরে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাস যেভাবে নিরপরাধ মানুষগুলোর রক্তের হোলি খেলল তাও তো
নাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা। আমাকেও তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছিল। দিন পনেরোর মধ্যেই এঁকে
ফেললাম বেশ বড় মাপের একটা ছবি ‘গ্লুমি হরাইজন’। সারি সারি মৃতদেহ শোয়ানো বিশান এক প্রান্তরে।
পিচকিরির বঙের মতো রক্তের ছিটে। আকাশে ভয়ানক অশুভ বিমূর্ত এক অবয়ব, যেন গ্রাস করতে
চায় সমগ্র চরাচরকে।
শোকের আবহে ছবিটিতে কিছুতেই রং দিতে পারলাম
না। সাদাকালোই থেকে গেল।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন