Pages - Menu

'বাক্ ৮৭' প্রসঙ্গে


'বাক্ ৮৭' উৎসর্গ করা হল মুক্তচিন্তক ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। ওঁর অনেক মতামতের সঙ্গে আমরা একমত না হতেই পারি, কিন্তু অভিজিতের মৃত্যু ওঁকে আমাদের মতামতের চেয়ে অনেক দূরে নিয়ে গেল। RIP অভিজিৎ রায়।








২০১৫ কলকাতা বইমেলার পরে বাক্-এর এটা প্রথম প্রকাশ।
২০১৫-র কলকাতা বইমেলা সম্ভবত একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিয়ে গেল, এখনও বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে যারা বাংলা সাহিত্যের মেরুদন্ড, তারা আছে বলেই আমরা শ্বাস নিতে পারছি। আবার, এখনও বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে যারা সম্পাদক-প্রকাশকের আত্মশ্লাঘা ছাড়া আর কোনো কিছুকেই পোক্ত করছে না। একটা বইমেলা আজ এটাই স্পষ্ট করে দিতে পারে যে, আমরা বাঙালি সাহিত্যকর্মীরা আজও অন্ধদের দেশেই চশমার দোকান খুলে বসে আছি, মাঝেমধ্যে দু-একজন লোক আমাদের চশমা কিনতে আসছেন, যারা এমনিতে চোখে ভালই দেখতে পান, আমাদের চশমা ছাড়া তাঁদের দিব্য চলে যাবে।
আমাদের দোকান আমাদের আত্মার আয়না হোক প্রভু
দেখতে পাচ্ছি, অনেক তরুণ কবি আবার ঝাঁক বাঁধছেন, যাতে অনেকে মিলে টিকে থাকা যায়। কবি আর পিরানহার ভেদ, কবি এবং কইমাছের ভেদ, তাঁরা স্বীকার করছেন না। এই ব্যাপার চিরকাল হয়েছে, এবং শেষ অবধি ব্যর্থ হয়েছে। 
অন্যদিকে, প্রাচীন কবি না পড়েই তরুণ কবিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছেন, অথবা মাথায় তুলে নিচ্ছেন। কিছুক্ষেত্রে কিছু প্রাচীন কবি সেইসব তরুণকেই লালন-পালন করছেন যার ফোন তিনি প্রতিদিন পান, যার কবিতায় তিনি নিজের কবিতার বিস্তার দেখতে পান, যার কবিতা তাঁকে নিজের কবিতার অমরত্বের ব্যাপারে কোনোরকম ভয় দেখায় না, অপ্রাসঙ্গিকতার ছায়া ফেলে না
ধরা যাক, একটি বিখ্যাত ও পুরোনো পত্রিকা বিসারী (কাল্পনিক)। বিসারী-তে কবিতা প্রকাশিত হলেই একজন অনায়াসে কবি হয়ে যেতে পারেন। তাঁরা নিজেদের নামে একটি অনুরূপ বিখ্যাত পুরস্কার দেন। বিসারী পুরস্কার-এর প্রাপক কে হবেন সেটা কিন্তু নির্ধারণ করেন খ্যাতনামা অধ্যাপক কবি ও প্রাবন্ধিক অজিত হালদার (কাল্পনিক)। এ বছর সেই পুরস্কার পেলেন তরুণ কবি সাগর বসু (কাল্পনিক)। অজিত হালদারের বাড়িতে সাগরের নিত্য আসা-যাওয়া। অজিত সর্বত্র মুক্তকন্ঠে বলেন শূন্য দশকের শ্রেষ্ঠ কবির নাম সাগর। তাহলে এই পুরস্কারকে আমরা অনায়াসেই অজিত হালদার পুরস্কার বলতে পারি, তাই না? এ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারত কি?
অথচ, আমরা বাঙালি কবিরা কাকের মতো তাকিয়ে থাকি কিছু পুরস্কারের দিকে। ছোট কবি ছোট পুরস্কারের দিকে, মাঝারি কবি মাঝারির দিকে, প্রবল কবি বিরাট পুরস্কারের দিকে... একটা নগন্য কিছুও যদি পাই, এবং তার পিছনে থাকে যথেষ্ট কলকাঠির নড়নচড়ন, হয়ত একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার আগেই ঠিক করা ছিল সেই বইটিকে পুরস্কার দেওয়া হবে, আমরা উদ্ভাসিত হয়ে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করি, আবেগমথিত ভাষায় সেটা নেওয়ার সময়ে নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করি, এবং ৩০০-৩৫০ লাইক পড়ে যায়।
সকলে নন। অবশ্যই বলছি, সকলে নন।
আজকাল শুরু হয়েছে শূন্য দশক এবং অন্যান্য দশক নিয়ে গদ্য লেখার চল। ধরা যাক, একজন গদ্য লিখলেন, এবং শূন্য দশকের ১০ জন কবির তাকিয়া, থুড়ি, তালিকা পেশ করলেন। সে তিনি করতেই পারেন। বাকস্বাধীনতা সবার আছে। কিন্তু, যিনি অন্য কবিদের মেধাতালিকা করার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন, তিনি কি নিজে কবিতা লিখতে পারেন? এই গদ্যটা না লিখে তিনি নিজে কিছু কবিতা লেখার চেষ্টা করতে পারতেন কি? কবিতা যিনি লেখেন তিনিই কবিতা বোঝেন, এমন দাবি আমি করতে চাই না। কিন্তু, এই প্রশ্ন তো করতেই পারি, একটি পত্রিকা কোন মাপকাঠিতে তাঁকে একটি দশকের গতিপথ বিবেচনার ভার দিল? শূন্য দশকের কোন কবি কী কাজ করছেন, সেই বিচার করবেন ২০৩০-এর কবি বা পাঠক। তার আগে কেউ সেটা নিয়ে মাথা ঘামালে নিরপেক্ষতার এবং যোগ্যতার প্রশ্ন উঠে আসতে বাধ্য।
আর্কাইভ করা যেতে পারে, শূন্য দশকের কবিতার সংকলন হতে পারে, কিন্তু শূন্য দশকের কবিতার মূল্য নির্ধারণ করার অবকাশ আসতে আরো অন্তত ২০টা বছর অপেক্ষা করতে হবে, এই আমার ব্যক্তিগত মত। এ জন্য কারো বন্ধুতা, আশা করি, হারাতে হবে না আমাকে।

অনুপম মুখোপাধ্যায় 
(পরিচালক : বাক্)




1 টি মন্তব্য: