ইন্দ্রনীল
ঘোষ
বইপত্রঃ রাত্রে ডেকো না প্লিজ (২০০৫), জুলাইওয়ালা (২০০৯), লোকটা পাখি ওড়া নিয়ে বলছে (২০১২), সার্চ করছেন দেবাঞ্জন (গদ্য, ২০১৫)
যোগাযোগঃ ghosh.indronil@gmail.com
নাহয় একটু খেলাই
হোক। একযুগ আগের এই লেখাকে লেখক আর পাঠক দু’জনেই
আবার পড়ুন। দেখা যাক, কে পালটে গেল –
ইন্দ্রনীল না ইন্দ্রনীলের যাপন !
এ’ মা – ন্যাংটো
যাপন তো একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার – নয় কি? আমার যাপন, আমি share কেন করতে যাবো? তাছাড়া নিজের বেঁচে
থাকাটা নিজের কাছে হিরো-টোন ডিমান্ড করবে – এটাই স্বাভাবিক।
অথচ তা বললেই, পাবলিক বলবে – “বাঞ্চোত নিজেকে হারকিউলিস
ভাবে রে! আর রোজ রাতে হরলিকস খায়।”
সত্যিই ইন্দ্রনীল নিয়ে আমার বলার কিচ্ছু নেই।
কতটুকুই বা চিনি আমি ওকে! কতটুকুই বা একসঙ্গে থাকা! প্রতিটা লেখার আগে বা পরে আমি
রোহিত – রোহিত কুমার। যে কালো জামা পরে, কমলা প্যান্ট, মাথায় সবুজ
রুমাল, গলায় চেন, কানে দুল আর হাতে রাবারের ব্রেসলেট।
এখন প্রশ্ন, লেখার ঠিক কতক্ষণ আগে বা কতক্ষণ
পরে, লিখবে ভেবে তুমি কি ইচ্ছাকৃত সুইচওভার করো, তুমি writer না performer
ভাই? নিজেকে বাঁচাতে হয় এই ব’লে, যে আপনারা ভুল
বুঝছেন। আসলে রোহিত কবিতা মারে, মাখে, খায়, বাঁধে। অক্ষর থেকে অক্ষরে তাকে টার্গেট
ক’রে কেউ ছুটিয়ে যাচ্ছে। ক্রিয়া থেকে ক্রিয়ায় তার অনন্ত
লুকোচুরি। প্রতি রাতে নিশপিশ করে তার হাত পা। আরো লুকো আরো চুরি আরো আরো চুরি
লুকো। সবসময় সে নাড়াতে থাকে। কারটা? ধরো নিজেরটাই।
লেখার বেশ কিছু ব্যাপার আছে, বেশ কিছু ভণিতা।
অনেকগুলো ডিম একসাথে রেখে মুরগি যা দেয় তাকে বলে জড়ো তা। তো সেভাবেই ভণিতা বণিতা
ইত্যাদি। রোহিত এসবের ধারও ধারে না। গভীর রাতে হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে সে তা দেয়
প্ল্যাটফর্মে। আর রাত ফাটে, কম্পার্টমেন্টের জেনেটিক আলো ফাটে, ঘুমিয়ে পড়া অসংখ্য
ফুটস্টেপ জেগে ওঠে। কেউ রেললাইন সেলাই করছিল। কলের শব্দে সমস্ত মানুষ, রাতের সব উৎকণ্ঠা
এক কোরাসের অংশ হয়ে যায়। আর সেই কোরাসের মধ্যেই রোহিত টের পায়, কেউ ছুটিয়ে চলেছে
তাকে। তাদের পায়ের শব্দ আশ্চর্য সব নোড তুলছে কোরাসে। শ্বাস নেওয়ার জন্য তার থামা,
হয়ে উঠছে সম্। দৌড়ে সে উঠে পড়ে কোনো ট্রেনে। ঢুকে যায় ভিড়ের মধ্যেকার এক চরিত্রে।
আগামী কিছুদিনের জন্য এই তার ঘর এই তার দীঘা।
বোহেমিয়ান? না ভাই, এ’ মিঞা বরং মিঞা কি মল্হার। উজবেকিস্তান, তাজাকিস্তান সবাই রাত ক’রে ট্রেনে ফেরে। আর এভাবেই রোহিত ম্যাপ শেখে ক্রমশ। একটা ফুঁ এর মধ্যে অজস্র
বাব্ল, দুটো বাব্লের মধ্যে অজস্র স্পেস, স্পেসের মধ্যে বাড়তে থাকা আলো, আলোর
থেকে ক্রমাগত মানুষ, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ঋতু, ঋতুচক্রের মাঝে গড়ে ওঠা বিভ্রম,
বিভ্রমের ঘুমে নামছে ফুঁ। অতএব পৃথিবী গোল এবং ম্যাপ গণ্ডগোল।
এবার ইন্দ্রনীল প্রসঙ্গে আসি। আজ অবদি যা কিছু
ভালো শুনেছি সবই এর নামে। অথচ পাবলিক আসল ব্যাপারগুলোই জানে না। IIT Kharagpur থেকে M.Tech করেছে ইন্দ্র। কখনো এই institute-এ গিয়ে দেখো, – গেট থেকে বেরোনো গরুরাও
শিং উঠিয়ে চলে, রাস্তার ধারে সহজ ঘাস খায় না। ফলে ইন্দ্রনীল অহংকারী হবে না তো কে
হবে। প্লাস ওর চাকরি – সে তো আরেক উরিবাবা। বেড়ে ওঠার জন্য ইন্দ্রর
গাড়ি চায় বাড়ি চায় ফ্রিজ ওয়াশিং মেশিন সব চায়। এমন একটা ছেলের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা
বলা যায় না। কারণ এরা রিজিড। এদের অবয়ব ভারি স্পষ্ট। এরা ভূত হতে পারে না কোনোদিন।
সারাজীবন মাথার মধ্যে একটাই বাংলো নিয়ে কাটিয়ে দেয়।
রোহিত লিখতে পারে না ব’লে, আজও পেন দিতে হয় ইন্দ্রর হাতে। এ’ আমার কবিতার এক বড় দুর্ভাগ্য।
দুর্ভাগ্য আরো অনেক। আমি বিয়ে করতে পারছি না এদের জন্য। ভাবো, বউয়ের সঙ্গে
বিছানায়। রাতের অন্ধকারে আমি তো জানতেও পারবো না, আসল কাজটা কে করলো!
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন