স্বপন রায় এর সাক্ষাৎকার
১) “নতুন কবিতা”কে কি একটা আন্দোলন বলা যেতে পারে?
আমি নিজেকে ধন্যবাদ দিই এজন্য যে “নতুন কবিতা” কোন আন্দোলন ছিল না! আমি রেজিমেন্টশন পছন্দ করিনা, তো কবিতা লেখার নামে বেশ কয়েকজন মিলে একইরকম কবিতা তৈরি করা আমার পোষাতো না, ”নতুন কবিতা”র খোঁজ এই ধরণের সস্তা চমক আর চটজলদি কিছু করে দেখানোর প্রবণতায় ছিলনা কখনো! আমি তত্ত্বভিত্তিক কবিতায় বিশ্বাস করিনা কারণ আমি পন্ডিতদের কবিতার শত্রু বলেই মনে করি, আজ পর্যন্ত যে সব পন্ডিতি নিদান দেওয়া হয়েছে কবিতাকে অন্যরকম করার নামে সে সবই কবিতাকে মূলতঃ ধ্বংস করতে চেয়েছে, বিগত শতাব্দীর উত্তরাধুনিকতা যেমন!
২) “নতুন কবিতা” মানেই ভিন্নতা, নাকি ৮০ বা ৯০ এর দশকের কবিতার বিবর্তন – আপনি কি মনে করেন?
“নতুন কবিতা”র ভাবনাতেই ছিল অনেকাকেক ভিন্নতার খোঁজ, স্বকীয়তার উত্তরণ! এই পরিসরে যে চেতনাগত ড্রাইভ কাজ করতো, তা ছিল ব্যক্তিনির্ভর!ওই সময়ে (৮০’শেষ, ৯০’র শুরুতে) সাধারণভাবে কবিতার মূল চেতনাগত ড্রাইভটি ছিল সুররিয়াল, যাঁরা লিখতেন তাঁরা এটা ধরতে পারতেন না, কারণ এঁদের একটা বড় অংশ প্রভাবিত ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায়, কেউ কেউ বা অনন্য রায়ের, এই দুজন মহান কবিই আলাদা প্রকাশভঙ্গীতে “সুররিয়াল” কবিতাই লিখেছেন! আমি নিজে এই প্রভাবটা কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকি, এর ফলে আমার কবিতা ভাবনা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মূলধারার বাংলা কবিতা থেকে, আমার বেশ কিছু বন্ধু এই ধরণের কবিতা আমায় শেষ করে দেবে বলে অভিমত দেয়, আমি তাদের বলতে পারিনা যে আমি তো পুরনো আমিকে শেষই করতে চাইছি!
৩) কোথায় দেখতে পান আজ নিজেকে?
আমার লেখা ভিন্ন হতে আরম্ভ করে আমার কাছে, যত হতে থাকে আমি ততই তখনকার বিশাল বাংলা মূল ধারা থেকে আমি দূরে চলে যেতে থাকি আর ভরে উঠতে থাকি এক লৈখিক অভিযানের আনন্দে! আমি এখনো আমার লেখাকে কবিতা হিসেবে দাবি করিনা, বলি ‘লেখা”! বাংলা কবিতার প্রায় গানধর্মী বিশাল পদ্যপৃথিবীর আমি কেউ নই, এটা সেই নব্বই দশকের শুরুতে আমায় যেমন স্বস্তি দিত, আজো তাই দেয়! আর “নতুন কবিতা”র চূর্ণ কিন্তু সংহত পরিমন্ডলে আমি আমার বিচূর্ণ বিশেষ নিয়ে আজো মজায় আছি, বেশ মজায় আছি!