নীলাব্জ চক্রবর্তী
৪
কী যোগ্যতা আছে আমার বলো। কী এমন লেখাপড়া শিখেছি? কী-ই বা চাকরী করি! উচ্চমাধ্যমিকের পর আর কলেজে ভর্তি হইনি... আর এখনকার কাজটার ব্যাপারে তোমাকে নতুন করে কী আর বলবো বলো... নামেই কোকাকোলার মার্কেট ডেভেলপার... আসলে তো দোকানে দোকানে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রিবাট্টার হিসেব রাখি আর অফিসারদের রিপোর্ট পাঠাই... কয় টাকা মায়না পাই বলো... বয়সও তো হয়েছে... আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো নীলু... আমার বাড়ির লোক তো জানে... বাড়ির লোক একটু চেষ্টা করলেই বিয়েটা ভাঙতো না আমার। আমার বৌদিই তো আমাদের বাড়ির গার্জেন। বৌদি পারত না আর একবার ওদের বাড়িতে ফোন করে কথা বলতে? পারুল কতবার বলেছে দিদিকে একবার ফোন দাও আমি কথা বলে ক্ষমা চাইব। পারুলের কাকাও কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার বৌদি তেজ দেখিয়ে বসে থাকলো। একবারও কথাই বললো না! এতো তেজ! আরে... মান-সম্মান, টাকাপয়সা সব তো আমার গ্যালো... আমি মানছি পারুলদেরও অনেক দোষ আছে... কথার ঠিক নেই... ওরা এতগুলো লোক এলো আমাদের বাড়িতে... আমরা এতগুলো লোক গেলাম... সবাই সব মুছে দিলো নীলু... এখন এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পর এই বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে... আর বিয়ে হবে আমার? তাছাড়া সব জায়গায় জানাজানি হয়ে গ্যাছে... বিয়েবাড়ি ভাড়ার টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে দিয়েছি... পাড়ার লোক... আত্মীয়-স্বজন... সবজায়গায় আমার মান-সম্মান চলে যাবে... কোথাও মুখ দ্যাখাতে পারবো আর? জানো? পারুল রোজ রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো আমার সাথে... আমি এখান থেকে ওর ফোন রিচার্জ করিয়ে দিতাম... ওর বাড়ির লোকও জানতো... তুমি কী ভাবো? আমি কি কারো সাথে কথা না বলে নিজে নিজে ডেট ঠিক করে বিয়েবাড়ি ভাড়ার অ্যাডভান্স দিয়ে এলাম? নেমন্তন্নের লিস্ট হয়ে গেছিলো... মেনু... রান্নার ঠাকুরের সাথে দুই তিন দিন কথা বলে রাখলাম... শালা... আর একটু হলে আমার আর পারুলের ট্রেনের টিকিট কেটে রাখতাম... ও আমাকে বলেছিলো বিয়ের পর অন্তত একবার গ্যাংটক নিয়ে যেতে... ও কখনো কোথাও ব্যাড়াতে যায়নি...
বিশ্বদা অনেকদিন পরে আজ। চার পেগ মাত্র। না হলেও অবশ্য এগুলো আজ বলতো আজ ও। প্রস্তুতি ছিলো। অথবা বিনা প্রস্তুতিতেও... হু হু করছে রাত এগারোটার হাইওয়ে। ঘন্টায় একশো কিলোমিটার। তবুও ফুরচ্ছে না। নাহ, খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না মনে পড়েনি তখনো... বরং, গিলা সা চান্দ... কিন্তু নীলি নদী ছিলো কি কোথাও আশেপাশে? আমি কী বলতে পারতাম তোমায় ডিয়ার বিশ্বদা?
ওখানে হর্ন বাজানোর গন্ধএকটা ঢালু ট্যাক্সি। যেভাবে সিঁদুরগন্ধ গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যায়। আমাদের সেতুবিষয়ক ভাবনাগুলো কামড়ে কামড়ে, ক্রমশ, হেমন্তকালের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিলো। হাতের তালুতে হারিয়ে যাওয়া একটাই স্মৃতিমুখর বর্ণহীন অপেরাহাউস। অথচ ব্রা-এর হুক, গলে যাওয়া একেকটা কাটা বাক্য আর ধীরে শক্তপোক্ত হয়ে ওঠা ওই পোড়ো বিকেল... সবাই মিলে একটাই ভেজা সিম্ফনি। অথচ, আমি কোনোদিন কাউকে বিয়ে করবো না... তোমাকেও না... এতদূর। দূরের কথায় মৃদু ডাকটাইল হয়ে আসে নির্বাচিত ব্যবহারসমূহ। একটা বারান্দামুখী রাস্তা। যখন ম্যাটিনি আর ইভনিং-এর ছায়া ওভারল্যাপ করে আর একটা মিহি কোলাজ থেকে একটা একটা করে ঝরে পড়া পীত অক্ষরগুলো... আসলে তুমি বরাবরই আমায় টেকেন ফর গ্র্যান্টেড ভেবেছ... যা খুশি তাই করেছ...। আসলে ওই রাস্তাগুলোতে অন্য কারো ছায়া লেগে ছিলো। অন্য কারো আলোবাতাস। রেখাচিত্রের যে দিকটায় আলো পড়েনা... দুটো অসমীকরণের সাধারণ সমাধান অঞ্চল... পেন্সিল ঘষতে থাকি ঘষতে থাকি আর কোথাও ঘন হয়ে আসে একেকটা ডার্করুম এফেক্ট।
হাওয়াকলের ভেতর বাইরে
ঝিরঝির করছে আলোর মন্তাজ
আর
একটানে নীলি নদী কে পরে
লিখে রাখার জ্যামিতিটুকু
>> --- অলীক শহর থেকে --- <<
আরও লম্বা হয়ে একটা হ্যালোওওওও
কীভাবে প্রোজেকশন ফেলছে ছোট রাস্তায়...
হ্যাঁ বিশ্বদা, বলো। এইসব বলতে পারতাম তোমায় আমি? কোনো মানে হয় বলো এসবের?
# * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * #
বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি, ৫ই মে, ১৯৮৬ – ‘ক্ষুব্ধ’ কংগ্রেস কার্যনির্বাহী সভাপতি কমলাপতি ত্রিপাঠী কি শান্ত হচ্ছেন?
উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু কংগ্রেস এম পি আজ এখানে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাখনলাল ফোতেদারের কাছে এই প্রশ্ন করেন।
মাখনলাল ফোতেদার তাঁদের ‘কূটনৈতিক’ জবাব দিয়ে বলেছেন – চিন্তার কিছু নেই। সব ঠিকমত চলছে।
কমলাপতি ত্রিপাঠীর পুত্র উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী লোকপতি ত্রিপাঠী গতকাল মাখনলাল ফোতেদারের সঙ্গে দেখা করেন। গতকাল এবং আজ লোকপতি ত্রিপাঠীর পত্নী চন্দ্রা ত্রিপাঠী এম পিও মাখনলাল ফোতেদারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওঁদের এই সাক্ষাৎকার বেশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত প্রণব মুখার্জি এবং সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া প্রকাশচন্দ্র মেহরোত্রা আগামীকাল সকালে দিল্লি ফিরছেন।
# * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * #
স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা, ৫ই মে, ১৯৮৬ – আরও এক কংগ্রেস বিধায়ক সোমবার প্রকাশ্যে প্রণব মুখার্জির শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এই নিয়ে বহিষ্কৃত কংগ্রেস নেতা প্রণববাবুর প্রতি রাজ্যের তিন কংগ্রেসী এম এল এ তাঁদের সমর্থন জানালেন। তৃতীয় এই বিধায়ক হলেন বোলপুরের ডা. সুশোভন ব্যানার্জি।
অন্যদিকে কংগ্রেস পরিষদ দলনেতা আব্দুস সাত্তার এদিনই বলেন, এ কারণে কোনও কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার তাঁর নেই। কারণ বিধায়করা কেউ এ পর্যন্ত বিধানসভার ভিতরে দলবিরোধী কিছু করেননি।
সাত্তার সাহেব বলেন, দুই কংগ্রেসী এম এল এ আনন্দমোহন বিশ্বাস এবং সমর মুখার্জি প্রকাশ্যে প্রণববাবুর পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সমালোচনা করেছেন বলে যেসব খবর বেরিয়েছে সেগুলি সম্পর্কে তিনি ওই দুই বিধায়কের কাছে লিখিত জবাব চাইবেন। জবাব এলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছে। কপি পাঠানো হবে দিল্লিতে হাইকম্যান্ডের কাছে। পার্টি নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে কংগ্রেস পরিষদ দলের কোষাধ্যক্ষ প্রফুল্লকান্তি ঘোষ সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ও পরিষদ দলনেতা সাত্তার সাহেবকে দুটি চিঠি লিখে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানোর জন্য দলীয় সংগঠন ও পরিষদ দলের দুটি জরুরি বৈঠক ডাকতে বলেছেন।
এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় প্রণববাবু দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। বহু জেলার “বিক্ষুব্ধ” কংগ্রেস নেতারা এখানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রণববাবু তাঁর বহিষ্কারের আনুপূর্বিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন। আনন্দমোহন বিশ্বাস ও সমর মুখার্জি পরে সাংবাদিকদের বলেন, বহু লোক রোজ রোজ প্রণববাবুর কাছে “সমবেদনা” জানাতে আসছেন। এদিন তাই সবাইকে একসঙ্গে ডেকে এনে তিনি মিটিং করলেন। আনন্দবাবু জানান, কংগ্রেস বিধায়ক সুশোভন ব্যানার্জি এদিনই প্রথম প্রকাশ্যে প্রণববাবুর পাশে এসে দাঁড়ালেন। এঁদের পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে – সে সম্পর্কে অবশ্য প্রণব-শিবির সোমবারও কিছুই বলেননি। আজ, মঙ্গলবার, প্রণববাবুর দিল্লি যাবার কথা। ফিরবেন দিন পাঁচেক পর।
# * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * # * #
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন