জুবিন ঘোষ এর কবিতা
সেদিন যারা মিছিলে
যায়নি
আমি মিছিলে পা বাড়াইনি,
ওখানে বড় ছিল আলো
মিছিলে
বাড়াইনি পা, ওদের স্নিকার জমকালো
আমিও
হেঁটে গেছি সে-পথে, কাঁধে রেখেছি হাত
প্রতিবাদ
ও প্রত্যয়ের; মিছিল এগিয়ে চলে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে।
মিছিলে
হাঁটে কারা? — রাষ্ট্র ও ওরা !
উচ্ছৃষ্ট
কিছুই নেই, ছেড়ে ক্ষমতার চটি-জোড়া
খালি
পায়ে হেঁটে গেছি এপ্রান্ত অপ্রান্ত
তবু
মিছিলে হাঁটিনি ব’লে ‘বিরোধী’ নামান্তর !
কাদের
বিরোধী আমি? মিছিল দেখেনি সেসব—
পায়ুদ্বারে
ঢুকে যাচ্ছে পুলিশের কফ, পুলিশের যোনি
তবু
মিছিলে হাঁটেনি দার্শনিক, নাহ্ এক পা-ও না
ভুখা
পেট হাঁটব কীভাবে? মাথার ওপরে শনি, দেবতার ভ্রম ;
হাঁটব
কতক্ষণ? মিছিল এগিয়ে চলে যেদিকে সিংহাসন।
যারা
মিছিলে পা বাড়ায়নি ব’লে অবরুদ্ধ গ্রাম, বন্ধ স্যালো
আমি
মিছিলে মেলাইনি পা, তাই রাষ্ট্র চমকালো !
একদিন মাঠে নামবোই
একদিন মাঠে নামবোই গোল দেব পাঁচে-পাঁচশো
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালেই গোল দেব পাচে-পাঁচশো
তাকিয়ে দেখছি অবাক তোর চলতে ফিরতে বসতে
দুই-দুটো বল আহা যেন আটকে
গোল পোস্টে
হাত নিশপিস হ্যান্ডবল লাগছে
নিজেকে গাম্বাট
সবাই মাঠেতে খেলছে বুক পকেট
ভর্তি লালকার্ড
আজকে সামনে মাঠটা চল্ একাই
কাফি জিততে
হাওয়া আছে কিনা বলটায়,
বলেছিলে ডেকে টিপতে
নিদারুণ সে ব্যথায় দুলছে
অরূপ দোলনায়
রেফারি বাজিয়ে বাঁশি বোঝালো
এটা গোল নয়
যত দলবদলের চুক্তি ঘুরে
বাতিল করে সেইসব
ফিরে আসবো মাঠের কাদাতে
ফিরে আসবে মাঠের শৈশব
জামা খুলে আজ ওড়াবোই ভরা
মাইকের ধারাভাষ্যে
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালে গোল দেব পাঁচে-পাঁচশো
একদিন মাঠে নামবোই গোলা
ফুটবল হবে ময়দা
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালেই সহমরণে যাবে ময়দান
সে যুযুধান মাঠে নামলে আমি ও ফিদেল কাস্ত্রো
অভ্যুত্থান হবে নৈতিক
বিদ্রোহী হবে রাষ্ট্র
রাক্ষসগণ
চলে যাব, হয়তো ভীষণভাবেই
চলে যাব।
যদি
কাউকে না পারি, ওষ্ঠে তোমায় রেখে যাব।
তখন
আমার রাক্ষসগণ হাত দেখে চমকে যেও না।
আকাল
ও আকাট মূর্খ অবস্থা, জিন্সের ছেঁড়া প্যান্ট
আমার উদ্ধত কালো হাত, নখের
থাবা দেখে ঘৃণা করো না ;
কাঁকড়া
তুলে নিতে সুগন্ধী বালির পাহাড় তুলে বসো।
আড়ষ্ঠতায়
দৌপদীরং শাড়ি, লুকোনো অরণ্য
জবরজং
ইমিটেশন সাজিয়ে বসলেও
হঠাৎ
আমি সেই রাক্ষসগণ স্বভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলে
ভেড়ার
দুর্বলতায় থমকে যেও না। খাবার দিও।
এই কুৎসিত পশুত্বেও একদল
ক্ষুধার্থ মানুষ লুকিয়ে রয়েছে
মুথা ঘাসের আড়ালে ; অসম্ভব ভীত বাইসনের মতো
বেপরোয়া
ভয় নিয়ে রাতে ঘরে ঢুকলেও জেনো, ভাতারখাকি
প্রতি
রাতে দুটো অপুষ্ট হাত অপেক্ষা করে রয়েছে সংগ্রামীর।
‘চলে
যাব’--ভাবলেই মনে হয়, কেউ আসুক তারপর যাব।
কাউকে
আসতে দিতে হয় মাধবীলতার পেছনে।
আমার
বাড়ির গেটে কোনও সিনড্যারেলা চটি ফেলে যায় না—
রাত কাটলে,
জানালা দিয়ে দেখি—নিতম্ব
নতজানু হয়ে জানায়, সকাল হয়েছে !
Valo laglo jubin
উত্তরমুছুনবাক্ এ ছন্দের কবিতা! ওয়াও! এইটথ ওয়ান্ডার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ,
উত্তরমুছুনতবে যে একদিন দেখছিলাম , ছন্দ বাংলা অনার্সের সিলেবাসে থাকুক আপত্তি নেই কিন্তু কবিতায় নৈব নৈব চ! ইত্যাদিইত্যাদি …
ক্যামন দ্বিচারিতা হয়ে গেল না?
এবার পার্টিকুলার জুবিনের তিনটে কবিতা নিয়ে বলি , প্রথমটার সাবজেক্ট ম্যাটার ভালো। ফর্মে গুলিয়েছে।
অর্থাৎ ছন্দপতন , দ্বিতীয়টার আরো বাজে অবস্থা।
দ্বিতীয় মালটা অ্যাকচুয়্যালি ৬/৬/৬/৩ এর কলাবৃত্রে নামলে পাঠে এবং শ্রবণে সমস্যা হতোনা। মোটামুটি ফর্মটা এরকম হতে পারতো …
এক দিন মা ঠে/নাম বোই আমি/গোল দে বো পাঁ চে /পাঁচ শো
২+২+১+১/২+২+১+১/২+১+১+১+১/২+১
স্টিপ খু লে তুই/দাঁ ড়া লেই আমি/গোল দে বো পাঁ চে /পাঁচ শো
২+১+১+২/১+১+২+১+১/২+১+১+১+১/২+১
তা কি য়ে দেখ ছি/অ বাক রে তোর/চল তে ফির তে/বস্ তে
১+১+১+২+১/১+২+১+২/২+১+২+১/২+১
দুই দু টো বল /আ হা যে ন গিয়ে/ আট কে ছে গোল /পোস্ টে
২+১+১+২/১+১+১+১+১+১/২+১+১+২/২+১
যেহেতু এরকম হয়নি , পড়তেপড়তে বিস্তর হোঁচট খেতে হচ্ছে। কবি কিংবা সম্পাদক যেকেউ একজন আরো একটু সিনসিয়ার হলে লেখাটার মানোন্নয়ন ঘটতে পারতো।
তবে হ্যাঁ , শেষ লেখাটা ভালো লেগেছে। সুন্দর বিস্তার , তেমনি চোখা কনটেন্ট।
হোয়াটএভার …বাক্ টীম ও জুবিন উভয়কেই শুভেচ্ছা রইল
মুছুনপীযূষ, প্রথমেই জানাই তোমার মতামত এবং অনেকটা পরিশ্রম করে তোমার মতো করে দেখিয়েছ দেখতে পেয়ে ভালো লাগল । তোমার সংস্কৃত ছন্দের মেধাকে শ্রদ্ধা করেও বলি প্রথমটা অর্থাৎ 'সেদিন যারা মিছিলে যায়নি' কবিতাটিকে তুমি কোন ছন্দে ধরছ বোধগম্য হল না । যে কবিতা চোরাছন্দে ঘুরছে তাকে যদি তুমি সরল কলাবৃত্ত, মাত্রাবৃত্তে ধরো তাহলে তো গুলিয়ে যাবেই । দ্বিতীয় কবিতাটায় তোমার চেষ্টাকে একটুও খাটো না করে বলছি তোমার পর্ব বিভাগে ভুল আছে। চলন আর পর্ব বিভাগে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে সেটা টিপিক্যাল একাডেমিক ভাগ ও বিশ্লেষণ করে দেখালে ভালো হত। বিভাজন বুঝতে না পেরে তুমি যেটা করেছ তাতে কবিতা পাঠের রসটাই চলে যাচ্ছে সেটা তুমি খেয়াল করেছ কিনা জানি না। তুমি যেভাবে লিখেছ আমি তো এভাবে বলতেই চাইনি । পাণ্ডিত্ব আর কাব্যে বড় বিরোধ জানো কি?
পুনশ্চ – তোমার মন্তব্যে 'মিশ্র কলাবৃত্ত' বানানটা ঠিক করে নিও । ওটা 'মিশ্র কলাবৃত্র' নয়, ‘'মিশ্র কলাবৃত্ত'’ হবে। এই মূল্যবান আলোচনায় তোমার মন্তব্যে কলাবৃত্ত বানানটাই ভুল থাকলে খারাপ লাগে। ভালো থেকো।
শেষ কথা, টেকনিক্যালি ভুল না থাকলেও তবুও তোমার সমালোচনায় উপকৃত হলাম। কারণ একটা কথা আছে ‘আফটার ক্রিয়েশন দ্য ক্রিয়েটার ইজ্ ডেড’।
১/ পান্ডিত্য দেখানো মনে হলো কেন বুঝলাম না। মানে আমি যদি ইন্টারেস্টেড হয়ে একটা ব্লগজিন পড়তে ঢুকি , এবং সেখানে যদি আমার মতে কোন ত্রুটি চোখে পড়ে , সেটা বলাকে পান্ডিত্যের টুঁটিবাজি ভাবলে তো সমস্যা। আমি যতদূর জানি , বাক্ সমালোচনার ক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবল্, সুতরাং এমন রিয়্যাকশনের কারণটা যথাযথ মনে হলো না। টানা পড়ে আসছি। ভালোলাগার সাথে মন্দলাগাটাও বলতে কার্পণ্য করিনি। তোমার আউটব্রাস্টটাও অবশ্য সে ধারার পরিবর্তন করতে পারবে বলে মনে করিনা।
উত্তরমুছুন২/ মিশ্র কলা বলিনি। বলেছি কলাবৃত্ত।আর সেটা যদি বৃত্র হয়ে থাকে তো সেটা টাইপো নাবলে ভ্রান্তি হিসেবেই নিলাম। তুমি বোধহয় রাগের চোটে সেটাও দ্যাখোনি। মিশ্র হলে সবসময় রুদ্ধের দুইমাত্রা করে নিতাম না , এই ব্যাপারটাও তোমার নজর এড়িয়ে গেল কিকরে? আর একাডেমিক ভাগ টা দেখার জন্যে মুখিয়ে রইলাম। কারণ শিখতে ক্ষতি কি?
৩/ চোরা স্রোত বা ডাকাতে স্রোত যায় হোক না কেন তার একটা ইউনিফর্মিটি থাকবে। এক্ষেত্রে সেটা নেই। তাই যেকোন ঠিকঠাক পাঠকেরই পড়তে সমস্যা হবে।
এখন তুমি কি করবে সেটা তোমার ব্যাপার। আবার চরম ব্যক্তিআক্রমণে যাবে নাকি একাডেমিক ভাবে স্রেফ ছন্দের ফ্লো'টা দেখিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দেবে ,
সেটা তুমি ঠিক করো।
তবে যায় হোক না কেন , আশা করি ব্যক্তিগত সম্পর্কে এর কোন প্রভাব পড়বে না। কারণটা তুমি বলেই দিয়েছো -
" ক্রিয়েটর…… ইত্যাদি ইত্যাদি। "
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুনআমি যে কবিতাগুলো পাঠিয়েছিলাম সেগুলো কি এগুলোর চেয়েও কাঁচা ছিল? তবু ছাপা হল না। আসলে আমার নাম নেই তো। নাম করলে অখাদ্য লেখাও বেরিয়ে যায়।
উত্তরমুছুনআজকাল দেখছি তর্ক মানেই একটু হলেও তেতো সুর। যাই হোক। কিছু কথা এবার আমাকে বলতেই হয়। ১। 'বাক'-এ ছন্দের কবিতা ছাপা হয় না এটা আদৌ জগতের অষ্টম আশ্চর্য নয়। শ্যামলকান্তি দাশ... এই নামটা সার্চ করলেই দেখা যাবে খুব উৎকৃষ্ট ছন্দের কবিতা এখানে ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। ছন্দের কবিতা লেখা এবং বাংলা অনার্সের ক্লাসের প্রসঙ্গটা অবশ্যই আমার সমবয়সী বা অনুজ কবিদের ক্ষেত্রে আমি বলেছিলাম। সেখান থেকে সরে আসার কোনো কারণ আমি দেখছি না। একজন সমপ্রজন্মের কবি হিসেবে এবং পাঠক হিসেবে জুবিনের এই কবিতাগুলোর নির্মাণ আমি সমর্থন করছি না। আমার মনে হয়, এই লেখাগুলো বিংশ শতাব্দীতেই তাদের তাৎপর্য রেখে এসেছে। জুবিনের যে ধরণেরর লেখার আমি পাঠক হতে চাই, এরা তা নয়। আজই 'কেতকী' পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় ওর একটা লেখা পড়লাম। ভাল লাগল। আমি জানি না ও এই লেখাগুলোর জন্য আমাকে কেন বাছল। সেটা ওর ব্যাপার। যাই হোক, আমি বহুবার বলেছি, নিজের সমর্থন অনুসারে 'বাক'-এ আমি সবসময় কবিতা প্রকাশ করি না। আমার অন্যতম লক্ষ্য ডকুমেন্টেশন... এই পরিসরে কে কেমন লিখছেন, একটি পত্রিকার তা অন্যতম মিশন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। ২। আমন্ত্রিত লেখার ক্ষেত্রে একমাত্র বানান ছাড়া কোন প্রশ্ন আমি তুলি না। জুবিন ছন্দ ভুল লিখেছে, না ঠিক লিখেছে, সেটার দিকে আমি দৃকপাত করব না, কারণ আমি তার কাছে কবিতা চেয়েছি, এবং নির্বাচনের ভারটা তার উপরেই। যদি কোনো কবি ভুল ছন্দের কবিতা দেন, তার দায় কবির নিজের। জুবিন যদি এখানে ছন্দে ভুল করত, বা করেও থাকে, সেই ভুল ছন্দের কবিতাই প্রকাশিত হবে। কবিতা-সম্পাদক হিসেবে আমন্ত্রিত লেখার ব্যাপারে এটা আমি মেনে চলি। যদি জুবিন নিজের থেকে আমাকে লেখা দিত, আমি ছন্দ কেন, অনেক ব্যাপারেই নাক গলাতাম। যদি বলেন সেটা কেন, আমি বলব কখনও কখনও আমি কবিতার বদলে কবিকে বেছে নিই, তিনি তাঁর স্বাধীনতায় আমাকে লেখা দিতে পারেন এবং এই রিস্ক নিতে আমার ভাল লাগে। শেষ অবধি রিস্ক তো তাঁরই।
উত্তরমুছুনসৈকত দাস, আপনি আরো কয়েক জায়গায় অভব্যতা করেছেন। এমনকি অমিতাভ মৈত্রর কবিতার তলায়। এটাকে বন্যতাও বলা যায়। আপনি কি কখনও আমাকে কবিতা পাঠিয়েছিলেন? আমার মনে নেই। আপনার এই আচরণের পরে স্মৃতিকে কষ্ট দিতে আর ইচ্ছেও করছে না।