• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

অনিমিখ চক্রবর্তীর কল্পনাশক্তি (৫ম পর্ব)

অনিমিখ চক্রবর্তীর কল্পনাশক্তি : একটি পুনরাধুনিক উপন্যাস
অ নু প ম  মু খো পা ধ্যা য়

এখানে একটা কোল্ড স্টোর আছে এখানে সবাই সেটাকে পোড়া কোল্ড স্টোর বলে সেই যে, আগুন লেগে পুড়ে গিয়েছিল কয়েক বছর আগে! স্কুলে যাওয়ার পথে দেখেছ নিশ্চয়ই? ওটার সামনে তুমি বাইকটা রেখে দেবে
সে কি! চুরি হয়ে গেলে!
কিছু হবে না বাইকে চাবি না দিলেও চুরি হবে না সকলে রাখে -ও রাখে নিজের বাইক পাড়ার রাস্তাটা খুব সরু বাইক নিয়ে ঢুকতে অসুবিধা হবেতাছাড়া লোকের চোখে পড়বে
আচ্ছা তারপর?
কোল্ড স্টোরের পাঁচিলের পাশে যে মোরাম রাস্তা, সেটা নেবে কিছুটা এগোলেই একটা পাড়া পড়বে তুমি অন্য কোনো দিকে যাবে না, ওই রাস্তা বরাবরই হাঁটবে উপরের দিকে চোখ রেখো, আমি একটা সাদা একতলা বাড়ির ছাতে দাঁড়িয়ে থাকব আমাকে তুমি দেখতে পেলেই নেমে চলে আসব তুমি কাউকে কিছু বলবে না, দরজা খোলা থাকবে, তুমি সোজা ঢুকে যাবে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিও, কেউ যেন তোমাকে ঢোকার সময় না দেখে
ওকে
খুঁজে নিতে কোনো সমস্যা হলে আমাকেই ফোন কোরো ওখানে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না

বেশ কিছুদিন পরে বাইক নিয়ে আবার সেই পুরনো রাস্তায় অনিমিখ বেরিয়েছে হেডমাস্টারকে জানিয়েছে পুরনো স্কুলে এক সহকর্মীর বৌ-ভাত, তাকে আসতেই হবে রিয়াকে বলেছে পুরনো স্কুলের অফিসে কিছু কাজ আছে, আজ তাকে আসতেই হবে কেউ সন্দেহ করেনি সন্দেহের কোনো সুযোগই নেই
আজকের দিনটা পুরোপুরি শীতকালের মতোইসকালের কুয়াশা কেটে গেছেআশ্চর্য একটা রোদ্দুর উঠেছেশহর থেকে দশ কিলোমিটার এগোলেই রাঢ়ভূমির গন্ধ বাতাসে ভারি হতে শুরু করেএই রাস্তায় বাস খুব বেশি যায় নাঅন্য গাড়ির সংখ্যাও কমঅনেক নিরুপদ্রবে বাইক চালানো যায়শুধু এক্সিলেটর ধরে বসে থাকলে হয়দুদিকে দিগন্ত অবধি বিস্তৃত চাষের মাঠ ছড়িয়ে আছেতার উপরে ঝকঝকে নীলাকাশরাস্তাটা চকচক করছেকয়েক মাস আগেই এই রাস্তায় নতুন করে পিচ ঢালা হয়েছেতার আগে অবস্থা বেশ খারাপ ছিলবাইক যত এগোচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যা কমছে। মাটির লাল বাড়ছে অচেনা গাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে বাতাসে বুনো গন্ধ বাড়ছেবাবলা গাছ এই এলাকায় প্রচুর হয়আর নাম-না-জানা কিছু ফুলসত্যিই এই এলাকার এই ফুলগুলোর নাম তার জানা হয়নি আজও অবিশ্যি হতেই পারে এদের কোনো নাম আজও রাখা হয়নি। হঠাৎ দেখা দিচ্ছে কোঠাবাড়ির দেওয়ালের আলকাতরা রং চালের খড়উঁচু উঁচু বেঢপ আল যেখানে সেখানে নিয়ম ছাড়াই দাঁড়িয়ে পড়া তালগাছ
কয়েকটা তালগাছ একজোট হলে তাদের পিছনে কিছু জল হাজির হয়
একটু পরেই শালবন শুরু হবে।

এই অঞ্চলের কতটুকুই অনিমিখ জানতে পেরেছে! অথচ সকলে মনে করে সে জঙ্গলমহলে চাকরি করে, তাই তার কবিতায় অত প্রাণ ! হয়তো এই ফুলগুলোর রূপের মতোই নামেও আছে অপরূপ ধ্বনির সম্ভাবনা ! শুধু একবার প্রয়োগেই একটি কবিতায় তারা উচ্ছলতার বান ডাকিয়ে দেবে! আট বছর মোরগমারিতে থেকেও অনিমিখ সুযোগটা নিতে পারেনি, কাল্পনিক নিসর্গের কথাই লিখেছে কবিতায়
সুযোগ কারো অপেক্ষায় বসে থাকে নাআসে, চলে যায়সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছিনিয়ে নিতে হয়
আজ তার ছিনিয়ে নেওয়ার দিন
কিন্তু এবার তার একটু ভয় করছেঅমূলক ভয়বইয়ের সব অংক তৈরি থাকার পরেও যেমন পরীক্ষার দিন সকালে উঠে ভয় করত, বারবার জলতেষ্টা পেত, ঠিক সেরকমপ্রথম দিন মঞ্চে কবিতা পাঠ করতে ওঠার ভয়এই ভয়ের কোনো ওষুধ নেইএই ভয়ে কোনো সমস্যাও নেইএই ভয় বেশ মজারএটাকেই হয়তো রোমহর্ষণ বলেখুব কমই তো সুযোগ আসে, জীবন হয়ে ওঠে রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ! ভাগ্যবানরা এই সুযোগ পায়আরো ভাগ্যবানরা পেয়ে সুযোগটা হারায় না
এরকমই ভাবছিল অনিমিখতার বাইক ছুটে চলেছিল ঘন্টায় পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে
শালবন শুরু হয়ে গেল
আর দু-তিন কিলোমিটার যেতেই এসে পড়ল অন্বেষার গ্রামশহর বলতে ইচ্ছে করে
পিচরাস্তার ধারেই পোড়া কোল্ড স্টোরসে চিনতএকবার দেখলেই বোঝা যায় সেটার নতুন নামকরণ সা্র্থক হয়েছেপ্রায় একটি ছোট কালো টিলার আকার নিয়েছে সে, কোনো অংশেই আগুন তার জিভ বোলাতে বাকি রাখেনি
অন্বেষার কথাই ঠিকসামনে বেশ কিছু বাইক রাখা আছেএই জায়গাটিকে অনেকেই বাইক রাখার জন্য ব্যবহার করেসে- বাইকটি রেখে দিলহ্যান্ডেল লক করতে ভুলল নাহেঁটে পাড়াটির মধ্যে ঢুকলবেশ সম্পন্ন লোকজন এখানে বাস করেসম্ভবত মাহিষ্যপাড়াধানের গন্ধ আসছেরান্নার গন্ধছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করছেচোখ ঘোরালেই দেখা যাচ্ছে ঝকঝকে পেতলের বাসন-কোসন, স্বাস্থ্যবান গরু, উদ্যোগী পুরুষদের কর্মব্যস্ততা
অন্বেষাকে একটু পরেই অনিমিখ দেখতে পেল একটি সাদা বাড়ির ছাতেঅলসভাবে রোদ পোহানোর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেতার সঙ্গে চোখ মিলতেই নেমে গেলঅনিমিখ চারদিকে চোখ বোলালএখানে দেখার মতো কেউ নেই ধারেকাছেশুধু একটি সাদা বিড়াল হেঁটে যাচ্ছে
অনিমিখ দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল 

এই কয়েক সপ্তাহে অন্বেষা খুবই রোগা হয়ে গেছেতাতে অবিশ্যি আরো রূপসী হয়েছেএকটা চমৎকার নাইটি পরে আছেখুব সুন্দরভাবে হেসে বলল, আসুন স্যার
আবার স্যার!
সামনে দাঁড়িয়ে ওটাই বলার অভ্যাস কিনা! হি হি…’
তাহলে একটা কাজ করি? একটু বাইরে যাইফোন করিঅভ্যাসটা চলে গেলে আবার আসি
অন্বেষা হেসে অনিমিখের হাত ধরল, অভ্যাস ওইভাবে কাটালে আমাকে পাড়া ছাড়তে হবে অনিমিখদাহয়তো চাকরিটাওভেতরে এসো
সুখে রেখেছে কিনা বলা যায় না, তবে অয়ন তার বৌকে বেশ আরামে রেখেছেঅবিশ্য বৌয়ের নিজেরই পয়সাতেই হয়তো কেনা হয়েছে সেই আরামঅন্বেষা সত্যিই অনিমিখের চেয়ে অনেক বিলাসবহুলভাবে জীবন কাটাচ্ছে এখানে বিরাট রেফ্রিজারেটর, দারুণ সব আসবাব, দুর্দান্ত রান্নাঘর, বাথরুমে গরম জলের ব্যবস্থা, মার্বেল পাথরের মেঝে, বসবার ঘরে এসি বসানো আছে মোরগমারির কোনো শিক্ষক নিশ্চয়ই অন্বেষার বাড়িতে আসেনিএলে এসব শোনাই যেতঅনিমিখের একটু হীনমন্যতা জন্মাচ্ছিলসে বলল, সত্যিই তুমি আরামে আছো!
তাই? শুধু বাইরের আরামটাই লোকে দেখে
লোকে শব্দটা অনিমিখের কানে খট করে লাগলঅন্বেষাকে ওই কথাটা বলা তার ঠিক হয়নি, নিশ্চয়ই ঈর্ষার সুর বেজেছে! সে হেসে অন্বেষার কাঁধে হাত রাখলসেই হাত সরিয়ে দিয়ে অন্বেষা বলল, চলো, শোবার ঘরেই বসা যাকএখানে জানালা দিয়ে কে জানে কে এখুনি দেখে ফেলবে! কী যে এলাকায় বাস করতে হয়! সবাই নজর রাখে এখানে কে কার বাড়িতে আসছে, কতক্ষণ থাকছে, কখন যাচ্ছে …’
গ্রামে সেটাই হয়
হ্যাঁমানুষ এত সময় এখানে কোথা থেকে পায় কে জানে! এদিকে সারাদিন তো খেটে যাচ্ছে…’
খাটুনির মধ্যে পরচর্চাটাই এন্টারটেইনমেন্ট
শোবার ঘরটাও দারুণহাল্কা ভল্যুমে রবীন্দ্রসঙ্গীত চলছে মিউজিক সিস্টেমেরুম ফ্রেশনারের মৃদু গন্ধমন ভরে গেলকাউচ থাকলেও অনিমিখ বিছানাতেই বসলঅন্বেষাও বসল, একটু দূরত্ব রেখেবিছানায় গদি নেইশুধু একটি তোষক পাতা আছেজিজ্ঞাসা করতে অন্বেষা মুখ নামালবলল, গদিটা সেদিন নষ্ট করে ফেলেছিপ্রচুর ব্লিডিং হয়েছিল ফোন করেছিলদোকান থেকে লোক এসে আজই নিয়ে গেছেমেরামত করে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে
অনিমিখ অপ্রস্তুত হলঅন্বেষাকে কি সন্তানহারা মা হিসেবে কল্পনা করা যায়?
সম্ভবত নাওর মুখে শোকের কোনো ছাপ নেইঘটনাটা ওর কাছে হয়তো শুধুই অপমানজনক
অনিমিখ জিজ্ঞাসা করল, অয়ন কী বলছে?
ওকে বোঝা যায় নামুখ ফুটে তো কিছু বলবে না, তবে মনে হয় খারাপ লেগেছেসেটা স্বাভাবিক
আমি অনেক কিছু শুনেছি
যেমন?
যেমন নাকি প্রচুর মদ-টদ খায়, খুব বদমেজাজি…’
অনেকটাই রটনা মোটেই অত খারাপ মানুষ নয়মদ তো আজকাল সকলেই খায় বরং কমিয়েছে অনেক আগের চেয়েআর, কোন পুরুষ মেজাজ খারাপ করে না বলো তো?
অনিমিখ হাসল, আমি করি না
সেটা আর বোলো নাতুমি যা রাগী, বাবা ! স্কুলে সবাই তোমাকে ভয় পেত
তুমিও পেতে?
পেতাম
আর এখন?
কী জানিভেবে দেখতে হবে
দুজনেই হাসল
একটু চুপ করে থেকে অনিমিখ বলল, একটা কথা বলো তো, তুমি ওকে এখনও ভালোবাসো?
অন্বেষা যেন উত্তরটা দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল, বাসিহয়তো আগের মতোই বাসি রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি করলে এখনও আমার ঘুম আসে নাভালোবাসা জিনিসটা তোমরা যত ভাবো ততটা সহজে মরে না অনিমিখদা
অনিমিখ চুপ করে গেলসেটা লক্ষ্য করে অন্বেষা হাসিমুখে বলল, এখন আমার চিন্তা আরো বেড়ে গেছেতুমিই বাড়িয়ে দিয়েছএখন তোমার সঙ্গে সারাদিনে একবারও কথা বলতে না পারলে ঘুম হয় নাঘুমোলেও উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখি
অনিমিখ সরে গেল অন্বেষার কাছেগায়ে হাত রাখার আগেই অন্বেষা উঠে পড়লবলল, স্নান করেছ?
শীতকালে রোজ-রোজ স্নান করি না আমি
নাওটা মোটেই ভালো নয়স্নান করে নাওখিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? আমি দেখি কী করা যায়…’
আরে, দরকার নেই…’
কী মুশকিল! আমাকেও তো কিছু খেতে হবে!
অনিমিখ হঠাৎ হেসে উঠলঅন্বেষা প্রশ্নের চোখে তাকাতে সে হাসতে হাসতেই বলল, আয়ান তাহলে কী খেয়ে গেল? অয়নের নামের মজাটা এইমাত্র তার মাথায় এসেছে
আয়ান!
আরে তোমার বরের নামের ইংরেজি বানানটা ভাবো A Y A N হা হা হা হা …’
বুঝেছিআর তুমি বুঝি কৃষ্ণঠাকুর? এটা কিন্তু খুব অন্যায়! যাই, রান্নাঘরে ঢুকি

অন্বেষা বেরিয়ে যাওয়ার পর অনিমিখ মিউজিক সিস্টেমটা একটু নাড়াচাড়া করলসেতারের একটি সিডি চালালবন্ধ করে রাখা জানালাদুটির একটি অল্প খুলতেই মাঠের কনকনে হাওয়া এসে ঘরে ঢুকলসে সেটা বন্ধ করে দিল আবারঅন্যটা মনে হল পাড়ার দিকে খোলেসেটা বন্ধ থাকাই ভালো
আলনায় রয়েছে অয়নের কিছু জামা প্যান্ট কোট সোয়েটার অন্তর্বাসসেগুলোয় হাত রাখল সেঅদ্ভুত লাগলএই লোকটা জানেই না সে এখন এখানে, তার বৌয়ের ঘরেজানলে কী করত? দৌড়ে আসত খোলা ছুরি হাতে নিয়ে? একটা পিস্তল জোগাড় করার চেষ্টা করত কি? এই পাড়া কেঁপে উঠত গুলির আওয়াজে আবার খুব হাসি পেল অনিমিখেরদুলে দুলে হাসতে শুরু করল একা ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে
আলনায় অন্বেষারও শাড়ি রয়েছে, চুড়িদার রয়েছে, শায়া-ব্লাউজ রয়েছে
একটা কালো রঙের ব্রা রয়েছে
অনিমিখ টের পেল তার বুক আবার কাঁপতে শুরু করেছেসে একটু ছুঁয়ে দেখল ব্রাটিকেহাতে নিয়ে দেখতে চাইল নাএকটা কাপড়ের টুকরো ছাড়া কিছু তো ওটা নয়!
রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে ধাতব আওয়াজতার জন্য খাবার তৈরি করছে মেয়েটা কি কল্পনা করছে, সেই খাবার কেমন অনিমিখের ঠোঁট ছুঁয়ে দাঁত পেরিয়ে জিভ পেরিয়ে গলা দিয়ে নেমে যাবে এক অন্ধকার জগতের দিকে? সেই জগতে কোনো স্বাদ বা গন্ধ কাজ করে নাখিদে ছাড়া অন্য সবকিছু জিভেই ফুরিয়ে যায়পাকস্থলীতেও যদি স্বাদকোরক থাকত!
অনিমিখ গেল রান্নাঘরের দিকেঅন্বেষা গ্যাসটেবিলে ব্যস্তপিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরল ধ্রুপদী ভঙ্গিতেদুটো হাত রাখল ওর পাথুরে দুই স্তনেঠোঁট ডুবিয়ে দিল ঘাড় এবং কাঁধের সংযোগস্থলে আলতো জিভ লাগালঅন্বেষা ছাড়িয়ে নিল না নিজেকেঅবিশ্যি সাড়াও দিল নাএকটু পরে দমবন্ধ গলায় বলল ছাড়ো অনিমিখদাকী করছো? চলো স্নান করে নেবে
অনিমিখ ছেড়ে দিল অন্বেষাকে সঙ্গে সঙ্গেঅন্বেষার গলায় যেন অভ্যস্ত সুর! অবাক হয়ে ভাবল, ঠিক এইভাবেই কি এর আগে কাউকে বলেছে আলিঙ্গন খুলে দিতে? সে কি শুধু অয়ন? অয়নকে দাদা সম্বোধনের অভ্যাস কোনোদিন কি তৈরি করেছিল? নাকি আরো কেউ আছে? আরো বেশ কয়েকজন, সেই কিশোরীবেলা থেকে? সত্যিই কি অনিমিখ এই মেয়ের জীবনে দ্বিতীয় একজন? নাকি, অনেকের একজন?
অনিমিখ বুঝতে পারছিল তার কল্পনা আবার তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে
অন্বেষার পিছনে সে আবার এল শোবার ঘরেঅন্বেষার পা যেন ভারি হয়ে টলমল করছিলআলনা থেকে  তোয়ালে দিল তাকেমুখের দিকে তাকাল না
এই তোয়ালে সে পরবে! এগুলো তো চেয়ারে ব্যবহার করা হয়! কিছু না পরার সঙ্গে পার্থক্য তো কিছুই থাকবে না! খাটো তোয়ালেটা কি অন্বেষা তার কথা ভেবেই এখানে রেখেছে! এবার কি তাকে অন্বেষার কামুক কল্পনার সঙ্গেও দৌড় শুরু করতে হবে? লুকোচুরি খেলতে হবে, অবাক করে দিতে হবে ওকে? হারিয়ে দিতে হবে?
পোশাক মেঝের উপরে খুলে রেখে তোয়ালে পরলঅন্বেষা যদিও একবারও তার দিকে ফিরে তাকাল না, অনিমিখের নিজেকে একজন জিগোলোর মতোই অনাবৃত মনে হচ্ছিল, ব্যবহার্য মনে হচ্ছিল
স্নানঘরে গেলশাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে যত্ন নিয়ে পরিস্কার করতে শুরু করল নিজেকেবাড়িতে স্নান করেছিলসেই স্নান অন্বেষার যোগ্য ছিল না, এখন মনে হচ্ছেআয়নার সামনে দাঁড়ালনিজের চোখের দিকে তাকালচোখ পাপের বানান জানে কি?
শালা, এই ২০১৪ সালে শুধু কবিরাই পারে পাপের কথা ভাবতে। তা-ও শুধু বানিজ্যিক কাগজের বাংলা কবিরা।
শোবার ঘরে এসে দেখল তার সব পোশাক অন্বেষা মেঝে থেকে আলনায় তুলে রাখছেঅনিমিখের দিকে তাকাল না
অনিমিখ জাপটে ধরল অন্বেষাকেমেয়েটা একটি কাতর শব্দ করে লুটিয়ে পড়ল গদিহীন খাটের উপরএই শীৎকারেও কি অভ্যাসের সুর! কিন্তু, কল্পনা নয়, এখন শরীর কথা বলবে, তার পাওনা বুঝে নেবেঅনিমিখ তার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়তেই অন্বেষা রুদ্ধশাসে বলে উঠল, না অনিমিখদা, এটা কোরো নাপ্লিজআমাকে জাগিও না তুমিএভাবে জাগিও নাআমি থাকতে পারছি না আমার শরীর ঠিক নেই। এমন কোরো না…’ কিন্তু ছটফট করছিল এক আহত জন্তুর মতোইযেন মরণাপন্ন! দুহাতে খুঁজছিল অনিমিখের সারা শরীরঅনিমিখের তোয়ালে খসে গেছে, কিন্তু অন্বেষাকে সম্পূ্র্ণ আবরণশূন্য করা এখন অসম্ভবঅনিমিখ যতটা সম্ভব আবরণ পেরিয়ে মুখ গুঁজে দিল আদিমতম সুখস্থা্নে
আশ্চর্য! কোনোরকম বদ গন্ধ নেই!
কয়েক মিনিট পরে অন্বেষা শান্ত হতে অনিমিখ উঠে দাঁড়িয়ে তার শরীরের খুলতে সক্ষম হওয়া অংশে নিজের চেষ্টায় নিজের স্খলন ঘটাল
মোচনের পরেই অনিমিখের নিজের উপর ঘেন্না হল। অভাবনীয় ব্যাপার সেটা অবশ্যই। কিন্তু সে প্রায় কাঁপতে শুরু করল।
অন্বেষা নিস্পন্দ হয়ে শুয়ে আছেমেয়েটার অসুস্থতাও তার খেয়াল হলকিছু বিপদ হল না তো? চরম আতঙ্কগ্রস্ত অনিমিখ নাড়া দিতে অন্বেষা অল্প চোখে মেললচরম পরিশ্রান্ত গলায় বলল, এটা কী করলে?
অনিমিখ আর কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বলে ফেলল, আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ! আমি সামলাতে পারলাম না নিজেকে!
আমাকে নষ্ট করে দিলে অনিমিখ?
প্লিজ ক্ষমা করো
অন্বেষার চোখ থেকে সাজানো সিনেমার মতো জল গড়িয়ে নামল কিন্তু সে উঠে বসল নিজেকে দেখল একবার পোশাক ঠিকঠাক করল যথাসম্ভব তারপর ক্লিষ্ট গলায় বলল, ক্ষমা চাইছ কেন? কী লাভ? কিছু ফিরে আসবে?
আমি ভাবতে পারছি না আমি এটা করলাম…’
অন্বেষা আরো কিছুটা চোখের জলকে গড়িয়ে নামতে দিল। মুছল না। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে খুব শান্ত গলায় বলল, বাইরের টেবিলে খাবারটা আছেখেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
এখন অনিমিখ দেখল তার কল্পনা তাকে ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূরে দৌড়ে চলেছে, প্রায় দিগন্ত ছুঁইছুঁই তার নিজের আর দৌড়নোর ইচ্ছেটাই বুঝি নেই খুঁজে পাচ্ছে না
প্রবৃত্তি আর কল্পনার রেস হলে, এটাই কি হতে হবে !
অনিমিখ খেল না চলে যেতে চাইল অন্বেষা দুর্বলভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু অনিমিখ দেখল মেয়েটি সত্যিই অবসন্ন, শুয়ে পড়তে পড়লে বাঁচে
খাবার পড়ে রইল হয়তো রাতে বাড়ি ফিরে অয়ন এই খাবার খাবে
আজ এই বাড়িতে আর রান্না করতে হবে না কাউকে

আবার খুব সাবধানে বেরোল সে অন্বেষার বাড়ি থেকে কেউ দেখল না অন্বেষা তৎক্ষণাৎ দরজাটি বন্ধ করে দিল নিঃশব্দে পাড়ার ভিতর দিয়ে অনিমিখ হেঁটে চলল পোড়া কোল্ড স্টোরের দিকে পাড়া এখন শান্ত রান্নার গন্ধের জায়গা নিয়েছে গ্রাম্য ঘুম কোনো হইচই নেই
অনিমিখ এখানে আর পা রাখতে চায় কিআর ফিরে আসবে কি?
এই মুহূর্তে নিজেই জানে না
বাইক যখন ছুটতে শুরু করেছে সবে, ফোন বাজল মেসেজ এসেছে ki korle tumi aamaar? ki korle bolo to? aabar haalkaa bleeding hocche. aami oke phone korechhi. aaj kaachaakachhi kothaao aachhe. ekhuni chole aasbe. tumi saabdhaane baari jaao. baari pouche ektaa message dio. shudhu ektaa. aami uttor naa-o dite paari.
বাড়ি পৌঁছে মেসেজ করতেই হল- home.
উত্তর এল না

সন্ধে থেকে প্রচন্ড মাথা ধরল অনিমিখেরএকবার বমি হল ব্যস্ত হয়ে শেষে জ্যোতির্ময়বাবুকে ডেকে আনল রিয়া তিনি একটা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিতে একটু সুস্থ বোধ করল
ঘুমিয়ে পড়ল


My Blogger Tricks

২টি মন্তব্য: