• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

কৌশিক চক্রবর্তী




অবিশ্রান্ত হত্যালীলা : মানবিকতার ধ্বংসের দলিল
কৌশিক চক্রবর্তী
The place at the end of the world: Essay from the Edge
Janine di Giovanni
Bloomsbury , London , 2006

যুদ্ধ মানেই/ শত্রু শত্রু খেলা / যুদ্ধ মানেই / আমার প্রতি তোমার অবহেলা
                                             : নির্মলেন্দু গুণ

মানুষে মানুষে শত্রুতা যে যুদ্ধের সংবাদ বয়ে আনে , তার যৌক্তিকতা নিয়ে তর্ক উঠবে – হয়তো কোনো বৃহ স্বার্থরক্ষার তাগিদে কোনো যুদ্ধকে কেউ কেউ ‘মহান’ বলে আখ্যাও দিয়ে ফেলবেন, কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই , যুদ্ধের এই প্রক্রিয়ায় , ক্ষতি যদি কিছুর হয় , তবে তা মানবসভ্যতার।

কিন্তু যে বইটির আলোচনাসূত্রে এই গৌরচন্দ্রিকা - সেখানে লেখিকা একবারের জন্যেও এই সোচ্চার ঘৃণার কথা বলেন না। বরং, ‘দ্য প্লেস অ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ গ্রন্থে লেখিকা জ্যানিন ডি জিওভান্নি এক মানবিক কলম নিয়ে লেখেন যুদ্ধজনিত সাধারণ মানুষের দলমতনির্বিশেষে কষ্টের কথা। তাঁর গদ্য কোনো সিদ্ধান্তজনিত হ্যাঁ বা না – জোর করে পাঠকের উপর চাপিয়ে দেয় না। একপক্ষ ভালো, অপরপক্ষ খারাপ - এরকম বালখিল্য সরলীকরণেও তিনি বিশ্বাসী নন। তিনি জানেন মানুষ , সে যুদ্ধক্ষেত্রের যে অংশেই , যে পক্ষেই থাক না কেন , সে আসলে বড় অসহায় , বড় যন্ত্রণাকাতর। তাই জিওভান্নির কলমে উঠে আসে সেই সমস্ত সাধারণ গ্রাম/নগরবাসী - যাঁরা হারিয়েছেন তাঁদের প্রাণ, তাঁদের স্বজন, তাঁদের বাসস্থান, অস্তিত্ব। জিওভান্নির লেখা তাই গুলিগোলার শব্দে, নিহত ও ক্ষতির সংখ্যাতত্ত্বে ভারাক্রান্ত নয় - তাঁর লেখায় মাখামাখি হয়ে আছে সাধারণ মানুষের তীব্র শোক, আকুল কান্না, এবং অস্থিত্বরক্ষার সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষের সম্মান রক্ষার লড়াই। এভাবেই সোচ্চার হয় তাঁর প্রতিবাদ।

জীবদ্দশাতেই প্রায় living legend এ পরিণত জিওভান্নিকে নিয়ে তৈরী হয়েছে অসংখ্য তথ্যচিত্র এমনকি তাঁকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে No Man’s Land চলচ্চিত্র , সেই ছবি Best Foreign Film হিসেবে Oscar পেয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর স্বামী সাংবাদিক ব্রুনো জিরদঁ পুত্র লুকা কনস্ট্যানটিনোকে নিয়ে প্যারিস প্রবাসী। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী এবং প্যারিসের বিখ্যাত Sciences Pro School-এ ‘Global Journalism’ পড়ান।

জিওভান্নির রিপোর্ট তথাকথিত হলুদ সাংবাদিকতার story নয় । খবরের সত্যতা যাচাই করতে তিনি পৌঁছে যান চেচনিয়ার পরিত্যক্ত হাসপাতালে, তোরাবোরায় বোমাবিধ্বস্ত গ্রামে, ইরাকের যুদ্ধাক্রান্ত শহরেসেখানে তাঁর সাথে দেখা হয়ে যায় ভিক্ষাপ্রার্থী কোনো অধ্যাপকের, বিদ্রোহী সৈন্যদের হাতে ধর্ষিতা কোনো মহিলার, জঙ্গলে জঙ্গলে ঘোরা নিপুণ আততায়ী কোনো কিশোর যোদ্ধার, রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর ভাগাভাগিতে কাঁটাতারের ওপারে পড়ে যাওয়া বসতবাটির দিকে তাকিয়ে থাকা বৃদ্ধার।

 

আর এভাবেই জিওভান্নির সঙ্গে সঙ্গে আমরাও পৌঁছে যাই একেবারে খোদ ঘটনাস্থলে। পড়তে পড়তে কখনো প্রবল আক্রোশে চিৎকার করি, কখনো কান্নায় মুখ ভেসে যায়।


জিওভান্নির এই বই শুরু হয় ‘After 9/11’ নামক প্রথম পর্ব দিয়ে। এই পর্বে ইরাক, আফগানিস্তান, আমেরিকা ও ইজরায়েল – এই শীর্ষক মোট ১১টি লেখা। জিওভান্নি একজন মেয়ে, তাই হয়ত স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর নিজের দৃষ্টিপথে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও ইরাকের মেয়েদের দুর্দশার কথা এড়ায় না। ওয়ার্ল্ডট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়ার পর যে সব মহিলারা স্বজনহারা হন, তাঁদের কান্না তাঁকে ছুঁয়ে যায়, ইরাকে মার্কিনবাহিনির হয়ে যুদ্ধরত যে সৈনিক মারা যান, তাঁর স্ত্রীর সারারাত জাগা নীরবতা তাঁকে কষ্ট দেয়।

এই কষ্টের থেকেই বাগদাদে গিয়ে , টাইগ্রিস নদীর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মনে পড়ে যায় ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ পর্যটক ফ্রেয়া স্টার্কের লেখা- It is the only sweet and fresh thoroughfare of the town: not clear water, but lion-coloured like the Tiber or Arno.

তার ঠিক বিপ্রতীপে মার্কিন আগ্রাসনের মুখে দাঁড়ানো ইরাকের ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঘোষণা কানে ধক করে এসে লাগে- We will fight. Every Iraqi has a gun. No one in this country, even if they oppose the President, wants foreigners occupying their soil.

প্রবল জাতীয়তাবাদী এই আবহাওয়ায় কিছু যুদ্ধবাজ শয়তান অতব ভেবে নেয় ইরাকের অলিতে গলিতে মারণাস্ত্র, ইরাকের ঘরে ঘরে সন্ত্রাসবাদী... আর তাই সেই দেশ, যেখানে একসময় নারীশিক্ষার হার সারা পৃথিবীকে লজ্জা দিত, যেখানকার গোলাপফুলের একগুচ্ছ পেলে পৃথিবীর তাবড় তাবড় সুন্দরীরা কৃতার্থ হয়ে যেতেন, যে দেশের শহরে শহরে ছড়িয়ে আছে অনেক অনেক রূপকথা – সেই দেশটিকে বোমায় বোমায়, সৈন্যে সৈন্যে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। আর সেই দেশের যেসব মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষজন - যাঁরা স্বপ্ন দেখতেন অন্যান্য শিক্ষিত উচ্চাভিলাষী পৃথিবীবাসীদের মতনই, তাঁদের কথা আর কেউ মনে রাখে না। মনে রাখে না, প্রত্যেক দেশের মতনই , ইরাকে ভদ্র শিক্ষিত সমাজ এবং দুষ্কৃতকারী শয়তান - দুই-ই আছে। নিছক এক-ধজন একনায়কের জন্য সে দেশের আপামর জনসাধারণকে ধ্বংস করার অধিকার কখনও কোন তথাকথিত শিক্ষিত সভ্য শাসকের পিতৃপ্রদত্ত জমিদারি হতে পারে না। তাই জিওভান্নি লেখেন- It was easy to forget that these people, who looked like you and me or like friends of ours, existed. In a country devastated by economic sanctions, where child beggars grabbed the end of your coat and babies died from diarrhoea because of unclean water, it was easy to forget there were people who were educated abroad, who spoke good English, good French, and who looked at America and Britain as friends, not as enemies who would very soon bomb them.

তবু জীবন যে এক বহমানধারা, আর তাই সেই প্রবাহের সামনে দাঁড়িয়ে এই বিস্মৃতপ্রায় ইরাকি  মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত শ্রেণীরই প্রতিনিধি সাদা বাথান ঘোষণা করেন, “The embargo is suffocating us, but it cannot strangle our minds.

১১ই সেপ্টেম্বরের পর ঘটে যাওয়া মার্কিন-ইরাক ধ্বংস প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ সাদ্দাম হুসেনের পতনের পর সারা ইরাকে নেমে আসে গৃহযুদ্ধের কালো ছায়া। এরই প্রেক্ষিতে জিওভান্নি তুলে আনেন সেখানকার মেয়েদের যন্ত্রণা, ভয়, নিরাপত্তাহীনতাকেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার সাজিদা’র বাড়িতে গোপনে চলা বাক্যালাপের সূত্রে জিওভান্নি লেখেSajeeda then recounted stories of her women friends being mugged, attacked or threatened for walking on the street. Her eighteen-year old daughter tearfully told me her best friend had been kidnapped in March. The rumor going around her school was that Iraqi gangs took young girls to Kuwait and sell them as sex-slaves, and the teenager clung to me in tears. Her mother begged me to find her a place at an English University in the winter. “Otherwise, I am not sure I can protect her,” she said.’

পৃথিবীর সর্বত্র যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী বাতাবরণে মরদের-বাচ্চা সৈনিকেরা সবার আগে মহিলাদের পর তাদের বিকৃতকাম প্রদর্শন করে বীরত্ব দেখিয়েছে। বিশ্বের সমস্ত যুদ্ধে ধর্ষণ আজ যেন অস্ত্র চালনারই এক অঙ্গ। ইরাকও তার ব্যতিক্রম নয়। এর ঠিক পাশাপাশি লেখিকা আমাদের নিয়ে যান তালিবানমার্কিন সৈন্য - এই দুইয়ের যুগপৎ যাঁতাকলে পড়ে পিষতে থাকা সাধারণ আফগানির অন্দরমহলে। সেই সাধারণ মানুষ যে অদ্ভুত শীতল কন্ঠে এসে লেখিকার সঙ্গে পরিচয় করে এই বলে যে I come from a country that no longer exists”, he said after a pause, “You see, I come from Afghanistan.

তালিবানদের সাথে যুদ্ধরত পঞ্জশিরের প্রতিরোধবাহিনীর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়, তাদের সঙ্গে তিনি মাইনবিছানো পথে হাঁটতে থাকেন, কখন যে উলটো দিক থেকে কালাশনিকভের গুলি ছুটে আসবে কেউ জানে না। তবু তারই মধ্যে অত্যন্ত সংবেদনশীল যুবকসেনার দুষ্টুমি, তরুণী সাংবাদিককে দেখে হঠাৎ ভালোলাগাও জিওভান্নি লিপিবদ্ধ করেন- The lush cotton fields look surreal in this otherwise wasted landscape. A soldier bends down and picks up one of the soft, fuzzy plants. When he gives it to me, he laughs and rubs it against my cheek. The soldier in front of me is barefoot and carries a light machine-gun. He is seventeen, shy, does not look in my eyes, but he is singing in Dari as we march single file… We walk back from the trenches, through a field of rice, another of cotton, past donkeys and soldiers on horseback and blooming trees. We pass a lone grave next to the river. Women have come and wrapped tattered, coloured cloth round a tree. ‘So we don’t forget him’ - one tells me.

আবার এরই পাশাপাশি লেখিকা তুলে আনেন ১১ই সেপ্টেম্বরের আমেরিকার সেই অভিশপ্ত ধ্বংসলীলা ও মৃত্যুমিছিলের কিছু মর্মস্পর্শী ছবি। লেখিকা বলেন, নিউজার্সির সেই ফেরিঘাটের কথা, যেখান থেকে প্রতিদিন নিত্যযাত্রীরা অফিস যেতেন স্টিমারে চড়ে। ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় যখন অফিসফেরতা যাত্রীরা আবার স্টীমারে চেপে বাড়ি ফিরছেন, তখনও কেউ জানেন না, কারা কারা আর কখনও ফিরবেন না। ফেরিঘাটের পার্কিং লটে তখন দাঁড়িয়ে আছে সকলের ব্যক্তিগত গাড়িগুলো। “The parking lot was full of the usual Audis, Mercedes, BMWs and Lexus, but that day, many of them were not picked up. After a few days, when it was clear that their owners were never coming back to get them, local people put bouquets of flower on them. সারা ফেরিঘাট জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে অজস্র বেওয়ারিশ গাড়ি - কোথায় তাদের গন্তব্য - কেউ জানে না, কে তাদের মালিক - কে জানে না, শুধু সকলেই জানে – যেই এর মালিক হোন না কেন, তিনি আর কোনদিনও ফিরে আসবেন না। এই একএকটা গাড়ি যেন একএকটা সমাধিফলক। মৃত্যুর এরকম দৃশ্য কেউ কখনো দেখেছেন কিনা, বা লিখেছেন কিনা, আমার জানা নেই। এই ঘটনার পরই আঞ্চলিক সংবাদপত্র “Two Rivers Times”-এর সম্পাদিকা এলিন মুন তাঁর কাগজের পুরো প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে কেবল একটিই কবিতা ছাপেন - সমস্ত মৃত আমেরিকাবাসীর উদ্দেশে এক অবিচ্যুয়ারি, W.H. Auden এর সেই কবিতা September 1, 1939 - যার প্রথম কয়েকটি পংক্তি- I sit in one of the dives / On Fifty-second Street / Uncertain and afraid / As the clever hopes expire / Of a low dishonest decade / waves of anger of anger and fear / circulate over the bright / And darkened lands of the earth, / Obsessing our private lives / The unmentionable odour of death / offends the September night…

এই পর্বের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী লেখা ‘আমেরিকা’ অংশেই এক নিহত সৈনিকের স্ত্রী সম্পর্কে। লেখিকা খেয়াল করেন একটা যুদ্ধ যেমন মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, তেমনি করেই যুদ্ধ কেমন করে কিছু মানুষকে কাছাকাছি এনে দেয়। ইরাক-মার্কিন যুদ্ধে ভিনদেশে গিয়ে কিছু বোঝার আগেই যেসব তরুণ মার্কিন সেনানী মারা গেছে, তাদের স্ত্রী-পুত্র-পরিবার-বৃদ্ধ বাবা-মা’র পাশে এসে দাড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা কেউ এসে বাজার করে দিয়ে যান, কেউ এসে ট্যাক্সের ফর্ম পূরণ করে দিয়ে যান। মৃত মানুষটির সমাধি-ফলক তৈরী করে দিয়ে সেই দোকানি তার পারিশ্রমিক নেন না। তবু সত্যি বলতে কি, “even if the widow has a lot of community support, she is eventually left alone with the terrible knowledge that her beloved is not coming back.

এখানে লেখিকা শোনান বেটসি কফিনের কাহিনি। তাঁর যন্ত্রণা আবার অন্য। তাঁর স্বামী ক্রিস কফিন ইরাকে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান। কিন্তু ক্রিসের মৃত্যুর কারণ বেটসিকে জানানো হ না। মার্কিন সরকার এ ব্যাপারে নীরব। ক্রিস যুদ্ধের জন্য ইরাকে রওনা দেওয়ার পর সারা বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বেটসি খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর জন্যে ক্রিসে লিখে রেখে যাওয়া অসংখ্য টুকরো টুকরো প্রেমপত্র - Dearest Bets, Right this minute, I’m thinking of you and smiling…এই হাসি চিরস্থায়ী হয়নি। যুদ্ধে যাবার সময় ক্রিস তাঁর স্ত্রীকে একটা সেলুলার ফোন কিনে দিয়ে যান। স্ত্রীর এই ফোননম্বর একমাত্র ক্রিসই জানতেন, আর কে বেটসির সেই নম্বর জানেন না। প্রতিরাত্রে ক্রিস একটা নির্দিষ্ট সময়ে বেটসিকে ফোন করতেন। যেদিন তিনি মারা যান, সে রাত্রে বেটসি অনেক্ষণ ধরে ফোনের সামনে বসেছিলেন স্বামীর ডাকের অপেক্ষায়। সে রাত্রে আর ফোন আসেনি। তার পরের দিন না। তার পরের দিনও না। আর কোনও দিনই আসবে না সেই ফোন।

হয়ত এ কথা বুঝতে পেরে –
তিনদিন পরে বেটসি ফোটিকে সুইচ অফ করে দেন।

সেই ফোন আর চালু করা হয় নি।
(দ্বিতীয় অংশ পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে)
                                      
My Blogger Tricks

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন