• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • ভাবনালেখা লেখাভাবনা


    কবিতা নিয়ে গদ্য। কবিতা এবং গদ্যের ভেদরেখাকে প্রশ্ন করতেই এই বিভাগটির অবতারণা। পাঠক এবং কবির ভেদরেখাকেও।


    সম্পাদনায় - অনিমিখ পাত্র
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস
  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10

অধীশা সরকার


৭।
রিটায়ার্ড ডিসিপি অরুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেক গার্ডেন্সের বাড়িটা বেশ বড়। ওপরে চারটে ঘর, নিচে তিনটে। ওপরতলার ডানদিকের সবচেয়ে বড় ঘরটা অরুণকাকুর বেডরুম। তার পাশে স্টাডি, যাকে এরা বলে লাইব্রেরি ঘরতার পরের ঘরটা তালা দেওয়া থাকে। ওটা অরুনকাকুর মেয়ের ঘর। সে থাকে বিদেশে। যখন আসে, ওখানেই থাকে। আর তারপর অরুনকাকুর ছেলে অংশুমানের ঘর। অংশুমান এই পরিবারের ব্ল্যাক শিপ। অরুনকাকুর ইচ্ছে ছিল ছেলে পুলিশের চাকরিই করুক। অথবা আইএএস। কিন্তু বাবাকে ইগনোর করে যাদবপুর থেকে কম্প্যারেটিভে এমএ অংশুমান এখন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। মানে শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, ইত্যাদি বানায়। একটা নাটকের দলও আছে তার।
নীচের ঘরগুলোয় থাকে এবাড়ির স্টাফআগে একজন ছিল, এখন দুজন। আগে যে ছিল তার নাম শিবাশিষ হালদার। বছর পাঁচেক হল তার এবাড়িতে। সর্বঘটে কাঁঠালি কলা বিশেষ, কায়দা করে কেয়ারটেকার ডাকা হয়। আরেকজন নতুন জয়েন করেছে। অরুনকাকুর সেক্রেটারি হিসেবে। উনি নক্সাল আমলের ওপর একটা বই লিখছেন। তারই প্রুফ দেখার কাজ। নীল এবাড়িতে আগেও এসেছে, মনে আছে। মাঝখানে আসা হয়নি অনেকদিন। এবারে একজন নতুন কাজের মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে। সেই চা দিয়ে গেল। নীল তাকে বলল অরুনকাকুকে ডেকে দিতে।
খানিক্ষণ বাদে মেয়েটি ফিরে এসে জানাল অরুণকাকু ঘুমোচ্ছে। 
এখন ঘুমোচ্ছে
? যথেষ্ট অবাক হল নীল। প্রায় সাড়ে তিনটে বাজে... অরুনকাকু দুপুরে ঘুমোয় না বলেই সে জানত। সেই কারণেই ফোনে দুপুরে আসতে বলা... উনি তো ক্রমাগত আউড়ে যান বাঙ্গালির সবচেয়ে বড় হ্যান্ডিক্যাপ হল দুপুরের ঘুম
-    এখন ঘুমোচ্ছেন?শরীর খারাপ?
-    কি জানি দাদা... আজ সারাদিনই দরজা বন্ধ... কত করে ডাকলুম... সকাল থেকে তো কিছুই খেলেন না...
-    মানে?সকাল থেকে দরজা খোলেননি?
নীল নিজের পেটের মধ্যে একটা নড়াচড়া টের পাচ্ছে। বিপদঘন্টি।
-    তুমি কাউকে খবর দাওনি?
-    কাকে কি বলব বলুন... কেউ নেই তো বাড়িতে... ম্যানেজারবাবু ব্যাঙ্কে বেরিয়ে গেলেন সকালে... সেক্রেটারি বাবুও বেরোলেন... আর ছোট দাদাবাবু তো সেই ভোরে বেরিয়েছেন কোথায়... কখন ফিরবেন কে জানে...
-    দেখি, ওপরে চলো।
দ্রুত সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নীল ভাবতে লাগল কি হয়ে থাকতে পারে? হার্ট অ্যাটাক? সেরিব্রাল? নাকি সত্যিই ঘুমোচ্ছেন... শরীর খারাপ... কিছু হয়ে থাকলে তার কি করা উচিৎ? দরজা ভাঙ্গবে, না ওয়েট করবে? বাড়ির লোককে খবর দেবে? নাঃ... আগে দরজাই ভাঙ্গতে হবে। যদি কিছু হয়ে থাকে দেরী করা ঠিক হবে না।
অনেক ডাকাডাকির পরও যখন দরজা খুলল না, সজোরে বেশ কয়েকটা লাথি মারল নীল দরজায়। তৃতীয় লাথিটায় ক্র্যাক করল দরজাটা। বেডরুমের গদিমোড়া ইজিচেয়ারে আরামে হাত পা এলিয়ে শুয়ে আছেন অরুনকাকু। বিছানা ছেড়ে উঠে বোধয় পাইপ ধরিয়েছিলেন... এই অ্যান্টিক নেশাটা এখনো ধরে রেখেছিলেন ভদ্রলোক। পাইপটা শুধু মেঝেতে পড়ে আছে।
পেছন থেকে দেখে নীলের হার্ট অ্যাটাকই মনে হয়েছিল। সামনে যেতেই একটা দুশো ভোল্টের শক খেল।
অরুনকাকুর গলাটা ছিন্নভিন্ন করে কাটা। চাপ চাপ রক্ত ড্রেসিং গাউন থেকে চুঁইয়ে পড়েছে ইজিচেয়ারময়। গাঢ় রঙের কাপড়ে মোড়া, তাই দূর থেকে বোঝা যায়নি।
খুব আবছাভাবে কাজের মেয়েটার আর্তনাদ শুনল। নীলের মাথা ঝিমঝিম করছিল। কাঁপা হাতে পকেট থেকে ফোন বার করল। নীল খেয়ালই করেনি, বিবি কখন বেডরুমে এসে পৌঁছেছে। এককোনে দাঁড়িয়েছিল দেওয়ালে ঠেস দিয়ে। প্রথমে ডেডবডির দিকে একদৃষ্টে খানিক্ষণ তাকাল, তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরটা দেখতে লাগল। এত ঝামেলার মধ্যেও নীল একটু চমকাল। এত ঠান্ডা চোখ কোনো মানুষের হয় কি!

৮।
না, নীলকন্ঠ কিছুই বুঝতে পারছে না। বাইরে পুলিশের জিপ এবং অ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। বডি বের করা হচ্ছে। বডি মানে অরুনকাকু। পাইপের সুগন্ধী ধোঁয়ায় আবছা একটা গমগমে কন্ঠস্বর বুঝলে তো নীল... মাইলের পর মাইল ধুধু মাঠ শুধু... ধানক্ষেত... ওর মধ্যে লোকটা যে কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে আমরা কেউ জানি না... শুধু জানি যে ওর হাতে একটা পিস্তল আছে...
এটা নীলের দ্বিতীয় মার্ডার কেস।
মেয়েটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। বিবি। কেটে পড়ল নাকি? যাকগে, মরুক গে যাক। তদন্ত শুরু করতে হবে। কিভাবে... হ্যাঁ। আপাতত যে যেখানে আছে খবর দিয়ে বাড়িতে আনাতে হবে। অংশুমান, শিবাশিষ, সেক্রেটারি। অরুনকাকুর মেয়েকে খবর পাঠাতে হবে। আর... কি যেন? উফফ। নীল লাইব্রেরি ঘরে বসেই একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলল। দু-তিনটে টান দিতেই খেয়াল হল, এটা তার ব্র্যান্ড নয়। বেশ দামী, বিদেশী সিগারেট। এই প্যাকেটটা এখানে এল কোত্থেকে? এই তো... টেবিলের ওপর ছিল... আরে দূর ছাই! ক্রাইম সিন! এতক্ষনে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল বোধয়!
শোবার ঘরে আবার ঢুকে নিতান্ত অখুশি হল নীল। লন্ডভন্ড কিছুই হয়নি, কিন্তু আপদটা, মানে মেয়েটা, ওখানেই আছে। একটা রুমালে কি একটা জড়িয়ে হাতে ধরে আছে। ওকে দেখে ঘাড় বেঁকিয়ে কৈফেয়ৎ চাইল ফরেনসিক টিম আসেনি? নীল তেতোমুখে বলল, আসছে। ইয়ে... বিবি... তুমি বরং...
-    নখ।
-    অ্যাঁ??
-    এবাড়ির প্রত্যেকের নখ পরীক্ষা করো। ডাস্টবিনে এতগুলো আপেল কেন?
নীল মনে মনে কয়েকটা বাছাই করা গালাগাল দিল। কাকে সেটা শিওর না হয়েই। মুখে বলল তুমি কি আধুনিক কবিতা বলছ?
-    তুমি গন্ধটা পাচ্ছ না, না?
-    কিসের গন্ধ?
-    কাঠবাদামের গন্ধ। The scent of bitter almonds. Marquez পড়া আছে?কিন্তু না থাকলেও... গন্ধটা বেশ তীব্র।
-    বিবি, শোনো। তোমাকে এখন যেতে হবে। সরি। এখানে এখন কাজ হবে। প্লিজ লিভ।
মেয়েটা স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল খানিক্ষণ। আবার অস্বস্তি হচ্ছে নীলের। মেয়েটাকে এক্ষুনি সরানো দরকার। আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই মেয়েটা বলল ওকে, আমি যাচ্ছি। এই কফি মাগটা ল্যাবে দাও। বেস্ট অফ লাক উইথ দ্য কেস
শেষ কথাটা বলার সময়ে চোখের মণিতে একটা অদ্ভুত ঝিলিক দেখল নীল। নাকি... কাল্পনিক?
বিবি কিছুক্ষণ হল চলে গেছে। একটা রুমালে জড়ানো কফি মাগ হাতে নীল জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেছে। রাস্তাটা যেন সদ্য চান করে উঠেছে। পুলিশের চাকরি নেওয়াটা নীলের বিরাট ভুল হয়েছে। বিরাট ভুল।
ইতিমধ্যে ফরেনসিক টিম অর্থাৎ সোমনাথ ঘোষ আর দিগন্ত সাহা ঘরে ঢুকে এটা ওটা নাড়ছে, প্রিন্ট নিচ্ছে। নীল হঠাৎ সোমনাথের দিকে ঘুরে হাতে ধরা কফি মাগটা এগিয়ে দিল।
-    এটা ল্যাবে যাবে।
-    আচ্ছা... কেন?মার্ডার তো শুনলাম শার্প ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে...
-    যা বলছি, প্লিজ।
-    ওক্কে...
-    আর শোনো, এবাড়ির প্রত্যেকের নখের তলা থেকে স্যাম্পল নাও।
-    কিন্তু...
-    যা বলছি।
-    ওকে... ওকে।
অংশুমান ঢুকল হঠাৎ। উস্কোখুস্কো চুল... উদভ্রান্ত চেহারা। নীলের দিকে ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে বলল হাই...তারপর নাক কোঁচকালো। এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল গন্ধটা কিসের?বিচ্ছিরি গন্ধটা?

৯।
গ্লাসটপটার ওপর কনুইয়ের ভর দিয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে থম মেরে বসে ছিল নীল। একে অরুনকাকু খুন... এখন আবার বোঝা যাচ্ছে না খুন কিনা। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট বলছে আত্মহত্যা। অথবা দুটোই একসাথে। কারণ, cause of death cyanide poisoning. ওদিকে গলার নলি কাটা। আবার কি দিয়ে কাটা, সেটাও ক্লিয়ার না। ফরেনসিক টিম বলছে ছুরি নয়, কিন্তু শার্প ইন্সট্রুমেন্ট। যেটা পাওয়া যায়নি। খুন হতে পারে, নাও হতে পারে। নাকি voluntary manslaughter না কি যেন? দূর ছাতা... এটা সল্ভ করতে হবে। করতেই হবে। শুধু কেরিয়ার নয়... প্রেস্টিজ ইস্যু... মর‍্যাল অবলিগেশন।
মুশকিল হল, কফি কাপটায় সাইনাইডের কোনো ট্রেস পাওয়া যায়নি। ঘরের আর কোনো জিনিসে অরুনকাকুর আর কাজের মেয়েটির ছাড়া আর কারো প্রিন্ট নেইকোনো সাইন অফ স্ট্রাগল নেই... তাহলে হলটা কি? কফি কাপ ছাড়া তো আর এমন কোনো জিনিসও ছিল না যেটাতে সাইনাইড থেকে থাকতে পারে। ওষুধগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে... ওতেও কিচ্ছু নেই... তবে? নখের স্যাম্পল অ্যানালিসিস এখনো চলছে।
আচ্ছা... কফি কাপটা ও ল্যাবে দিল কেন? পরিস্কার তো দেখা যাচ্ছিল গলা কেটে খুন... তবে? কি থেকে ওর মনে হল অন্য কিছু? ওহ... না। ওর তো মনে হয়নি। ওই মেয়েটা তো বলল কাপটা ল্যাবে দিতে। বিবি!
তার মানে মেয়েটা আঁচ করেছিল খুনটা গলা কেটে হয়নি! ওইটুকু সময়ের মধ্যে? কিভাবে? কি একটা গন্ধের কথা বলছিল... কিন্তু নীল কোনো গন্ধ পায়নি। এক মিনিট... অংশুমান। অংশুমানও ঘরে ঢুকে একটা গন্ধের কথা বলল...
নীল ফরেনসিকে সোমনাথকে ডায়াল করল।
-    তোমরা কোনো গন্ধ পেয়েছিলে অরুনকাকুর ঘরে?
-    না তো...? কেন?
-    কিছু না।
হুমম... মেয়েটা গন্ধ পেয়েছিল। কিসের গন্ধ? কি যেন বলল? কাঠবাদামের গন্ধ... কিন্তু তার সঙ্গে... ও বুঝল কি করে সাইনাইডের ব্যাপারটা? ওর মাথায় এলো কি করে? মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু কি করে? ওর কাছে যে ঠিকানা আছে সেটা ফেক তা তো আগেই জানে... মাকে বলে ফোন নাম্বার জোগাড় করবে? কিন্তু তাহলে আবার মা ভাববে... আর তাছাড়া ও যদি ফেক আইডিই তৈরী করে থাকে, তাহলে তো ফোন নাম্বারও ফেক। মানে সুইচড অফ পাবে। হয়তো সিমটা ফেলে দিয়েছে। তাও, ট্রাই করে দেখা যেতে পারে। বেসিক্যালি, মেয়েটার নাম ছাড়া আর কিছুই জানে না নীল।
সোমনাথ ফোন করল ইতিমধ্যে আবার। নাঃ... কারো নখের তলায় কিছুই পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাওয়ার কথাও নয় অবশ্য। দুম করে হঠাৎ নখের তলায় কিছু পাওয়া যাবেই বা কেন? এটাও ওই মেয়েটা বলেছিল। পাগল নাকি? কিন্তু সাইনাইডের ব্যাপারটা ধরতে পারল। কিভাবে? কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না।
সাসপেক্টদের প্রত্যেককে ও নিজে জেরা করেছে। এক্ষেত্রে অরুনকাকুর মেয়ে ছাড়া আর সবাই সাসপেক্ট। Time of death রাত একটা। ওই সময়ে প্রত্যেকেই বাড়িতে ছিল। কিন্তু... কারো বয়ানেই কোনো গন্ডগোল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বাড়ির লোক ছাড়া এই খুন অসম্ভব। নীল নিজে বারবার চেক করে দেখেছে, ওই ঘরে বাড়ির বাইরে থেকে লুকিয়ে ঢোকা অসম্ভব। একটাই মুশকিল, দরজাটা নিয়ে। ভেতর থেকে লকড ছিল কিনা বোঝার উপায় নেই। ওই লকগুলো লাগানো যেগুলো বাইরে থেকে টেনে দিলেও লক হয়, ভেতর থেকে টানলেও। এ এক আজব গোলকধাঁধা। বা, গিঁট বলা ভালো। যত টানাটানি করছে, আরো শক্ত হয়ে এঁটে বসছে।
অরুনকাকুর মেয়ে চলে এসেছে লন্ডন থেকে। আজ বিকেলে দেখা করবে নীল। ভালো লাগছে না... একটা মেয়ে যার বাবা খুন হয়েছে তাকে কিভাবে ফেস করতে হয় নীল জানে না। অংশুমানকে জেরা করার সময়ও এই অস্বস্তিটা টের পেয়েছিল। পুলিশের চাকরি ওর জন্য নয়। ও যদি অংশুমানের মতই আর একটু সাহস করতে পারত...
বেরিয়ে পার্কিং থেকে গাড়ি বের করল নীল। তারপর সিগারেট কিনতে দাঁড়াল মোড়ের দোকানে। টাকাটা এগিয়ে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে ঢোকাতে যাবে, শুনল পাশ থেকে একটা রিনরিনে গলা আমাকে এক প্যাকেট কিনে দেবে? বিবি।
-    তুমি এখানে কি করছ?
-    সিগারেট কিনে দাও এক প্যাকেট। প্লিজ। আজ সারাদিন খাইনি।
-    হ্যাঁ... কিন্তু...
-    শোনো, আই ওয়াজ রং। কফি কাপে বা নখের তলায় কিছু পাওয়া যাবে না। আপেল বোধয় কোনো কারণে বেশী খাওয়া হচ্ছিল। একটা জিনিস একদম ওভারলুক করে গেছি।
-    আপেলের সঙ্গে কি...
-    সাইনাইড আপেলের বিচি থেকে বানানো যায়। হোমমেড পয়জন। কিন্তু আমি একটু কমপ্লিকেট করে ফেলেছিলাম। অত ঝামেলায় যাবেই বা কেন?আচ্ছা... বাড়ির সবার ঘর সার্চ করেছ কি? করোনি বোধয়, না?
-    আমাকে আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। সাইনাইডের ব্যাপারটা তুমি জানলে কি করে?
-    তখনই বললাম তো... কাঠবাদামের গন্ধ। ওটাই সাইনাইডের গন্ধ।
-    তুমি সেটা জানো?মানে... গন্ধটা চেনো?
-    হুঁ।
-    আচ্ছা... কিন্তু... গলা কেটে খুন এটা তো পরিস্কার, তাহলে তোমার হঠাৎ সাইনাইডের কথা মনে হল কেন
-    ফরেন্সিক টিম কি এখনো বলছে গলা কেটে খুন?
বিবির ঠোঁটে একটা হালকা বেঁকা হাসি ফুটে উঠল।
-    না। এখন আর তা বলছে না। কিন্তু তুমি সেটা তখন জানলে কি করে?
-    আই জাস্ট লুকড অ্যাট দ্য উন্ড। ক্ষতটা দেখলাম। পোস্ট-মর্টেম। মানে, ক্ষতটা মৃত্যুর পর হয়েছে... তার মানে ওটা cause of death নয়। সেক্ষেত্রে, অন্য কিছু... আর সাইনাইডের গন্ধ যখন ছিল ঘরে, তখন তো ব্যাপারটা জলবৎ তরলং। অবভিয়াস আর কি।
-    আই নো হোয়াট ইজ পোস্ট-মর্টেমএক্সপ্লেন করার দরকার নেই।  
-    অফ কোর্স। কিন্তু পোস্ট-মর্টেম ইঞ্জুরির উন্ড দেখে চেনো না। ব্লাড লসের পরিমাণ দেখে ধরতে পারো না। সবকিছুই তো থিওরেটিক্যালি জানলে চলে না, না? আচ্ছা, আমাকে কি সিগারেট কিনে দেবে, না দেবে না?
নীল আর এক প্যাকেট সিগারেট কিনল। 


ক্রমশ


My Blogger Tricks

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন